বিমানের শিডিউল লণ্ডভণ্ড- হ্যাংগারে পড়ে আছে বোয়িং ‘অরুণ আলো’ ও ডিসি-১০ by মনির হোসেন
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফাইট শিডিউল
দুই সপ্তাহ ধরে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়ায় হাজার হাজার যাত্রীকে দেশে এবং
বিদেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়েছে।
ক্ষুব্ধ
যাত্রীরা নিরুপায় হয়ে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে বিক্ষোভ করে
তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম শাহ আমানত
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মধ্যপ্রাচ্যগামী দু’টি শিডিউল ফাইটে পরিবর্তন
আনার জের ধরে তিন শতাধিক যাত্রী বিমানবন্দরে বিক্ষোভ করেন।
এ দিকে বিমানের বহরে সম্প্রতি যোগ হওয়া অত্যাধুনিক উড়োজাহাজ (বোয়িং-৭৭৭) ‘অরুণ আলো’ যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এক সপ্তাহ ধরে উড়তে পারছে না। সেটি হ্যাঙ্গারে পড়ে রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে আরো তিনটি উড়োজাহাজে যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে। যে কারণে মালয়েশিয়া, দুবাই, মাস্কাট, কাঠমান্ডু, লন্ডনসহ বিভিন্ন রুটের ফাইট শিডিউলে মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দেয়। তবে বিমানের বহরে থাকা আটটি উড়োজাহাজের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ছয়টি সচল হলেও অরুণ আলোর একটি পার্টস ড্যামেজ হওয়ায় সেটি আসলে কবে নাগাদ আকাশে উড়তে পারবে তা নিয়ে বিমান কর্তৃপক্ষ সন্দেহের মধ্যে রয়েছে। তবে বিমানের প্রকৌশল বিভাগ অরুণ আলোর গুরুত্বপূর্ণ এই যন্ত্রাংশটি দ্রুত আনার জন্য আমেরিকার বোয়িং কোম্পানির সাথে যোগাযোগ শুরু করেছে বলে বলাকা ভবন সূত্রে জানা গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, বিমানের শীর্ষ পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তার বেপোরোয়া দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে বিমানের বহরে থাকা এয়ারক্রাফটের অবস্থা বেহাল হয়ে পড়ছে। যে কারণে যান্ত্রিক ত্রুটি অথবা যেকোনো সমস্যা ধরা পড়লেও সেটি সহজে সচল হয় না। উপরিউক্ত ওই পার্টস আনার নামে প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা লুটপাটে জড়িয়ে পড়েন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবুধাবীগামী বাংলাদেশ বিমানের ফাইটটি (বিজি-০২৭) মঙ্গলবার রাত সোয়া ৯টায় চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। অপর দিকে দুবাইগামী ফাইটটি (বিজি-০৪৭) একই দিন রাত ১১টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল।
বিমানের বলাকা ভবন সূত্র জানায়, দু’টি বিমানের মধ্যে আবুধাবী থেকে একটি ঢাকায় এসে পৌঁছবে রাত সাড়ে ১০টায়। অপরটি কুয়েত থেকে পৌঁছবে রাত ১০টার দিকে। কিন্তু রানওয়ের সংস্কার কাজের জন্য শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রাত ১১টা থেকে পরদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত বিমান ওঠানামা বন্ধ থাকার কারণে বিমান দু’টি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কিংবা রাতের মধ্যে চট্টগ্রামে পৌঁছতে পারবে না। এ কারণেই দু’টি ফাইটের শিডিউলে পরিবর্তন আনা হয়েছে। কিন্তু ভুক্তভোগীরা বিমানবন্দরে এসে শিডিউল বিপর্যয়ের কথা শুনেই ুব্ধ হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে তারা বিমানবন্দরে বিমানের শীর্ষ কর্মকর্তার খামখেয়ালির কথা উল্লেখ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ওইসব যাত্রীকে বুঝিয়ে বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। আবার যাদের বাড়ি দূরে তাদের হোটেলে রাখার ব্যবস্থা করেন। এ অবস্থা শুধু চট্টগ্রাম বিমানবন্দরেই তা কিন্তু নয়, এর আগে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফাইট শিডিউল পরিবর্তন করাকে কেন্দ্র করে বিমানবন্দরে বিক্ষোভ হয়েছে। একই সাথে বিভিন্ন দেশ থেকে দেশে ফেরা যাত্রীরাও বিমানবন্দরে এসে ভোগান্তিতে পড়ছেন। তারাও বিমান কর্মকর্তাদের ওপর ুব্ধ হয়ে হইচই ও বিক্ষোভ করছেন বলে যাত্রী ও বিমানের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে বিমানের বহরে দু’টি বোয়িং-৭৭৭, দু’টি লিজ বোয়িং-৭৩৭, দু’টি এয়ারবাস ও দু’টি ডিসি-১০ রয়েছে। এর মধ্যে বোয়িং-৭৭৭ অরুণ আলো এক সপ্তাহ ধরে বিমানের হ্যাঙ্গারে পড়ে আছে। একইভাবে ডিসি-১০ দু’টির মধ্যে একটি টেকনিক্যাল হয়, অপরটি সি-চেকে যায়। একইভাবে লিজ বোয়িং-৭৩৭ তিন দিন ধরে টেকনিক্যাল হয়। সেটি গত পরশু সচল হয়। সব মিলিয়ে গত দুই সপ্তাহে আটটির মধ্যে তিনটির টেকনিক্যাল সমস্যা দেখা দিলে পুরো ফাইট শিডিউল লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়।
গতকাল বুধবার বিমানের একাধিক বৈদেশিক স্টেশনের বেশ ক’জন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে নয়া দিগন্তকে বলেন, গত ৪০ বছরেও বিমান তার ফাইট শিডিউল ঠিক রাখতে পারেনি। এর খেসারত দিতে হয় আমাদেরকে। প্রতিনিয়ত শিডিউল পরিবর্তন করার কারণে যাত্রীরা এসে আমাদের গালাগাল দেন। হইচই করেন। বিক্ষোভ করেন। পরে তাদের রাখতে হয় বিভিন্ন হোটেলে। এতে বিমানের লাখ লাখ ডলার গচ্চা যায়। তাদের মধ্যে এক কর্মকর্তা উদাহরণ দিয়ে বলেন, এমনিতেই শাহজালাল বিমানবন্দর রানওয়ের সংস্কারকাজ শুরু হওয়ায় রাত ১১টা থেকে পরদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত বিমান ওঠানামা বন্ধ থাকছে। এরপর রয়েছে কুয়াশা। কুয়াশার কারণে সকাল ৮টার জায়গায় কোনো কোনো দিন ১১-১২টার আগে বিমান নামতে পারে না। সব মিলিয়ে বিমানবন্দর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১২ ঘণ্টা বন্ধ থাকছে। এতে অল্প সময়ের মধ্যে একের পর এক বিমান নামতে থাকায় এর চাপ গিয়ে পড়ছে ইমিগ্রেশন কাস্টমসের ওপর। এর ওপর যদি আবার বিমান শিডিউল সময়ে টেকনিক্যাল হয় তাহলে পরিস্থিতি একেবারে হ-য-র-ব-ল অবস্থা হয়। ওই কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বোয়িং অরুণ আলো এক সপ্তাহ ধরে হ্যাঙ্গারে পড়ে আছে পাখার শেষ প্রান্তের একটি এলিরন পার্টসের জন্য। এই পার্টসটি আনতে এখন বিমান ম্যানেজমেন্ট বোয়িং কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করছে। শুনেছি চার-পাঁচ দিন ধরে চিঠি চালাচালি করছে। কিন্তু কোনো উত্তর এসেছে কি না তা জানতে পারিনি। এটি প্রকৌশল বিভাগের পরিচালক আসাদুজ্জামান ভালো বলতে পারবেন। তার মতে, বিমানের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একের পর এক ভুল সিদ্ধান্তের কারণে হাজার হাজার যাত্রীকে এখন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। খেসারত দিতে হচ্ছে। এতে বিমানের মানসম্মান ুণœ হচ্ছে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, লিজ বোয়িং-৭৩৭ মালয়েশিয়া, দুবাই, মাস্কাট রুটে চালানো হচ্ছে। এতে বিমান বড় ধরনের লোকসানের মধ্যে পড়ছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এই বিমানে কার্গো পরিবহন করা যায় না। তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে ১৬২ সিটের বিমানে ১৪০ জন যাত্রী হলেই ওই ফাইটে আর যাত্রীদের ব্যাগেজ নিতে দেয়া হয় না। এতে অনেক যাত্রী পাঁচ-ছয় বছর বিদেশে থেকে আপনজনদের জন্য মালামাল নিয়ে এলেও তারা ওই ফাইটে মালামাল নিতে না পারার কারণে ঢাকায় গিয়ে মারাত্মক বিড়ম্বনার মধ্যে পড়েন। এতে অনেকেই পরে আর বিমানমুখী হতে চান না। ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, এবার আবার শুনছি বিমানের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিনের ইচ্ছায় আরো দু’টি বোয়িং-৭৩৭ আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মূলত শীর্ষ কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণেই বিমান মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না বলে তিনি মনে করছেন। এসব আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে বিমান যতদিন না বের হতে পারবে ততদিন বিমান লাভের মুখ দেখা তো দূরের কথা লোকসান দিতে দিতে শেষ হয়ে যাবে। এতে ক্ষতি হবে বিমানের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। এসব ব্যাপারে এখনই সময় এসেছে সিদ্ধান্ত নেয়ার। আর বিমানে কারা লুটপাট করছে তা আর কারো অজানা নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
গতরাতে বিমানের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে বলেন, আসলে বিমানের এই করুণ অবস্থার জন্য চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল জামাল উদ্দিন দায়ী। কারণ তিনি সব সিদ্ধান্ত একাই নেন। এই কারণে কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও তেমন মনোযোগ দিয়ে কাজ করেন না। কর্মকর্তাদের সাথে এ দূরত্ব যতদিন না কমবে ততদিন পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হবে না। গত রাতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম মোসাদ্দেক আহম্মেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তার দু’টি মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
বিমানের প্রকৌশল বিভাগের পরিচালকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, এ মুহূর্তে আমাদের হ্যাঙ্গারে শুধু বোয়িং অরুণ আলো পড়ে আছে। সেটিরও কিছু পার্টস চলে এসেছে। বাকি পার্টসও চলে আসবে। আগামীকাল থেকে রিপেয়ারিং শুরু হবে। লিজ বোয়িং-৭৩৭ ও ডিসি-১০ও হ্যাঙ্গারে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এসব কে বলেছে? আমি জানি ৭৩৭ এক দিন হ্যাঙ্গারে ছিল। সেটি এখন ফাই করছে। আর ডিসি-১০ সি-চেকে ছিল। সেটি কালকে আশা করছি উড়বে। যাত্রী ভোগান্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমার সাবজেক্ট না। এটা বিমানের সংশ্লিষ্টরা বলবেন।
এ দিকে বিমানের বহরে সম্প্রতি যোগ হওয়া অত্যাধুনিক উড়োজাহাজ (বোয়িং-৭৭৭) ‘অরুণ আলো’ যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এক সপ্তাহ ধরে উড়তে পারছে না। সেটি হ্যাঙ্গারে পড়ে রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে আরো তিনটি উড়োজাহাজে যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে। যে কারণে মালয়েশিয়া, দুবাই, মাস্কাট, কাঠমান্ডু, লন্ডনসহ বিভিন্ন রুটের ফাইট শিডিউলে মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দেয়। তবে বিমানের বহরে থাকা আটটি উড়োজাহাজের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ছয়টি সচল হলেও অরুণ আলোর একটি পার্টস ড্যামেজ হওয়ায় সেটি আসলে কবে নাগাদ আকাশে উড়তে পারবে তা নিয়ে বিমান কর্তৃপক্ষ সন্দেহের মধ্যে রয়েছে। তবে বিমানের প্রকৌশল বিভাগ অরুণ আলোর গুরুত্বপূর্ণ এই যন্ত্রাংশটি দ্রুত আনার জন্য আমেরিকার বোয়িং কোম্পানির সাথে যোগাযোগ শুরু করেছে বলে বলাকা ভবন সূত্রে জানা গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, বিমানের শীর্ষ পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তার বেপোরোয়া দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে বিমানের বহরে থাকা এয়ারক্রাফটের অবস্থা বেহাল হয়ে পড়ছে। যে কারণে যান্ত্রিক ত্রুটি অথবা যেকোনো সমস্যা ধরা পড়লেও সেটি সহজে সচল হয় না। উপরিউক্ত ওই পার্টস আনার নামে প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা লুটপাটে জড়িয়ে পড়েন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবুধাবীগামী বাংলাদেশ বিমানের ফাইটটি (বিজি-০২৭) মঙ্গলবার রাত সোয়া ৯টায় চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। অপর দিকে দুবাইগামী ফাইটটি (বিজি-০৪৭) একই দিন রাত ১১টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল।
বিমানের বলাকা ভবন সূত্র জানায়, দু’টি বিমানের মধ্যে আবুধাবী থেকে একটি ঢাকায় এসে পৌঁছবে রাত সাড়ে ১০টায়। অপরটি কুয়েত থেকে পৌঁছবে রাত ১০টার দিকে। কিন্তু রানওয়ের সংস্কার কাজের জন্য শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রাত ১১টা থেকে পরদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত বিমান ওঠানামা বন্ধ থাকার কারণে বিমান দু’টি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কিংবা রাতের মধ্যে চট্টগ্রামে পৌঁছতে পারবে না। এ কারণেই দু’টি ফাইটের শিডিউলে পরিবর্তন আনা হয়েছে। কিন্তু ভুক্তভোগীরা বিমানবন্দরে এসে শিডিউল বিপর্যয়ের কথা শুনেই ুব্ধ হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে তারা বিমানবন্দরে বিমানের শীর্ষ কর্মকর্তার খামখেয়ালির কথা উল্লেখ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ওইসব যাত্রীকে বুঝিয়ে বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। আবার যাদের বাড়ি দূরে তাদের হোটেলে রাখার ব্যবস্থা করেন। এ অবস্থা শুধু চট্টগ্রাম বিমানবন্দরেই তা কিন্তু নয়, এর আগে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফাইট শিডিউল পরিবর্তন করাকে কেন্দ্র করে বিমানবন্দরে বিক্ষোভ হয়েছে। একই সাথে বিভিন্ন দেশ থেকে দেশে ফেরা যাত্রীরাও বিমানবন্দরে এসে ভোগান্তিতে পড়ছেন। তারাও বিমান কর্মকর্তাদের ওপর ুব্ধ হয়ে হইচই ও বিক্ষোভ করছেন বলে যাত্রী ও বিমানের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে বিমানের বহরে দু’টি বোয়িং-৭৭৭, দু’টি লিজ বোয়িং-৭৩৭, দু’টি এয়ারবাস ও দু’টি ডিসি-১০ রয়েছে। এর মধ্যে বোয়িং-৭৭৭ অরুণ আলো এক সপ্তাহ ধরে বিমানের হ্যাঙ্গারে পড়ে আছে। একইভাবে ডিসি-১০ দু’টির মধ্যে একটি টেকনিক্যাল হয়, অপরটি সি-চেকে যায়। একইভাবে লিজ বোয়িং-৭৩৭ তিন দিন ধরে টেকনিক্যাল হয়। সেটি গত পরশু সচল হয়। সব মিলিয়ে গত দুই সপ্তাহে আটটির মধ্যে তিনটির টেকনিক্যাল সমস্যা দেখা দিলে পুরো ফাইট শিডিউল লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়।
গতকাল বুধবার বিমানের একাধিক বৈদেশিক স্টেশনের বেশ ক’জন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে নয়া দিগন্তকে বলেন, গত ৪০ বছরেও বিমান তার ফাইট শিডিউল ঠিক রাখতে পারেনি। এর খেসারত দিতে হয় আমাদেরকে। প্রতিনিয়ত শিডিউল পরিবর্তন করার কারণে যাত্রীরা এসে আমাদের গালাগাল দেন। হইচই করেন। বিক্ষোভ করেন। পরে তাদের রাখতে হয় বিভিন্ন হোটেলে। এতে বিমানের লাখ লাখ ডলার গচ্চা যায়। তাদের মধ্যে এক কর্মকর্তা উদাহরণ দিয়ে বলেন, এমনিতেই শাহজালাল বিমানবন্দর রানওয়ের সংস্কারকাজ শুরু হওয়ায় রাত ১১টা থেকে পরদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত বিমান ওঠানামা বন্ধ থাকছে। এরপর রয়েছে কুয়াশা। কুয়াশার কারণে সকাল ৮টার জায়গায় কোনো কোনো দিন ১১-১২টার আগে বিমান নামতে পারে না। সব মিলিয়ে বিমানবন্দর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১২ ঘণ্টা বন্ধ থাকছে। এতে অল্প সময়ের মধ্যে একের পর এক বিমান নামতে থাকায় এর চাপ গিয়ে পড়ছে ইমিগ্রেশন কাস্টমসের ওপর। এর ওপর যদি আবার বিমান শিডিউল সময়ে টেকনিক্যাল হয় তাহলে পরিস্থিতি একেবারে হ-য-র-ব-ল অবস্থা হয়। ওই কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বোয়িং অরুণ আলো এক সপ্তাহ ধরে হ্যাঙ্গারে পড়ে আছে পাখার শেষ প্রান্তের একটি এলিরন পার্টসের জন্য। এই পার্টসটি আনতে এখন বিমান ম্যানেজমেন্ট বোয়িং কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করছে। শুনেছি চার-পাঁচ দিন ধরে চিঠি চালাচালি করছে। কিন্তু কোনো উত্তর এসেছে কি না তা জানতে পারিনি। এটি প্রকৌশল বিভাগের পরিচালক আসাদুজ্জামান ভালো বলতে পারবেন। তার মতে, বিমানের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একের পর এক ভুল সিদ্ধান্তের কারণে হাজার হাজার যাত্রীকে এখন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। খেসারত দিতে হচ্ছে। এতে বিমানের মানসম্মান ুণœ হচ্ছে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, লিজ বোয়িং-৭৩৭ মালয়েশিয়া, দুবাই, মাস্কাট রুটে চালানো হচ্ছে। এতে বিমান বড় ধরনের লোকসানের মধ্যে পড়ছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এই বিমানে কার্গো পরিবহন করা যায় না। তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে ১৬২ সিটের বিমানে ১৪০ জন যাত্রী হলেই ওই ফাইটে আর যাত্রীদের ব্যাগেজ নিতে দেয়া হয় না। এতে অনেক যাত্রী পাঁচ-ছয় বছর বিদেশে থেকে আপনজনদের জন্য মালামাল নিয়ে এলেও তারা ওই ফাইটে মালামাল নিতে না পারার কারণে ঢাকায় গিয়ে মারাত্মক বিড়ম্বনার মধ্যে পড়েন। এতে অনেকেই পরে আর বিমানমুখী হতে চান না। ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, এবার আবার শুনছি বিমানের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিনের ইচ্ছায় আরো দু’টি বোয়িং-৭৩৭ আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মূলত শীর্ষ কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণেই বিমান মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না বলে তিনি মনে করছেন। এসব আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে বিমান যতদিন না বের হতে পারবে ততদিন বিমান লাভের মুখ দেখা তো দূরের কথা লোকসান দিতে দিতে শেষ হয়ে যাবে। এতে ক্ষতি হবে বিমানের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। এসব ব্যাপারে এখনই সময় এসেছে সিদ্ধান্ত নেয়ার। আর বিমানে কারা লুটপাট করছে তা আর কারো অজানা নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
গতরাতে বিমানের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে বলেন, আসলে বিমানের এই করুণ অবস্থার জন্য চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল জামাল উদ্দিন দায়ী। কারণ তিনি সব সিদ্ধান্ত একাই নেন। এই কারণে কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও তেমন মনোযোগ দিয়ে কাজ করেন না। কর্মকর্তাদের সাথে এ দূরত্ব যতদিন না কমবে ততদিন পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হবে না। গত রাতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম মোসাদ্দেক আহম্মেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তার দু’টি মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
বিমানের প্রকৌশল বিভাগের পরিচালকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, এ মুহূর্তে আমাদের হ্যাঙ্গারে শুধু বোয়িং অরুণ আলো পড়ে আছে। সেটিরও কিছু পার্টস চলে এসেছে। বাকি পার্টসও চলে আসবে। আগামীকাল থেকে রিপেয়ারিং শুরু হবে। লিজ বোয়িং-৭৩৭ ও ডিসি-১০ও হ্যাঙ্গারে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এসব কে বলেছে? আমি জানি ৭৩৭ এক দিন হ্যাঙ্গারে ছিল। সেটি এখন ফাই করছে। আর ডিসি-১০ সি-চেকে ছিল। সেটি কালকে আশা করছি উড়বে। যাত্রী ভোগান্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমার সাবজেক্ট না। এটা বিমানের সংশ্লিষ্টরা বলবেন।
No comments