খালেদার চিকিৎসা নিয়ে বিএনপিতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা by কাফি কামাল
কারাগারে
প্রতিকূল পরিবেশে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
সুচিকিৎসার অভাবে তার স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে দিনদিন। ঘাড় থেকে শোল্ডার
হয়ে বাম হাতের আঙুলের গিট এবং কোমর থেকে বাম পায়ের তালু পর্যন্ত তীব্র
ব্যথায় ভুগছেন তিনি। তার শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসা নিয়ে বিএনপিতে তৈরি
হয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। দলটির নেতারা বলছেন, কারাগারে যাওয়ার পর সাবেক
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সামাজিক অবস্থান ও সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে স্বাস্থ্যগত
দিক বিবেচনায় বিশেষ কোনো সুবিধা পাননি খালেদা জিয়া। প্রথম তিনদিন মেলেনি
কারা ডিভিশন। পরে ডিভিশন পেলেও দীর্ঘদিনের অর্থোপেডিক পেশেন্ট হিসেবেও
মেলেনি স্বাস্থ্য উপযোগী প্রয়োজনীয় খাট ও বিছানা-বালিশ। বিশেষ করে
প্রয়োজনের তুলনায় অপরিসর খাট, শক্ত বালিশ ও তোষকের কারণেই বেড়ে যায় তার
অসুস্থতা। বিএনপির নেতাদের অভিযোগ- খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে পড়ার পর তার
শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হলেও সুচিকিৎসা নিয়ে পদে পদে খামখেয়ালীপনা করছে
কারাকর্তৃপক্ষ ও সরকার। কারাবিধি অনুযায়ী বারবার আবেদন-নিবেদনের পরও খালেদা
জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দেয়া হচ্ছে না তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের। এমনকি
সরকার গঠিত মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শগুলো মানা হচ্ছে না। সর্বোপরি খালেদা
জিয়াকে তার চিকিৎসার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এদিকে খালেদা
জিয়ার চিকিৎসা ইস্যুতে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন সরকার ও বিরোধী দলের নেতারা।
প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে জানিয়ে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ইস্যু নিয়ে
বিরোধী দলকে রাজনীতি না করার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ
নাসিম। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার জীবন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপি’র
কয়েকজন সিনিয়র নেতা।
কারাবন্দি খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্য, আইনজীবী ও সরকারি মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে তার শারীরিক পরিস্থিতি সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, কারাগারে বিএনপি চেয়ারপারসন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এবং তার জীবন ঝুঁকির মুখে এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ খালেদা জিয়া একজন সত্তরোর্ধ নারী। তার উপর দীর্ঘদিন ধরেই তিনি একজন অর্থোপেডিক পেশেন্ট। অতীতে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবে তার দুই হাঁটু রিপ্লেসমেন্ট হয়েছে এবং যুক্তরাজ্যে তার চোখের অপারেশন হয়েছে। এসব কথা দেশের সব মানুষই জানে। ডা. জাহিদ বলেন, খালেদা জিয়া একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বীরবিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী, বিএনপি’র মতো একটি বড় দলের চেয়ারপারসন- কারাগারে তার সঙ্গে এসবের কিছুই বিবেচনা করা হয়নি। কারাকর্তৃপক্ষ পরিত্যক্ত ভবনের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তার জন্য বরাদ্দ করে অপরিসর খাট এবং শক্ত বিছানা-বালিশ। শক্ত বিছানা ও বালিশের কারণে প্রথমে তার ঘাড়ে ব্যথা শুরু হয় এবং একপর্যায়ে তা শোল্ডার হয়ে বামহাতে ছড়িয়ে পড়ে। একই সঙ্গে কোমরে ব্যথা শুরু হয়ে বাম হাঁটু হয়ে পায়ের পাতা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। ডা. জাহিদ বলেন, কারাগারে খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে পড়লেও প্রথমে নজর দেয়নি কারাকর্তৃপক্ষ। তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাওয়ার পরিবারের সদস্য ও আইনজীবীদের কাছে খবর পান বিএনপি নেতারা। তারপর তার সঙ্গে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের সাক্ষাতের সুযোগ দেয়ার জন্য বারবার আবেদন নিবেদন করা হলেও কারা কর্তৃপক্ষ তা অগ্রাহ্য করে। পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে ১লা এপ্রিল সরকারি চিকিৎসকদের দিয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে কারাকর্তৃপক্ষ। সেখানে চিকিৎসকরা কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি তাকে ‘অর্থোপেডিক কমপোর্টেবল বেড’ দেয়ার সুপারিশ করেন। মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী ৭ই এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে এনে তার ঘাড় ও কোমরের কয়েকটি এক্স-রে করা হয়। ওইদিন কারাকর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের হাসপাতালে ডাকলেও তার স্বাস্থ্যপরীক্ষাসহ তাদের কোনো পরামর্শ দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়নি। ডা. জাহিদ বলেন, এক্স-রে পরীক্ষায় রিপোর্ট দেখে সরকারি মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরাই মতামত দেন খালেদা জিয়ার ঘাড়ে ও কোমরে সমস্যা রয়েছে। কিন্তু তাদের সে পরামর্শকেও আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উন্নত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়নি। তিনি বলেন, কারাগারে কোনো ফিজিওথেরাপিস্টও নেই, রয়েছেন একজন ফার্মাসিস্ট। এমআরআই ছাড়া আন্দাজের উপর তাকে ব্যথার জন্য ব্যায়াম করালে বড় কোনো সমস্যাও তৈরি হতে পারে। বিএনপি’র তরফে ইউনাইটেড হাসপাতালে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে চিকিৎসা দেয়ার দাবিও গ্রাহ্য করা হচ্ছে না। সরকার ও কারাকর্তৃপক্ষের এমন আচরণে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য ও জীবন যেমন ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে তেমনি দেশবাসীর মধ্যে নানা শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বিএনপি’র স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. ফাওয়াজ হোসেন শুভ জানান, কারাগারে খালেদা জিয়ার সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে না। ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের পরামর্শে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দূরের কথা, সরকারি চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনেও তার চিকিৎসা হচ্ছে না।
বিএনপি চেয়ারপারসনের একজন ব্যক্তিগত চিকিৎসক জানান, সরকারি মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের তরফে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তা আমাদের উদ্বিগ্ন করে তুলছে। তার অর্থোপেডিক ব্যথার সঠিক কারণ অনুসন্ধানে এমআরআই করা প্রয়োজন। তাহলেই বোঝা যাবে, তার স্পাইনালে কোনো সমস্যা আছে কিনা। কিন্তু বিএসএমএমইউ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বা অন্য কোনো সরকারি হাসপাতালে ‘বোনম্যারো ডেনসিটি’ পরীক্ষা সম্ভব নয়। কারণ সেখানে প্রয়োজনীয় অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি নেই। এ পরীক্ষাগুলো কেবল ইউনাইটেড বা ল্যাবএইডের মতো বিশেষায়িত হাসপাতালেই সম্ভব। এছাড়া সরকারি চিকিৎসকদের ওপর আস্থা না পাওয়ায় ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী পুরনো ওষুধই সেবন করে যাচ্ছেন তিনি। বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্য একজন চিকিৎসক বলেন, বয়স্ক মানুষের শারীরিক পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার অন্য একটি কারণ হচ্ছে নিঃসঙ্গতা। কারাগারে যে পরিত্যক্ত ভবনে তাকে রাখা হয়েছে সেটা যে কোনো বয়স্ক মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ কোনো কক্ষেও নয়, তাকে রাখা হয়েছে হলরুমের মতো একটি কক্ষে। সেখানে সময় কাটানোর মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও নেই বলে জানা গেছে। সবমিলিয়ে আসলে খালেদা জিয়াকে এক ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছে। কেবল চিকিৎসাই নয়, একজন রোগীর সুস্থতার জন্য পরিবেশ একটি বড় নিয়ামক। এদিকে বুধবার বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ বলেন, কারাবন্দি দেশনেত্রীর স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা নিয়ে আমরা বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করলেও কারাকর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগই গ্রহণ করছে না। খালেদা জিয়াকে যথাযথ মর্যাদায় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তা ডাহা মিথ্যাচার। রিজভী বলেন, সরকারের মেডিকেল বোর্ড দেশনেত্রীকে অর্থোপেডিক বেডসহ যেসব চিকিৎসার সুপারিশ করেছিল তা এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হয়নি। তার অসুস্থতা দিনদিন বাড়ছে। কিন্তু কারাগারে তার কোনো চিকিৎসাই হচ্ছে না। মনে হচ্ছে এতে গভীর চক্রান্ত রয়েছে। চিকিৎসা নিয়ে সরকার ও কারা কর্তৃৃপক্ষের টালবাহানায় দেশনেত্রীর জীবন নিয়ে আমরা গভীর শঙ্কা প্রকাশ করছি। এদিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক প্রতিবাদ সভায় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিচারিক রায়ে নয়, রাজনৈতিক রায়ে খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠিয়েছে সরকার। স্বৈরাচারী সরকারগুলো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে কেবল জেলেই পাঠায় না শারীরিকভাবে নিপীড়ন-নির্যাতনের মাধ্যমে প্রতিপক্ষ থেকে মুক্ত হতে চায়। তাই খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়েও হেলাফেলা করা হচ্ছে। এর আগে মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক প্রতিবাদ সভায় দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় নেতাকর্মীদের বলেন, শেখ হাসিনা কোনো অবস্থাতেই খালেদা জিয়াকে জীবিত অবস্থায় মুক্তি দেবে না। এই রূঢ় বাস্তব কথাগুলো আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি। সেইভাবে আপনারা প্রস্তুত হোন।
কারাবন্দি খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্য, আইনজীবী ও সরকারি মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে তার শারীরিক পরিস্থিতি সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, কারাগারে বিএনপি চেয়ারপারসন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এবং তার জীবন ঝুঁকির মুখে এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ খালেদা জিয়া একজন সত্তরোর্ধ নারী। তার উপর দীর্ঘদিন ধরেই তিনি একজন অর্থোপেডিক পেশেন্ট। অতীতে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবে তার দুই হাঁটু রিপ্লেসমেন্ট হয়েছে এবং যুক্তরাজ্যে তার চোখের অপারেশন হয়েছে। এসব কথা দেশের সব মানুষই জানে। ডা. জাহিদ বলেন, খালেদা জিয়া একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বীরবিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী, বিএনপি’র মতো একটি বড় দলের চেয়ারপারসন- কারাগারে তার সঙ্গে এসবের কিছুই বিবেচনা করা হয়নি। কারাকর্তৃপক্ষ পরিত্যক্ত ভবনের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তার জন্য বরাদ্দ করে অপরিসর খাট এবং শক্ত বিছানা-বালিশ। শক্ত বিছানা ও বালিশের কারণে প্রথমে তার ঘাড়ে ব্যথা শুরু হয় এবং একপর্যায়ে তা শোল্ডার হয়ে বামহাতে ছড়িয়ে পড়ে। একই সঙ্গে কোমরে ব্যথা শুরু হয়ে বাম হাঁটু হয়ে পায়ের পাতা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। ডা. জাহিদ বলেন, কারাগারে খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে পড়লেও প্রথমে নজর দেয়নি কারাকর্তৃপক্ষ। তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাওয়ার পরিবারের সদস্য ও আইনজীবীদের কাছে খবর পান বিএনপি নেতারা। তারপর তার সঙ্গে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের সাক্ষাতের সুযোগ দেয়ার জন্য বারবার আবেদন নিবেদন করা হলেও কারা কর্তৃপক্ষ তা অগ্রাহ্য করে। পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে ১লা এপ্রিল সরকারি চিকিৎসকদের দিয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে কারাকর্তৃপক্ষ। সেখানে চিকিৎসকরা কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি তাকে ‘অর্থোপেডিক কমপোর্টেবল বেড’ দেয়ার সুপারিশ করেন। মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী ৭ই এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে এনে তার ঘাড় ও কোমরের কয়েকটি এক্স-রে করা হয়। ওইদিন কারাকর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের হাসপাতালে ডাকলেও তার স্বাস্থ্যপরীক্ষাসহ তাদের কোনো পরামর্শ দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়নি। ডা. জাহিদ বলেন, এক্স-রে পরীক্ষায় রিপোর্ট দেখে সরকারি মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরাই মতামত দেন খালেদা জিয়ার ঘাড়ে ও কোমরে সমস্যা রয়েছে। কিন্তু তাদের সে পরামর্শকেও আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উন্নত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়নি। তিনি বলেন, কারাগারে কোনো ফিজিওথেরাপিস্টও নেই, রয়েছেন একজন ফার্মাসিস্ট। এমআরআই ছাড়া আন্দাজের উপর তাকে ব্যথার জন্য ব্যায়াম করালে বড় কোনো সমস্যাও তৈরি হতে পারে। বিএনপি’র তরফে ইউনাইটেড হাসপাতালে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে চিকিৎসা দেয়ার দাবিও গ্রাহ্য করা হচ্ছে না। সরকার ও কারাকর্তৃপক্ষের এমন আচরণে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য ও জীবন যেমন ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে তেমনি দেশবাসীর মধ্যে নানা শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বিএনপি’র স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. ফাওয়াজ হোসেন শুভ জানান, কারাগারে খালেদা জিয়ার সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে না। ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের পরামর্শে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দূরের কথা, সরকারি চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনেও তার চিকিৎসা হচ্ছে না।
বিএনপি চেয়ারপারসনের একজন ব্যক্তিগত চিকিৎসক জানান, সরকারি মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের তরফে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তা আমাদের উদ্বিগ্ন করে তুলছে। তার অর্থোপেডিক ব্যথার সঠিক কারণ অনুসন্ধানে এমআরআই করা প্রয়োজন। তাহলেই বোঝা যাবে, তার স্পাইনালে কোনো সমস্যা আছে কিনা। কিন্তু বিএসএমএমইউ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বা অন্য কোনো সরকারি হাসপাতালে ‘বোনম্যারো ডেনসিটি’ পরীক্ষা সম্ভব নয়। কারণ সেখানে প্রয়োজনীয় অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি নেই। এ পরীক্ষাগুলো কেবল ইউনাইটেড বা ল্যাবএইডের মতো বিশেষায়িত হাসপাতালেই সম্ভব। এছাড়া সরকারি চিকিৎসকদের ওপর আস্থা না পাওয়ায় ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী পুরনো ওষুধই সেবন করে যাচ্ছেন তিনি। বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্য একজন চিকিৎসক বলেন, বয়স্ক মানুষের শারীরিক পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার অন্য একটি কারণ হচ্ছে নিঃসঙ্গতা। কারাগারে যে পরিত্যক্ত ভবনে তাকে রাখা হয়েছে সেটা যে কোনো বয়স্ক মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ কোনো কক্ষেও নয়, তাকে রাখা হয়েছে হলরুমের মতো একটি কক্ষে। সেখানে সময় কাটানোর মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও নেই বলে জানা গেছে। সবমিলিয়ে আসলে খালেদা জিয়াকে এক ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছে। কেবল চিকিৎসাই নয়, একজন রোগীর সুস্থতার জন্য পরিবেশ একটি বড় নিয়ামক। এদিকে বুধবার বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ বলেন, কারাবন্দি দেশনেত্রীর স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা নিয়ে আমরা বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করলেও কারাকর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগই গ্রহণ করছে না। খালেদা জিয়াকে যথাযথ মর্যাদায় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তা ডাহা মিথ্যাচার। রিজভী বলেন, সরকারের মেডিকেল বোর্ড দেশনেত্রীকে অর্থোপেডিক বেডসহ যেসব চিকিৎসার সুপারিশ করেছিল তা এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হয়নি। তার অসুস্থতা দিনদিন বাড়ছে। কিন্তু কারাগারে তার কোনো চিকিৎসাই হচ্ছে না। মনে হচ্ছে এতে গভীর চক্রান্ত রয়েছে। চিকিৎসা নিয়ে সরকার ও কারা কর্তৃৃপক্ষের টালবাহানায় দেশনেত্রীর জীবন নিয়ে আমরা গভীর শঙ্কা প্রকাশ করছি। এদিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক প্রতিবাদ সভায় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিচারিক রায়ে নয়, রাজনৈতিক রায়ে খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠিয়েছে সরকার। স্বৈরাচারী সরকারগুলো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে কেবল জেলেই পাঠায় না শারীরিকভাবে নিপীড়ন-নির্যাতনের মাধ্যমে প্রতিপক্ষ থেকে মুক্ত হতে চায়। তাই খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়েও হেলাফেলা করা হচ্ছে। এর আগে মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক প্রতিবাদ সভায় দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় নেতাকর্মীদের বলেন, শেখ হাসিনা কোনো অবস্থাতেই খালেদা জিয়াকে জীবিত অবস্থায় মুক্তি দেবে না। এই রূঢ় বাস্তব কথাগুলো আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি। সেইভাবে আপনারা প্রস্তুত হোন।
No comments