পড়াশোনার খরচ যোগাতে দেহব্যবসা
লুইস।
টগবগে এক যুবতী। তিনি মেরিন বায়োলজিস্ট। পড়াশোনা করেন লন্ডনে। কিন্তু সেই
পড়াশোনা করতে গিয়ে তাকে ঋণ নিতে হয়েছে ২০ হাজার পাউন্ড। সেই অর্থ শোধ করতে
তাকে বেছে নিতে হয়েছে পতিতাবৃত্তি। লালায়িত পুরুষের সামনে শরীর মেলে দিয়ে
উপার্জন করেন অর্থ। তা দিয়ে এই ঋণ শোধ করার চেষ্টা করছেন লুইস। অবলীলায়
তিনি স্বীকার করেছেন, নিজেই নিজের দেহ বিক্রি করেন। এতে তাকে কেউ প্রলুব্ধ
করে নি। লুইস যে পতিতালয়ে দেহ বিক্রি করেন তা পরিচালনা করেন বৃটিশ পুলিশের
সাবেক একজন গোয়েন্দা বা ডিটেক্টিভ। কৌশলগতভাবে এই পেশা অবৈধ হলেও ওই পুলিশ
কর্মকর্তা দুই রুমের একটি ফ্ল্যাট ব্যবহার করে তার ব্যবসা পেতেছেন। সেখানে
খদ্দেরদেরকে স্বাগত জানানোর জন্য বসানো হয়েছে অভ্যর্থনাকারী। ব্যবহার করা
হয় পেশাগত বুকিং ব্যবস্থা। এ নিয়ে লন্ডনের পত্রপত্রিকায় সচিত্র রিপোর্ট
প্রকাশিত হয়েছে। এতে ওই যুবতীকে শুধু লুইস নামে প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি
মেরিন বায়োলজিস্ট, গ্রাজুয়েট। মঙ্গলবার তাকে নিয়ে টেলিভিশনে প্রতিবেদন
প্রকাশিত হওয়ায় চারদিকে শোরগোল পড়ে গেছে। এতে উঠে এসেছে বৃটেনে পড়াশোনার
ক্ষেত্রে ভয়াবহ অবস্থা। এমনি ঋণ নিয়ে পড়াশোনা করছেন অনেক শিক্ষার্থী। বিশেষ
করে মেয়েরা সেই ঋণ শোধ করতে গিয়ে ঝুঁকে পড়ছে দেহ ব্যবসার মতো জঘন্য পেশায়।
তাই লুইস বলেছেন, আমি পেট্রোল স্টেশনে সর্বনিম্ন বেতনের কাজ পেতে পারতাম।
তা সত্ত্বেও আমি বেছে নিয়েছি দেহব্যবসা। এর কারণ এ পেশার মাধ্যমে তিনি
প্রতি সপ্তাহে উপার্জন করতে পারেন ৯০০ পাউন্ড। বিবিসি’র ভিক্টোরিয়া
ডারবিশায়ারকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি। তাতে লুইস বলেছেন, আমি আমার অধিকার
নিয়ে একগুঁয়ে। আমি কে, আমি কি করবো তা অন্য কেউ নির্ধারণ করতে পারবে না।
আমি চাই না যে, মানুষ ভাবুক আমি ড্রাগ ব্যবহার করি। আমাকে কেউ এ কাজে বাধ্য
করে নি। আমাকে পাচার করে এ ব্যবসায় নামানো হয় নি। সাধারণ একজন মানুষের
মতোই আমি এ পেশায় এসেছি। কারণ, আমার অর্থের প্রয়োজন। আমার নিজের ভবিষ্যৎ
নিরাপদ করার জন্য তা দরকার। এ জন্যই আমি এই কাজটিই বেছে নিয়েছি। উল্লেখ্য,
লন্ডনের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে ওয়েস্টমিনস্টারের ভিক্টোরিয়া আবাসিক এলাকায়
ছিমছাম দু’ বেডরুমের একটি ফ্ল্যাট। সেখানেই ব্যবসা পেতেছেন লুইস। প্রতি আধা
ঘণ্টার জন্য সেখানে প্রতিজন খদ্দেরের কাছ থেকে আদায় করা হয় ৭০ পাউন্ড। তবে
প্রচলিত পতিতালয়ে এ অর্থের পরিমাণ ২৫ পাউন্ড। যেদিন খদ্দেরের বেশি ভিড়
থাকে সেদিন লুইসকে সামাল দিতে হয় প্রায় ৯ খদ্দেরকে। পতিতারা যতক্ষণ নিরাপদ
থাকবেন ততক্ষণ পর্যন্ত পতিতাবৃতি বা দেহব্যবসা অনুমোদিত বলে মঙ্গলবার রাতে
স্বীকার করেছেন এক সিনিয়র পুলিশ অফিসার। ড্যান ভাজকোভিচ নামের ওই অফিসার
বলেছেন, শুধু গ্রেপ্তার করে তেমন কাজ হয় না। এখন যারা এ ব্যবসায় নিয়োজিত
তাদেরকে নিরাপত্তা দেয়াই তার অগ্রাধিকার। দেশজুড়ে যৌন ব্যবসার বিরুদ্ধে
পুলিশিং দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রধান কনস্টেবল বলেছেন, সব সময় বিচার কাজই
সমস্যার সমাধান নয়। লুইস যে পতিতালয়ে দেহব্যবসা করেন তার মালিক সাবেক একজন
পুলিশ অফিসার- এ তথ্য আগেই দেয়া হয়েছে। তিনি মঙ্গলবার বলেছেন, তার সাবেক
কিছু সহকর্মী এই ব্যবসাটা বন্ধ করে দেয়ার পক্ষপাতী নন। এখন তার রয়েছে এমন
তিনটি পতিতালয়। লন্ডনের পশ্চিম ও মধ্য লন্ডনে সেগুলোর অবস্থান। এতে জড়িত
রয়েছেন লুইস সহ ২০ যুবতী। এ ব্যবসার প্রচারণা চালানো হয় অনলাইনে। যে বাসায় এ
ব্যবসা চালানো হচ্ছে তা একটি ভাড়া ফ্ল্যাট। ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে পতিতালয়
পরিচালনা অবৈধ। কিন্তু ব্যক্তিবিশেষ যদি দেহ ব্যবসা করেন, দেহ বিক্রি করেন,
ইচ্ছে করে কেউ অর্থের বিনিময়ে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেন তা বৈধ। লুইসের
পতিতালয়ের মালিকের নাম প্রকাশ করা হয়েছে শুধু কার্ল নামে। তিনি বলেছেন,
তিনি এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আছেন ১৫ বছর। এ থেকে প্রতি বছর তিনি উপার্জন
করেন ৬০ হাজার পাউন্ড। কার্লের বয়স ৪৫ বছর। বলেছেন, তিনি এসব যুবতীকে বাধ্য
করেন নি এ পেশায় আসতে। তাই তিনি এ সংক্রান্ত কোনো আইন লঙ্ঘন করেন নি। তিনি
বলেছেন, আমরা মদ অনুমোদন করি না। আমাদের এ ব্যবসায় অপ্রাপ্ত বয়স্ক কোনো
মেয়ে নেই। আমরা সবার পাসপোর্ট চেক করে তবেই তাদেরকে দলে নেই।
No comments