উচ্চ আদালতে পাঁচ শতাধিক ডেথ রেফারেন্স মামলা বিচারাধীন- শুনানি বিলম্বে আসামিদের দুর্ভোগ by খোকন বড়ুয়া

উচ্চ আদালতে পাঁচ শতাধিক মৃত্যুদণ্ডাদেশ (ডেথ রেফারেন্স) মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে গত দুই বছরে নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ২১০টির। ২০১১ সালে ৬৪টি ও ২০১২ সালে ১৪৬টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে বলে সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০১০ সালের ৪৭, ২০০৯ সালের ৮৩, ২০০৮ সালের ১৩৭, ২০০৭ সালে ১০২, ২০০৬ সালের ১১১ ও ২০০৫ সালের ৫৫টি মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকে। এভাবেই দিন দিন যুক্ত হচ্ছে ডেথ রেফারেন্স মামলার জট। এসব মামলার মধ্যে অনেক মামলা প্রস্তুত হলেও বিভিন্ন কারণে তা শুনানির জন্য তালিকায় আসছে না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই জমে যাচ্ছে ডেথ রেফারেন্স মামলার জট।

জানা গেছে, ভারতীয় নাগরিক জিবরান হত্যা মামলা ও অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম, আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যাসহ অসংখ্য চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলাও বিচারাধীন। ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী নিম্ন আদালতে কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড হলেও হাইকোর্টের অনুমতি ছাড়া এ সাজা কার্যকর করা যায় না। মামলার কোনো পক্ষ মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করুক বা না করুক, রাষ্ট্রপক্ষে অবশ্যই হাইকোর্টে মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণের মামলা করতে হয়। ফলে নিম্ন আদালতের দেয়া সব মৃত্যুদণ্ডাদেশ হাইকোর্টের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হয়। বর্তমানে হাইকোর্টে পৃথক দু’টি বেঞ্চের মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণ মামলা পরিচালনার এখতিয়ার রয়েছে। মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণ মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বেঞ্চের সংখ্যা আরো বাড়ানো প্রয়োজন বলে আইনজীবীরা মনে করেন। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের মতে, বছরের পর বছর বিচার শুনানির অপেক্ষায় থাকা আসামিদের জন্য বিলম্বিত শুনানির প্রক্রিয়া একান্তভাবেই অমানবিক এবং ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। প্রয়োজনবোধে দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন বিচারপতিদের দিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ শুনানির বেঞ্চ বর্ধিত করা প্রয়োজন।

জানা গেছে, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ১১টির মধ্যে পাঁচ বিচারপতির পদ শূন্য রয়েছে। হাইকোর্ট বিভাগ থেকে ৩১ জানুয়ারি বিচারপতি শেখ রেজওয়ান আলী ও  মার্চে বিচারপতি খোন্দকার মুসা খালেদ অবসরে যাবেন। হাইকোর্ট বিভাগে বর্তমানে ৯৬ বিচারপতি রয়েছেন। আপিল বিভাগে ১১ বিচারপতি থাকলেও এখন রয়েছেন ছয়জন। শূন্য রয়েছে পাঁচজন বিচারপতির পদ।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে মৃত্যুদণ্ডসংক্রান্ত মামলা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির জন্য বেঞ্চের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। সঙ্গত কারণেই মৃত্যুদণ্ডসংক্রান্ত মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হবে। তবে যেসব মামলায় এখনো পেপার বুক প্রস্তুত হয়নি, অনুপস্থিত আসামিদের জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক আইনজীবী নিয়োগ করা হয় সে বিষয়গুলো ত্বরান্বিত করতে বিশেষ প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, কারাপ্রকোষ্ঠে মৃত্যুদণ্ডাদেশ নিয়ে বছরের পর বছর বিচার শুনানির অপেক্ষায় থাকা এবং আসামিদের বিলম্বিত শুনানির প্রক্রিয়া একান্তভাবেই অমানবিক ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। যোগ্যতাসম্পন্ন বিচারপতিদের দিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ শুনানির বেঞ্চ বাড়িয়ে দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
       

No comments

Powered by Blogger.