উড়ন্ত শৃগালের গল্প
নাই রস নাই, দারুণ দাহন বেলা,
খেলো খেলো তব নীরব ভৈরব খেলা’
গ্রীষ্মের দাবদাহ কাকে বলে, দেশের জনগোষ্ঠী টের পেয়েছে বেশ ভালো করে। তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪২ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করেছে মাসাধিককাল ধরে। ঘরে-বাইরে শান্তি আর স্বস্তি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না কোথাও। বাতাসও যেন বইতে ভুলে গিয়েছিল৷ অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হয়েছে অনেক শিশু ও বৃদ্ধ৷ দরদর করে ঘামছে মানুষ। গাছপালা নিঝুম নিশ্চুপ জড় পাথরের মতো থমথমে। কাজ তো থেমে থাকেনি। এর ভেতরেও চলছিল কাজ। যদিও মন্থর গতিতে। শহরে-বন্দরে এসিগুলো দিবারাত্রি বিরামহীনভাবে চলছিল। বিদ্যুতেরও মাথা বিগড়ে গেল। ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং। তার ওপর মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—বিদ্যুৎ বিল। নতুন দরে বিলের টাকার পরিমাণ যে কত বাড়ল, সেটা জানাবার দায়ভার যে কার কে জানে! এ সবকিছুতেই একটাই চিৎকার সবার অন্দরে-বাইরে। প্রকৃতি গাইছিল তখন—
‘এসো শ্যামল সুন্দর/ আনো তব তাপহরা তৃষ্ণাহরা সঙ্গসুধা/ বিরহিনী চাহিয়া আছে আকাশে—’
শেষ পর্যন্ত এল। সে এল, আর বৃষ্টিস্নাত মানুষ, পশুপক্ষী এবং প্রকৃতি হাঁপ ছেড়ে বাঁচল যেন। আজ সকালটা অন্য কিছুদিনের থেকে তাই বেশ অন্য রকম লাগছিল। উত্তরের খোলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম। চোখ গেল সেই জায়গাটিতে, যেখানে ছিল আমার সখা কদমগাছটি, ছিল চাঁপাগাছ, কৃষ্ণচূড়া, বকুল ফুলের গাছ। আজ কেউ নেই। সবাই বিদায় নিয়েছে। নগরায়ণের করালগ্রাসে মৃত্যু হয়েছে তাদের। হঠাৎ নজর গেল পাশেরই আকিজ সাহেবের প্লটে। সেটিও খালি পড়ে আছে। সেখানে হঠাৎ তিনটি কৃষ্ণচূড়াগাছ যে বেশ সেয়ানা হয়েছে, এত দিন খেয়ালই করিনি৷ লালে লাল হয়ে রয়েছে গাছ তিনটি। চমৎকার। মনটা খুঁবই ভালো হয়ে গেল মুহূর্তে। দরজায় কলবেল শুনে বুঝলাম পত্রিকা এসে গেছে। সাতটা অবশ্য বাজেনি এখনো। ছুটলাম পত্রিকা নিতে৷ নতুন কিছু পাওয়া যায় কি না, তার সন্ধানে। নাহ্। সেই যাহা বাহান্ন তাহা তেপ্পান্ন। নারায়ণগঞ্জ, ফেনী আর লক্ষ্মীপুর রয়েছে পত্রিকাজুড়ে। বিরাট দুই দলের কাদা ছোড়াছুড়ি তো রয়েছেই। এটাকে আমি অবশ্য প্রতিদিনই খবরের চাটনি হিসেবে উপভোগ করি। পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে সম্পাদকীয় পাতায় চোখ আটকাল। সাবেক মন্ত্রী জি এম কাদের সাহেবের সাক্ষাৎকারটা দেখে পড়তে মন চাইল।
খেলো খেলো তব নীরব ভৈরব খেলা’
গ্রীষ্মের দাবদাহ কাকে বলে, দেশের জনগোষ্ঠী টের পেয়েছে বেশ ভালো করে। তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪২ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করেছে মাসাধিককাল ধরে। ঘরে-বাইরে শান্তি আর স্বস্তি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না কোথাও। বাতাসও যেন বইতে ভুলে গিয়েছিল৷ অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হয়েছে অনেক শিশু ও বৃদ্ধ৷ দরদর করে ঘামছে মানুষ। গাছপালা নিঝুম নিশ্চুপ জড় পাথরের মতো থমথমে। কাজ তো থেমে থাকেনি। এর ভেতরেও চলছিল কাজ। যদিও মন্থর গতিতে। শহরে-বন্দরে এসিগুলো দিবারাত্রি বিরামহীনভাবে চলছিল। বিদ্যুতেরও মাথা বিগড়ে গেল। ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং। তার ওপর মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—বিদ্যুৎ বিল। নতুন দরে বিলের টাকার পরিমাণ যে কত বাড়ল, সেটা জানাবার দায়ভার যে কার কে জানে! এ সবকিছুতেই একটাই চিৎকার সবার অন্দরে-বাইরে। প্রকৃতি গাইছিল তখন—
‘এসো শ্যামল সুন্দর/ আনো তব তাপহরা তৃষ্ণাহরা সঙ্গসুধা/ বিরহিনী চাহিয়া আছে আকাশে—’
শেষ পর্যন্ত এল। সে এল, আর বৃষ্টিস্নাত মানুষ, পশুপক্ষী এবং প্রকৃতি হাঁপ ছেড়ে বাঁচল যেন। আজ সকালটা অন্য কিছুদিনের থেকে তাই বেশ অন্য রকম লাগছিল। উত্তরের খোলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম। চোখ গেল সেই জায়গাটিতে, যেখানে ছিল আমার সখা কদমগাছটি, ছিল চাঁপাগাছ, কৃষ্ণচূড়া, বকুল ফুলের গাছ। আজ কেউ নেই। সবাই বিদায় নিয়েছে। নগরায়ণের করালগ্রাসে মৃত্যু হয়েছে তাদের। হঠাৎ নজর গেল পাশেরই আকিজ সাহেবের প্লটে। সেটিও খালি পড়ে আছে। সেখানে হঠাৎ তিনটি কৃষ্ণচূড়াগাছ যে বেশ সেয়ানা হয়েছে, এত দিন খেয়ালই করিনি৷ লালে লাল হয়ে রয়েছে গাছ তিনটি। চমৎকার। মনটা খুঁবই ভালো হয়ে গেল মুহূর্তে। দরজায় কলবেল শুনে বুঝলাম পত্রিকা এসে গেছে। সাতটা অবশ্য বাজেনি এখনো। ছুটলাম পত্রিকা নিতে৷ নতুন কিছু পাওয়া যায় কি না, তার সন্ধানে। নাহ্। সেই যাহা বাহান্ন তাহা তেপ্পান্ন। নারায়ণগঞ্জ, ফেনী আর লক্ষ্মীপুর রয়েছে পত্রিকাজুড়ে। বিরাট দুই দলের কাদা ছোড়াছুড়ি তো রয়েছেই। এটাকে আমি অবশ্য প্রতিদিনই খবরের চাটনি হিসেবে উপভোগ করি। পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে সম্পাদকীয় পাতায় চোখ আটকাল। সাবেক মন্ত্রী জি এম কাদের সাহেবের সাক্ষাৎকারটা দেখে পড়তে মন চাইল।
ওঁর সম্পর্কে শুনেছি—নিপাট ভদ্রলোক। যদিও একই শিক্ষায়তনের ছাত্র আমরা, কোনো দিন আলাপ হয়নি। তাঁর জামাতা অভিনেতা মাহফুজ আহমেদের কাছেও তাঁর অকুণ্ঠ প্রশংসা শুনেছি৷ এসব কারণেই উৎসাহিত হলাম, কী বলেন তিনি। নির্বিরোধী মানুষ বলেই হয়তো রাজনীতির কূটচালে পড়ে সরকারের বাইরে তিনি এখন। সাক্ষাৎকারটা ভালোই লাগল। তাঁর উল্লেখযোগ্য মন্তব্য, ‘একসঙ্গে সরকার ও বিরোধী দলে থাকা যায় না।’ এটি আমাকে চিন্তায় ফেলল। আসলেই কি তাই? কি জানি। হয়তো যায়, হয়তো যায় না। তবে একটা কথা ঠিক যে এর জন্য শৃগালের মতো ধূর্ততা প্রয়োজন। নাহ্! সকালে উঠে রাজনীতির কচকচি করার মানে হয় না কোনো। অন্য গালগল্প করা যাক। শৃগালের কথায় নিশ্চয় আপনাদের মনে পড়ছে কাকের মুখ থেকে কৌশলে মাংস বাগিয়ে নেওয়ার কাহিনি। সে ছিল জঙ্গলের শিয়াল। কিন্তু উড়ন্ত শিয়ালের নাম শুনেছেন? নিশ্চয় জানেন আপনারা—বাদুড়। দারুণ এক প্রাণী। এরা পাখি হিসেবেই পরিচিত। একমাত্র স্তন্যপায়ী পাখি। শিয়ালের সঙ্গে বিজ্ঞানীরা এর কিছু মিল নিশ্চয় খুঁজে পেয়েছেন। তাই বাদুড়কে বলা হয় উড়ন্ত শৃগাল (Flying Fox)। এরা সাধারণত দুই প্রকার: ফলভোগী (কলাবাদুড়) আর পতঙ্গভুক (চামচিকা)৷ এরা ফাটল, গাছের খোঁড়ল, দেয়াল, পাথরের ফোকর, গুহা, পোড়ো দালান, পুলের তলা, সড়কের কালভার্ট, বড় বড় গাছ, পুরোনো কুয়া ইত্যাদি স্থানে বাস করতে ভালোবাসে। এক জায়গায় বহু বছর এরা মল ত্যাগ করে আর এদের মল স্তূপীকৃত হয়ে প্রচণ্ড ঝাঁজালো গন্ধ ছড়ায়। বাদুড়ের গন্ধ এবং শব্দের বোধ অত্যন্ত তীব্র।
এরা মুখ ও নাকের মাধ্যমে উচ্চ তরঙ্গের শব্দ উৎপাদন করে, যা শিকারকে আঘাত করলে প্রতিধ্বনি ফিরে আসে বাদুড়ের কানে—তারপর চলে শিকার। এরা গোধূলিচর বা নিশাচর। পেছনের পায়ের নখ দিয়ে আশ্রয় অাঁকড়ে ধরে ঝুলে থাকে। এদের প্রধান খাদ্য কলা, পতঙ্গ, মাকড়সা, মাছ, ব্যাঙ, ছোট ছোট সাপজাতীয় প্রাণী ইত্যাদি। শোনা যায়, কোনো কোনো বাদুড় রক্তও চুষে খায়। বছরে একবারই তিন থেকে পাঁচ মাস গর্ভধারণ করে একটি বাচ্চা প্রসব করে এবং মায়ের দুধ খেয়েই এরা বড় হয়। আগেই বলেছি, এরা ফল খেতে যেমন পছন্দ করে, তেমনি পছন্দ করে ফলের রস পান করতে। তাই খেজুর রসের মৌসুমে দেখা যায় সারা রাত ধরে এরা মনের আনন্দে খেজুরগাছে রস খেতে থাকে। নিপাহ ভাইরাসের কথা মনে আছে৷ এই বাদুড়ই সেই আসামি, যে রসের হাঁড়িতে নিপাহ ভাইরাস ছড়ায়। আর কোনো কোনো বাদুড় জলাতঙ্ক ভাইরাসবাহী হলেও নিজে তাতে আক্রান্ত হয় না। সুতরাং কোনোক্রমে বাদুড়ের কামড় খেলে জলাতঙ্করোধী টিকা নিতে ভুলবেন না বন্ধুরা। বাংলাপিডিয়া থেকে ধার করে উড়ন্ত শৃগাল তথা বাদুড় সম্পর্কে অনেক তথ্য দিলাম আপনাদের। কিন্তু একটি বিষয়ে আমি নিশ্চিত হতে পারলাম না। তাই দ্বিধায় পড়লাম একটু। ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি, বাদুড় যে মুখ দিয়ে খায়, সেই মুখ দিয়েই মল ত্যাগ করে। কথাটা কি সত্য? সেটা কি সম্ভব?
হঠাৎ মাথায় উত্তরটা ঝিলিক দিয়ে উঠল। যদি সংসদে একটি দল সরকারি দল হয়ে সরকারের গুণ গাইতে এবং বিরোধী দল হয়ে সমালোচনা (?) করতে পারে, তাহলে বাদুড় কেন একই মুখ দিয়ে খাবার খেতে ও মল ত্যাগ করতে পারবে না! সুতরাং জি এম কাদের সাহেব, আপনার ধারণা ভুল। একসঙ্গে সরকার ও বিরোধী দলে থাকা যায়! ঢাকা, ২৬ মে ২০১৪
আবুল হায়াত: নাট্যব্যক্তিত্ব।
হঠাৎ মাথায় উত্তরটা ঝিলিক দিয়ে উঠল। যদি সংসদে একটি দল সরকারি দল হয়ে সরকারের গুণ গাইতে এবং বিরোধী দল হয়ে সমালোচনা (?) করতে পারে, তাহলে বাদুড় কেন একই মুখ দিয়ে খাবার খেতে ও মল ত্যাগ করতে পারবে না! সুতরাং জি এম কাদের সাহেব, আপনার ধারণা ভুল। একসঙ্গে সরকার ও বিরোধী দলে থাকা যায়! ঢাকা, ২৬ মে ২০১৪
আবুল হায়াত: নাট্যব্যক্তিত্ব।
No comments