আতাইকুলা বধ্যভূমিতে ৪১ বছরেও নির্মিত হয়নি স্মৃতিস্তম্ভ
মহান স্বাধীনতার ৪১ বছর পার হলেও নওগাঁর রানীনগর উপজেলার ‘আতাইকুলা’ বধ্যভূমির আজও কোন উন্নয়ন হয়নি। সরকারীভাবে এটি সংরক্ষণেরও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত ৫২ শহীদের পরিবারে মেলেনি কোন সাহায্য সহায়তা।
পায়নি তারা কোন বিধবা ভাতা বা বয়স্ক ভাতা। শহীদ পরিবারের সদস্য হিসেবেও তাদের ভাগ্যে জোটেনি কোন ন্যূনতম সহানুভূতি। বাড়ির কর্তাদের হারিয়ে সন্তান-সন্ততি নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। আজ অবধি অনেকেই মানুষের বাড়িবাড়ি ঝি-এর কাজ করছেন। শহীদ পরিবারের সদস্যরা নিজেদের উদ্যোগে কোন রকমে ইটের প্রাচীর দিয়ে ৫২ শহীদের সমাধিস্থল ঘিরে রেখেছে মাত্র। শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে এলাকাবাসী ও শহীদ পরিবারের দীর্ঘদিনের দাবি বধ্যভূমি স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের। কিন্তু সে দাবি শুধু দাবিই রয়ে গেছে।ওই দিনের নারকীয় ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েও বেঁচে যাওয়া আতাইকুলা গ্রামের প্রদ্যুত কুমার পাল, সাধন চন্দ্র পাল ও নিখিল চন্দ্র পাল ওই দিনের করুণ হত্যাযজ্ঞের কাহিনী অশ্রুসিক্ত নয়নে বর্ণনা করে বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল সকাল ১০টায় স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় কুজাইল বাজারের ঘাটে ছোট যমুনা নদী পার হয়ে আসে একদল হানাদার বাহিনী। ওই গ্রামে মুক্তিযোদ্ধারা আছে বলে তাদের আনা হয় সেখানে। প্রথমে গ্রামটিকে ঘিরে ফেলে প্রতিটি বাড়ি থেকে নগদ টাকা স্বণালঙ্কাসহ বাড়ির নারী পুরুষকে ধরে নিয়ে ওই গ্রামের বলরাম চন্দ্রের বাড়ির উঠানে নিয়ে যায়। সেখানে পুরুষদের উঠানে সারিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে রাখে। আর উঠানের পাশেই নারীদের এক ঘরে রাখা হয়। একের পর এক নারীদের ওপরে চলে পাশবিক নির্যাতন। পরে সারিবদ্ধ পুরুষদের ওপরে চলে পাকি হানাদার বাহিনীর স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের ব্রাশ ফায়ার। মুহূর্তের মধ্যেই ওই গ্রামের ৫২ জন শহীদ হন। হানাদার বাহিনীরা চলে যাবার পর রক্তাক্ত ও গুলিবিদ্ধ অবস্থায় লাশের মধ্য থেকে কোন রকমে বেঁচে গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পাশেই তার বাড়িতে যান। তিনি জানান, সবাইকে হারিয়ে আমরা নিঃস্ব হয়েছি। বিধবা রেনু বালা, ফেন্তু বালা ও সবেজু বালা তাদের সেই দিনের করুণ কাহিনীর বর্ণনা দেন। তারা বলেন, স্বামীকে হারিয়ে ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের নিয়ে অনেক দুখে কষ্টে, অন্যের বাড়িতে ঝি-এর কাজ করে এখনও বেঁচে আছেন। কিন্তু তাদের ভাগ্যে জোটেনি বিধবা ভাতা বা বয়স্ক ভাতার কোন কার্ড।
Ñবিশ্বজিৎ মণি, নওগাঁ
No comments