মেজর জিয়া বাড়ি আছেন? by সাজেদুল হক
মইনুল
রোডের বাসভবনে তখন তিনি বন্দি। সেনাপ্রধানের পদ থেকেও তাকে সরিয়ে দিয়েছেন
খালেদ মোশাররফ গংরা। আপাত অসহায় জিয়াউর রহমানের সঙ্গে দেখা করলেন মেজর
জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরী। দুটি বিষয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন জেনারেল
জিয়া। এক. তাদেরকে বললেন, কম ভাড়ায় থাকার জন্য যেন একটি বাসা খোঁজা হয়।
দুই. তার পেনশনের টাকা পাওয়ার বিষয়টি যেন নিশ্চিত করা হয়।
জেনারেল জিয়ার এই আবেদন এ কান ও কান হয়ে সেনাবাহিনীর জওয়ানদের কানেও গিয়ে পৌঁছায়। এ বিষয়টি জিয়ার পক্ষে পাল্টা অভ্যুত্থানেও সহায়তা করেছিল। সেনাপ্রধানের অসহায়ত্ব ও দারিদ্র্যতা সৈনিকদের মধ্যে সহানুভূতি তৈরি করেছিল। পাল্টা অভ্যুত্থানে জিয়াউর রহমানকে যখন ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যাওয়া হয় তখন সৈনিকদের উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছিলেন তিনি। তাদের উদ্দেশে বলেছিলেন, তোমরা এখন ক্ষুধার্ত। সবাই খেতে যাও। বিশৃঙ্খল সৈনিকদের শৃঙ্খলায় ফেরাতে টনিকের মতো কাজ করেছিল এ কথা।
নিয়তি এভাবে বারবারই জিয়াউর রহমানের জীবনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে তার থাকার কথা ছিল না। অদৃষ্টই হয়তো তাকে সেখানে নিয়ে গেছে। যে কণ্ঠস্বর মুক্তিকামী মানুষের মনে আশার আলো জাগিয়েছিল। পরবর্তীতে সেনাপ্রধান- রাষ্ট্রপ্রধান হলেও ‘আমি মেজর জিয়া বলছি’ এ পরিচয়ই মুখ্যত প্রধান পরিচয় থেকে গেছে তার আজও।
রাষ্ট্র এবং সামরিক বাহিনীতে নানা পালা-বদলের হাত ধরে একসময় রাষ্ট্রক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছে যান জিয়াউর রহমান। বিরোধীরা তাকে অভিযুক্ত করেছেন অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী হিসেবে। যে অভিযোগ আইনত অস্বীকার করার জো নেই। তার বিরুদ্ধে আরেকটি প্রধান অভিযোগ, তিনি কোর্ট মার্শালের মাধ্যমে সশস্র বাহিনীর অনেক সদস্যকে ফাঁসিতে ঝুলানোর ব্যবস্থা করেছেন। তবে সশস্র বাহিনীতে শৃঙ্খলা ফেরাতে জিয়াউর রহমানের সামনে এর বিকল্প ছিল কি- না তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে জিয়াউর রহমানের বিরোধীরাও একটি বিষয় প্রায়ই বলে থাকেন, তিনি মৃত্যুর সময় ভাঙা স্যুটকেস আর ছেঁড়া গেঞ্জি রেখে গেছেন। এই একটি জায়গায় জিয়াউর রহমান আলাদা। তার সততা নিয়ে কেউ কোনদিন কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনি। তার ভাই, বোন, বাবা-মায়ের নাম বাংলাদেশের খুব কম লোকই জানে। তিনি যতদিন বেঁচে ছিলেন তার পরিবারের কেউ কোন ধরনের ক্ষমতা ভোগ করেনি। সৈনিক হয়েও জিয়াউর রহমান চেষ্টা করেছিলেন মানুষের কাছাকাছি যেতে। মশিয়ুর রহমান যাদু মিঞার কাছে তিনি বলেছিলেন, আমি তো ভাল বক্তৃতা দিতে পারি না। যাদু মিঞা যখন জানতে পারেন, জিয়াউর রহমান ভাল হাঁটতে পারেন তখন তাকে পরামর্শ দেন গ্রামে গ্রামে হাঁটতে। সেখান থেকেই খাল কাটা কর্মসূচির চিন্তা আসে। গ্রামের পর গ্রাম হাঁটতে থাকেন প্রেসিডেন্ট জিয়া।
জিয়াউর রহমানের বাড়ি কোথায়?
সবাই জানেন বগুড়া, কিন্তু সেটি আসলে তার আসল ঠিকানা নয়। জিয়াউর রহমানের আসল ঠিকানা- তার প্রতিষ্ঠিত দল- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। যে দলের মধ্যেই বেঁচে আছেন জিয়াউর রহমান। বিএনপির ৩৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী আজ।
বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদকে মূল দর্শন ধরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যে দল। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে জিয়াউর রহমান নিজে বলেছিলেন- বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটেছে, ‘রেসিয়াল’ বা জাতিভিত্তিক জাতীয়তাবাদের কথা এ প্রসঙ্গে সর্বপ্রথম এসে যায়।...এরপর আসে ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদের কথা। বাঙালি জাতীয়তাবাদের সেøাগান এ ধ্যান-ধারণা থেকেই উৎসারিত। এ কারণেই আওয়ামী লীগাররা বাঙালি জাতীয়তাবাদের স্বপ্নে এখনও বিভোর রয়েছে। আবার মুসলিম লীগ, আইডিএল এবং জামায়াতিরা বলে যাকে ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের কথা। ...পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর এ ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদ কায়েম করতে গিয়ে বাংলাদেশকে শোষণ ও শাসন চালানো হলো। কিন্তু ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের নামে ‘পলিটিকস অব এক্সপ্লয়েটেশন’ পাকিস্তানকে এক রাখতে পারল না। প্রতিষ্ঠিত হলো স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। একটি অঞ্চলকে ভিত্তি করেও রাজনীতি চলতে পারে, গড়ে উঠতে পারে নতুন এক জাতীয়তাবাদ।...তাই আমরা বলি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ হলো সার্বিক জাতীয়তাবাদ। .....আমাদের আছে জাতিগত গৌরব, রয়েছে সমৃদ্ধশালী ভাষা এবং আছে ধর্মীয় ঐতিহ্য, ভৌগোলিক অবস্থান হিসেবে আমরা এক গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলের বাসিন্দা। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ একদিকে যেমন ধর্মভিত্তিক নয়, তেমনি আবার ধর্মবিমুখও নয়।
জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি আজ ইতিহাসের সবচেয়ে ক্রান্তিকালে রয়েছে। এ অবস্থা থেকে দলটি আর কোনদিন ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি-না সে প্রশ্নও উচ্চারিত হচ্ছে জোরেশোরে। তবে একটি ব্যাপারে পর্যবেক্ষকরা একমত, বিএনপিতে আজ জিয়াউর রহমানের বহু আদর্শই অনুপস্থিত। যে সততার জোরে জিয়াউর রহমান সবার মন জয় করেছিলেন বিএনপির অনেক নেতার মধ্যেই এখন তার অভাব দেখা যাচ্ছে। বিচক্ষণতা জিয়াকে ইতিহাসে অমর চরিত্রের মর্যাদা দিয়েছে। বিএনপি নেতারা আজ বহুক্ষেত্রেই তা দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছেন। সময় বদলে গেছে, দুনিয়াও বদলে গেছে। কিন্তু একটি বিষয় নিশ্চিত করেই বলা যায়, জিয়াউর রহমানের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণই বিএনপির মুক্তির একমাত্র পথ। আসল ঠিকানায় ফেরাতে হবে মেজর জিয়াকে।
জেনারেল জিয়ার এই আবেদন এ কান ও কান হয়ে সেনাবাহিনীর জওয়ানদের কানেও গিয়ে পৌঁছায়। এ বিষয়টি জিয়ার পক্ষে পাল্টা অভ্যুত্থানেও সহায়তা করেছিল। সেনাপ্রধানের অসহায়ত্ব ও দারিদ্র্যতা সৈনিকদের মধ্যে সহানুভূতি তৈরি করেছিল। পাল্টা অভ্যুত্থানে জিয়াউর রহমানকে যখন ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যাওয়া হয় তখন সৈনিকদের উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছিলেন তিনি। তাদের উদ্দেশে বলেছিলেন, তোমরা এখন ক্ষুধার্ত। সবাই খেতে যাও। বিশৃঙ্খল সৈনিকদের শৃঙ্খলায় ফেরাতে টনিকের মতো কাজ করেছিল এ কথা।
নিয়তি এভাবে বারবারই জিয়াউর রহমানের জীবনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে তার থাকার কথা ছিল না। অদৃষ্টই হয়তো তাকে সেখানে নিয়ে গেছে। যে কণ্ঠস্বর মুক্তিকামী মানুষের মনে আশার আলো জাগিয়েছিল। পরবর্তীতে সেনাপ্রধান- রাষ্ট্রপ্রধান হলেও ‘আমি মেজর জিয়া বলছি’ এ পরিচয়ই মুখ্যত প্রধান পরিচয় থেকে গেছে তার আজও।
রাষ্ট্র এবং সামরিক বাহিনীতে নানা পালা-বদলের হাত ধরে একসময় রাষ্ট্রক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছে যান জিয়াউর রহমান। বিরোধীরা তাকে অভিযুক্ত করেছেন অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী হিসেবে। যে অভিযোগ আইনত অস্বীকার করার জো নেই। তার বিরুদ্ধে আরেকটি প্রধান অভিযোগ, তিনি কোর্ট মার্শালের মাধ্যমে সশস্র বাহিনীর অনেক সদস্যকে ফাঁসিতে ঝুলানোর ব্যবস্থা করেছেন। তবে সশস্র বাহিনীতে শৃঙ্খলা ফেরাতে জিয়াউর রহমানের সামনে এর বিকল্প ছিল কি- না তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে জিয়াউর রহমানের বিরোধীরাও একটি বিষয় প্রায়ই বলে থাকেন, তিনি মৃত্যুর সময় ভাঙা স্যুটকেস আর ছেঁড়া গেঞ্জি রেখে গেছেন। এই একটি জায়গায় জিয়াউর রহমান আলাদা। তার সততা নিয়ে কেউ কোনদিন কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনি। তার ভাই, বোন, বাবা-মায়ের নাম বাংলাদেশের খুব কম লোকই জানে। তিনি যতদিন বেঁচে ছিলেন তার পরিবারের কেউ কোন ধরনের ক্ষমতা ভোগ করেনি। সৈনিক হয়েও জিয়াউর রহমান চেষ্টা করেছিলেন মানুষের কাছাকাছি যেতে। মশিয়ুর রহমান যাদু মিঞার কাছে তিনি বলেছিলেন, আমি তো ভাল বক্তৃতা দিতে পারি না। যাদু মিঞা যখন জানতে পারেন, জিয়াউর রহমান ভাল হাঁটতে পারেন তখন তাকে পরামর্শ দেন গ্রামে গ্রামে হাঁটতে। সেখান থেকেই খাল কাটা কর্মসূচির চিন্তা আসে। গ্রামের পর গ্রাম হাঁটতে থাকেন প্রেসিডেন্ট জিয়া।
জিয়াউর রহমানের বাড়ি কোথায়?
সবাই জানেন বগুড়া, কিন্তু সেটি আসলে তার আসল ঠিকানা নয়। জিয়াউর রহমানের আসল ঠিকানা- তার প্রতিষ্ঠিত দল- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। যে দলের মধ্যেই বেঁচে আছেন জিয়াউর রহমান। বিএনপির ৩৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী আজ।
বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদকে মূল দর্শন ধরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যে দল। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে জিয়াউর রহমান নিজে বলেছিলেন- বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটেছে, ‘রেসিয়াল’ বা জাতিভিত্তিক জাতীয়তাবাদের কথা এ প্রসঙ্গে সর্বপ্রথম এসে যায়।...এরপর আসে ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদের কথা। বাঙালি জাতীয়তাবাদের সেøাগান এ ধ্যান-ধারণা থেকেই উৎসারিত। এ কারণেই আওয়ামী লীগাররা বাঙালি জাতীয়তাবাদের স্বপ্নে এখনও বিভোর রয়েছে। আবার মুসলিম লীগ, আইডিএল এবং জামায়াতিরা বলে যাকে ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের কথা। ...পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর এ ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদ কায়েম করতে গিয়ে বাংলাদেশকে শোষণ ও শাসন চালানো হলো। কিন্তু ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের নামে ‘পলিটিকস অব এক্সপ্লয়েটেশন’ পাকিস্তানকে এক রাখতে পারল না। প্রতিষ্ঠিত হলো স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। একটি অঞ্চলকে ভিত্তি করেও রাজনীতি চলতে পারে, গড়ে উঠতে পারে নতুন এক জাতীয়তাবাদ।...তাই আমরা বলি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ হলো সার্বিক জাতীয়তাবাদ। .....আমাদের আছে জাতিগত গৌরব, রয়েছে সমৃদ্ধশালী ভাষা এবং আছে ধর্মীয় ঐতিহ্য, ভৌগোলিক অবস্থান হিসেবে আমরা এক গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলের বাসিন্দা। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ একদিকে যেমন ধর্মভিত্তিক নয়, তেমনি আবার ধর্মবিমুখও নয়।
জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি আজ ইতিহাসের সবচেয়ে ক্রান্তিকালে রয়েছে। এ অবস্থা থেকে দলটি আর কোনদিন ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি-না সে প্রশ্নও উচ্চারিত হচ্ছে জোরেশোরে। তবে একটি ব্যাপারে পর্যবেক্ষকরা একমত, বিএনপিতে আজ জিয়াউর রহমানের বহু আদর্শই অনুপস্থিত। যে সততার জোরে জিয়াউর রহমান সবার মন জয় করেছিলেন বিএনপির অনেক নেতার মধ্যেই এখন তার অভাব দেখা যাচ্ছে। বিচক্ষণতা জিয়াকে ইতিহাসে অমর চরিত্রের মর্যাদা দিয়েছে। বিএনপি নেতারা আজ বহুক্ষেত্রেই তা দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছেন। সময় বদলে গেছে, দুনিয়াও বদলে গেছে। কিন্তু একটি বিষয় নিশ্চিত করেই বলা যায়, জিয়াউর রহমানের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণই বিএনপির মুক্তির একমাত্র পথ। আসল ঠিকানায় ফেরাতে হবে মেজর জিয়াকে।
No comments