আবাহনী ২: ০ মোহামেডান -আবাহনীর নায়ক শাখাওয়াত
ম্যাচের পর দুই গ্যালারির সামনে জনা পঞ্চাশেক পুলিশ। সম্ভাব্য গোলমাল ঠেকাতে সতর্কতা। কিন্তু গোলমালটা করবে কে? আবাহনী দ্বিতীয় গোল করা মাত্রই মোহামেডান সমর্থকেরা বাড়ির পথ ধরেছে।
শীতার্ত আবাহনী গ্যালারিতে তখন প্রাণের উচ্ছ্বাস। চিরশত্রুর বিপক্ষে জয় বলে
কথা!
এরপর ২ গোলে জয়ী দলকে অভিনন্দন জানাল হাজার তিনেক সমর্থক। পুলিশ আর খানিকটা সময় থেকেই ‘ঝামেলামুক্ত’ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম ছাড়ল।
অতীতে এটা ভাবাই যেত না। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াই মানেই ছিল টানটান
উত্তেজনা। গ্যালারি ভরা দর্শক। কাল গ্যালারিতে দর্শক সাকল্যে হাজার পাঁচেক।
তবে দর্শক কম হলেও হাড় কাঁপানো শীতের ম্যাচে উত্তেজনা থাকল। আগের
ম্যাচগুলোর তুলনায় মোহামেডান এদিন নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেনি। যেটুকু
ঘাটতি ছিল, তা ঠিক এই জায়গাতেই।এরপর ২ গোলে জয়ী দলকে অভিনন্দন জানাল হাজার তিনেক সমর্থক। পুলিশ আর খানিকটা সময় থেকেই ‘ঝামেলামুক্ত’ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম ছাড়ল।
শাখাওয়াত রনির তাতে কী? আবাহনীর স্ট্রাইকারের জন্য রাতটা স্মরণীয়। সম্প্রতি অনূর্ধ্ব-২৩ জাতীয় দলের হয়ে শ্রীলঙ্কা সফরে বাজে মিস করে দলকে ভুগিয়েছেন। সেই জেদ থেকেই ঘরোয়া ফুটবলের সবচেয়ে বড় ম্যাচটায় জ্বলে উঠলেন। এমনই যে ম্যাচ জেতানো দুটি গোলই এল তাঁর পা থেকে।
অনেক দিন পর আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচে স্থানীয় কোনো স্ট্রাইকার ২ গোল করলেন। এটা জাতীয় দলের জন্য খুশির খবর। আবাহনীর তো আরও বেশি। পারলে শাখাওয়াতকে পুরস্কার-টুরস্কারও দিয়ে ফেলে আকাশি-নীলরা। এটি যে শুধুই একটা জয় নয়। শিরোপার কক্ষপথে ফিরে আসার পারের কড়ি।
শেখ জামালের সঙ্গে ড্র, শেখ রাসেলের কাছে হার। গত দুই ম্যাচে মাত্র ১ পয়েন্ট। আবাহনী ভীষণ চাপে থেকেই মুখোমুখি হয়েছিল মোহামেডানের। কাগজের শক্তিকে পিছিয়ে রেখে সমানতালেই চলছিল সাদা-কালোরা। অনেকে তো ম্যাচের আগে বলছিলেন, শেখ রাসেলকে হারানো ‘আন্ডারডগ’ মোহামেডান না বাজিমাত করে! কিন্তু আবাহনী জ্বলল সময়মতো। এই জয়ে ছয় ম্যাচে আবাহনীর পয়েন্ট ১৩। সমান ম্যাচে মোহামেডানের ১০, পাঁচ ম্যাচে শেখ রাসেলের ১২। চার ম্যাচে শেখ জামালের ১০।
আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচে খুব সুন্দর বা গোছানো ফুটবল কমই হয়। তবে এ ম্যাচটায় আবাহনী ছিল বেশ গোছানো। তাদের অভিজ্ঞ খেলোয়াড় বেশি, মোহামেডানে কম। এ পার্থক্যটা আবাহনীকে বসিয়েছে জয়ী দলের আসনে। মোহামেডান হারল সাধারণ কিছু ভুল করায়। রক্ষণে বল ক্লিয়ার করতে গড়িমসি, দুলকি চালে খেলারই ফল এই হার।
১২ মিনিটে বাঁ প্রান্ত থেকে ইয়াসিনের কাছ থেকে বল কাড়েন তৌহিদুল, মোহামেডানের শরিফুল ও ইয়াসিন বল কাড়তে পারেননি। তৌহিদ নিচু একটা ক্রস করেন, রজনী ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ। পেছনেই থাকা শাখাওয়াতের শটে ১-০। ৬৩ মিনিটে মোহামেডানের বক্সের সামনে বল পান ইব্রাহিম। তাঁর ডিফেন্সচেরা থ্রু ধরে ১: ১ অবস্থায় শাখাওয়াতের প্লেসিং। মোহামেডানের ইয়াসিন এ সময় কাভারিংয়ে যেতে পারেননি। ম্যাচটা তখনই আসলে শেষ। তার পরও একটা গোল পেলে মোহামেডান ফিরে আসার একটা পথ হয়তো পেত। কিন্তু সাদা-কালোদের আগের পাঁচ ম্যাচে ৬ গোল করা মরিসন এদিন থাকলেন বোতলবন্দী।
মোহামেডান নেমেছিল পাঁচ মিডফিল্ডার নিয়ে, আবাহনী চারজন। তিনজন ডিফেন্ডার নিয়ে খেলায় মোহামেডানের মাঝমাঠ ও রক্ষণের মধ্যে একটা ফাঁকা জমি তৈরি হয় অনেক সময়ই। তা কাজে লাগিয়ে চূড়ান্ত পাস দেওয়ার দায়িত্ব ছিল ইব্রাহিমের ওপর। আগের ম্যাচে বাইরে থাকা ঘানাইয়ান প্লে-মেকারের ঠিকঠাক সেই সুযোগ লাগান। আবাহনী রক্ষণ ঠিক রেখে আক্রমণে যাওয়ার কৌশল নেয়। দ্রুত গোল পেয়ে দলটা হয়ে ওঠে আরও উজ্জীবিত।
আবাহনী কোচ আরদেশির পোরনেমাত আগের ম্যাচে হেরে সমর্থকদের কাঁধে দায় চাপান। কাল প্রশংসা করলেন সেই সমর্থকদেরই। শেষে বললেন, ‘এই ম্যাচটায় আমি যেভাবে চেয়েছি, সেভাবেই খেলেছে দল।’ হতাশ ছিলেন মোহামেডানের সহকারী কোচ জুয়েল রানা ‘এটিই ফুটবল। ছোট কিছু ভুল করেই আমরা হারলাম।’
আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচে ভুল করলেই বিপদ। মোহামেডান ম্যাচ হেরে তা ভালোই বুঝল!
আবাহনী: সোহেল, ওয়ালি, সামাদ, সুজন, প্রাণতোষ, আতিকুর, ইয়োকো, শাখাওয়াত (আরমান), তৌহিদুল (এনামুল), ফ্রাঙ্ক, ইব্রাহিম।
মোহামেডান: মামুন, রজনী, ইয়াসিন, মতিউর মুন্না (মোবারক), মানিক (মারুফ), সোহেল, শরিফুল, ওসমান, মরিসন, মোস্তফা, ড্যামিয়েন।
No comments