জলবায়ু পরিবর্তন ॥ উন্নত দেশগুলো অর্থ প্রদানে কার্পণ্য করলেও বাড়াচ্ছে সামরিক ব্যয়- মানবজাতির জন্য এটা হতাশাব্যঞ্জক ॥ by ড. হাছান মাহমুদ
পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ উন্নত দেশগুলোর প্রতি অভিযোগ উত্থাপন করে বলেছেন, উন্নত দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনে অর্থ প্রদানে কার্পণ্য করলেও সামরিক খাতে ব্যয় বাড়িয়ে চলেছে।
গত তিন বছরে তারা জলবায়ু পরিবর্তনে চার বিলিয়ন ডলার দিলেও সামরিক খাতে যুদ্ধ করার জন্য প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার খরচ বাড়িয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনে আমরা ডুবে যাচ্ছি অথচ তারা টাকা দিচ্ছে না, কিন্তু যুদ্ধ করার জন্য টাকা খরচ করছে। এটা মানব জাতির জন্য অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক।তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি কোন দল বা গোষ্ঠীর নয় মন্তব্য করে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় দলমতের উর্ধে এসে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। অন্যথায় জলবায়ু পরিবর্তনের ফল পুরো মানবজাতির জন্য হতাশা বয়ে আনবে। শুক্রবার ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি) মিলনায়তনে ‘দোহা জলবায়ু সম্মেলন : প্রত্যাশা ও অর্জন’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশমন্ত্রী এ কথা বলেন। বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরাম (বিসিজেএফ), স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ক্লাইমেট চেঞ্জ এ্যান্ড হেলথ্ প্রমোশন ইউনিট ও আইডিইবি যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে। আইডিইবি সভাপতি প্রকৌশলী এ কে এম এ হামিদের সভাপতিত্বে এবং বিসিজেএফ সভাপতি সাংবাদিক কাওসার রহমানের সঞ্চালনায় সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান, ক্লাইমেট চেঞ্জ নেগোসিয়েশন টিমের সমন্বয়ক এবং পিকেএসএফ চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদ, সেন্টার ফর গ্লোবাল চেঞ্জের (সিজিসি) নির্বাহী পরিচালক আহসান উদ্দিন আহমেদ, ক্লাইমেট চেঞ্জ এ্যান্ড হেলথ্ প্রমোশন ইউনিটের কো-অর্ডিনেটর ডা. ইকবাল কবির। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ইত্তেফাকের সাংবাদিক রফিকুল বাসার। এ ছাড়া আরও দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক জিয়াউল হক ও মির্জা শওকত আলী, সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিসিজেএফের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক মোতাহার হোসেন।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ আড়াইশ মিলিয়ন ডলারের মতো আর্থিক ক্ষতিপূরণ পেয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের ক্লাইমেট চেঞ্জ রিলিজিয়েন্স ফান্ডে সরাসরি ১৭৮ মিলিয়ন ডলার, বাকি অর্থ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এসেছে।
মন্ত্রী বলেন, দোহা সম্মেলনে আংশিক অগ্রগতি হয়েছে। তবে হতাশার বিষয় হলো ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ক্ষতিপূরণের অর্থের পরিমাণ বাড়ানোর কথা থাকলেও এ বিষয়ে সম্মেলনে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ‘জলবায়ু উদ্বাস্তু’র বিষয়টি সম্মেলনে স্বীকৃতি পেয়েছে। এছাড়া কিয়োটো প্রটোকলের মেয়াদ বাড়ানো এই সম্মেলনের সফলতা।
কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, দোহা সম্মেলনে উল্লেখযোগ্য সফলতা না এলেও কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো গেছে। যা পরবর্তী বৈঠকগুলোতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর পক্ষে কাজ করবে। এক্ষেত্রে অন্যান্য সহযোগী দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আরও জোরালো আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে।
ড. আতিউর রহমান বলেন, আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় গ্রীন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, যা অন্যান্য দেশের জন্য অনুকরণীয়। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের জিডিপি ক্রমাগত বৃদ্ধিরই এর প্রমাণ রাখে।
আইডিইবি সভাপতি প্রকৌশলী এ কে এম এ হামিদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি মোকাবেলায় প্রকৌশলীদেরও ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ ও বন্যা মোকাবেলার জন্য বাঁধ দেয়ার ক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রকৌশলীদের ভূমিকা রাখতে পারেন।
বিসিজেএফ’র সভাপতি কাওসার রহমান বলেন, দোহা সম্মেলনে এলডিসি দেশগুলোর প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। তবে হতাশ না হয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের বক্তব্য বিশ্বের বিভিন্ন ফোরামে তুলে ধরতে হবে।
বক্তারা আরও বলেন, জলবায়ু সম্মেলনে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। তবে কিছু বিষয়ে এগিয়েছে। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবেলায় শুধু বিদেশীর দিকে তাকিয়ে নেই। নিজেরাই নিজেদের অর্থ দিয়ে নানা কাজ করে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতির স্বীকার জনগণকে সরকারীভাবে সহায়তা করা না লাগলে সেই অর্থ অন্য খাতে খরচ করা যেত।
অভিনব কৌশলে জালিয়াতি, অবৈধ ভর্তি ঠেকানো যাচ্ছে না ঢাবিতে
No comments