নির্বাচন হোক, গণমানুষের প্রত্যাশা পূরণ হোক by ফকির ইলিয়াস
না,
শেষ কথা বলে কিছু নেই। এটা দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। হয়তো ঠিক
বললাম না। ভারতে কি এমন ধারার রাজনীতি আমরা দেখি? না- সচরাচর এমন দেখা যায়
না। লালু প্রসাদ যাদবের কথা মনে আছে? তিনি এখন কোথায়? ভারতে ঘটা করেই হল
প্রায় ৩৮ কোটি টাকার পশুখাদ্য কেলেংকারির রায়? প্রতারণা, দুর্নীতি ও
ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ছিল লালুর নামে? তাকে সেই তিন ক্ষেত্রেই দোষী সাব্যস্ত
করলেন সিবিআই বিশেষ আদালতের বিচারক? এ রায় তার জন্য জোর ধাক্কা? ভারতে
রাজনীতি থেকে দুর্বৃত্তায়ন রুখতে সুপ্রিমকোর্ট নির্দেশ জারি করে, দু’বছরের
জন্য যদি কোনো সংসদ সদস্য বা বিধায়ক নিু আদালতেও দোষী সাব্যস্ত হন,
সেক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে তার সদস্যপদ খারিজ হয়ে যাবে।জেল থেকে দাঁড়ানো যাবে
না ভোটেও? নিরাপত্তার কারণে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাজা ঘোষণা করেন
আদালত। কারাদণ্ডের পাশাপাশি লালু প্রসাদ যাদবকে ২৫ লাখ রুপি জরিমানাও করা
হয়েছে। বিহারের সাবেক কংগ্রেসদলীয় মুখ্যমন্ত্রী জগন্নাথ মিশ্রকে চার বছরের
কারাদণ্ড ও দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বাকি আসামিদেরও বিভিন্ন মেয়াদে
সাজা দিয়েছেন আদালত। সুপ্রিমকোর্টের রায়ের ফলে লালু ও জগদীশ শর্মা লোকসভার
সদস্যপদ হারাবেন। উচ্চ আদালতে আপিল করবেন লালু। লালুর সঙ্গে এদিন অন্য ৪৪
জন অভিযুক্তও দোষী সাব্যস্ত হন। তার মধ্যে রয়েছেন বিহারের সাবেক
মুখ্যমন্ত্রী জগন্নাথ মিশ্র, জেডিইউয়ের সংসদ সদস্য জগদীশ শর্মাসহ আরও
বেশকিছু নেতা ও আমলা।
বস্তুত দাগিদের বাঁচাতে যখন কেন্দ্রীয় সরকার অর্ডিন্যান্স আনে, তখন নিন্দুকরা বলতে শুরু করে পশুখাদ্য কেলেংকারি মামলার রায় লালুর বিরুদ্ধে গেলেও যাতে তার সদস্যপদ খারিজ না হয়, সেজন্যই কংগ্রেস সরকার চেষ্টা করছিল? পরে রাহুলের ‘বিদ্রোহে’ ভেস্তে যায় সব কিছুই? তাই শেষরক্ষা করা গেল না বিহারের বন্ধুকে?
বাংলাদেশে বিএনপি নেতা তারেক রহমানকে খালাস দিয়েছেন আদালাত। তার বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের কারাদণ্ড হয়েছে। মামলার আপিল হবে। এদিকে তারেক রহমানের এ খালাসের খবরে বিএনপি ঘরানায় আনন্দের বন্যা। স্বভাবতই সরকার এ রায়ের মাধ্যমে নিজেদের আরও স্বচ্ছতা দাবি করেছে। বলেছে, আমরা আইনি বিষয়ে হস্তক্ষেপ করি না। যদিও এটা না মেনে বিএনপি বলছে, তারেকের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ সরকার প্রমাণই করতে পারেনি।
তারেকের মামলার বিষয়টি এখন কমই গুরুত্ব পেয়েছে দেশের মানুষের কাছে। এর কারণ সামনেই নির্বাচন। কী হবে, কী হতে পারে, সেটাই মানুষের ভাবনার বিষয়। সরকার সেই ভাবনাকে জিইয়ে রেখেই নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। দেশে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, জেপির নেতারা শপথ নিয়েছেন। অনেকের চোখ ছিল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দিকে। তার দলের মনোনীত মন্ত্রীরা শপথ নিয়েছেন। জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বলেছেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। হতে পারে তা বাংলাদেশের ললাট লিখন। পাশ্চাত্যের উন্নত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো এ কথা মানে না। ডিবেট হয়। আলোচনা হয়। শাটডাউন হয়। কিন্তু তারপরও দেশের নাগরিকের অধিকার ও চাওয়া সমুন্নত থাকে। বাংলাদেশে তা হয়নি। কেন হয়নি- তা ভাবা দরকার সবারই।
আমরা দেখছি, দীর্ঘদিন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হচ্ছে না। তাই বলে কি ছাত্ররাজনীতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে? না হয়নি। বড় দলগুলো ছাত্র সংসদ নির্বাচন না করে প্রকারান্তরে নিজেদের দলের সভাপতি-সম্পাদককেই ডাকসু-রাকসু-চাকসু ইত্যাদির ছায়া ( শ্যাডো ) ভিপি-জিএস বানিয়েছে। এরাই এখন দেশের রাজনীতিতে নতুন নেতৃত্ব। মেধাবীরা রাজনীতিতে আসেনি। এসেছে বড় দলগুলোর মদতপুষ্টরা। ছাত্র রাজনীতি কোনো দলই বাদ দেয়নি। দিতে পারেনি। বরং বিভিন্ন সরকারের সময় ছাত্র নামধারী কিছু সন্ত্রাসী-মাস্তান-টেন্ডারবাজরা লুটপাট করেছে। এ চেতনায় কি এদেশের মানুষ বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল? না- আনেনি। বীরের রক্তসে াত এদেশে এখন যেন কপাটবন্দি ইতিহাস !
বাংলাদেশকে ভোগ করছে একটি চক্র। এরা কারা? কী তাদের উদ্দেশ্য? এসব প্রশ্নের জবাব খোঁজা প্রজন্মের জন্য দরকারি বিষয়। বাংলাদেশের রাজনীতি বিদেশ থেকে যেসব দাতা গোষ্ঠী ও মিত্ররা নিয়ন্ত্রণ করে তাদের আসল পরিচয় আমরা জানি কি?
একটা ছোট্ট ঘটনা বলি। তখন ইরাকে মার্কিন সেনাসন্ত্রাস চলছে। আমার প্রতিবেশী এক মহিলা আমাকে জানালেন, জ্বালানি তেলের দাম নিউইয়র্কে আজ সকালেই বেশ বেড়ে গেছে। আমি বললাম, সংবাদটা তো খারাপ বটেই । মহিলা ভ্রু কুঁচকে আরও বললেন, প্রভুর কাছে আশীর্বাদ কামনা কর। আমরা যেন ইরাকে জিতে আসতে পারি। না হয় তেলের দাম আরও বাড়বে। আমি বললাম, রক্তের বিনিময়ে আমরা তেল চাইব! এ হল মার্কিনি নীতি। এটা বাংলাদেশের রাজনীতিকরাও জানেন ভালো করেই। আর জানেন বলেই তারা তাদের সন্তানদের বিদেশে লেখাপড়া করাতে পাঠান। আর বাংলাদেশের প্রজন্ম পুড়ে হরতালের আগুনে।
বাঙালির প্রথম স্বপ্ন ছিল একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। সব ধর্মের মানুষের নিরাপদ আবাসস্থল। দেশ আমরা পেয়েছি। কিন্তু শান্তি পাইনি। শেষ কথা কিছু থাকবে না কেন? অহিংস রাজনীতি, মহান স্বাধীনতার চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ এ জাতি ধারণ করতে পারছে না কেন পুরোপুরিভাবে? কেন এখনও রাজাকারের প্রেতাত্মা ভর করছে কিছু মানুষের মননে? দেশে নির্বাচন হোক। সেই নির্বাচনে গণমানুষের প্রত্যাশাপূর্ণ জয় হোক। আমরা গণতান্ত্রিক জাগরণ চাই। মনে রাখতে হবে, আজ ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ যা করছে, এর দ্বিগুণ হঠকারিতা করবে বিএনপি, তারা যখন ক্ষমতায় যাবে। তারাও বলবে, আমরা সংবিধান অনুযায়ী সবকিছু করছি। এ নিষ্ঠুরতায় পিষ্ট হতে হতেই দাঁড়াবে মানুষ। তবে এর জন্য আর কত সময় লাগবে, তা এখনও বলা যাচ্ছে না।
ফকির ইলিয়াস : যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী প্রাবন্ধিক
বস্তুত দাগিদের বাঁচাতে যখন কেন্দ্রীয় সরকার অর্ডিন্যান্স আনে, তখন নিন্দুকরা বলতে শুরু করে পশুখাদ্য কেলেংকারি মামলার রায় লালুর বিরুদ্ধে গেলেও যাতে তার সদস্যপদ খারিজ না হয়, সেজন্যই কংগ্রেস সরকার চেষ্টা করছিল? পরে রাহুলের ‘বিদ্রোহে’ ভেস্তে যায় সব কিছুই? তাই শেষরক্ষা করা গেল না বিহারের বন্ধুকে?
বাংলাদেশে বিএনপি নেতা তারেক রহমানকে খালাস দিয়েছেন আদালাত। তার বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের কারাদণ্ড হয়েছে। মামলার আপিল হবে। এদিকে তারেক রহমানের এ খালাসের খবরে বিএনপি ঘরানায় আনন্দের বন্যা। স্বভাবতই সরকার এ রায়ের মাধ্যমে নিজেদের আরও স্বচ্ছতা দাবি করেছে। বলেছে, আমরা আইনি বিষয়ে হস্তক্ষেপ করি না। যদিও এটা না মেনে বিএনপি বলছে, তারেকের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ সরকার প্রমাণই করতে পারেনি।
তারেকের মামলার বিষয়টি এখন কমই গুরুত্ব পেয়েছে দেশের মানুষের কাছে। এর কারণ সামনেই নির্বাচন। কী হবে, কী হতে পারে, সেটাই মানুষের ভাবনার বিষয়। সরকার সেই ভাবনাকে জিইয়ে রেখেই নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। দেশে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, জেপির নেতারা শপথ নিয়েছেন। অনেকের চোখ ছিল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দিকে। তার দলের মনোনীত মন্ত্রীরা শপথ নিয়েছেন। জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বলেছেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। হতে পারে তা বাংলাদেশের ললাট লিখন। পাশ্চাত্যের উন্নত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো এ কথা মানে না। ডিবেট হয়। আলোচনা হয়। শাটডাউন হয়। কিন্তু তারপরও দেশের নাগরিকের অধিকার ও চাওয়া সমুন্নত থাকে। বাংলাদেশে তা হয়নি। কেন হয়নি- তা ভাবা দরকার সবারই।
আমরা দেখছি, দীর্ঘদিন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হচ্ছে না। তাই বলে কি ছাত্ররাজনীতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে? না হয়নি। বড় দলগুলো ছাত্র সংসদ নির্বাচন না করে প্রকারান্তরে নিজেদের দলের সভাপতি-সম্পাদককেই ডাকসু-রাকসু-চাকসু ইত্যাদির ছায়া ( শ্যাডো ) ভিপি-জিএস বানিয়েছে। এরাই এখন দেশের রাজনীতিতে নতুন নেতৃত্ব। মেধাবীরা রাজনীতিতে আসেনি। এসেছে বড় দলগুলোর মদতপুষ্টরা। ছাত্র রাজনীতি কোনো দলই বাদ দেয়নি। দিতে পারেনি। বরং বিভিন্ন সরকারের সময় ছাত্র নামধারী কিছু সন্ত্রাসী-মাস্তান-টেন্ডারবাজরা লুটপাট করেছে। এ চেতনায় কি এদেশের মানুষ বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল? না- আনেনি। বীরের রক্তসে াত এদেশে এখন যেন কপাটবন্দি ইতিহাস !
বাংলাদেশকে ভোগ করছে একটি চক্র। এরা কারা? কী তাদের উদ্দেশ্য? এসব প্রশ্নের জবাব খোঁজা প্রজন্মের জন্য দরকারি বিষয়। বাংলাদেশের রাজনীতি বিদেশ থেকে যেসব দাতা গোষ্ঠী ও মিত্ররা নিয়ন্ত্রণ করে তাদের আসল পরিচয় আমরা জানি কি?
একটা ছোট্ট ঘটনা বলি। তখন ইরাকে মার্কিন সেনাসন্ত্রাস চলছে। আমার প্রতিবেশী এক মহিলা আমাকে জানালেন, জ্বালানি তেলের দাম নিউইয়র্কে আজ সকালেই বেশ বেড়ে গেছে। আমি বললাম, সংবাদটা তো খারাপ বটেই । মহিলা ভ্রু কুঁচকে আরও বললেন, প্রভুর কাছে আশীর্বাদ কামনা কর। আমরা যেন ইরাকে জিতে আসতে পারি। না হয় তেলের দাম আরও বাড়বে। আমি বললাম, রক্তের বিনিময়ে আমরা তেল চাইব! এ হল মার্কিনি নীতি। এটা বাংলাদেশের রাজনীতিকরাও জানেন ভালো করেই। আর জানেন বলেই তারা তাদের সন্তানদের বিদেশে লেখাপড়া করাতে পাঠান। আর বাংলাদেশের প্রজন্ম পুড়ে হরতালের আগুনে।
বাঙালির প্রথম স্বপ্ন ছিল একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। সব ধর্মের মানুষের নিরাপদ আবাসস্থল। দেশ আমরা পেয়েছি। কিন্তু শান্তি পাইনি। শেষ কথা কিছু থাকবে না কেন? অহিংস রাজনীতি, মহান স্বাধীনতার চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ এ জাতি ধারণ করতে পারছে না কেন পুরোপুরিভাবে? কেন এখনও রাজাকারের প্রেতাত্মা ভর করছে কিছু মানুষের মননে? দেশে নির্বাচন হোক। সেই নির্বাচনে গণমানুষের প্রত্যাশাপূর্ণ জয় হোক। আমরা গণতান্ত্রিক জাগরণ চাই। মনে রাখতে হবে, আজ ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ যা করছে, এর দ্বিগুণ হঠকারিতা করবে বিএনপি, তারা যখন ক্ষমতায় যাবে। তারাও বলবে, আমরা সংবিধান অনুযায়ী সবকিছু করছি। এ নিষ্ঠুরতায় পিষ্ট হতে হতেই দাঁড়াবে মানুষ। তবে এর জন্য আর কত সময় লাগবে, তা এখনও বলা যাচ্ছে না।
ফকির ইলিয়াস : যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী প্রাবন্ধিক
No comments