চিরতরে দেশ ছাড়লেন নওয়াজ শরীফ!
অসুস্থ
স্ত্রীকে কুলসুম নওয়াজকে দেখতে লন্ডনে গিয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক
প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ। তাকে এর আগে সরকারি কোনো পদে ও নির্বাচনে
প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অযোগ্য বা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে পাকিস্তানের আদালত। ওদিকে
সামনে আরো তিনটি দুর্নীতির মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার রায় আসতে পারে
সহসাই। এ অবস্থায় তিনি স্ত্রীকে দেখলে লন্ডন যাওয়া নিয়ে নানা আলোচনা
ডালপালা ছড়াচ্ছে পাকিস্তানে। বলাবলি হচ্ছে, তিনি পাকিস্তান থেকে পালিয়ে
গেছেন। আর ফিরবেন না দেশে। যদিও এসব কানকথা। কিন্তু এ কথাটিই চায়ের কাপে ঝড়
তুলছে। আড্ডা, অনুষ্ঠানে উঠে আসছে এ ইস্যুটি। নওয়াজ শরীফ আর দেশে ফিরবেন
কিনা সে বিষয়ে তার পরিবারের কোনো মুখপাত্রও নিশ্চিত করেন নি। এ খবর দিয়েছে
অনলাইন জি নিউজ। এতে বলা হয়, এক সপ্তাহ আগে সরকারি পদ ও নির্বাচনে নিষিদ্ধ
করা হয় নওয়াজকে। এরপরই ক্যান্সারে আক্রান্ত তার স্ত্রী কুলসুমকে দেখতে
বুধবার তিনি পাকিস্তান ছেড়েছেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন কন্যা মরিয়ম। তার এই
দেশছাড়া নিয়ে পাকিস্তানজুড়ে তোলপাড় চলছে। দল থেকে এ বিষয়ে কিছু বলা না
হলেও মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ টুইট করেছেন এ নিয়ে। তিনি বলেছেন, মামলার পরবর্তী যে
শুনানি আছে তার আগেই তারা দেশে ফিরে আসবেন। তবে এক্ষেত্রে তিনি শর্ত আরোপ
করেছেন। বলেছেন, যদি তাদেরকে আদালতে হাজির হওয়া থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়
তাহলেই তারা ফিরে আদালতের মুখোমুখি হবেন। উল্লেখ্য, লন্ডনে ফ্লাট কেনা নিয়ে
নওয়াজ শরীফ পরিবারের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর আগে নওয়াজ
পরিবারের পক্ষ থেকে আরেকটি বিবৃটি দেয়া হয়। তাতে বলা হয়, অসুস্থ কুলসুম
নওয়াজকে দেখতে নওয়াজ শরীফ লন্ডন যাবেন। এর পরে মরিয়ম একটি টুইট করেন। তাতে
তিনি লিখেছেন, আমার মা আবারও হাসপাতালে শয্যাশায়ী। তার জন্য সবার কাছে দোয়অ
চাই। আমি জানি আপনাদের দোয়ায় বিস্ময়কর কিছু ঘটে যেতে পারে। উল্লেখ্য,
পাকিস্তানের বরখাস্তকৃত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের স্ত্রী কুলসুম নওয়াজ
অনেকদিন ধরেই লন্ডনে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার কণ্ঠনালীতে ক্যান্সার। এ জন্য
একবার অপারেশন করানো হয়েছে। তার চিকিৎসা নিয়ে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ
(পিএমএল-এন) একটি বিবৃতি দিয়েছিল এর আগে। তাতে বলা হয়েছিল, কুলসাম নওয়াজের
অপারেশন সফল হয়েছে। তবে তার অবস্থার অবনতি হচ্ছে। হয়তো সেজন্যই নওয়াজ শরীফ
মেয়েকে নিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন লন্ডনে। তার আগে মরিয়ম দেশে ফেরার কথা টুইটে
জানালেও বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আগামী ২১ শে এপ্রিল লাহোরে জাতীয় জবাবদিহিতা
বিষয়ক ব্যুরোতে একদল তদন্তকারীর সামনে হাজির হওয়ার কথা নওয়াজের। তিনি সেই
উপস্থিতি এড়াতে লন্ডন ছুটে গেছেন। রাইওয়ান্ডে অবস্থিতি জাতি উমরা নামে
নওয়াজ শরীরের বাসভবনমুখী একটি সড়ক নির্মাণ করেছেন অবৈধভাবে, এতে সরকারি
অর্থের অপব্যবহার করেছেনÑ এমন অভিযোগে জাতীয় জবাবদিহিতা বিষয়ক ব্যুরো
নওয়াজকে সমন পাঠায়। এই দুর্নীতির মামলায় আগামী ২৩ শে এপ্রিল তার হাজির
হওয়ার কথা ওই আদালতে। এক্ষেত্রে তিনি দৃশ্যত ‘পালিয়েছেন’ বলে মনে করা
হচ্ছে। গত সপ্তাহে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহিদ খাকান আব্বাসি এক্সিট
কন্ট্রোল লিস্টে নওয়াজ শরীফ ও তার পরিবারের সদস্যদের নাম তুলতে অনিচ্ছা
প্রদর্শন করেন। এই তালিকায় যদি নওয়াজ শরীফ বা তার পরিবারের সদস্যরা থাকতেন
তাহলে তারা বিদেশে যেতে পারতেন না। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, জাতীয়
জবাবদিহিতা বিষয়ক ব্যুরো কিন্তু পাকিস্তান সরকারকে একটি নির্দেশ দিয়েছিল।
বলেছিল, নওয়াজ শরীফের ছেলেমেয়ে- মরিয়ম, হাসান, হোসেন, জামাই অবসরপ্রাপ্ত
ক্যাপ্টেন সাফদার আওয়ানকে এক্সিট কন্ট্রোল লিস্টে রাখতে। পানামা পেপারস
কেলেঙ্কারিতে তাদের সবার বিচার চলছে। এর মধ্যে নওয়াজ শরীফের দুই ছেলে
এমনিতেই লন্ডনে অবস্থান করছেন। বাকি ছিলেন তার মেয়ে ও জামাই। মেয়েকে নওয়াজ
সঙ্গে করে নিয়ে গেছেন। ফলে পুরো নওয়াজ পরিবার এখন লন্ডনে। এ জন্যই গুজবটা
বেশি ছড়াচ্ছে। বলা হচ্ছে, নওয়াজ শরীফ পালিয়ে চলে গিয়েছেন লন্ডনে। তিনি আর
পাকিস্তানে ফিরবেন না। অন্যদিকে নওয়াজ শরীফ পরিবারকে কেন এক্সিট কন্ট্রোল
লিস্টে রাখা হয় নি এ জন্য সরকারের কড়া সমালোচনা করেছে বিরোধী দল পাকিস্তান
তেহরিকে ইনসাফ।
No comments