চাই মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের বাস্তবায়ন by মোল্লা শিহাব উদ্দীন

বাঙালি জাতির সুদীর্ঘকালের রাজনৈতিক জীবনের সংগ্রামমুখর ইতিহাসে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ এবং সেই মহান যুদ্ধে বিজয় অর্জন। বাংলাদেশের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত এবং সক্রিয় অংশগ্রহণের কারণে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু থেকেই গণযুদ্ধে রূপ লাভ করে।
বলা যায়, মুষ্টিমেয় রাজাকার, আলবদর, শান্তি কমিটির সদস্য ব্যতীত বাংলাদেশের সব মানুষই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। জীবনের মায়া ত্যাগ করে হাতে অস্ত্র তুলে নেয়। দখলদার পকিস্তান সেনাবাহিনীর বর্বর আক্রমণের মুখে বিশালসংখ্যক মানুষ দেশের মাটি, সহায়সম্পদ, ঘরবাড়ি ফেলে নিঃস্ব অবস্থায় ভারতে আশ্রয় নেয়। অনেকেই বুকের তাজা রক্তে বাংলার মাটিতে স্বাধীনতার বীজ বপন করে গেছে বটে, তবে স্বাধীনতার রক্তগোলাপ দেখে যেতে পারেনি। যুদ্ধে অংশ নেওয়ার কারণে তাদের চরম মূল্য দিতে হয়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং রাজাকাররা তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে, মা-বোনদের ইজ্জত নিয়েছে, নির্বিচারে হত্যা করেছে পরিবার-পরিজনকে।
বাংলাদেশ, হিমালয়ের হিমশীতল পরশ থেকে শুরু করে গহিন নীল বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত এই জনপদ। এখানে হাজার বছরের এক অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালিত হয় এ দেশের প্রতিটি মানুষের মনে। কিন্তু মাঝে মধ্যে চোখে পড়ে দেশের ভেতর একটি সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, যেটা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। রামুতে যে ঘটনাটা ঘটেছে সেটা আমাদের সবার কাছে অপ্রত্যাশিত, ভবিষ্যতে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর যেন না হয়, সেদিকে আমাদের সবার সজাগ দৃষ্টি রাখা দরকার। প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার চোখে স্বপ্ন ছিল একটি শোষণমুক্ত সোনার বাংলা, যেখানে থাকবে না কোনো ক্ষুধা, দারিদ্র্য, সামাজিক বৈষম্য। আমার মনে হয় না, আমরা আজও সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চাই, গড়তে চাই সোনার বাংলা, যেখানে থাকবে না দুর্নীতি নামক বীষবৃক্ষ, প্রতিষ্ঠিত হবে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা।
য়শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

No comments

Powered by Blogger.