বাউকুলে আত্মনির্ভর
মঙ্গা মোকাবেলায় ব্রহ্মপুত্র নদীর বুকে জেগে ওঠা বালুর চরে বাউকুল চাষে নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন এনেছেন গৃহবধূ ছুরুতন বেগম। চরের শুষ্ক মাটিতে যেখানে ফলদ গাছের চাষ আশাই করা যায় না, সেখানে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বাউকুল চাষে সাফলতা এলাকার এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।
আর চিরায়ত এই মঙ্গার সময়টিতে প্রত্যন্ত চর থেকে এ বছর ২২ হাজার টাকার বাউকুল বিক্রি করে ছুরুতন গ্রামবাসীকে তাক লাগিয়েছেন।সদর উপজেলার কামারীজানি ইউনিয়নের কুন্দেরপাড়া গ্রামের ছুরম্নতন বেগম। বয়স ৩৬ বছর। ১ মেয়ে, ২ ছেলে ও স্বামী আজাহার আলী নিয়ে সাজানো ও সুখী সংসার গড়েছেন তিনি। অবশ্য এ পর্যায়ে আসতে তার সময় লেগেছে এক যুগেরও বেশি। ৪ বার নদীভাঙনে নিঃস হয়ে '৯৪ সালের আশ্রয় নেন কুন্দেরপাড়া গ্রামে। দুশ্চিনত্মা আর ল্যহীন জীবনের সঙ্গে ওই বছরই সম্পৃক্ত হন গণউন্নয়ন কেন্দ্রের সঙ্গে। পরিবর্তনের জন্য গড়ে তোলেন প্রচেষ্টা মহিলা সমিতি এবং তিনি সভাপতিও নির্বাচিত হন। এই সময়ের মধ্যে অক্সফ্যামে-জিবির সহযোগিতায় দতা ও সমতামূলক প্রশিণ পেয়ে অভাব দূর করতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সমিতি থেকে সহায়তা হাঁস-মুরগি, ছাগল-গরম্ন পালন শুরম্ন করেন। ৩টি গরম্ন ও ৪টি ছাগল রয়েছে বাড়িতে। বাড়ির ভিটায় নানা ধরনের সবজি চাষ করেন। মোটামুটিভাবে চলছিল তাদের সংসার। চরের নাম-স্বার জানা ছুরম্নতন সকল ধরনের পরিবর্তনে বিশ্বাস করেন। এজন্য চেষ্টা করেন সব ভাল উদ্যোগে। রিভার বেসিন প্রকল্পের মাধ্যমে জিইউকে ২০০৬ সালে চরাঞ্চলে যখন বাউকুল চাষ লোকজনকে উদ্বুদ্ধ করে তখন অনেকেই উৎসাহিত না হলেও ছুরম্নতন ঠিকই উৎসাহিত হন। সবমিলিয়ে ৫শ' টাকা খরচ করে ৬টি বাউকুলের গাছ লাগান বাড়িতে। এ পর্যনত্ম তিনি ২২ হাজার টাকার বাউকুল বিক্রি করেছেন। দেখতে আসা লোকজনকে এবং আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে প্রায় ৫ হাজার টাকার কুল বিতরণ করেছেন। এ বছর তিনি আশা করছেন ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকার কুল বিক্রি করতে পারবেন। বিক্রির টাকা দিয়ে ১টি গরম্ন ক্রয়ের পরিকল্পনাও করেছেন। তিনি মনে করেন, চরাঞ্চল বাউকুল চাষের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে, আর এই সুযোগ আমাদেরই ব্যবহার করতে হবে।
সবকিছুর পাশাপাশি সনত্মানদের পড়ালেখা করাচ্ছেন তিনি। বড় মেয়ে কুন্দেরপাড়া গণউন্নয়ন একাডেমী থেকে এসএসসি পাস করে এইচএসসিতে ভর্তি হয়েছে । বড় ছেলে ৭ম শ্রেণীতে ও ছোট ছেলে ৫ম শ্রেণীতে পড়ছে। সংসারে অভাব না থাকায় কোন ধরনের অশানত্মিও নেই তাদের মধ্যে। একজন সচেতন নারী হিসেবে চরাঞ্চলে ছুরম্নতন বেগমের মর্যাদাও বেড়েছে। এখন গ্রামের নারীরা দল বেঁধে ছুরম্নতন বেগমের বাউকুলের বাগান দেখতে আসে। এ সময় সে দর্শনাথর্ীদের উৎসাহিত এবং অনুপ্রাণিত করে। কিভাবে চরের জমিকে কাজে লাগিয়ে মঙ্গার সময়টিতে অভাবকে মোকাবেলা করে ভালভাবে বেঁচে থাকা যায়।
০ আবু জাফর সাবু, গাইবান্ধা
No comments