থার্টিফার্স্টে রাজধানী জুড়ে তিন স্তরের নিরাপত্তা, বসছে চেকপোস্ট
ইংরেজী নববর্ষ ২০১৩ উদযাপন উপলক্ষে রাজধানীসহ সারাদেশে থাকছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর জামায়াত-শিবিরের ধারাবাহিক চোরাগোপ্তা হামলার বিষয়টি মাথায় রেখেই এবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে।
থার্টিফার্স্ট নাইটে বড় ধরনের নাশকতার আশঙ্কাকেও উড়িয়ে দিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এবার রাজধানীতে থাকছে ৩ স্তরের বিশেষ নিরাপত্তা বলয়। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত সংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হচ্ছে। ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বসানো হয়েছে গোপন মুভি ক্যামেরা ও সিসিটিভি। রাজধানীর ভেতরে ও প্রবেশ পথগুলোতে বসছে শতাধিক চেকপোস্ট। মহানগরীর কঠোর নজরদারির জন্য উঁচু ভবনের ছাদে বসছে অন্তত অর্ধশত ওয়াচ টাওয়ার। এসব ওয়াচ টাওয়ার থেকে শক্তিশালী বাইনোকুলারের সাহায্যে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে নজরদারি করা হবে। রাজধানীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের পাশাপাশি বাড়তি পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা মোতায়েন করা হয়েছে।পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালে জামায়াত-শিবির সারাদেশেই পুলিশের ওপর ধারাবাহিকভাবে চোরাগোপ্তা হামলা চালাচ্ছে। রাজধানীতেই জামায়াত-শিবির অন্তত শতাধিক চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়েছে। হামলায় আড়াই শ’ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৫ শতাধিক আহত হয়েছেন। থার্টিফার্স্ট নাইটেও জামায়াত-শিবির এ ধরনের চোরাগোপ্তা হামলা চালাতে পারে। তাই এবাবের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকছে অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক কঠোর।
রাজধানীতে থার্টিফার্স্ট নাইটে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। পুলিশের প্রায় ১৫ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ১০টি টিম মাঠে থাকছে। এ ছাড়া মহিলা পুলিশের অন্তত ৫টি টিম মাঠে থাকবে নিরাপত্তার দায়িত্বে। আপতকালীন মুহূর্ত মোকাবেলায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, সোয়াট ও ক্রাইসিস রেসপন্স টিম ছাড়াও একাধিক সিভিল টিম থাকছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকায় বসানো হচ্ছে অন্তত ৫ হাজার সিসি টিভি ও গোপন মুভি ক্যামেরা। পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যৌথভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। বেশ কিছু পয়েন্টে আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টর বসানো হবে। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে থাকছে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও ভবনগুলো। জঙ্গীসহ উগ্র মৌলবাদী রাজনৈতিক দল গুলোর ওপর নজরদারি করা হচ্ছে। বিশেষ বিশেষ ব্যক্তির নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ নিরাপত্তার মধ্যে থাকছেন যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারক, প্রসিকিউটর, আইনজীবী ও সংশ্লিষ্টরা।
র্যাব মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান ইংরেজী নববর্ষ উদযাপনের রাতে রাজধানীসহ সারাদেশে কেউ যেন মাদকাসক্ত হয়ে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করতে না পারে সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি করতে র্যাবকে আগাম নির্দেশ দিয়েছেন। রাজধানীতে ৩ হাজার এবং দেশের অন্যান্য জায়গার নিরাপত্তায় ২ হাজারসহ মোট ৫ হাজার র্যাব সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছে। পাশাপাশি ৩১ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীতে নামছে ৪টি ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বিভিন্ন স্থানে অবৈধ আতশবাজি বেচাকেনা বন্ধের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। অনুষ্ঠানস্থলগুলোতে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সাদা পোশাকে, র্যাব ও গোয়েন্দারা নজরদারি করছে। এ ছাড়া হোম পার্টির নামে কেউ বাণিজ্যিকভাবে মদ বা অন্যান্য নেশা জাতীয় দ্রব্য বিক্রি করলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সাদা পোশাকে র্যাব কাজ করছে। পাশাপাশি র্যাবের স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকছে। তারা মোটরসাইকেলযোগে টহল দেবে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, নতুন বর্ষবরণের আনন্দ স্ফূর্তিকে ইসলামবিরোধী কর্মকা- আখ্যা দিয়ে জামায়াত-শিবির জঙ্গী এবং উগ্র ইসলামী ও মৌলবাদী সংগঠনগুলোকে সঙ্গে নিয়ে থার্টিফার্স্ট নাইটে বড় ধরনের নাশকতা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ জন্য এবার থার্টিফার্স্ট নাইটে রাজধানীসহ সারাদেশের ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এ জন্য পুরো রাজধানী নজরদারির মধ্যে রাখতে র্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা গুলোর তরফ থেকে বসানো হচ্ছে পৃথক পৃথক মনিটরিং সেল।
No comments