লাগসই প্রযুক্তি ব্যবহারে অধিক ফলন- শার্শার লাগসই প্রযুক্তি যাদুঘর কৃষকদের নতুন স্বপ্নের কেন্দ্র
ছোট্ট একটি মাঠ। জমি মাত্র ৩০ শতক। এর মধ্যে আছে বসতবাড়ি, পুকুর, গাছ-গাছালি। গাছে ফল ধরেছে। দেখে মনে হবে এটা একটি বাগানবাড়ি। আছে ব্যায়োগ্যাসের পস্নান্ট।
জৈব সার তৈরির ব্যবস্থা। যে কেউ দেখলে একটু দাঁড়াবেন। চোখে পড়বে লাগসই প্রযুক্তি জাদুঘরের সাইনবোর্ড। যশোর-বেনাপোল সড়কের পাশে শার্শা উপজেলা পরিষদ চত্বরে এই লাগসই প্রযুক্তি জাদুঘর তৈরি করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ড. আব্দুল হাকিম। সরকারী কাজ করার পাশাপাশি এই জাদুঘর তৈরি করে তিনি মানুষকে শিা দিচ্ছেন অল্প জমিতে কিভাবে বেশি উপকার পাওয়া যায়।লাগসই প্রযুক্তি জাদুঘরের প্রধান গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে ইকো টয়লেট। বিষয়টি নতুন। ইউএনও ড. আব্দুল হাকিম বললেন, মল-মূত্রের প্রতি সব মানুষের ঘৃণাবোধ আছে। এগুলো মানুষের নানা রোগব্যাধি ছড়ায়। কিন্তু লাগসই প্রযুক্তি জাদুঘরের ইকো টয়লেটের মাধ্যমে মল-মূত্রকে উন্নতমানের জৈব সার এবং কীটনাশকে পরিণত করা হচ্ছে। এই টয়লেটের দুইটি চেম্বারে মল-মূত্র ত্যাগের ব্যবস্থা আছে। একটি চেম্বার ৩ মাস ব্যবহারের পর বন্ধ করা হয়। মুখ বন্ধ করে রাখার তিন মাস পর মল শুকিয়ে পরিণত হয় ঝরঝরে উন্নতমানের জৈব সার। আর টয়লেটের প্রস্রাব জমা রাখা হয় একটি নির্দিষ্ট পাত্রে। এই প্রস্রাবের সঙ্গে ৫ গুণ পানি মিশিয়ে ফসলের েেত ব্যবহার করলে নাইট্রোজেনের কাজ হয়। অন্যদিকে তা ফসলের তিকারক পোকা-মাকড় ধ্বংস করে।
ড. হাকিম একটি ২২ ফুট দৈর্ঘ্য-প্রস্থ এবং দেড় ফুট গভীর গর্তের নমুনা দেখিয়ে বললেন, এখানে পলিথিন পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা হয়। নিচে পলিথিন দেয়া থাকায় পানি শুকিয়ে যায় না। এখানে মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছ চাষ করলে একটি পরিবারের সারা বছরের মাছের চাহিদা পূরণ হয়। এই জাদুঘরে আছে পরিবেশবান্ধব ১১ রকমের চুলা। এই চুলায় ৭০ ভাগ জ্বালানি সাশ্রয় হয়। চুলায় খেজুরের রস জ্বালিয়ে গুড় তৈরি করা যায়। উপজেলা পরিষদের কোয়ার্টারে এই চুলা ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি ঘুরে ঘুরে দেখালেন সেখানকার সবজি, নেপিয়ার ঘাস, আম-কাঁঠাল, কুল-পেয়ারাসহ বিভিন্ন ধরনের ফল, নানা জাতের ফুল, মসলা প্রভৃতি। সর্পগন্ধা, বাসক, নিম, নিশিন্দা, নয়নতারা, কালোমেঘ, শতমূলী ও শ্বেতচন্দনসহ ১শ' প্রকার ঔষধি গাছ এখানে আছে। আর্সেনিক পস্নান্ট, বায়োগ্যাস প্রকল্প, সবুজ সার উৎপাদন কর্মসূচী, ভাসমান সবজি প্রকল্প, পুকুরের উপর মুরগি, কবুতর, কোয়েল পালনের ব্যবস্থা_ এককথায় পারিবারিক চাহিদা পূরণের সবকিছু। এই জাদুঘরের মধ্যে একটি ক েবোর্ডে সাঁটা আছে এখানকার সকল গাছের পরিচিতি। তার উপকারিতার কথা। এর পাশের একটি ক েআছে ফসলের বন্ধু পোকা ও তিকারক কীটের পরিচিতিসহ ছবি।
উপজেলা চত্বরে এই জাদুঘর করার কারণ বিভিন্ন গ্রামের মানুষ আসেন এখানে। এই জাদুঘর থেকে তাঁরা শিা নেবেন। এছাড়া লাগসই প্রযুক্তি প্রয়োগে খুব শীঘ্রই প্রশিণ কর্মসূচী নেয়া হবে বলে জানালেন ড. হাকিম। তিনি বলেন, প্রতি পরিবারের একজন এই প্রশিণ পাবেন। সরকারের কর্মকর্তারা এই জাদুঘর দেখেছেন। জাপানী একটি প্রতিনিধি দলও ঘুরে গেছে লাগসই প্রযুক্তি জাদুঘর। এখন তিনি তা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চান।
০ সাজেদ রহমান, যশোর
No comments