থমথমে ক্যাম্পাসে নজরদারি, আলটিমেটাম by ফররুখ মাহমুদ
কোটা
সংস্কার দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলন ঘিরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ে। শুরুতে আন্দোলন ঠেকাতে জোরালো অবস্থান না নিলেও এখন সরাসরি
বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে ছাত্রলীগ। সংগঠনটির পক্ষ থেকে ক্যাম্পাসে নজরদারি
বাড়ানো হয়েছে। হলে হলে আন্দোলনে অংশ নেয়াদের তালিকা করছেন তারা। গেস্টরুমে
ডেকে হল থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে। আন্দোলনের পক্ষে যারা
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। আবার
অনেকের ফেসবুক আইডি দিয়ে দেয়া হচ্ছে ছাত্রলীগের তৈরি করা ‘গুজবে কান দেবেন
না’ গ্রুপে। সেখানে নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের ‘খেয়ে দেয়া’র হুমকি
দিচ্ছেন। রিপোর্ট করে নষ্ট করে দিচ্ছে আইডি। একসময় ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে
অংশ নিলেও আন্দোলনে অংশ নেয়া অনেক শিক্ষার্থীকে ছাত্রদল-শিবির বানাতে মরিয়া
একটি পক্ষ। ফলে আতঙ্কে হল ছাড়ছেন অনেক শিক্ষার্থী। আবার কেউ কেউ নিজেকে
বিপদমুক্ত রাখতে আগের স্ট্যাটাস ডিলিট করে আন্দোলনকারীদের বিপক্ষে
স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। এদিকে আন্দোলনে যাতে শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে না পারে
সেজন্য হলের পাশাপাশি লাইব্রেরিগুলোতে অবস্থান নিচ্ছেন ছাত্রলীগের
নেতাকর্মীরা। এই উদ্বেগ-আতঙ্কের মধ্যেও নতুন আলটিমেটাম দিয়েছেন
আন্দোলনকারীদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।’ গতকাল বিকালে
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা আগামী
সাতদিনের মধ্যে মামলা প্রত্যাহার না করলে সারা দেশে আবারো ছাত্র ধর্মঘটে
যাওয়ার ঘোষণা দেন।
গত সোমবার আন্দোলনের অন্যতম তিন নেতা যুগ্ম সমন্বয়ককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে থেকে গোয়েন্দা পুলিশ তুলে নেয়ার পর থেকে আতঙ্ক আরো বেড়েছে। প্রকট হয়েছে ছাত্রলীগের হুমকি-ধামকি, কড়া নজরদারি এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নীরবতায়। গত ১৬ই এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের গেস্টরুমে শিক্ষার্থীদের ডেকে আন্দোলনে না যেতে হুঁশিয়ার করে দেয়া হয়। সেখানে বলা হয়, যদি কেউ আন্দোলনে যায় তাহলে তাকে হল থেকে বের করে দেয়া হবে। তাদের নাম গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে পাঠিয়ে দেয়া হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, সবসময় আতঙ্কের মধ্যে থাকি। দিনের বেলায় হলে থাকি না। রাতে হলে আসার পর আতঙ্ক বেশি কাজ করে। কারণ সিনিয়ররা কখন ডাকেন এ চিন্তায় ঘুম হয় না। মাস্টার দা সূর্য সেন হলের এক শিক্ষার্থী জানান, হলে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। বড় ভাইয়েরা আগের মতো আচরণ করছেন। তবে কেমন যেন ভয়ের মধ্যে থাকি। কখন কি হয় সেটা তো বলা যায় না। এমন চিত্র অন্যান্য হলগুলোতেও। তবে বেশি ভীতি ছড়িয়েছে কবি সুফিয়া কামাল হলে। ওই হলে গত ১০ই এপ্রিল আন্দোলনে অংশ নেয়া ছাত্রীদের মারধর করে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইফফাত জাহান এশা। পা কেটে যায় দুই ছাত্রীর। পরে ছাত্রীরা একজোট হয়ে এশাকে পাল্টা মারধর করে এবং জুতার মালা দেয়। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এশাকে বহিষ্কার করে। ১৩ই এপ্রিল ছাত্রলীগ সেই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ও শাখা ছাত্রলীগের ২৪ জন নেতাকে সংগঠন থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও এশার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এরপর থেকে আতঙ্কে রয়েছেন ছাত্রীরা। এশা হলে ফিরে ছাত্রীদের ওপর প্রতিশোধ নিতে পারেন বলে তারা আশংকা করছেন। এরই মধ্যে আতঙ্ক নিয়ে হল ছেড়ে গেছেন বেশ কয়েকজন ছাত্রী। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, হলে হলে হুমকি-ধামকি দেয়া হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নীরব। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও মাস্টার দা সূর্য সেন হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। তিনি বলেন, আজ (গতকাল) প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভা হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা যেকোনো মূল্যে নিশ্চিত করা হবে। হলগুলোতে যাতে একটা স্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করে সেজন্য হলে হলে কাউন্সেলিং প্রোগ্রাম করা হবে।
মামলা প্রত্যাহারে সাত দিনের আলটিমেটাম: এদিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে মামলা প্রত্যাহার করা না হলে ফের ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন পরিষদের যুগ্ম সমন্বয়ক নুরুল হক নূর। এ সময় তিনি বলেন, অজ্ঞাতনামা মামলায় যে কাউকে হয়রানি করা যায়। তাই আমরা এটি প্রত্যাহার চাচ্ছি। সংবাদ মাধ্যমের খবর ও ভিডিও ফুটেজ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে অতিদ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করছি। শিক্ষার্থীদের ওপর কোনো অজ্ঞাতনামা মামলা রাখা যাবে না। নূর বলেন, অধিকতর তদন্ত ও সহায়তার স্বার্থে আমরা ঢাবি প্রশাসন ও পুলিশকে আরো সাতদিন সময় দিচ্ছি। এই সময়ের মধ্যে দোষীদের খুঁজে বের করে অজ্ঞাতনামাদের নামে দেয়া মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস-পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য ছাত্র সমাজ বর্জন করবে। যৌক্তিক দাবি আদায়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও নেতৃত্বদানকারীদের নানা রকম ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে জানিয়ে নূর আরো বলেন, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তাই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ও সক্রিয় ভূমিকা পালনকারী প্রতিটি শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছি এবং প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অতিদ্রুত প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করে বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি। এক প্রশ্নের জবাবে নূর বলেন, একটি মহল ফেসবুকে ‘গুজবে কান দেবেন না’ গ্রুপে আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। সেখানে বলা হচ্ছে আমাদের খেয়ে দিতে। আমরা সবাই জীবননাশের শঙ্কায় আছি। আমাদের আহ্বায়ককেও ভয় দেখানো হচ্ছে। যার কারণে সে আজকের (গতকাল) সংবাদ সম্মেলনে আসেনি। এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ রাশেদ খান, ফারুক হাসান প্রমুখ। এদিকে সংবাদ সম্মেলনের সময় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির আশেপাশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্সের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেয়। আন্দোলনকারীদের সংবাদ সম্মেলনের পর একই স্থানে সংবাদ সম্মেলন করে আবু বক্কর সিদ্দিক। ৮ই এপ্রিল তিনি নিহত হয়েছিলেন বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে গত সোমবার থেকে ঘোষণা দিয়ে লাইব্রেরিতে যাওয়া শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তাদের দেখাদেখি অন্য নেতারাও যাচ্ছেন এখন। ভেতরে কিছু সময় কাটিয়ে নেতারা বের হয়ে লাইব্রেরির সামনে আড্ডা দেন। তবে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের লাইব্রেরিতে আসায় অনেক শিক্ষার্থী দুইদিন ধরে লাইব্রেরিতে যাচ্ছেন না বলে জানা গেছে। এক শিক্ষার্থী জানান, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লাইব্রেরিতে আসেন আন্দোলনে যাতে কেউ যেতে না পারে সেটা নিশ্চিত করতে। তারা পড়তে আসেন না। লাইব্রেরিতে বসে ছবি তুলে বের হয়ে যান। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে সংগঠনটি একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। পরে মিছিল পরবর্তী সমাবেশ করে সংগঠনটি। এসময় ছাত্রফ্রন্ট নেতারা হলে হলে ছাত্রলীগের সন্ত্রাস-দখলদারিত্ব-গেস্টরুমের নামে নির্যাতন বন্ধ এবং কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের হামলার বিচার দাবি করেন। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, সহ-সভাপতি সাদিকুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক নিখিল চন্দ্র নাথ প্রমুখ। সালমান সিদ্দিকী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে বেকাররা চাকরি পাচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকে কর্মসংস্থানেরও কোনো ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। উল্টো যৌক্তিক কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হামলা করা হচ্ছে। তাদের নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হচ্ছে। এসব ঘটনায় আমরা তীব্র নিন্দা জানাই।
গত সোমবার আন্দোলনের অন্যতম তিন নেতা যুগ্ম সমন্বয়ককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে থেকে গোয়েন্দা পুলিশ তুলে নেয়ার পর থেকে আতঙ্ক আরো বেড়েছে। প্রকট হয়েছে ছাত্রলীগের হুমকি-ধামকি, কড়া নজরদারি এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নীরবতায়। গত ১৬ই এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের গেস্টরুমে শিক্ষার্থীদের ডেকে আন্দোলনে না যেতে হুঁশিয়ার করে দেয়া হয়। সেখানে বলা হয়, যদি কেউ আন্দোলনে যায় তাহলে তাকে হল থেকে বের করে দেয়া হবে। তাদের নাম গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে পাঠিয়ে দেয়া হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, সবসময় আতঙ্কের মধ্যে থাকি। দিনের বেলায় হলে থাকি না। রাতে হলে আসার পর আতঙ্ক বেশি কাজ করে। কারণ সিনিয়ররা কখন ডাকেন এ চিন্তায় ঘুম হয় না। মাস্টার দা সূর্য সেন হলের এক শিক্ষার্থী জানান, হলে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। বড় ভাইয়েরা আগের মতো আচরণ করছেন। তবে কেমন যেন ভয়ের মধ্যে থাকি। কখন কি হয় সেটা তো বলা যায় না। এমন চিত্র অন্যান্য হলগুলোতেও। তবে বেশি ভীতি ছড়িয়েছে কবি সুফিয়া কামাল হলে। ওই হলে গত ১০ই এপ্রিল আন্দোলনে অংশ নেয়া ছাত্রীদের মারধর করে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইফফাত জাহান এশা। পা কেটে যায় দুই ছাত্রীর। পরে ছাত্রীরা একজোট হয়ে এশাকে পাল্টা মারধর করে এবং জুতার মালা দেয়। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এশাকে বহিষ্কার করে। ১৩ই এপ্রিল ছাত্রলীগ সেই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ও শাখা ছাত্রলীগের ২৪ জন নেতাকে সংগঠন থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও এশার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এরপর থেকে আতঙ্কে রয়েছেন ছাত্রীরা। এশা হলে ফিরে ছাত্রীদের ওপর প্রতিশোধ নিতে পারেন বলে তারা আশংকা করছেন। এরই মধ্যে আতঙ্ক নিয়ে হল ছেড়ে গেছেন বেশ কয়েকজন ছাত্রী। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, হলে হলে হুমকি-ধামকি দেয়া হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নীরব। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও মাস্টার দা সূর্য সেন হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। তিনি বলেন, আজ (গতকাল) প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভা হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা যেকোনো মূল্যে নিশ্চিত করা হবে। হলগুলোতে যাতে একটা স্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করে সেজন্য হলে হলে কাউন্সেলিং প্রোগ্রাম করা হবে।
মামলা প্রত্যাহারে সাত দিনের আলটিমেটাম: এদিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে মামলা প্রত্যাহার করা না হলে ফের ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন পরিষদের যুগ্ম সমন্বয়ক নুরুল হক নূর। এ সময় তিনি বলেন, অজ্ঞাতনামা মামলায় যে কাউকে হয়রানি করা যায়। তাই আমরা এটি প্রত্যাহার চাচ্ছি। সংবাদ মাধ্যমের খবর ও ভিডিও ফুটেজ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে অতিদ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করছি। শিক্ষার্থীদের ওপর কোনো অজ্ঞাতনামা মামলা রাখা যাবে না। নূর বলেন, অধিকতর তদন্ত ও সহায়তার স্বার্থে আমরা ঢাবি প্রশাসন ও পুলিশকে আরো সাতদিন সময় দিচ্ছি। এই সময়ের মধ্যে দোষীদের খুঁজে বের করে অজ্ঞাতনামাদের নামে দেয়া মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস-পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য ছাত্র সমাজ বর্জন করবে। যৌক্তিক দাবি আদায়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও নেতৃত্বদানকারীদের নানা রকম ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে জানিয়ে নূর আরো বলেন, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তাই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ও সক্রিয় ভূমিকা পালনকারী প্রতিটি শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছি এবং প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অতিদ্রুত প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করে বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি। এক প্রশ্নের জবাবে নূর বলেন, একটি মহল ফেসবুকে ‘গুজবে কান দেবেন না’ গ্রুপে আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। সেখানে বলা হচ্ছে আমাদের খেয়ে দিতে। আমরা সবাই জীবননাশের শঙ্কায় আছি। আমাদের আহ্বায়ককেও ভয় দেখানো হচ্ছে। যার কারণে সে আজকের (গতকাল) সংবাদ সম্মেলনে আসেনি। এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ রাশেদ খান, ফারুক হাসান প্রমুখ। এদিকে সংবাদ সম্মেলনের সময় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির আশেপাশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্সের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেয়। আন্দোলনকারীদের সংবাদ সম্মেলনের পর একই স্থানে সংবাদ সম্মেলন করে আবু বক্কর সিদ্দিক। ৮ই এপ্রিল তিনি নিহত হয়েছিলেন বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে গত সোমবার থেকে ঘোষণা দিয়ে লাইব্রেরিতে যাওয়া শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তাদের দেখাদেখি অন্য নেতারাও যাচ্ছেন এখন। ভেতরে কিছু সময় কাটিয়ে নেতারা বের হয়ে লাইব্রেরির সামনে আড্ডা দেন। তবে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের লাইব্রেরিতে আসায় অনেক শিক্ষার্থী দুইদিন ধরে লাইব্রেরিতে যাচ্ছেন না বলে জানা গেছে। এক শিক্ষার্থী জানান, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লাইব্রেরিতে আসেন আন্দোলনে যাতে কেউ যেতে না পারে সেটা নিশ্চিত করতে। তারা পড়তে আসেন না। লাইব্রেরিতে বসে ছবি তুলে বের হয়ে যান। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে সংগঠনটি একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। পরে মিছিল পরবর্তী সমাবেশ করে সংগঠনটি। এসময় ছাত্রফ্রন্ট নেতারা হলে হলে ছাত্রলীগের সন্ত্রাস-দখলদারিত্ব-গেস্টরুমের নামে নির্যাতন বন্ধ এবং কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের হামলার বিচার দাবি করেন। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, সহ-সভাপতি সাদিকুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক নিখিল চন্দ্র নাথ প্রমুখ। সালমান সিদ্দিকী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে বেকাররা চাকরি পাচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকে কর্মসংস্থানেরও কোনো ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। উল্টো যৌক্তিক কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হামলা করা হচ্ছে। তাদের নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হচ্ছে। এসব ঘটনায় আমরা তীব্র নিন্দা জানাই।
No comments