তাঁর কণ্ঠে জেগে রইবে নজরুলসংগীত- সংগীতগুরু সোহরাব হোসেন

সোহরাব হোসেনের দীর্ঘ জীবন ছিল সংগীতময়; তাঁর সংগীতজুড়ে ছিলেন নজরুল। এ দেশে নজরুলসংগীতের অনুশীলন ও শিক্ষায় তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়। গত বৃহস্পতিবার ভোরে অমরলোকে যাত্রা করেছেন এই সংগীতগুরু। গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে আমরা তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।
সোহরাব হোসেন জন্মেছিলেন সহজাত সংগীতপ্রতিভা নিয়ে; তাই অবিভক্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলমান পরিবারের এই সন্তানকে তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধতা দমিয়ে রাখতে পারেনি। বালক বয়সে কাজী নজরুল ইসলামের গান শুনে মুগ্ধ হয়ে তিনি যে সংগীতের পথকেই আজীবনের জন্য বেছে নিয়েছিলেন পথ হিসেবে, তার পেছনেও ছিল সেই সহজাত প্রবণতা। কিন্তু প্রবণতা ও প্রতিভাই যথেষ্ট নয়; সাফল্যের জন্য যে সংগ্রাম ও সাধনার প্রয়োজন হয়, সোহরাব হোসেন তা করেছেন বলেই তিনি এত দীর্ঘ সময় ধরে বিপুলসংখ্যক মানুষকে আনন্দ দিতে পেরেছেন, অনেকে তাঁর কাছ থেকে সংগীতে শিক্ষা লাভ করতে পেরেছেন। তাঁর কাছে শিক্ষা পেয়েছেন বাংলাদেশের অনেক কৃতী সংগীতশিল্পী। বস্তুত, তিনি ছিলেন এ দেশের নজরুলসংগীতের গুরু।
সোহরাব হোসেনের শিল্পীজীবন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শুধু সংগীতে তাঁর অবদানের জন্যই নয়; শিল্পের সাধক হিসেবেও তিনি অনুসরণীয় এক জীবন যাপন করে গেছেন। আবার নিজে সাধনা করার পাশাপাশি তিনি অন্যদেরও শিখিয়েছেন। ছায়ানট, বুলবুল ললিতকলা একাডেমি, নজরুল একাডেমীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন দীর্ঘ সময়।
নজরুলসংগীতে সোহরাব হোসেনের অসামান্য অবদানের কথা বলতে গিয়ে অনেকেই বলেন, তাঁর মতো সুকণ্ঠের অধিকারী শিল্পী বিরল। সেই অর্থে তাঁকে হারানোর অর্থ আমাদের সংগীতজগতের অপূরণীয় ক্ষতি। যাঁরা তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে জানেন, তাঁরা মানুষ হিসেবেও তাঁর প্রশংসা করেন। শিল্পী ও মানুষ হিসেবে সোহরাব হোসেনের সার্থকতা যেন-বা এক পরিপূর্ণ মানবজন্মের রূপক। এমন সংগ্রাম, সাধনা ও নিষ্ঠা বৃত্তিনির্বিশেষে সব মানুষের জন্য অনুসরণীয়।
সংগীতশিল্পী সোহরাব হোসেনের মধুর কণ্ঠে নজরুলসংগীত জেগে আছে, জেগে থাকবে। তাঁর উত্তরাধিকার বয়ে চলবেন আগামী প্রজন্মের শিল্পীরা।

No comments

Powered by Blogger.