নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি হতে হবে-পুলিশের গুলিতে চার মৃত্যু

আমাদের চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুর সংবাদদাতার বিবরণ অনুযায়ী, যে ধরনের পরিস্থিতিতে পুলিশ নিরস্ত্র জনতার ওপর গুলি চালাতে ‘আত্মরক্ষার্থে’ বাধ্য হয়, সে ধরনের পরিস্থিতি গত রোববার ওই দুটি স্থানে ছিল না। দুই শহরে চারটি মূল্যবান প্রাণ শুধু পুলিশের বাড়াবাড়ির কারণে খোয়াতে হয়েছে কি না, তা নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি রাখে।


পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার, যিনি সদ্য তিন তারকা ব্যাজ পরিধান করেছেন, তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ সদর দপ্তর দুটি কমিটি গঠনসহ তদন্ত কমিটি করেছে। এতে মনে হতে পারে, তিনি বুঝি বিশেষ কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলে জনমনের ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা করছেন। এটা আসলে রুটিনকাজ। আইন অনুযায়ী পুলিশ বিভাগ প্রতিটি গুলিবর্ষণের পর তার যথার্থতা খতিয়ে দেখতে কমিটি গঠন করতে বাধ্য। তবে তাঁর কৃতিত্ব যে ঘোষণাটি ওই দিনই দিয়েছেন। আমাদের গণমাধ্যম যদি তাঁর এই ঘোষণার বিষয়টি যে রুটিন, তা পরিষ্কার করত, তাহলে ঠিক কাজ করত।
সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য পুলিশের ভেতরের কোনো শক্তি এভাবে গুলি ছুড়েছে কি না, প্রশ্ন করা হলে আইজিপি বলেন, ‘তদন্ত করলে সবকিছুই পরিষ্কার হয়ে যাবে।’ কিন্তু ‘সবকিছুই পরিষ্কার’ করার এখতিয়ার ওই দুুটি কমিটির থাকার নয়। আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার নিয়ে শাসন বিভাগীয় তদন্তের ব্যাপারে পিআরবির ১৫৭(ক) ধারায় বলা হয়েছে, ‘যখনই পুলিশ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করবে, তখনই এর ব্যবহার যুক্তিযুক্ত হয়েছে কি না, তা নির্ধারণের জন্য যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত চালাতে হবে।’ এর প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশের বিধান আইনে স্পষ্ট করে বলা নেই। তা ছাড়া বিভাগীয় কমিটির গ্রহণযোগ্যতা কম বলে প্রতীয়মান হতে পারে। শুধু আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার নয়, দরকার পুলিশের পুরো আচরণ তদন্ত করে দেখা। তাদের ও বিক্ষোভকারীদের দিক থেকে কী ধরনের অপতৎপরতা ও উসকানি ছিল, তা জানা দরকার।
চাঁদপুরে ও লক্ষ্মীপুরে সভা-সমাবেশের বিষয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না। চাঁদপুরে একটি ঐতিহ্যবাহী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে বিএনপি সমাবেশ করছিল। ওই স্থানটি জনসমাবেশের জন্য নির্দিষ্ট। সব দল সেখানেই সভা করে থাকে। এ রকমের একটি পরিবেশে পুলিশ তাদের সমাবেশ ও মিছিলে বাধা দিয়েছিল। এখন খতিয়ে দেখতে হবে উচ্ছৃঙ্খল কর্মীরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছিল, আর ঠিক সে কারণেই পুলিশের গুলিবর্ষণ অনিবার্য ছিল কি না? চাঁদপুরের নির্বাহী হাকিম বলেছেন, ‘পরিস্থিতির কারণেই গুলি করা হয়েছে।’ লক্ষ্মীপুরের ঘটনা আরও দুর্ভাগ্যজনক। সেখানকার ওসি ও পুলিশ সুপার এখনো নিশ্চিত করেননি যে গুলিবর্ষণের ঘটনায় কোনো নির্বাহী হাকিমের অনুমতি ছিল কি না। সেখানে প্রায় তিন বছর ধরেই বিরোধী দলকে সভা-সমাবেশ করতে বাধা দেওয়া হচ্ছিল।
উভয় ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি। আইজিপি যে দুটি তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন, তা দিয়ে জনগণের জানার আকাঙ্ক্ষা পূরণ হওয়ার নয়। শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যরাও কোনো সান্ত্বনার ভাষা খুঁজে পাবেন না।

No comments

Powered by Blogger.