দুর্নীতিবাজদের তুষ্ট করতেই দুদক আইন সংশোধন? by মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার
নবম
সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে
যেসব অঙ্গীকার করা হয়েছিল, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রতিশ্র“তি ছিল
দুর্নীতি দমনসংক্রান্ত। যেমন- মানবাধিকার কমিশন ও ন্যায়পাল গঠন করা,
দ্রব্যমূল্য সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে
আসা, প্রশাসনের দলীয়করণ বন্ধ করা, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্যবর্গ
এবং সংসদ সদস্যগণের সম্পদের হিসাব গ্রহণ ও প্রকাশ করা এবং দুর্নীতি দমন
কমিশনকে (দুদক) স্বাধীন ও শক্তিশালী করে দুর্নীতি দমন করা। কিন্তু এসব
প্রতিশ্র“তি পালনে মহাজোট সরকার আন্তরিকতা প্রদর্শন করতে পারেনি। একটি
মানবাধিকার কমিশন গঠন করলেও তাকে প্রয়োজনীয় অর্থ ও লোকবল না দিয়ে ঠুঁটো
জগন্নাথ করে রাখা হয়েছে। উল্লিখিত অন্য দুর্নীতি দমনসংক্রান্ত
প্রতিশ্র“তিগুলো পূরণে সরকার কোনো রকম আন্তরিকতা দেখায়নি। পরিবর্তে কিছু
কিছু ক্ষেত্রে সরকার দুর্নীতি বৃদ্ধির সুযোগ করে দিয়েছে। যেমন- মেয়াদান্তে
এসে মহাজোট সরকার ১০ নভেম্বর জাতীয় সংসদে দুর্নীতি দমন সংশোধন আইন পাস করে
দুদকের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে এ প্রতিষ্ঠানটিকে ২০০৪-পূর্ববর্তী দুর্নীতি দমন
ব্যুরোর চরিত্র ফিরিয়ে দেয়। ফলে দুর্নীতি দমনে দুদকের স্বাধীনভাবে কাজ
করার কোনো ক্ষমতা থাকল না। কারণ পাস করা সংশোধিত আইন অনুযায়ী দুদক সরকারের
মন্ত্রী-এমপি বা কোনো আমলার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে স্বাধীনভাবে মামলা
করতে বা আদালতে চার্জশিট প্রদান করতে পারবে না। এ কাজ করতে হলে দুদককে
সরকারের পূর্বানুমতি গ্রহণ করতে হবে। এ আইন পাসের মধ্য দিয়ে সরকার দুদকের
স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে একে ক্ষমতাহীন এমন এক কাগুজে বাঘে পরিণত করল, যে বাঘ
দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কেবল গর্জন করতে পারবে; কিন্তু তাদের কামড়াতে
পারবে না। শুধু তাই নয়, দুদক কর্মকর্তারা কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছে
প্রমাণিত হলে তাদের পাঁচ বছরের শাস্তি এবং পুলিশকে দিয়ে দুদক কর্মকর্তাদের
অপরাধের তদন্ত করার বিষয় এ আইনে যুক্ত করে দুদক কর্মকর্তাদের মামলা করতে
নিরুৎসাহিত করা হয়। এ অবস্থায় দুদক কর্মকর্তারা সরকারি কর্মকর্তাদের
বিরুদ্ধে মামলা করার উদ্যোগ নেয়াকে তাদের ক্যারিয়ারের জন্য হুমকি মনে
করবেন।
এ বিলটি যদিও সংসদে উত্থাপন করা হয় দুর্নীতি দমনে দুদককে অধিকতর ক্ষমতাশালী করে তোলার লক্ষ্যে; কিন্তু সরকার এ আইন পাসের মধ্য দিয়ে কাজ করল ঠিক তার বিপরীত। এ কাজটি করার মধ্য দিয়ে সরকার দুর্নীতিমুক্ত সমাজ দেখতে আগ্রহী সাধারণ মানুষকে হতাশ করলেও যুগপৎ দুর্নীতিবাজ রাজনীতিক ও সরকারি আমলাদের খুশি করতে পেরেছে। কারণ এ আইন কার্যকর থাকলে অসৎ রাজনীতিক এবং দুর্নীতিবাজ আমলারা সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে দুদককে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ফ্রি-স্টাইলে দুর্নীতি করতে পারবে। আর গত পাঁচ বছর যেসব রাজনীতিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তা সরকারি প্রশ্রয়ে দুর্নীতি করে ব্যাপক অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন, তারা এখন এ সরকারকে বাহবা দিয়ে নিরাপদে নিশ্চিন্তে ঘুমাবেন।
আলোচ্য আইনটি পাসের ফলে দুদক যে কেবল স্বাধীনতা হারাল তাই নয়, এ আইনটি দুদক আইনের ২৪ ধারা ও সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। উল্লেখ্য, দুদক আইনের ২৪ ধারায় দুদককে স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা দেয়া হলেও নতুন আইনে দুদকের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে পুরো উল্টো কথা বলা হয়েছে। আর সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়, ‘সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয়লাভের অধিকারী।’ নতুন সংশোধিত দুদক আইন দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে দুদক কর্মকর্তাদের জন্য এক রকম এবং সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য আরেক রকম আচরণ করার ক্ষেত্র তৈরি করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সমাজবিজ্ঞানীরা এ আইনের তীব্র নিন্দা করেন। আইনটির সমালোচনা করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘সরকার সংসদে যে বিলটি পাস করেছে তা সংবিধানের ২৭ ধারা ও দুদক আইনের ২৪ ধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই আইনের ফলে সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি আরও বাড়বে। তারা দুর্নীতি করার ক্ষেত্রে আরও স্বচ্ছন্দবোধ করবে।’ দুদক কমিশনার ও কর্মকর্তারাও একই সুরে তীব্র ভাষায় এ আইনের সমালোচনা করেন। বাংলাদেশে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে কর্মরত ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এ আইন পাস হওয়ার পর হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, ‘সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকারের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক এ সংশোধনী পাস করা শুধু হতাশাজনকই নয়, সরকারের জন্য আত্মঘাতীমূলক। দুদকের যতটুকুই ক্ষমতা ছিল তাও খর্ব করায় জনগণের কাছে সরকারের এই পদক্ষেপ প্রতারণামূলক হিসেবে বিবেচিত হবে।’ এই বিশিষ্ট নাগরিক সরকারের মেয়াদান্তে পাস হওয়া এ আইন সম্পর্কে বিভিন্ন পেশাজীবী ও সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে বুঝতে পারেন যে, এ আইনটি পাস করায় সচেতন মানুষ সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ। কারণ এ দেশের অধিকাংশ মানুষ দুর্নীতিমুক্ত সমাজ দেখতে চান। তারা সমাজের সর্বক্ষেত্রে নিয়ম-শৃংখলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত দেখতে চান। তারা চান দুদককে স্বাধীনতা দিয়ে শক্তিশালী করা হোক, যাতে তারা দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করে সফলকাম হয়। কারণ সাধারণ মানুষ দেখেছে, ২০০৭-২০০৮ সালে ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দীন অসাংবিধানিক সরকারের আমলে কীভাবে দুদককে বিরাজনীতিকরণ ও মাইনাস-টু থিউরি কার্যকর করতে ব্যবহার করা হয়। ওই সময় বিধিবহির্ভূতভাবে প্রাথমিক অনুসন্ধান না করে দুদক বড় রাজনৈতিক দলগুলোর অনেক রাজনৈতিক নেতাকে সন্দেহভাজন দুর্নীতিবাজের তালিকাভুক্ত করে তাদের গ্রেফতারে সরকারকে সহায়তা করে। এ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি দমন করতে না পারলেও ওই সরকার অন্যায়ভাবে দুর্নীতিবাজদের মধ্যে একটি সাময়িক ত্রাস সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু দেশবাসী দুদককে নিপীড়নকারী বা নির্যাতনকারীর ভূমিকায় দেখতে চায়নি। এ জন্য তারা ভেবেছিল, নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় এসে দুদককে একটি স্বাধীন ও পেশাদার সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলবে। সে কারণে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতিহারে অন্তর্ভুক্ত দুর্নীতি দমনের প্রতিশ্র“তি জনসমর্থন পেয়েছিল।
নবম সংসদ নির্বাচনের আগে দুর্নীতি দমনের বড় বড় প্রতিশ্র“তি দিলেও এ সরকার যে দুদককে স্বাধীন ও শক্তিশালী করার মধ্য দিয়ে দুর্নীতি দমন করতে চায়নি সে বিষয়টি মহাজোট ক্ষমতাসীন হওয়ার পর সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে। কারণ সরকার তার নির্বাচনী প্রতিশ্র“তি মোতাবেক দুদককে শক্তিশালী করার নামে ২০০৯ সালের মার্চে দুর্নীতি দমন আইন পর্যালোচনা করার জন্য যে মন্ত্রিসভা কমিটি গঠন করে, ওই কমিটি কর্তৃক প্রস্তুতকৃত ১১ দফা সুপারিশ সংবলিত দুদক আইনের খসড়া মন্ত্রিসভার ২০১০ সালের ২৬ এপ্রিল বৈঠকে পাস হলে সবার কাছে সরকারের উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়। কারণ এ খসড়া দেখে কারোই বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে, সরকার দুদকের ক্ষমতা কমিয়ে একে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনতে চায়। আলোচ্য ১১ দফা সুপারিশের মধ্যে ৯টি সুপারিশের সঙ্গে স্বয়ং দুদক দ্বিমত পোষণ করে। ওই সময় এ নিয়ে সরকার ও দুদকের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। সরকারি কর্মকর্তারা সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে ধরে নিয়ে ওই সময় মন্ত্রিসভা কমিটি তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেয়। দুদক চেয়ারম্যান ওই সময় দুঃখ করে বলেছিলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশন এমনিতেই একটি দন্তহীন বাঘ, এখন এর নখগুলোও কেটে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে দুদক দাঁত ও নখবিহীন বাঘে পরিণত হবে। তখন আর একে দিয়ে কোনো অবস্থাতেই দুর্নীতি দমন করা সম্ভব হবে না।’ টিআইবিও এ রকম সরকারি প্রচেষ্টার সমালোচনা করে এবং সরকার দুদককে পেশাদার দুর্নীতি দমনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে বক্তব্য, বিবৃতি ও সেমিনারের মাধ্যমে পরামর্শ দেয়। কিন্তু কমিটি চায়, দুদক যেন এর ক্ষমতা ব্যবহার করে সরকারি কর্মচারীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে না পারে। দুদককে রাষ্ট্রপতির কাছে দায়ী করা হলে এর ক্ষমতার অপব্যবহার কমবে বলে কমিটির পক্ষ থেকে আশা করা হয়। কিন্তু দুদকের পক্ষ থেকে এসব প্রস্তাবের সমালোচনা করা হয়। দুদককে যে সরকার স্বাধীনতা দিতে চায় না তা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকেও অনুধাবনীয়। ২০১০ সালের ২৬ এপ্রিল মন্ত্রিসভার বৈঠকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই দুদক স্বাধীন সংস্থা হিসেবে কাজ করবে। এটি আরও শক্তিশালী ও কার্যকর হবে, তা আমরা চাই। তবে স্বাধীনতা মানে এই নয়, তারা ইচ্ছা-খুশিমতো চলবে। তাদের একটি নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ থাকা উচিত। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, সরকার দুদককে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে চায় না। পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী ওই বৈঠকে এমনও মন্তব্য করা হয়- দুদক রাষ্ট্রপতির কাছে জবাবদিহি করতে চায় না, সংসদ, জনগণ কারও কাছে জবাবদিহি করবে না। তবে কি শুধু আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করবে? দুদক যে ধরনের স্বাধীনতা চায়, মন্ত্রিপরিষদ কমিটি বৈঠকের আলোচনায় আলোচকরা দুদককে ওই প্রকার স্বাধীনতা প্রদানের বিপক্ষে মতামত দেন। ফলে আলোচ্য সংশোধনী মন্ত্রিসভায় পাস হওয়ার পর দুদকের সঙ্গে আর ২০০৪-পূর্ববর্তী দুর্নীতি দমন ব্যুরোর উল্লেখযোগ্য পার্থক্য থাকে না।
মন্ত্রিপরিষদ সভায় দুদক আইনের আলোচ্য সংশোধনী পাস হওয়ার পর সর্বমহলে এর তীব্র সমালোচনা হয়। সুশীল সমাজ, সাধারণ মানুষ, দুদক, দুর্নীতি দমনে কর্মরত সংস্থা এবং সমাজ গবেষকরা সরকারকে এ সংশোধনী চূড়ান্ত না করে এ নিয়ে পুনর্ভাবনার পরামর্শ দেন। সমালোচনার তীব্রতা বুঝতে পেরে সরকার এ বিষয়টি নিয়ে অগ্রসর হতে ধীরগতি অবলম্বন করে। ফলে সংশ্লিষ্ট মহল ভাবে, সরকার হয়তো দুদকের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবে না এবং দুদক আইন পরবর্তী সময়ে পরিবর্তন করে ভিন্ন রূপ দিয়ে পাস করবে। কিন্তু না, সরকার সে পথে যায়নি। দুদকের স্বাধীনতা কেড়ে নিলে যে এ প্রতিষ্ঠানটিকে সরকারের ডিকটেশন অনুযায়ী কাজ করতে হবে, সে বিষয়টি সবার কাছে স্পষ্ট। দুর্নীতি দমনের স্বার্থের চেয়ে সরকার দুর্নীতিবাজদের স্বার্থের প্রতিই হয়তো বেশি মনোযোগ দিয়েছে। এজন্য মন্ত্রিপরিষদ সভায় সংশোধিত দুদক আইন অনুমোদিত হওয়ার সাড়ে তিন বছর পর দুদকের ক্ষমতা খর্বকারী এ আইনের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন না এনেই ক্ষমতার মেয়াদান্তে এসে ১০ নভেম্বর জাতীয় সংসদে দুর্নীতি দমন কমিশন সংশোধন বিল-২০১৩ পাস করা হয়।
দুর্নীতি দমন কমিশন সংশোধন বিল-২০১৩ পাস হওয়ার পর দেশবাসীর আর বুঝতে বাকি থাকল না যে, মহাজোট ক্ষমতায় আসার আগে ও পরে এতদিন দুর্নীতি দমনের যেসব প্রতিশ্র“তি দিয়েছিল, তা ছিল স্রেফ রাজনৈতিক বক্তব্য। এর মধ্যে কোনো আন্তরিকতা ছিল না। সরকারি দলের নেতারা দুর্নীতিবিরোধী বক্তব্য দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চেয়েছিলেন এবং তা করতে পেরেছিলেন। কিন্তু পদ্মা সেতু, হলমার্ক, রেলওয়ের বস্তাভরা টাকার নিয়োগ-দুর্নীতিসহ আরও অনেক দুর্নীতির কারণে দশম সংসদ নির্বাচনের প্রচারণায়ও যে এবার দুর্নীতি একটি প্রধান ইস্যু হবে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। দেখার বিষয়, নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হলে সরকারদলীয় প্রার্থীরা নৌকা মার্কায় ভোট চাওয়ার সময় গতবারের মতো এবার আবারও দুর্নীতি দমনের প্রতিশ্র“তি প্রদান করেন কিনা। দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে মহাজোট সরকারের পাঁচ বছরের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড দেখার পর দশম সংসদ নির্বাচনের প্রচারণাকালে আওয়ামী লীগ বা মহাজোটের প্রার্থীরা যদি আবারও দুর্নীতি দমনের ওয়াদা করে ভোটারদের সমর্থন প্রার্থনা করেন, তাহলে সচেতন ভোটাররা যে সে আবেদনে সাড়া দেবেন না তা বলে দেয়া যায়। কারণ নবম সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা দুর্নীতি দমনে যেসব ওয়াদা করেছিলেন তা পূরণে আন্তরিকতা না দেখিয়ে তারা ভোটারদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। দুর্নীতি দমনে আওয়ামী লীগের ওয়াদা এবং দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে এ সরকারের পাঁচ বছরের কর্মকাণ্ডের নির্মোহ বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন জায়ারের একজন বিশিষ্ট দুর্নীতি গবেষকের উক্তিকে স্মরণ করিয়ে দেয়। ওই গবেষক ১৯৮০ সালে ‘মডার্ন আফ্রিকান স্টাডিজ’ জার্নালে প্রকাশিত তার একটি প্রবন্ধে বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছ থেকে বেশি বেশি দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঘোষণা এলে বুঝতে হবে এটা সংশ্লিষ্ট ঘোষকদের নিজেদের দুর্নীতি ঢাকার একটা কৌশল।’ দুদকের স্বাধীনতা খর্ব করে জাতীয় সংসদে পাস করা দুর্নীতি দমন কমিশন সংশোধন বিল-২০১৩ সুশীল সমাজ ও নাগরিক সম্প্রদায়কে যেমন অসন্তুষ্ট করেছে, তেমনি সরকারকেও করেছে ক্ষতিগ্রস্ত, বিব্রত ও অজনপ্রিয়। তবে এ বিল পাস করে সরকার সবাইকে অসন্তুষ্ট করলেও দুর্নীতিবাজ কালো টাকার মালিকদের সন্তুষ্ট করতে পেরেছে।
ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার : অধ্যাপক, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
এ বিলটি যদিও সংসদে উত্থাপন করা হয় দুর্নীতি দমনে দুদককে অধিকতর ক্ষমতাশালী করে তোলার লক্ষ্যে; কিন্তু সরকার এ আইন পাসের মধ্য দিয়ে কাজ করল ঠিক তার বিপরীত। এ কাজটি করার মধ্য দিয়ে সরকার দুর্নীতিমুক্ত সমাজ দেখতে আগ্রহী সাধারণ মানুষকে হতাশ করলেও যুগপৎ দুর্নীতিবাজ রাজনীতিক ও সরকারি আমলাদের খুশি করতে পেরেছে। কারণ এ আইন কার্যকর থাকলে অসৎ রাজনীতিক এবং দুর্নীতিবাজ আমলারা সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে দুদককে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ফ্রি-স্টাইলে দুর্নীতি করতে পারবে। আর গত পাঁচ বছর যেসব রাজনীতিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তা সরকারি প্রশ্রয়ে দুর্নীতি করে ব্যাপক অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন, তারা এখন এ সরকারকে বাহবা দিয়ে নিরাপদে নিশ্চিন্তে ঘুমাবেন।
আলোচ্য আইনটি পাসের ফলে দুদক যে কেবল স্বাধীনতা হারাল তাই নয়, এ আইনটি দুদক আইনের ২৪ ধারা ও সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। উল্লেখ্য, দুদক আইনের ২৪ ধারায় দুদককে স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা দেয়া হলেও নতুন আইনে দুদকের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে পুরো উল্টো কথা বলা হয়েছে। আর সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়, ‘সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয়লাভের অধিকারী।’ নতুন সংশোধিত দুদক আইন দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে দুদক কর্মকর্তাদের জন্য এক রকম এবং সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য আরেক রকম আচরণ করার ক্ষেত্র তৈরি করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সমাজবিজ্ঞানীরা এ আইনের তীব্র নিন্দা করেন। আইনটির সমালোচনা করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘সরকার সংসদে যে বিলটি পাস করেছে তা সংবিধানের ২৭ ধারা ও দুদক আইনের ২৪ ধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই আইনের ফলে সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি আরও বাড়বে। তারা দুর্নীতি করার ক্ষেত্রে আরও স্বচ্ছন্দবোধ করবে।’ দুদক কমিশনার ও কর্মকর্তারাও একই সুরে তীব্র ভাষায় এ আইনের সমালোচনা করেন। বাংলাদেশে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে কর্মরত ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এ আইন পাস হওয়ার পর হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, ‘সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকারের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক এ সংশোধনী পাস করা শুধু হতাশাজনকই নয়, সরকারের জন্য আত্মঘাতীমূলক। দুদকের যতটুকুই ক্ষমতা ছিল তাও খর্ব করায় জনগণের কাছে সরকারের এই পদক্ষেপ প্রতারণামূলক হিসেবে বিবেচিত হবে।’ এই বিশিষ্ট নাগরিক সরকারের মেয়াদান্তে পাস হওয়া এ আইন সম্পর্কে বিভিন্ন পেশাজীবী ও সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে বুঝতে পারেন যে, এ আইনটি পাস করায় সচেতন মানুষ সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ। কারণ এ দেশের অধিকাংশ মানুষ দুর্নীতিমুক্ত সমাজ দেখতে চান। তারা সমাজের সর্বক্ষেত্রে নিয়ম-শৃংখলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত দেখতে চান। তারা চান দুদককে স্বাধীনতা দিয়ে শক্তিশালী করা হোক, যাতে তারা দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করে সফলকাম হয়। কারণ সাধারণ মানুষ দেখেছে, ২০০৭-২০০৮ সালে ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দীন অসাংবিধানিক সরকারের আমলে কীভাবে দুদককে বিরাজনীতিকরণ ও মাইনাস-টু থিউরি কার্যকর করতে ব্যবহার করা হয়। ওই সময় বিধিবহির্ভূতভাবে প্রাথমিক অনুসন্ধান না করে দুদক বড় রাজনৈতিক দলগুলোর অনেক রাজনৈতিক নেতাকে সন্দেহভাজন দুর্নীতিবাজের তালিকাভুক্ত করে তাদের গ্রেফতারে সরকারকে সহায়তা করে। এ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি দমন করতে না পারলেও ওই সরকার অন্যায়ভাবে দুর্নীতিবাজদের মধ্যে একটি সাময়িক ত্রাস সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু দেশবাসী দুদককে নিপীড়নকারী বা নির্যাতনকারীর ভূমিকায় দেখতে চায়নি। এ জন্য তারা ভেবেছিল, নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় এসে দুদককে একটি স্বাধীন ও পেশাদার সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলবে। সে কারণে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতিহারে অন্তর্ভুক্ত দুর্নীতি দমনের প্রতিশ্র“তি জনসমর্থন পেয়েছিল।
নবম সংসদ নির্বাচনের আগে দুর্নীতি দমনের বড় বড় প্রতিশ্র“তি দিলেও এ সরকার যে দুদককে স্বাধীন ও শক্তিশালী করার মধ্য দিয়ে দুর্নীতি দমন করতে চায়নি সে বিষয়টি মহাজোট ক্ষমতাসীন হওয়ার পর সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে। কারণ সরকার তার নির্বাচনী প্রতিশ্র“তি মোতাবেক দুদককে শক্তিশালী করার নামে ২০০৯ সালের মার্চে দুর্নীতি দমন আইন পর্যালোচনা করার জন্য যে মন্ত্রিসভা কমিটি গঠন করে, ওই কমিটি কর্তৃক প্রস্তুতকৃত ১১ দফা সুপারিশ সংবলিত দুদক আইনের খসড়া মন্ত্রিসভার ২০১০ সালের ২৬ এপ্রিল বৈঠকে পাস হলে সবার কাছে সরকারের উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়। কারণ এ খসড়া দেখে কারোই বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে, সরকার দুদকের ক্ষমতা কমিয়ে একে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনতে চায়। আলোচ্য ১১ দফা সুপারিশের মধ্যে ৯টি সুপারিশের সঙ্গে স্বয়ং দুদক দ্বিমত পোষণ করে। ওই সময় এ নিয়ে সরকার ও দুদকের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। সরকারি কর্মকর্তারা সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে ধরে নিয়ে ওই সময় মন্ত্রিসভা কমিটি তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেয়। দুদক চেয়ারম্যান ওই সময় দুঃখ করে বলেছিলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশন এমনিতেই একটি দন্তহীন বাঘ, এখন এর নখগুলোও কেটে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে দুদক দাঁত ও নখবিহীন বাঘে পরিণত হবে। তখন আর একে দিয়ে কোনো অবস্থাতেই দুর্নীতি দমন করা সম্ভব হবে না।’ টিআইবিও এ রকম সরকারি প্রচেষ্টার সমালোচনা করে এবং সরকার দুদককে পেশাদার দুর্নীতি দমনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে বক্তব্য, বিবৃতি ও সেমিনারের মাধ্যমে পরামর্শ দেয়। কিন্তু কমিটি চায়, দুদক যেন এর ক্ষমতা ব্যবহার করে সরকারি কর্মচারীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে না পারে। দুদককে রাষ্ট্রপতির কাছে দায়ী করা হলে এর ক্ষমতার অপব্যবহার কমবে বলে কমিটির পক্ষ থেকে আশা করা হয়। কিন্তু দুদকের পক্ষ থেকে এসব প্রস্তাবের সমালোচনা করা হয়। দুদককে যে সরকার স্বাধীনতা দিতে চায় না তা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকেও অনুধাবনীয়। ২০১০ সালের ২৬ এপ্রিল মন্ত্রিসভার বৈঠকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই দুদক স্বাধীন সংস্থা হিসেবে কাজ করবে। এটি আরও শক্তিশালী ও কার্যকর হবে, তা আমরা চাই। তবে স্বাধীনতা মানে এই নয়, তারা ইচ্ছা-খুশিমতো চলবে। তাদের একটি নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ থাকা উচিত। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, সরকার দুদককে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে চায় না। পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী ওই বৈঠকে এমনও মন্তব্য করা হয়- দুদক রাষ্ট্রপতির কাছে জবাবদিহি করতে চায় না, সংসদ, জনগণ কারও কাছে জবাবদিহি করবে না। তবে কি শুধু আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করবে? দুদক যে ধরনের স্বাধীনতা চায়, মন্ত্রিপরিষদ কমিটি বৈঠকের আলোচনায় আলোচকরা দুদককে ওই প্রকার স্বাধীনতা প্রদানের বিপক্ষে মতামত দেন। ফলে আলোচ্য সংশোধনী মন্ত্রিসভায় পাস হওয়ার পর দুদকের সঙ্গে আর ২০০৪-পূর্ববর্তী দুর্নীতি দমন ব্যুরোর উল্লেখযোগ্য পার্থক্য থাকে না।
মন্ত্রিপরিষদ সভায় দুদক আইনের আলোচ্য সংশোধনী পাস হওয়ার পর সর্বমহলে এর তীব্র সমালোচনা হয়। সুশীল সমাজ, সাধারণ মানুষ, দুদক, দুর্নীতি দমনে কর্মরত সংস্থা এবং সমাজ গবেষকরা সরকারকে এ সংশোধনী চূড়ান্ত না করে এ নিয়ে পুনর্ভাবনার পরামর্শ দেন। সমালোচনার তীব্রতা বুঝতে পেরে সরকার এ বিষয়টি নিয়ে অগ্রসর হতে ধীরগতি অবলম্বন করে। ফলে সংশ্লিষ্ট মহল ভাবে, সরকার হয়তো দুদকের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবে না এবং দুদক আইন পরবর্তী সময়ে পরিবর্তন করে ভিন্ন রূপ দিয়ে পাস করবে। কিন্তু না, সরকার সে পথে যায়নি। দুদকের স্বাধীনতা কেড়ে নিলে যে এ প্রতিষ্ঠানটিকে সরকারের ডিকটেশন অনুযায়ী কাজ করতে হবে, সে বিষয়টি সবার কাছে স্পষ্ট। দুর্নীতি দমনের স্বার্থের চেয়ে সরকার দুর্নীতিবাজদের স্বার্থের প্রতিই হয়তো বেশি মনোযোগ দিয়েছে। এজন্য মন্ত্রিপরিষদ সভায় সংশোধিত দুদক আইন অনুমোদিত হওয়ার সাড়ে তিন বছর পর দুদকের ক্ষমতা খর্বকারী এ আইনের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন না এনেই ক্ষমতার মেয়াদান্তে এসে ১০ নভেম্বর জাতীয় সংসদে দুর্নীতি দমন কমিশন সংশোধন বিল-২০১৩ পাস করা হয়।
দুর্নীতি দমন কমিশন সংশোধন বিল-২০১৩ পাস হওয়ার পর দেশবাসীর আর বুঝতে বাকি থাকল না যে, মহাজোট ক্ষমতায় আসার আগে ও পরে এতদিন দুর্নীতি দমনের যেসব প্রতিশ্র“তি দিয়েছিল, তা ছিল স্রেফ রাজনৈতিক বক্তব্য। এর মধ্যে কোনো আন্তরিকতা ছিল না। সরকারি দলের নেতারা দুর্নীতিবিরোধী বক্তব্য দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চেয়েছিলেন এবং তা করতে পেরেছিলেন। কিন্তু পদ্মা সেতু, হলমার্ক, রেলওয়ের বস্তাভরা টাকার নিয়োগ-দুর্নীতিসহ আরও অনেক দুর্নীতির কারণে দশম সংসদ নির্বাচনের প্রচারণায়ও যে এবার দুর্নীতি একটি প্রধান ইস্যু হবে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। দেখার বিষয়, নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হলে সরকারদলীয় প্রার্থীরা নৌকা মার্কায় ভোট চাওয়ার সময় গতবারের মতো এবার আবারও দুর্নীতি দমনের প্রতিশ্র“তি প্রদান করেন কিনা। দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে মহাজোট সরকারের পাঁচ বছরের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড দেখার পর দশম সংসদ নির্বাচনের প্রচারণাকালে আওয়ামী লীগ বা মহাজোটের প্রার্থীরা যদি আবারও দুর্নীতি দমনের ওয়াদা করে ভোটারদের সমর্থন প্রার্থনা করেন, তাহলে সচেতন ভোটাররা যে সে আবেদনে সাড়া দেবেন না তা বলে দেয়া যায়। কারণ নবম সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা দুর্নীতি দমনে যেসব ওয়াদা করেছিলেন তা পূরণে আন্তরিকতা না দেখিয়ে তারা ভোটারদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। দুর্নীতি দমনে আওয়ামী লীগের ওয়াদা এবং দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে এ সরকারের পাঁচ বছরের কর্মকাণ্ডের নির্মোহ বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন জায়ারের একজন বিশিষ্ট দুর্নীতি গবেষকের উক্তিকে স্মরণ করিয়ে দেয়। ওই গবেষক ১৯৮০ সালে ‘মডার্ন আফ্রিকান স্টাডিজ’ জার্নালে প্রকাশিত তার একটি প্রবন্ধে বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছ থেকে বেশি বেশি দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঘোষণা এলে বুঝতে হবে এটা সংশ্লিষ্ট ঘোষকদের নিজেদের দুর্নীতি ঢাকার একটা কৌশল।’ দুদকের স্বাধীনতা খর্ব করে জাতীয় সংসদে পাস করা দুর্নীতি দমন কমিশন সংশোধন বিল-২০১৩ সুশীল সমাজ ও নাগরিক সম্প্রদায়কে যেমন অসন্তুষ্ট করেছে, তেমনি সরকারকেও করেছে ক্ষতিগ্রস্ত, বিব্রত ও অজনপ্রিয়। তবে এ বিল পাস করে সরকার সবাইকে অসন্তুষ্ট করলেও দুর্নীতিবাজ কালো টাকার মালিকদের সন্তুষ্ট করতে পেরেছে।
ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার : অধ্যাপক, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
No comments