গার্মেন্টসে অগ্নিকাণ্ড- লাশের সারি দীর্ঘ হচ্ছে
পোশাক কারখানায় অগ্নিকা-ে শ্রমিকের লাশের সারি দীর্ঘ হচ্ছে। তাজরিন পোশাক কারখানায় অগ্নিকা-ের ঠিক দু’মাস পরে শনিবার মোহাম্মদপুরের স্মার্ট ফ্যাশন্সে আগুনে পুড়ে মারা গেলেন ৭ শ্রমিক।
বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের তথ্য থেকে জানা গেছে, গত বিশ বছরে পোশাক কারখানায় অগ্নিকা-ে পাঁচ শতাধিক পোশাক শ্রমিক মারা গেছেন।সর্বশেষ শনিবার মোহাম্মদপুরের স্মার্ট ফ্যাশন্সে অগ্নিকা-ের ঘটনায় মারা যান ৭ জন শ্রমিক। এর আগে গত ২৪ নবেম্বর সাভারের নিশ্চিন্তপুরে তাজরিন পোশাক কারখানায় আগুনে পুড়ে মারা যান ১১১ শ্রমিক। তাজরিনের ঘটনা দেশের সীমানা পেরিয়ে বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে বিশ্বের প্রথম সারির বিভিন্ন গণমাধ্যমে গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করে তাজরিন দুর্ঘটনা। এ ঘটনায় দেশের পোশাক রফতানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
পোশাক শিল্প কারকাখানায় আগুনে পুড়ে শ্রমিকের লাশ হওয়ার ঘটনা অনেক পুরনো। পোশাক শিল্প বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে প্রতি বছর অগ্নিকা-ে শ্রমিকদের প্রাণহানির ঘটনা পুনরাবৃত্তি হয়ে আসছে। তবে কোন দুর্ঘটনার কারণে কোন কারখানার মালিকেরই আজ পর্যন্ত কোন সাজা হয়নি।
বিজিএমইএ, ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) ও বিভিন্ন সংগঠনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বিশ বছরে পোশাক কারখানায় আগুনে প্রাণ দিয়েছেন অন্তত পাঁচ শ’র বেশি শ্রমিক। এর মধ্যে ২৪ নবেম্বর আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তাজরিন পোশাক কারখানায় অগ্নিকা-ে সর্বাধিক ১১১ শ্রমিকের প্রাণহানি ঘটে।
এছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে ২০১০ সালে পোশাক কারখানায় এ দুটি অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। একই বছরের ফেব্রুয়ারিতে গাজীপুর সদরের গরিব এ্যান্ড গরিব সোয়েটার ফ্যাক্টরিতে অগ্নিকা-ে মারা যান ২১ জন শ্রমিক। একই বছরের ১৪ ডিসেম্বর আশুলিয়া হামীম গ্রুপের পোশাক কারখানায় আগুনে পুড়ে ৩০ শ্রমিক মারা যান।
২০০৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের কেটিএস এ্যাপারেলস মিলে আগুন ধরলে ৬৫ জন শ্রমিক পুড়ে মারা যান। ওই বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের যমুনা স্পিনিং মিলে অগ্নিকা-ের ঘটনায় নিহত হন ছয়জন। একই বছরের মার্চ মাসে সায়েম ফ্যাশন লিমিটেডে আগুনে তিন মহিলা শ্রমিক নিহত হন। ২০০৫ সালের ৭ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের গোদনাইলে সান নিটিং নামে একটি পোশাক কারখানায় আগুনে ২০ শ্রমিকের মৃত্যু হয়।
২০০৪ সালের ডিসেম্বরে নরসিংদীর শিবপুরে পোশাক কারখানায় অগ্নিকা-ে ৪৮ শ্রমিক নিহত হন। ওই বছরের ৩ মে মিসকো সুপার মার্কেট কমপ্লেক্সের একটি পোশাক কারখানায় আগুন লাগলে মারা যান ৯ শ্রমিক। ২০০১ সালের ৮ আগস্ট ঢাকার মিরপুরের মিকো সোয়েটার লিমিটেডে আগুন ধরার গুজবে ভিড়ে পায়ের নিচে চাপা পড়ে নিহত হন ২৪ পোশাক শ্রমিক। এর সপ্তাহখানেক আগে মিরপুরের কাফরুলের একটি পোশাক কারখানায় অগ্নিকা-ে আরও ২৬ শ্রমিক প্রাণ হারান।
২০০০ সালের ২৫ নবেম্বর নরসিংদীর চৌধুরী নিটওয়্যার লিমিটেড পোশাক কারখানায় আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যান ৫৩ শ্রমিক। একই বছর রাজধানীর বনানীর চেয়ারম্যান বাড়িতে একটি নিটিং ফ্যাশন লিমিটেড পোশাক কারখানায় মারা যান ১২ জন শ্রমিক। এছাড়া ১৯৯৭ সালে রাজধানীর মিরপুরের তামান্না গার্মেন্ট, মাজার রোডের রহমান এ্যান্ড রহমান এ্যাপারেলস কারখানায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত হন যথাক্রমে ২৭ জন এবং ২২ জন সেলাই শ্রমিক। ১৯৯৬ সালে রাজধানীর তাহিদুল ফ্যাশনে ১৪ জন এবং সানটেক্স লিমিটিডের কারখানায় ১৪ জন আগুনে পুড়ে মারা যান। ১৯৯৫ সালে রাজধানীর ইব্রাহিমপুরের লুসাকা এ্যাপারেলসের কারখানায় নিহত হন ১০ জন গার্মেন্ট কর্মী। এর আগে ১৯৯০ সালের ১৭ ডিসেম্বর সাভারের সারেকা গার্মেন্টসে আগুনে পুড়ে মারা যান ২৭ জন।
No comments