মনের জানালা

মেহতাব খানম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন। আপনার সঠিক পরিচয় না দিতে চাইলে অন্য কোনো নাম ব্যবহার করুন।
—বি. স.
সমস্যা
আমার তোতলানোর সমস্যা আছে। সমস্যাটা জন্মগত নয়। তবে আমার বাবা ও ভাইয়েরও এই সমস্যা অল্পমাত্রায় আছে। অপরিচিত কেউ প্রশ্ন করলে আমার বেশি কথা আটকায়। এ কারণে অনেক বিব্রতকর অবস্থার পড়তে হয়। নবম শ্রেণীতে পড়াকালে হোমিওপ্যাথি ওষুধ সেবন করি। তাতে কোনো ফল হয়নি। কয়েক মাস ঢাকায় একজন স্পিচ থেরাপিস্টের চিকিৎসাসেবা নিয়েছি। কিন্তু সময়ের অভাবে ও যাতায়াত সমস্যার কারণে তা চালিয়ে যেতে পারিনি। তবে স্পিচ থেরাপির ফলে আমার হয়তো বা কিছুটা পরিবর্তন হয়েছিল। এটা আমার শারীরিক না মানসিক সমস্যা? —নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।


পরামর্শ
স্পিচ থেরাপি আরও কিছুদিন নিলে হয়তো ভালো হতো। তবে এর পেছনে শারীরিক কোনো কারণ রয়েছে কি না, তা আগে বুঝতে হবে। তুমি ঢাকার ইএনটি ফাউন্ডেশনে (ফোন নম্বর ০১৭৬৩৬৯০৫৭১) গিয়ে পরীক্ষা করাতে পারো। সেখানে স্পিচ থেরাপির ব্যবস্থাও রয়েছে। যদি শারীরিক কোনো কারণ না থাকে, তাহলে অবশ্যই সাইকোথেরাপি বা কাউন্সেলিংয়ের সাহায্য নিলে উপকার পাবে। সাইকোথেরাপির জন্য তুমি ১/১৪, ইকবাল রোডের ‘ক্রিয়া’তে বা ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতালে (ফোন নম্বর ৯৩৫১১৯০-১, ৮৩১৪৮৮৭) যেতে পারো।


সমস্যা
আমি কারও সঙ্গে সহজে মিশতে পারি না। বন্ধুরা সবাই মজা করে, আমি চুপচাপ এক কোনায় বসে থাকি। কোন কথা কীভাবে বলতে হবে বুঝতে পারি না। পড়া না বুঝলেও টিচারকে প্রশ্ন করতে পারি না। বাবা, মা, ছোট বোনের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো। মা আমার ভালো বন্ধু। আমার জন্মের আগে থেকেই পারিবারিক কারণে মা প্রচণ্ড বিষণ্নতায় ভুগতেন। এখন সমস্যা নেই এবং মা আমাকে এই সমস্যা থেকে বের করার জন্য চেষ্টা করেন, কিন্তু আমি বের হয়ে আসতে পারছি না।
আসিক, দিনাজপুর।

পরামর্শ
তোমার তো এই বয়সে চুপচাপ বসে থাকার কথা নয়। সাধারণত মানসিক অসুবিধাগুলো বয়ঃসন্ধিকালেই শুরু হয়। তোমার মাকে বলবে, তিনি যেন ঢাকায় তোমাকে নিয়ে আসেন। তোমরা দুজনই সাইকোথেরাপির সাহায্য নিয়ে অবশ্যই উপকৃত হবে।

সমস্যা
দশম শ্রেণীতে পড়ি। আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু স্নাতক চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্র। অন্য এক সহপাঠীও আমার খুবই কাছের বন্ধু। প্রায় এক বছর থেকে একজন বান্ধবীর সঙ্গে আমার প্রেম। ওকে আমি পাগলের মতো ভালোবাসি। ও আমাকে ভালোবাসে, তবে হয়তো ততটা নয়। ওর বিন্দু পরিমাণ ভালোবাসাই আমার কাছে অনেক কিছু। কিন্তু আমার প্রেম করাটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না আমার দুই বন্ধু। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে মনোমালিন্য চলছে। এক দিকে বন্ধু অন্য দিকে প্রেমিকা। এদিকে সামনে পরীক্ষা।
পরামর্শ
তোমার চিঠির ভাষা অত্যন্ত সুন্দর ও প্রশংসনীয়। সেই সঙ্গে নিজের ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে তোমার বর্ণনাগুলো পড়ে মনে হচ্ছে, তুমি অত্যন্ত সচেতন একজন মানুষ। আমি বুঝতে পারছি না, তোমার দুই বন্ধু কেন অন্য বন্ধুটিকে মেনে নিতে পারছে না। তারা যদি সত্যিই তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী হয়, তাহলে তো এভাবে তোমার ওপর মানসিক চাপ তৈরি করার চেষ্টা করত না। একটি সুস্থ বন্ধুত্বে সাধারণত এ ধরনের জোর খাটানোর ব্যাপার বা ঈর্ষার কোনো জায়গা নেই। তুমি যদি দেখো, এই বন্ধুত্বের কারণে, সুন্দর ও সফল ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে, তাহলে নিজের ক্ষতি করাটা খুব যুক্তিসংগত হবে না। এই বয়সে প্রেমের সম্পর্কে খুব বেশি জড়িয়ে পড়লে সত্যিই পড়ালেখায় মনোযোগ দেওয়া যায় না। এ সময় আবেগের আধিক্য থাকে এবং সেই সঙ্গে সম্পর্কে কখনো মান-অভিমান তৈরি হলে মন খুব বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে। বন্ধুত্ব আর প্রেমের সম্পর্কে ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়ে যদি খুবই অসুবিধার সম্মুখীন হও, তাহলে কোনো একটি সম্পর্ককে তোমার বাদ দিতেই হবে।

No comments

Powered by Blogger.