আবার গার্মেন্টে অগ্নিকাণ্ড- তাজরিন ট্র্যাজেডি থেকেও আমরা শিক্ষা নিইনি

যত কিছুই ঘটুক, কোনো কিছু থেকেই বোধ হয় আমরা শিক্ষা নিই না। সে জন্য ভয়াবহ বিপদ আমাদের পায়ে পায়ে। আমাদের সামনে সব সময় থাকে সীমাহীন বাধা।
তা যদি না হতো তাহলে, তাজরীন ফ্যাশনসে প্রলয়ঙ্করী অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক পোশাকশ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যুর মাত্র দুই মাস পার হতে-না-হতেই গত পরশু আবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আরেকটি কারখানায় সাতজনের মৃত্যুর খবর আমাদের শুনতে হতো না। গার্মেন্টে অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ২০ জনের মতো। এদের মধ্যে ১৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বিুব্ধ লোকজন মিছিল করেছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকার তিন রাস্তার মোড়ে স্মার্ট গার্মেন্টে এই অগ্নিকাণ্ড ঘটে শর্ট সার্কিটের মাধ্যমে। শ্রমিকেরা বুঝে ওঠার আগেই তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কিত শ্রমিকেরা সিঁড়ি দিয়ে নামতে শুরু করলে হুড়োহুড়ি বেধে যায়। ফলে অনেকে দ্বিতীয়তলায় আটকে পড়ে আগুনে পুড়ে মারা যান। এদের মধ্যে ২০ থেকে ২৫ জন লাফিয়ে পড়ে আহত হয়েছেন।

জানা যায়, আতঙ্কিত শ্রমিকদের নিচে দ্রুত নেমে আসার ব্যবস্থা ছিল না। দরজা ছিল বন্ধ। নইলে তাদের হুড়োহুড়ি করে নামার সময় কাউকে আটকে পড়ে আগুনে পুড়ে মরতে হতো না। তা ছাড়া অগ্নিনির্বাপণের যথাযথ ব্যবস্থা থাকলে মরতে হতো না কোনো শ্রমিককেই। এখন প্রয়োজন, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি করা।

স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেয়া যায়, এই অগ্নিকাণ্ডের ফলে বিভিন্ন মহল এ ঘটনায় শোকবাণী পাঠাবেন। গণমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদন ছাড়াও আলোচনা-সমালোচনা হবে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হবে। নিন্দা জ্ঞাপন করা হবে। দু-চার দিন পরই সব কিছু থেমে যাবে। আবার ক’দিন পর অন্য কোনো পোশাক কারখানায় আগুন লাগবে। আবার হইচই হবে। কিন্তু থামবে না এমন ট্র্যাজেডি ও বহু শ্রমিকের অবাঞ্ছিত মৃত্যু।

কেন বারবার পোশাক কারখানায় আগুন লাগছে এবং শ্রমিক মরছেন? এর পেছনে কি কোনো ষড়যন্ত্র কাজ করছে? কারা এর পেছনে দায়ী? নাকি অন্য কোনো কারণ রয়েছে? এসব প্রশ্নের উত্তর আমাদের খুঁজতেই হবে। নইলে থামবে না ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ড এবং পোশাকশ্রমিকের পুড়ে মরা। অতীতের এ ধরনের ঘটনা থেকে আমরা যদি শিক্ষা নিতে পারতাম তবে অনেক আগেই এ সব রোধ করা সম্ভব হতো। শনিবারের ঘটনার ক্ষেত্রেও দেখা গেছে, বের হওয়ার দরজা বন্ধ ছিল। তাজরীন গার্মেন্টের বেলায়ও একইভাবে দরজায় তালা লাগানো ছিল। এসব থেকে এ বিষয়টি অন্তত স্পষ্ট, আমরা ভয়াবহ ঘটনা থেকেও শিক্ষা নিই না। আর নিই না বলেই এমনটি বারবার ঘটছে।
       

No comments

Powered by Blogger.