নির্বাচন দিন, ভয়ের কিছু নেই: খালেদা

আলোচনা সভায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতি আবারও আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। একইসঙ্গে তিনি সরকারকে ‘ভয়ের কিছু নেই’ বলে আশ্বস্ত করে ‘জাতীয় ঐক্যের রাজনীতি’ শুরু করার আহ্বান জানিয়েছেন। মঙ্গলবার দলের ৩৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় খালেদা জিয়া এই আহ্বান জানান। রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ওই সভায় খালেদা জিয়া সভাপতিত্ব করেন।
খালেদা জিয়া ৫৩ মিনিট ধরে নানা বিষয়ে বক্তব্য দেন। শুরুতেই তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।
বক্তব্যের একপর্যায়ে খালেদা জিয়া সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘যে নামেই হোক, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। ভয়ের কিছু নেই। আল্লাহর ওপর বিশ্বাস থাকলে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিন। আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতি করব না। আসুন জাতীয় ঐক্যের রাজনীতি শুরু করি।’
খালেদা জিয়া বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই। মানবাধিকার, আইনের শাসন, খবরে কাগজের স্বাধীনতা নেই। এমনকি কথা বলারও অধিকার নেই। কেবল ক্ষমতাসীনরাই বলছে। তিনি বলেন, ‘তাঁদের ভাষা এত নোংরা, এত কুৎসিত, যার জবাব দিতেও লজ্জা লাগে।’ তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং ‘মিথ্যাচার’ করেন।
ছাত্রলীগের কড়া সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘তারা আজ শিক্ষককে, কাল মহিলাদের, পরশু ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার, পুলিশকে পেটাচ্ছে।’ তিনি প্রশ্ন করেন, ‘তাঁদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে? কেন, সরকার কি ছাত্রলীগকে মানুষ পেটানোর লাইসেন্স দিয়েছে?’
গুম-খুন-নির্যাতনের দায় হাসিনার
‘হাসিনা ক্ষমতায় থাকার জন্য উন্মাদ হয়ে গেছে’ এ মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, গুম, খুন, নির্যাতনের সব দায় হাসিনাকে নিতে হবে। র‍্যাব ও অন্যান্য এজেন্সি যা করেছে, হাসিনার নির্দেশে করেছে। তাই এর সব দায় হাসিনাকেই নিতে হবে। আর নিতে হবে ‘পরগাছাদের’। কারও নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, ‘এই পরগাছাদের জন্য এখন আওয়ামী লীগের লোকেরা ভাত পাচ্ছে না।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘বিএনপির হলে ধরে ধরে মামলা দেওয়া হচ্ছে। আমিসহ এখানে কেউই মামলার বাইরে নই। উনাদের (আওয়ামী লীগ) নামেও মামলা ছিল। সাড়ে সাত হাজার মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। নেত্রীর নামে ১৫টি ছিল। ক্ষমতায় এসে সব খালাস। এখন তিনি সুফি হয়ে গেছেন।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমরা কাউকে গালাগাল, হানাহানিতে বিশ্বাস করি না। আমরা প্রতিশোধ-প্রতিহিংসার রাজনীতি করতে চাই না। সেবা, উন্নয়নের রাজনীতি করব। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করব। কোনো জজ সাহেবকে বলব না, “অমুককে ধরেন, শাস্তি দেন। ” কর্মকর্তাদের নির্ভয়ে কাজ করতে বলব।’
কারও নাম উল্লেখ না করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘এখন কোনো আইন-নিয়ম নেই। জজরা সোশ্যাল ফাঙ্কশনে যেতেন না। আজ দেখছি, সরকারের সঙ্গে আসা-যাওয়া চলছে। অমুক দাওয়াত তমুক দাওয়াতেও অংশ নিচ্ছেন। সেটা আগে ছিল না। একজন জজ পাবলিকলি পলিটিক্যাল বক্তব্য দিয়ে এসেছেন। এটা কত বড় অপরাধ! তিনি নিরপেক্ষ বিচার করবেন কীভাবে?’
দল গোছানোর চেষ্টা চলছে
খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপির ওপর এখনো জুলুম-নির্যাতন চলছে। তারপরও তাঁরা দল গোছানোর চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, যারা দল এবং নেতার প্রতি আনুগত্য আছে, আন্দোলন সংগ্রামে শরিক হবে, তাদের নেতৃত্বে আনতে হবে। যারা ফাঁকিবাজ, মিথ্যাবাজ তাঁদের পেছনের সারিতে নিয়ে যেতে হবে।
উপস্থিত নেতাদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘যার যার এলাকায় যান। আপনাদের প্রতি আহ্বান পকেট কমিটি কেউ করবেন না। এতে দলের ক্ষতি হয়। আমি তো আপনাদের সঙ্গে অনেক দিন ধরেই আছি, কমবেশি অনেককেই চিনি। তাই বললেই বিশ্বাস করব, আর তা হবে না।’
খালেদা জিয়া প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েও ওপর ভ্যাট আরোপ, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সমালোচনা করেন।
আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, জমির উদ্দিন সরকার, আ স ম হান্নান শাহ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য দেন।
এর আগে বেলা সোয়া ১১টায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা দলের বিপুলসংখ্যক নেতা কর্মীকে নিয়ে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান এবং ফাতেহা পাঠ করেন।

No comments

Powered by Blogger.