ছায়ানটে দ্বিজেন্দ্রলাল স্মরণে নানা আয়োজন- সংস্কৃতি সংবাদ
ধনধান্য পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা ও বঙ্গ আমার জননী আমারÑএমন অসংখ্য কালজয়ী গান দিয়ে বাংলা সঙ্গীতভা-ারকে সমৃদ্ধ করে গেছেন দ্বিজেন্দ্রলাল রায়। আর এ সঙ্গীতস্র্রষ্টা শুধু গান নয়, রচনা করেছেন কবিতা ও নাটক।
পঞ্চকবির অন্যতম এই কবির সার্ধশত জন্মবর্ষ উপলক্ষে তাঁকে স্মরণের আয়োজন করে ছায়ানট। শুক্রবার সন্ধ্যায় দ্বিজেন্দ্রগীতির সুরমাধুর্যে মুখরিত হয়ে ওঠে ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তন। আর গানের সঙ্গে ছিল তাঁকে নিবেদিত কথামালা। আয়োজনের শুরুতেই ছিল ছায়ানটের শিল্পীদের সম্মেলক গানের পরিবেশনা। অনেক কণ্ঠ মিলে যায় এক সুরে। গীত হয় সেই বিখ্যাত দ্বিজেন্দ্রগীতি বঙ্গ আমার জননী আমার/ধাত্রী আমার, আমার দেশ/কেন গো মা তোর রুক্ষ নয়ন/কেন গো মা তোর রুক্ষ কেশ। গান শেষে কথায় ডি এল রায়কে স্মরণ করেন কণ্ঠশিল্পী নীলোৎপল সাধ্য। কথা শেষে আবারও ধ্বনিত হয় গানের সুর। সুললিত কণ্ঠে অনিন্দিতা চৌধুরী গেয়ে যান এ কী মধুর ছন্দ। এরপর দ্বৈত পরিবেশনায় সন্্জিদা বীথিকা ও সেমন্ত মঞ্জুরী গেয়ে শোনান আমরা মলয় বাতাসে। বেলা বয়ে যায় গানের সুরে কণ্ঠ মেলান তিন শিল্পী বিক্রম দাস, দগীপাঞ্জন মুখার্জী ও সুকান্ত চক্রবর্তী। একক ও দ্বৈত গানের ফাঁকে ফাঁকে ছিল সমবেত গানের পরিবেশনা। একক কণ্ঠে আরও গান শোনান নন্দিতা দত্ত, আজিজুর রহমান তুহিন, ঝুমা খন্দকার, সিফায়েত উল্লাহ্্ মুকুল, সমুমা রায়, ইফ্্ফাত আরা দেওয়ান ও অদিতি মহসীন। আর সম্মেলক কণ্ঠে গীত হয় আমরা এমনি এসে ভেসে যাই, আমরা বিলাত ফেরতা ও ধনধান্য পুষ্পভরা। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানা হয়।কবিতার গানে স্বদেশ ॥ স্বদেশপ্রেম নিয়ে রচিত হয়েছে বহু কবিতা। দেশের বরেণ্য কবিরা ছন্দে ছন্দে তুলে ধরেছেন স্বদেশের রূপবন্দনা। সেসব কবিতার কয়েকটি সুরারোপ করে শুক্রবার অনুষ্ঠিত হলো ‘কবিতার গানে স্বদেশ’ শীর্ষক গীতি আলেখ্য। পরিবেশনায় ছিল সারগাম ললিতকলা একাডেমী। একুশের প্রথম কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরীকে উৎসর্গ করা এ আলেখ্যের নির্দেশনা দিয়েছেন শাহীন সরদার।
শুক্রবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমীর সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে বাংলাদেশ সঙ্গীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদের নিয়মিত পাক্ষিক আয়োজনের অংশ হিসেবে এ আলেখ্যটি অনুষ্ঠিত হয়। নজরুল গবেষক অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
জন্মশতবর্ষে ঋষিজের স্মরণে হেমাঙ্গ বিশ্বাস ॥ উপমহাদেশের গণসঙ্গীতের পথিকৃৎ হেমাঙ্গ বিশ্বাসের জন্মশতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে শুক্রবার বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের বেগম সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আলোচনাসভা ও গণসঙ্গীতের আসরের আয়োজন করে ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ ও ভারতের কবি কাজল চক্রবর্তী। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন হেমাঙ্গ বিশ্বাসের মেয়ে রঙিলী বিশ্বাস। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঋষিজের সভাপতি ফকির আলমগীর।
আলোচনা পর্ব শেষে সাংস্কৃতিক পর্বে পরিবেশিত হয় হেমাঙ্গ বিশ্বাসের গণমানুষের গান। এতে দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে উদীচী, ক্রান্তি, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী, স্বভূমি, জাগরণ ও ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন ফকির আলমগীর।
¯¦প্ন ও দ্রোহের নাটককেন্দ্রিক প্রযোজনা ॥ শিল্পকলা একাডেমীর ‘দেশজ সংস্কৃতির বিকাশ ও আন্তর্জাতিক সংস্কৃতির সঙ্গে মেলবন্ধন’ শীর্ষক কর্মসূচীর আওতায় দেশের প্রতিটি জেলার স্থানীয় নাট্যকর্মীদের নিয়ে ‘¯¦প্ন ও দ্রোহের নাটক’ কেন্দ্রিক প্রযোজনা করতে যাচ্ছে। কর্মসূচীটির সুষ্ঠু বাস্তবায়নকল্পে একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দিনব্যাপী কর্মশালার আয়োজন করে। কর্মশালায় অংশ নেন দেশের ৬৪ জেলার ৬৪ জন নাট্য পরিচালক।
বর্ণিল আয়োজনে ত্রিদেশীয় উৎসব ॥
বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য তুলে ধরার লক্ষ্যে শুক্রবার আর্মি স্টেডিয়ামে গ্রামীণফোন আয়োজন করে ত্রিদেশীয় উৎসব। সঙ্গীত, ফ্যাশন শো, নৃত্য ও নানা আয়োজন ছিল এই উৎসবে। এ ছাড়া ছিল তিন দেশের পাঁচ দশকের চলচ্চিত্র অঙ্গনের খ্যাতিমান তারকা শিল্পীদের সম্মানে বর্ণিল ফ্যাশন। আয়োজনে তুলে ধরা হয় বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতের চলচ্চিত্রের ইতিহাস। রায়বেশে নৃত্য পরিবেশন করেন নৃত্যদল সাধনা। উৎসবের প্রধান আকর্ষণ ছিল বাংলাদেশের নগরবাউল জেমস, ভারতের সনু নিগম ও পাকিস্তানের শাফাকাত আমানত আলির সঙ্গীত পরিবেশনা। প্রথমবারের মতো তিন দেশের এই তিন তারকা গাইলেন এক মঞ্চে। বর্ণিল এ উৎসব উপভোগ করেন কয়েক হাজার দর্শক-শ্রোতা।
No comments