আমি মৃত্যুভয় করি না, ঘাতককে পরোয়া করি না : সংসদে প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী
ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মোশতাক ও তার দোসর জিয়াউর
রহমান ১৫ আগষ্ট হত্যাকান্ড চালিয়েছে। বাংলাদেশে হত্যা ক্যু ও ষড়যন্ত্রের
রাজনীতি শুরু করে। দেশে আমি যখন প্রতিকূল অবস্থায় রাজনীতি করতে এসেছি প্রতি
পদে পদে তো বাধা আসবে, আর এ বাধা যে আসবে সেটা আমি জানি। কিন্তু আমার জীবন
আমি উৎসর্গ করেছি এদেশের মানুষের জন্য। আমি কখনো কোনো দিনই মৃত্যু ভয়
করিনি, মৃত্যুভয় আমি করি না। আমি তো মানুষের জন্য কাজ করছি। আমি কেন ভয়
করতে যাব, আমি কেন ঘাতককে পরোয়া করবো, আমি কখনো পরোয়া করি না।
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আশ্রয় দেয়ায় আমেরিকা, কানাডা ও পাকিস্তানের সমালোচনা করে বলেন, অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে সভ্য দেশ উন্নত দেশ হয়েও এই খুনিদেরকে আশ্রয় দেয়া বা খুনিদের সেখানে রাখা এটা আমেরিকা-কানাডার মতো দেশ করে আমার জানা নেই। আমরা অনেকবার তাদের সরকারের কাছে অনুরোধ করেছি, আইনগতভাবেও আমরা প্রচেষ্টা চালাচ্ছি, ইন্টারপোলে এদের ওপর ওয়ারেন্ট জারি করা আছে। যে কারণেই হোক আমরা সেসব দেশের সরকারের সহযোগিতা পাচ্ছি না- এটা বাবস্তবতা। খুনিদের দুজন আমেরিকায়, একজন কানাডায় এবং কর্নেল রশীদ ও ডালিম পাকিস্তানে আছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
সংসদে প্রশ্নোত্তরে আজ লিখিত ও সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। বিকালে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।
বেগম ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বাসায় ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে আমার পিতা-মাতা, ভাইসহ পরিবারের সব সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি হত্যাকান্ডের ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ও তার বোন শেখ রেহানার বেঁচে যাওয়া, দেশে ফেরার বিস্তারিত বর্ণনা তুলে ধরে বলেন, এই হত্যাকান্ডের পর সমগ্র বাংলাদেশই কয়েদখানায় পরিণত হয়। খুনি মোশতাক ও তার দোসর জিয়াউর রহমান ১৫ আগষ্ট হত্যাকান্ড চালায়। বাংলাদেশে হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করে। সংবিধান লংঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পালা শুরু হয়। জিয়া নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা দেয়। আমিও রেহানা দেশে ফিরতে চাইলে আমাদের বাধা দেয়া হয়। রেহানার পাসপোর্টের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলে সময় বর্ধিত করতে লন্ডন হাইকমিশনে পাঠানো হয়, জিয়াউর রহমানের নির্দেশে তা বর্ধিত করা হয়নি। তাকে পাসপোর্টও দেয়া হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত আমাদের বিদেশের মাটিতেই পড়ে থাকতে হয়। ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশে রাজনীতি ও দল গঠনের সুযোগ দেয়া হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের পর আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের কারাগারে বন্দী করে মিথ্য মামলা দিয়ে নির্যাতন করা হয়। ১৯৭৯ সালে তারা মুক্তি পান। ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে আমার অবর্তমানে আমাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।
তিনি বলেন, আমি ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসি। জিয়াউর রহমান আমাকে বাধা দেযার চেষ্টা করে সফল হয়নি। কারণ বাংলাদেশের জনগণ ও আওয়ামী লীগের নিবেদিত কর্মী বাহিনী সব বাধা উপেক্ষা করে আমাকে দেশে ফিরিয়ে আনেন। কিন্তু দেশে এসে আমি যখন ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িতে প্রবেশ করতে যাই আমাকে ওই বাড়িতে যেতে দেয়া হয়নি। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর ১৯৮১ সালের ১২ জুন হঠাৎ করে এক ঘন্টার নোটিশে বাড়িটি আমাকে হস্তান্তর করে। প্রধানমন্ত্রী সেই বাড়িতে প্রবেশের স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমি এখনো মাঝে মাঝে সেখানে যাই।এই বাড়ি থেকেই শক্তি পাই। একদিকে সব হারানোর বেদনা, অন্যদিকে মানুষের সেবা করার প্রেরণা, সবই এখানে এলে পেয়ে থাকি।
ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পীর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চাওয়া পাওয়ার উর্ধে উঠে শুধু মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। ’৭৫-এর ১৫ আগষ্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর বাঙালি জাতির মাথা হেট হয়েছিল বিশ্ববাসীর কাছে। বিশ্বসভায় বাংলাদেশের হারানো মর্যাদাকে ফিরিয়ে আনা, বাংলাদেশকে দারিদ্রমুক্ত করা একটি উন্নত দেশ গড়া আমার লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে যেয়ে এটা খুবই স্বাভাবিক প্রতি পদে পদে বাধার সম্মুখীন, প্রতি পদে পদে আমাকে মৃত্যুর মুখে পড়তে হয়েছে। কিন্তু আমি জানি ’৭৫-এর পর উল্লসিত হয়েছিল তারাই যারা এদেশের স্বাধীনতা চায়নি। যে খুনিরা আমার পিতা মাতা ভাইদের হত্যা করেছিল সেই খুনিদের বিচার হয়নি। পৃথিবীতে এমন নজির নেই খুনিদের ইনডেমনিটি দেয়া হয়। খুনিদের পুরস্কৃত করা দূতাবাসে চাকরি দেয়া রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করা, দল করতে দেয়া এবং স্বাধীনতাবিরোধীদের মন্ত্রী করা এই ধরণের বহু কর্মকান্ড আমরা দেখেছি। স্বাভাবিকভাবে সেই দেশে আমি যখন প্রতিকূল অবস্থায় রাজনীতি করতে এসেছি প্রতি পদে পদে তো বাধা আসবে। আর এ বাধা যে আসবে সেটা আমি জানি। কিন্তু আমার জীবনে আমি উৎসর্গ করেছি এদেশের মানুষের জন্য। আমি কখনো কোনো দিনই মৃত্যু ভয় করিনি, মৃত্যুভয় আমি করি না। আমি কখনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করিনি, করবো না, করি না। একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ছাড়া কারো কাছে মাথা নিচু করি না। আল্লাহ জীবন দিয়েছেন, যখন সময় হবে আবার জীবন নিয়ে যাবেন। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি আল্লাহ মানুষকে কিছু কাজ দেন। এই কাজটা যতক্ষণ পর্যন্ত সম্পন্ন না হবে নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাকে সেভাবে রক্ষা করবেন, যেভাবে বারবার রক্ষা করেছেন। আমি তো মানুষের জন্য কাজ করছি। কাজেই আমি কেন ভয় করতে যাবো, আমি কেন ঘাতককে পরোয়া করবো। আমি কখনো পরোয়া করি না। আমি জানি সততা দৃঢ়তা এবং আদর্শ থাকলে অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌছানো যায়। কাজেই যত বাধা আসুক আঘাত আসুক আমি কখনো পরোয়া করি না, পরোয়া করবো না।
উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহিদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের যারা বাংলাদেশে ছিল তাদের বিচারের রায় কার্যকর করা হয়েছে। একজন খুনি ব্যংককে ছিল। সেখান থেকে এনে রায় কার্যকর করা হয়েছে। এর মধ্যে দুজন আমেরিকায় আছে। একজন কানাডায় আছে। আর দুজন যতটুকু সম্ভব আগে লিবিয়াতে ছিল এখন পাকিস্তানে আছে। বাকি দুজন যে কোথায় আছে এখনো তাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকে সেই ‘৯৬ সাল থেকে আমরা কমিটি গঠন করেছি আইনজীবী নিয়োগ করেছি এমনকি আমেরিকায়ও আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হয়েছিল, কানাডাতেও। আমরা বিভিন্নভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে সভ্য দেশ উন্নত দেশ হয়েও এই খুনিদেরকে আশ্রয় দেয়া বা খুনিদের সেখানে রাখা এটা আমেরিকা কানাডার মতো দেশ করে আমার জানা নেই। আমরা অনেকবার তাদের সরকারের কাছে অনুরোধ করেছি আইনগতভাবেও আমরা প্রচেষ্টা চালাচ্ছি এবং এখনো সেই প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। ইন্টারপোলে এদের ওপর ওয়ারেন্ট জারি করা আছে। যে কারণেই হোক আমরা সেসব দেশের সরকারের সহযোগিতা পাচ্ছি না এটা বাস্তবতা। তবুও আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কারণ খুনি খুনিই। যেখানেই থাকুক তারা খুনি। কাজেই খুনিদের বিচারের রায়ের মুখোমুখি করা এবং কার্যকর করা এটা আমাদের কর্তব্য আমরা সেই প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। বিচার হবে না এই ধরণের কথা খুনিরা অত্যন্ত গর্ব করে বলেছিল। কিন্তু সেই বিচার আমরা করেছি। পৃথিবীতে বোধ হয় একটি ঘটনাই ঘটেছে এই ধরণের হত্যাকান্ডে খুনিদের বিচার সেটাও সাধারণ আইনে। আমি প্রধানমন্ত্রী হয়ে কিন্তু কোনো বিশেষ আইনে করিনি।
তিনি বলেন, খুনিদের দুজন পাকিস্তানে আছে। কিন্তু পাকিস্তান সরকার কখনো স্বীকার করে না। তবে আমরা কিছু কিছু ঘটনার মধ্য দিয়ে জানি। একটি চ্যানেলে কর্ণেল রশীদের সাক্ষাতকারের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার মানে সে জানে খুনি রশীদ কোথায় । এটা বোঝা যায় যে খুনি রশীদ লিবিয়াতে ছিল বর্তমানে পাকিস্তানেই আছে। ডালিমও পাকিস্তানেই আছে। কিন্তু তাদের খোঁজ করার ক্ষেত্রে আমরা পাকিস্তানি সরকারের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না এটা দেশবাসীর জানা উচিত।
বাংলাদেশ হবে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড
সামশুল হক চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের অক্লান্ত পরিশ্রম ও সুষ্ঠ পরিকল্পনায় বাংলাদেশ ইতিমধ্যে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৩১৪ মার্কিন ডলার। রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের প্রথম ধাপ হিসেবে মধ্যমেয়াদি ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মেয়াদ জুন ২০১৫ তে শেষ হয়। এরপরই বিশ্ব ব্যাংকের তরফ হতে বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ হতে মধ্যম আয়ের দেশে উপনীত হওয়ার ঘোষণা আসে। আমরা নিম্ন আয়ের দেশে হিসেবে থাকতে চাই না। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নকালীন সময়ে পরবর্তী পাঁচ বছরে নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করে আমরা আমাদের ঘোষিত রূপকল্প ২০২১ অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে পারবো ইনশাল্লাহ। বাংলাদেশ হবে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড।
তিন ঘণ্টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম
মো. তাজুল ইসলামের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা হতে চট্টগ্রাম হয়ে লাকসাম সরাসরি যাতায়তের লক্ষ্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ঢাকা-চট্টগ্রামের রেলপথের দূরত্ব হ্রাস পাবে। তখন ৩ ঘণ্টায় ঢাকা হতে চট্টগ্রামে যাতায়াত করা সম্ভব হবে। তিনি জানান, ঢাকা হতে চট্টগ্রাম হয়ে লাকসাম সরাসরি যাতায়াতের লক্ষ্য চীন সরকারের অর্থায়নে জি টু জি ভিত্তিতে কনস্ট্রাকশন অব ডাবল ট্রাক স্টান্ডার্ড গজি রেলওয়ে লাইন ফরম ঢাকা টু চট্টগ্রাম ভায়া কুমিলল্লা/ লাকসাম প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যেগ গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য একটি চীনা কোম্পানীর সঙ্গে ইতিমধ্যে সমঝোতা স্বাক্ষর (এমওইউ) হয়েছে। প্রকল্পটি পিডিপিপিতে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে নীতিগতভাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আশ্রয় দেয়ায় আমেরিকা, কানাডা ও পাকিস্তানের সমালোচনা করে বলেন, অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে সভ্য দেশ উন্নত দেশ হয়েও এই খুনিদেরকে আশ্রয় দেয়া বা খুনিদের সেখানে রাখা এটা আমেরিকা-কানাডার মতো দেশ করে আমার জানা নেই। আমরা অনেকবার তাদের সরকারের কাছে অনুরোধ করেছি, আইনগতভাবেও আমরা প্রচেষ্টা চালাচ্ছি, ইন্টারপোলে এদের ওপর ওয়ারেন্ট জারি করা আছে। যে কারণেই হোক আমরা সেসব দেশের সরকারের সহযোগিতা পাচ্ছি না- এটা বাবস্তবতা। খুনিদের দুজন আমেরিকায়, একজন কানাডায় এবং কর্নেল রশীদ ও ডালিম পাকিস্তানে আছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
সংসদে প্রশ্নোত্তরে আজ লিখিত ও সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। বিকালে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।
বেগম ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বাসায় ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে আমার পিতা-মাতা, ভাইসহ পরিবারের সব সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি হত্যাকান্ডের ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ও তার বোন শেখ রেহানার বেঁচে যাওয়া, দেশে ফেরার বিস্তারিত বর্ণনা তুলে ধরে বলেন, এই হত্যাকান্ডের পর সমগ্র বাংলাদেশই কয়েদখানায় পরিণত হয়। খুনি মোশতাক ও তার দোসর জিয়াউর রহমান ১৫ আগষ্ট হত্যাকান্ড চালায়। বাংলাদেশে হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করে। সংবিধান লংঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পালা শুরু হয়। জিয়া নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা দেয়। আমিও রেহানা দেশে ফিরতে চাইলে আমাদের বাধা দেয়া হয়। রেহানার পাসপোর্টের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলে সময় বর্ধিত করতে লন্ডন হাইকমিশনে পাঠানো হয়, জিয়াউর রহমানের নির্দেশে তা বর্ধিত করা হয়নি। তাকে পাসপোর্টও দেয়া হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত আমাদের বিদেশের মাটিতেই পড়ে থাকতে হয়। ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশে রাজনীতি ও দল গঠনের সুযোগ দেয়া হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের পর আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের কারাগারে বন্দী করে মিথ্য মামলা দিয়ে নির্যাতন করা হয়। ১৯৭৯ সালে তারা মুক্তি পান। ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে আমার অবর্তমানে আমাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।
তিনি বলেন, আমি ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসি। জিয়াউর রহমান আমাকে বাধা দেযার চেষ্টা করে সফল হয়নি। কারণ বাংলাদেশের জনগণ ও আওয়ামী লীগের নিবেদিত কর্মী বাহিনী সব বাধা উপেক্ষা করে আমাকে দেশে ফিরিয়ে আনেন। কিন্তু দেশে এসে আমি যখন ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িতে প্রবেশ করতে যাই আমাকে ওই বাড়িতে যেতে দেয়া হয়নি। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর ১৯৮১ সালের ১২ জুন হঠাৎ করে এক ঘন্টার নোটিশে বাড়িটি আমাকে হস্তান্তর করে। প্রধানমন্ত্রী সেই বাড়িতে প্রবেশের স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমি এখনো মাঝে মাঝে সেখানে যাই।এই বাড়ি থেকেই শক্তি পাই। একদিকে সব হারানোর বেদনা, অন্যদিকে মানুষের সেবা করার প্রেরণা, সবই এখানে এলে পেয়ে থাকি।
ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পীর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চাওয়া পাওয়ার উর্ধে উঠে শুধু মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। ’৭৫-এর ১৫ আগষ্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর বাঙালি জাতির মাথা হেট হয়েছিল বিশ্ববাসীর কাছে। বিশ্বসভায় বাংলাদেশের হারানো মর্যাদাকে ফিরিয়ে আনা, বাংলাদেশকে দারিদ্রমুক্ত করা একটি উন্নত দেশ গড়া আমার লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে যেয়ে এটা খুবই স্বাভাবিক প্রতি পদে পদে বাধার সম্মুখীন, প্রতি পদে পদে আমাকে মৃত্যুর মুখে পড়তে হয়েছে। কিন্তু আমি জানি ’৭৫-এর পর উল্লসিত হয়েছিল তারাই যারা এদেশের স্বাধীনতা চায়নি। যে খুনিরা আমার পিতা মাতা ভাইদের হত্যা করেছিল সেই খুনিদের বিচার হয়নি। পৃথিবীতে এমন নজির নেই খুনিদের ইনডেমনিটি দেয়া হয়। খুনিদের পুরস্কৃত করা দূতাবাসে চাকরি দেয়া রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করা, দল করতে দেয়া এবং স্বাধীনতাবিরোধীদের মন্ত্রী করা এই ধরণের বহু কর্মকান্ড আমরা দেখেছি। স্বাভাবিকভাবে সেই দেশে আমি যখন প্রতিকূল অবস্থায় রাজনীতি করতে এসেছি প্রতি পদে পদে তো বাধা আসবে। আর এ বাধা যে আসবে সেটা আমি জানি। কিন্তু আমার জীবনে আমি উৎসর্গ করেছি এদেশের মানুষের জন্য। আমি কখনো কোনো দিনই মৃত্যু ভয় করিনি, মৃত্যুভয় আমি করি না। আমি কখনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করিনি, করবো না, করি না। একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ছাড়া কারো কাছে মাথা নিচু করি না। আল্লাহ জীবন দিয়েছেন, যখন সময় হবে আবার জীবন নিয়ে যাবেন। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি আল্লাহ মানুষকে কিছু কাজ দেন। এই কাজটা যতক্ষণ পর্যন্ত সম্পন্ন না হবে নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাকে সেভাবে রক্ষা করবেন, যেভাবে বারবার রক্ষা করেছেন। আমি তো মানুষের জন্য কাজ করছি। কাজেই আমি কেন ভয় করতে যাবো, আমি কেন ঘাতককে পরোয়া করবো। আমি কখনো পরোয়া করি না। আমি জানি সততা দৃঢ়তা এবং আদর্শ থাকলে অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌছানো যায়। কাজেই যত বাধা আসুক আঘাত আসুক আমি কখনো পরোয়া করি না, পরোয়া করবো না।
উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহিদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের যারা বাংলাদেশে ছিল তাদের বিচারের রায় কার্যকর করা হয়েছে। একজন খুনি ব্যংককে ছিল। সেখান থেকে এনে রায় কার্যকর করা হয়েছে। এর মধ্যে দুজন আমেরিকায় আছে। একজন কানাডায় আছে। আর দুজন যতটুকু সম্ভব আগে লিবিয়াতে ছিল এখন পাকিস্তানে আছে। বাকি দুজন যে কোথায় আছে এখনো তাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকে সেই ‘৯৬ সাল থেকে আমরা কমিটি গঠন করেছি আইনজীবী নিয়োগ করেছি এমনকি আমেরিকায়ও আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হয়েছিল, কানাডাতেও। আমরা বিভিন্নভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে সভ্য দেশ উন্নত দেশ হয়েও এই খুনিদেরকে আশ্রয় দেয়া বা খুনিদের সেখানে রাখা এটা আমেরিকা কানাডার মতো দেশ করে আমার জানা নেই। আমরা অনেকবার তাদের সরকারের কাছে অনুরোধ করেছি আইনগতভাবেও আমরা প্রচেষ্টা চালাচ্ছি এবং এখনো সেই প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। ইন্টারপোলে এদের ওপর ওয়ারেন্ট জারি করা আছে। যে কারণেই হোক আমরা সেসব দেশের সরকারের সহযোগিতা পাচ্ছি না এটা বাস্তবতা। তবুও আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কারণ খুনি খুনিই। যেখানেই থাকুক তারা খুনি। কাজেই খুনিদের বিচারের রায়ের মুখোমুখি করা এবং কার্যকর করা এটা আমাদের কর্তব্য আমরা সেই প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। বিচার হবে না এই ধরণের কথা খুনিরা অত্যন্ত গর্ব করে বলেছিল। কিন্তু সেই বিচার আমরা করেছি। পৃথিবীতে বোধ হয় একটি ঘটনাই ঘটেছে এই ধরণের হত্যাকান্ডে খুনিদের বিচার সেটাও সাধারণ আইনে। আমি প্রধানমন্ত্রী হয়ে কিন্তু কোনো বিশেষ আইনে করিনি।
তিনি বলেন, খুনিদের দুজন পাকিস্তানে আছে। কিন্তু পাকিস্তান সরকার কখনো স্বীকার করে না। তবে আমরা কিছু কিছু ঘটনার মধ্য দিয়ে জানি। একটি চ্যানেলে কর্ণেল রশীদের সাক্ষাতকারের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার মানে সে জানে খুনি রশীদ কোথায় । এটা বোঝা যায় যে খুনি রশীদ লিবিয়াতে ছিল বর্তমানে পাকিস্তানেই আছে। ডালিমও পাকিস্তানেই আছে। কিন্তু তাদের খোঁজ করার ক্ষেত্রে আমরা পাকিস্তানি সরকারের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না এটা দেশবাসীর জানা উচিত।
বাংলাদেশ হবে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড
সামশুল হক চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের অক্লান্ত পরিশ্রম ও সুষ্ঠ পরিকল্পনায় বাংলাদেশ ইতিমধ্যে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৩১৪ মার্কিন ডলার। রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের প্রথম ধাপ হিসেবে মধ্যমেয়াদি ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মেয়াদ জুন ২০১৫ তে শেষ হয়। এরপরই বিশ্ব ব্যাংকের তরফ হতে বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ হতে মধ্যম আয়ের দেশে উপনীত হওয়ার ঘোষণা আসে। আমরা নিম্ন আয়ের দেশে হিসেবে থাকতে চাই না। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নকালীন সময়ে পরবর্তী পাঁচ বছরে নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করে আমরা আমাদের ঘোষিত রূপকল্প ২০২১ অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে পারবো ইনশাল্লাহ। বাংলাদেশ হবে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড।
তিন ঘণ্টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম
মো. তাজুল ইসলামের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা হতে চট্টগ্রাম হয়ে লাকসাম সরাসরি যাতায়তের লক্ষ্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ঢাকা-চট্টগ্রামের রেলপথের দূরত্ব হ্রাস পাবে। তখন ৩ ঘণ্টায় ঢাকা হতে চট্টগ্রামে যাতায়াত করা সম্ভব হবে। তিনি জানান, ঢাকা হতে চট্টগ্রাম হয়ে লাকসাম সরাসরি যাতায়াতের লক্ষ্য চীন সরকারের অর্থায়নে জি টু জি ভিত্তিতে কনস্ট্রাকশন অব ডাবল ট্রাক স্টান্ডার্ড গজি রেলওয়ে লাইন ফরম ঢাকা টু চট্টগ্রাম ভায়া কুমিলল্লা/ লাকসাম প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যেগ গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য একটি চীনা কোম্পানীর সঙ্গে ইতিমধ্যে সমঝোতা স্বাক্ষর (এমওইউ) হয়েছে। প্রকল্পটি পিডিপিপিতে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে নীতিগতভাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
No comments