কানে কিছু ঢুকলে by ডা: এম আলমগীর চৌধুরী

শিশুদের বিশেষ করে তিন-চার বছরের ছেলেমেয়েদের একটা সহজাত প্রবণতা আছে যে, ছোট ছোট কোনো জিনিসপত্র নিয়ে খেলার সময় নাক, কান বা মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়। বড়দেরও একটা অভ্যাস আছে কোনো কিছু দিয়ে (যেমন, কটনবাড, মুরগির পালক, ম্যাচের কাঠি দিয়ে) কান খোঁচানো, চুলকানো। এতে করে খোঁচানোর সময় কাটি ভেঙে বা কটনবাডের কটন কানে রয়ে যেতে পারে।
এ সমস্যা সম্পর্কে সবাইকে কিছুটা ধারণা দেয়ার জন্য আলোকপাত করছি :
যেসব বস্তু কানে ঢুকতে পারে-
১। কটনবাড বা তুলার অংশ
২। ম্যাচের কাঠি, পুঁতির দানা, বল-বিয়ারিং
৩। পেনসিলের শিষ
৪। পাখির-মুরগির পালক
৫। শস্যদানা-চাল, ডাল, ধান, ফলের বীজ, মুড়ি, চিড়া
৬। রাবার, কাগজ, ফোম, ছোট ছোট খেলনার অংশ, আরো কত কী?
৭। অনেক সময় জীবন্ত পোকামাকড় যেমন- মশা, মাছি, তেলাপোকা, পিঁপড়া ইত্যাদি কানের ভেতরে ঢুকতে পারে।
উপসর্গগুলো- ১। কানে প্রচণ্ড অস্বস্তি হওয়া
২। কানে ব্যথা
৩। কানে কম শুনতে পাওয়া
৪। জীবন্ত পোকামাকড় কানে ঢুকে গেলে ভীষণ বিরক্তি এমনকি ভয়েরও উদ্বেগ হতে পারে।
চিকিৎসা-
কানে কোনো কিছু ঢুকে গেলে উপযুক্ত চিকিৎসা হলো এটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বের করে ফেলা। অবশ্যই এটার জন্য নাক, কান, গলা, বিভাগসম্পন্ন হাসপাতাল অথবা ইএনটি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
কানে জীবন্ত পোকা ঢুকে গেলে আগে অলিভ অয়েল দিতে হবে যাতে করে এটি মারা যায়- তারপর বের করতে হবে। বাসায় অনভিজ্ঞ হাতে অযথা খোঁচাখুঁচি করবেন না বা অদক্ষ কাউকে দিয়ে বের করানোরও চেষ্টা করবেন না। শিশুরা ভয়ে কান্না বা নড়াচড়া করলে এবং অসহযোগী দেখালে জোরপূর্বক বের করার চেষ্টা না করে বরং সম্পূর্ণ অজ্ঞান করে হাসপাতালে বের করাই হবে উত্তম।
বের না করলে বা অদক্ষ হাতে চেষ্টা করার জটিলতাগুলো
১। বহিঃকর্ণে আঘাত লাগা এবং তা থেকে রক্তরক্ষণ হওয়া
২। কানের পর্দা ফেটে যাওয়া
৩। মধ্যকর্ণের ভেতরে থাকা ছোট ছোট অস্থিগুলোতে আঘাত লাগা।
৪। কানে ইনফেকশন হওয়া।
৫। সর্বোপরি মানবদেহের মূল্যবান পাঁচটি অঙ্গের একটি হলো কান- যার শ্রবণশক্তি কমেও যেতে পারে।
উপসংহার-
মানসম্পন্ন কোম্পানির তৈরি খেলনার প্যাকেটের গায়ে বয়সসীমা লেখা থাকে। আরো লেখা থাকে যে, এ খেলনায় ছোট ছোট পার্টস আছে এবং তা তিন বছরের নিচের শিশুদের ব্যবহারের জন্য নয়।
বয়স্কদের উচিত সচেতন থাকা, অযথা কোনো কিছু দিয়ে কান না খোঁচানো এবং ছোটদের ছোট ছোট খেলনা দিয়ে খেলতে দেবেন না।
এরপর কানে কিছু ঢুকে গেলে যত শিগগির সম্ভব নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া এবং উপযুক্ত পরামর্শ গ্রহণ করা।
লেখক : নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ সার্জন
অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইএনটি, মেডিক্যাল কলেজ ফর উইমেন অ্যান্ড হসপিটাল, উত্তরা, ঢাকা।
মোবাইল : ০১৮১৯২২২১৮২

No comments

Powered by Blogger.