‘তখন আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি’ by আব্দুল আলীম
মোহাম্মদ
পনির হোসেন। প্রথম কোনো বাংলাদেশি হিসেবে সাংবাদিকতার নোবেলখ্যাত
পুলিৎজার পুরস্কারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তার নাম। এ বছর আন্তর্জাতিক বার্তা
সংস্থা রয়টার্সের ফটো ফিচার পুলিৎজার পায়। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা
জনগোষ্ঠীর দুর্দশা নিয়ে করা ওই ফটো ফিচারে কাজ করেন বিভিন্ন দেশের সাতজন
আলোকচিত্রী। তাদের মধ্যে পনির হোসেনও ছিলেন। পুরস্কার ঘোষণার পর পনির
জানান, ওই ফটো স্টোরিতে তার নিজের তোলা তিনটি ছবি ছিল। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে
তোলা ওই ছবিগুলো এডিট করার সময় ছবি দেখে নিজেই চোখের পানি ফেলেছেন।
পনিরের জন্ম ১৯৮৯ সালের ১০ই মে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান থানার বাসাইল ইউনিয়নের গুয়াখোলা গ্রামে। বাবা পুরান ঢাকায় স্টিলের ব্যবসায়ী। ৪ ভাই ১ বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। পড়াশোনা করেছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। শুরুতে এক বন্ধুর ছবি তোলা দেখে নিজের মধ্যে ফটোগ্রাফির প্রতি আগ্রহ জাগে। সেই আগ্রহ থেকে ২০১০ সালের শেষের দিকে ক্যামেরা কিনে ফটোগ্রাফি শুরু করেন। ২০১৪ সালে ঢাকায় কাউন্টার ফটো নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে জলবুায় পরিবর্তনের ওপরে ফটোগ্রাফির প্রশিক্ষণ নেন। এরপরই ফটোগ্রাফিকে পেশায় পরিণত করার সিদ্ধান্ত নেন।
পনির মানবজমিনকে বলেন, শুরু করার সিদ্ধান্ত নিলেও পরিবার বাদ সাধে। কারণ আমার বাবা-মায়ের এ বিষয়ে তেমন কোনো ধারণা নেই। তারা খুব বেশি একাডেমিক শিক্ষিতও না। আমি একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। সবাই চায় তাদের সন্তানের ভালো ভবিষ্যৎ। পরবর্তীতে কোনদিন অর্থনৈতিক সংকটে পড়েন ভেবে বিরোধিতা করেছিলেন। ইউএসএভিত্তিক নিউজ এজেন্সি জুমা প্রেস ও ইতালিভিত্তিক নুর ফটোতে ২০১৫ সাল থেকে কন্ট্রিবিউটর হিসেবে কাজ শুরু করি। এটাই প্রফেশনালি ফটোগ্রাফি। এখানে কাজ করতে করতে গার্ডিয়ান, নিউ ইয়র্ক টাইমস, টাইমস এগুলোতে নিয়মিত ছবি ছাপা হতে থাকে। এখান থেকে হাত খরচ আসতো। ফিলিপাইনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজুয়াল জার্নালিজমের ওপরে একটি ডিপ্লোমা করি। এটা স্কলারশিপ ছিল। এটা অনলাইন কোর্স ছিল। শুধু প্রেজেন্টেশনের জন্য ফিলিপাইনে যেতে হয়েছিল। এই কোর্স করা অবস্থাতে ২০১৬ সালের জুলাই মাসে রয়টার্সে চাকরি হলো ফটোগ্রাফার হিসেবে। বাংলাদেশে রয়টার্সের দুই সিস্টেমে লোক নেয়। একটি হলো স্টিংগার অপরটি হলো অ্যাসাইনমেন্ট বেজ। বাংলাদেশে কোনো এজেন্সিরই স্টাফ নেই। বলা যায় আমি স্থায়ী ফটোগ্রাফার।
পুরস্কারটি পেয়েছি ৭ জন ফটোগ্রাফারের ১৬টি ছবির জন্য। এর মধ্যে আমার ৩টা ছবি আছে। এই ৭ জনের মধ্যে বিভিন্ন দেশের ফটোগ্রাফার আছেন। এর মধ্যে একটা ছবিতে এক রোহিঙ্গা মা মৃত শিশুকে চুমো দেয়ার দৃশ্য ছিল।
সাধারণত অন্যান্য দিনের মতো সকালে আমরা টেকনাফের শাহপরির দ্বীপে সাগরপাড় দিয়ে হাঁটতে থাকি। একটা নৌকা পেলাম যেখানে ২০/২৫ জনের মতো একটি দল ছিল। তাদের ছবি তোলার পর এক সিএনজি ওয়ালা খবর দিল অন্যদিকে একটি নৌকা এসেছে। সেখানে মানুষ মারা গেছে। সঙ্গে সঙ্গে ১০ মিনিটের মধ্যে ওই সিএনজি নিয়ে সেখানে পৌঁছলাম। সেখানে গিয়ে মর্মান্তিক ঘটনা দেখতে পেলাম। একজন মা তার মৃত বাচ্চা নিয়ে কাঁদছেন। আর তার মুখে চুমো দিচ্ছেন। তখন পেশাগত কারণে ইমোশন কন্ট্রোল করেছি। কারণ, এমন ঘটনা আমাদের নিয়মিত দেখতে হয়।
কিন্তু যখন ছবি এডিট করছিলাম তখন আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। ভাবছিলাম একটা মানুষ কতটা বিপদে পড়লে এভাবে অজানা গন্তব্যে পাড়ি জমায়। ওই পরিবারের সঙ্গে নিজেকে মিলাচ্ছিলাম। আমার নিজের পরিবার নিয়ে যদি কোনো কারণে দেশ ছেড়ে পালাতে হয় তাহলে কেমন হতো।
তিনি বলেন, পুলিৎজারের ক্ষেত্রে নিউজগুলো অফিস থেকে জমা দেয়া হয়। এখানে নিয়ম হলো যে ছবি বা নিউজ আমেরিকা থেকে প্রকাশিত কোনো গণমাধ্যমে ছাপা হওয়া ছবি বা নিউজই পুরস্কারের জন্য যোগ্য। এটা জমা দেয়ার ক্ষেত্রে আমার কোনো হাত ছিল না। অফিসই সব করেছে। যারা পুরস্কার পেয়েছেন তাদের কোনো ঠিকানা পুলিৎজারের কাছে নেই। তাদের কাছে আছে রয়টার্সের ঠিকানা। তারা রয়টার্সকে জানিয়েছে।
পুরস্কারের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, এটা আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে আমার মতো এতো কম বয়সে পুলিৎজার পাওয়া একটা সেই রকম ব্যাপার। যা কয়েকটা শব্দ দিয়ে তা প্রকাশ করা যায় না। পুলিৎজা হয়তো আমার হাত দিয়ে এসেছে কিন্তু আমি মনে করি আমার পাশাপাশি এটা বাংলাদেশেরই একটা অর্জন। এবং আরো বেশি খুশি হব যদি যাদের ছবি তুলেছি তাদের যদি কোনো পরিবর্তন হয়। মিয়ানমার হোক, বাংলাদেশ সরকার হোক আর জাতি সংঘের হোক। মিয়ানমার যদি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় তাহলে মনে করবো ছবি তুলে কোনো কাজ হয়েছে।
পনিরের জন্ম ১৯৮৯ সালের ১০ই মে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান থানার বাসাইল ইউনিয়নের গুয়াখোলা গ্রামে। বাবা পুরান ঢাকায় স্টিলের ব্যবসায়ী। ৪ ভাই ১ বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। পড়াশোনা করেছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। শুরুতে এক বন্ধুর ছবি তোলা দেখে নিজের মধ্যে ফটোগ্রাফির প্রতি আগ্রহ জাগে। সেই আগ্রহ থেকে ২০১০ সালের শেষের দিকে ক্যামেরা কিনে ফটোগ্রাফি শুরু করেন। ২০১৪ সালে ঢাকায় কাউন্টার ফটো নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে জলবুায় পরিবর্তনের ওপরে ফটোগ্রাফির প্রশিক্ষণ নেন। এরপরই ফটোগ্রাফিকে পেশায় পরিণত করার সিদ্ধান্ত নেন।
পনির মানবজমিনকে বলেন, শুরু করার সিদ্ধান্ত নিলেও পরিবার বাদ সাধে। কারণ আমার বাবা-মায়ের এ বিষয়ে তেমন কোনো ধারণা নেই। তারা খুব বেশি একাডেমিক শিক্ষিতও না। আমি একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। সবাই চায় তাদের সন্তানের ভালো ভবিষ্যৎ। পরবর্তীতে কোনদিন অর্থনৈতিক সংকটে পড়েন ভেবে বিরোধিতা করেছিলেন। ইউএসএভিত্তিক নিউজ এজেন্সি জুমা প্রেস ও ইতালিভিত্তিক নুর ফটোতে ২০১৫ সাল থেকে কন্ট্রিবিউটর হিসেবে কাজ শুরু করি। এটাই প্রফেশনালি ফটোগ্রাফি। এখানে কাজ করতে করতে গার্ডিয়ান, নিউ ইয়র্ক টাইমস, টাইমস এগুলোতে নিয়মিত ছবি ছাপা হতে থাকে। এখান থেকে হাত খরচ আসতো। ফিলিপাইনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজুয়াল জার্নালিজমের ওপরে একটি ডিপ্লোমা করি। এটা স্কলারশিপ ছিল। এটা অনলাইন কোর্স ছিল। শুধু প্রেজেন্টেশনের জন্য ফিলিপাইনে যেতে হয়েছিল। এই কোর্স করা অবস্থাতে ২০১৬ সালের জুলাই মাসে রয়টার্সে চাকরি হলো ফটোগ্রাফার হিসেবে। বাংলাদেশে রয়টার্সের দুই সিস্টেমে লোক নেয়। একটি হলো স্টিংগার অপরটি হলো অ্যাসাইনমেন্ট বেজ। বাংলাদেশে কোনো এজেন্সিরই স্টাফ নেই। বলা যায় আমি স্থায়ী ফটোগ্রাফার।
পুরস্কারটি পেয়েছি ৭ জন ফটোগ্রাফারের ১৬টি ছবির জন্য। এর মধ্যে আমার ৩টা ছবি আছে। এই ৭ জনের মধ্যে বিভিন্ন দেশের ফটোগ্রাফার আছেন। এর মধ্যে একটা ছবিতে এক রোহিঙ্গা মা মৃত শিশুকে চুমো দেয়ার দৃশ্য ছিল।
সাধারণত অন্যান্য দিনের মতো সকালে আমরা টেকনাফের শাহপরির দ্বীপে সাগরপাড় দিয়ে হাঁটতে থাকি। একটা নৌকা পেলাম যেখানে ২০/২৫ জনের মতো একটি দল ছিল। তাদের ছবি তোলার পর এক সিএনজি ওয়ালা খবর দিল অন্যদিকে একটি নৌকা এসেছে। সেখানে মানুষ মারা গেছে। সঙ্গে সঙ্গে ১০ মিনিটের মধ্যে ওই সিএনজি নিয়ে সেখানে পৌঁছলাম। সেখানে গিয়ে মর্মান্তিক ঘটনা দেখতে পেলাম। একজন মা তার মৃত বাচ্চা নিয়ে কাঁদছেন। আর তার মুখে চুমো দিচ্ছেন। তখন পেশাগত কারণে ইমোশন কন্ট্রোল করেছি। কারণ, এমন ঘটনা আমাদের নিয়মিত দেখতে হয়।
কিন্তু যখন ছবি এডিট করছিলাম তখন আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। ভাবছিলাম একটা মানুষ কতটা বিপদে পড়লে এভাবে অজানা গন্তব্যে পাড়ি জমায়। ওই পরিবারের সঙ্গে নিজেকে মিলাচ্ছিলাম। আমার নিজের পরিবার নিয়ে যদি কোনো কারণে দেশ ছেড়ে পালাতে হয় তাহলে কেমন হতো।
তিনি বলেন, পুলিৎজারের ক্ষেত্রে নিউজগুলো অফিস থেকে জমা দেয়া হয়। এখানে নিয়ম হলো যে ছবি বা নিউজ আমেরিকা থেকে প্রকাশিত কোনো গণমাধ্যমে ছাপা হওয়া ছবি বা নিউজই পুরস্কারের জন্য যোগ্য। এটা জমা দেয়ার ক্ষেত্রে আমার কোনো হাত ছিল না। অফিসই সব করেছে। যারা পুরস্কার পেয়েছেন তাদের কোনো ঠিকানা পুলিৎজারের কাছে নেই। তাদের কাছে আছে রয়টার্সের ঠিকানা। তারা রয়টার্সকে জানিয়েছে।
পুরস্কারের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, এটা আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে আমার মতো এতো কম বয়সে পুলিৎজার পাওয়া একটা সেই রকম ব্যাপার। যা কয়েকটা শব্দ দিয়ে তা প্রকাশ করা যায় না। পুলিৎজা হয়তো আমার হাত দিয়ে এসেছে কিন্তু আমি মনে করি আমার পাশাপাশি এটা বাংলাদেশেরই একটা অর্জন। এবং আরো বেশি খুশি হব যদি যাদের ছবি তুলেছি তাদের যদি কোনো পরিবর্তন হয়। মিয়ানমার হোক, বাংলাদেশ সরকার হোক আর জাতি সংঘের হোক। মিয়ানমার যদি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় তাহলে মনে করবো ছবি তুলে কোনো কাজ হয়েছে।
No comments