যুদ্ধাপরাধী বিচারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের জবাবে- by হাসানুল হক ইনু

(গতকালের পর) আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩-এর অধীন গঠিত ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার এবং বিচার্য অপরাধের সংজ্ঞা
আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩ এর ধারা ৩-এ ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার এবং বিচার্য অপরাধের যে সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে তা হলঃ
Section 3 (1)- A Tribunal shall have the power to try and punish any individual or group of
individuals, or any member of any armed, defence or auxiliary forces, irrespective of his
nationality, who commits or has committed in the territory of Bangladesh, whether before or
after the commencement of this Act, any of the crimes mentioned in sub-section (2).
(2) The following Acts or any of them are crimes within the jurisdiction of a Tribunal for
which there shall be individual responsibility, namely:-
(a) Crimes against Humanity: namely, murder, extermination, enslavement, deportation,
imprisonment, abduction, confinement, torture, rape or other inhumane acts committed
against any civilian, population or persecutions or political, racial, ethnic or religious
grounds, whether or not in violation of the domestic law of the country where perpetrated;
(b) Crimes against Peace: namely, planning, preparation, initiation or waging of war
aggression or a war in violation of international treaties, agreements or assurances;
(c) Genocide: meaning and including any of the following Acts committed with intent to
destroy, in whole or in part, a national, ethnic, racial, religious or political group, such as;
(i) killing members of the group;
(ii) causing serious bodily or mental harm to members of the group;
(iii) deliberately inflicting on the group conditions of life calculated to bring about its
physical destruction in whole or in part;
(iv) imposing measures intended to prevent births within the group;
(v) forcibly transferring children of the group to another group;
(d) War Crimes: namely, violation of laws or customs of war which include but are not
limited to murder, ill-treatment or deportation to slave labor or for any other purpose of
civilian population in the territory of Bangladesh; murder or ill-treatment of prisoners of war
or prisons of the seas, killing of hostages and detenues, plunder of public or private property,
wanton destruction of cities, towns or villages, or devastation not justified by military
necessity;
(e) violation of any humanitarian rules applicable in arms conflicts laid down in the
Geneva Conventions of 1949;
(f) any other crimes under International Law;
(g) attempt, abetment or conspiracy to commit any such crimes;
(h) complicity in or failure to prevent commission of any such crimes;

আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩ এর অধীন ট্রাইব্যুনাল গঠনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই

বাঙালী জাতির দীর্ঘদিনের দাবি ও আকাক্সক্ষা হল মহান মুক্তিযুদ্ধকালে গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ শান্তি ও মানবতাবিরোধী অন্যান্য অপরাধ সংঘটনকারীদের সুষ্ঠু বিচার করে দন্ড প্রদানের মাধ্যমে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করা। বাঙালী জাতির দীর্ঘদিনের এই যৌক্তিক দাবি ও আকাক্সক্ষার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩ এর ধারা ৩ এ সংজ্ঞায়িত অপরাধ সংঘটনকারী অভিযুক্তগণের বিচারের জন্যই স¤পূর্ণ স্বাধীন, নিরপে এবং আন্তর্জাতিক মানস¤পন্ন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। এই আইনের ধারা ৭ অনুযায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত প্রসিকিউটরা এবং ধারা ৮ এর অধীন গঠিত তদন্ত সংস্থা তাদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান ও দক্ষতা দিয়ে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরক্ষেপ তদন্তের মাধ্যমে সংগৃহীত সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে যেসকল অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন কেবল ঐ সকল ব্যক্তির বিচার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলের সাথে সংশ্লিষ্টতার কারণে কিংবা রাজনৈতিক
উদ্দেশ্যে কোন ব্যক্তির বিচার অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারক নিয়োগ

আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩ এর ধারা ৬ এর উপধারা (২) অনুযায়ী সুপ্রীম কোর্টের বিচারক কিংবা বিচারক ছিলেন কিংবা বিচারক হওয়ার যোগ্য দুইজন এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তার সমন্বয়ে ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান থাকলেও বিচার প্রক্রিয়াটি আরও স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং আন্তজাতিক মানসম্পন্ন করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কোন কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালের সদস্য না করে শুধু সুপ্রীম কোর্টের বিচারক কিংবা বিচারক ছিলেন কিংবা বিচারক হওয়ার যোগ্য তিনজন সদস্য সমন্বয়ে ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান করে আইনটির ধারা ৬ এর উপধারা (২) সংশোধন করে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের স্বাধীনতা

আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩ এর ধারা ৬-এ উপধারা (২এ) সংযোজন করে বিচারের ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতার বিষয়ে যে বিধান করা হয়েছে তা হলঃ
Section-6 (2A)- The Tribunal shall be independent in the exercise of its judicial functions and shall ensure fair trial..
দ্রুত বিচার নি®পত্তির লক্ষ্যে আপিল দায়েরের মেয়াদ হ্রাস করা আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩ এর ধারা ১১ এর উপধারা (৩) এ দ্রুত বিচার নি®পত্তির যে বিধান রয়েছে তা হলঃ
ঝবপঃরড়হ ১১(৩)- Section 11(3)- A Tribunal shall-
(a) confine the trial to an expeditious hearing of the issues raised by the charges;
(b) take measures to prevent any action which may cause unreasonable delay, and rule out
irrelevant issues and statements.
আইনটির এই ল্য ও উদ্দেশ্য বিবেচনা করেই আইনটির ধারা ২১ এর উপধারা (৩) অনুযায়ী আপিল দায়ের করার মেয়াদ ৬০ দিনের স্থলে ৩০ দিন করা হয়েছে। আপিল দায়ের করতে ইচ্ছুক পক্ষ যাতে যথাসময়ে আপিল দায়ের করতে পারে সেই লক্ষ্যে রায় ঘোষণার তারিখেই রায়ের সার্টিফায়েড কপি সরবরাহের বিধান করে আইনটির ধারা ২০ এ প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হয়েছে।

বিদেশী আইনজীবী নিয়োগের ক্ষেত্রে আইনগত প্রতিবন্ধকতা

বাংলাদেশের অভ্যন্তরে স্থাপিত বা গঠিত যে কোন আদালত বা ট্রাইব্যুনালে আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল হতে সনদ গ্রহণের আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
The Bangladesh Legal Practioner's and Bar Council Order, 1972 Gi Article 27২৭ এ আইনজীবী
হিসেবে সনদ গ্রহণের যে বিধান রয়েছে তা হলঃ
Article 27(1) Subject to provisions of this order and the rule made thereunder, a person shall
be qualified to be admitted as an Advocate if he fulfils the following conditions, namely:-
(a) he is a citizen of Bangladesh;
(b) ...........................................
The Bangladesh Legal Practioner's and Bar Council Order 1972 Gi Article 27২৭-এ আইনজীবী হিসেবে সনদ গ্রহণের প্রধান শর্তই হল প্রার্থীকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। ফলে কোন বিদেশী আইনজীবীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাদী কিংবা আসামী পক্ষে নিযুক্ত করার আইনগত কোন সুযোগ নেই। স্মরণীয় যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে বিদেশী আইনজীবী নিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও আইনগত প্রতিবন্ধকতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। একইভাবে ১/১১ এর পর বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য বিদেশী আইনজীবী নিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও আইনগত প্রতিবন্ধকতার কারণে তাও সম্ভব হয়নি।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যপ্রণালী বিধিমালা

আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩ এর ধারা ২২ এ ট্রাইব্যুনালের কার্যপদ্ধতির যে বিধান রয়েছে তা হলঃ-
ঝবপঃরড়হ ২২- ঝঁনলবপঃ ঃড় ঃযব ঢ়ৎড়ারংরড়হ ড়ভ ঃযরং অপঃ, ধ ঞৎরনঁহধষ সধু ৎবমঁষধঃব রঃং ড়হি ঢ়ৎড়পবফঁৎব.
ধারা ২২ এ প্রদত্ত মতাবলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল- ১ “আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কার্যপ্রণালী
বিধিমালা, ২০১০” প্রণয়ন করেছে। একই মতাবলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ "ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ঈৎরসবং (ঞৎরনঁহধষ-২) জঁষবং ড়ভ চৎড়পবফঁৎব ২০১২" প্রণয়ন করেছে।

আসামির জামিন সংক্রান্ত বিধি

ট্রাইব্যুনাল ইহার কার্যপ্রণালী বিধিমালায় গ্রেপ্তারকৃত আসামীকে জামিন প্রদানের বিধান করেছে। এরই মধ্যে আসামী আব্দুল আলীমকে জামিনে মুক্তি দেয়া হয়েছে এবং আসামী দেলওয়ার হোসেন সাঈদীকে পারিবারিক জরুরী প্রয়োজনে প্যারোলে মুক্তি দেয়া হয়েছিল।

আসামির আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার

সমর্থনের বিধান আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩ অনুযায়ী অভিযুক্ত আসামী তার আত্মসমর্থনের জন্য বাংলাদেশ বার কাউন্সিল হতে সনদপ্রাপ্ত এক বা একাধিক আইনজীবী নিয়োগ করতে অধিকারী। যদি কোন অভিযুক্ত আসামী আইনজীবী নিয়োগ দিতে অপারগ হয় কিংবা কোন আসামীর অনুপস্থিতিতে বিচারকার্য পরিচালিত হয় সেইক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে সরকারী খরচে আইনজীবী নিয়োগের যে বিধান রয়েছে তা হলঃ
Section 12- Where an accused person is not represented by counsel, the Tribunal may, at any stage of the case, direct that a counsel shall be engaged at the expense of the Government to defend the accused person and may also determine the fees to be paid to such counsel.
অভিযুক্ত আসামী পরে নিয়োজিত আইনজীবীগণ প্রসিকিউসন পরে সাক্ষীকে সর্বাধিক ৪৫ দিন ব্যাপী দীর্ঘ জেরা করে বিচার অঙ্গনে নজির সৃষ্টি করেছেন। অপরদিকে আসামীর পক্ষে সাফাই সাক্ষী প্রদানকালে দীর্ঘ জবানবন্দী প্রদানেরও নজির সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ আসামী পক্ষে সমর্থনের জন্য সর্বোচ্চ সুযোগ প্রদান করে আন্তর্জাতিকমান বজায় রাখা ছাড়াও আন্তর্জাতিক অপরাধ বিচারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

সাক্ষী ও ভিকটিম সুরক্ষা

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১ ও ২ কর্তৃক প্রণীত কার্যপ্রণালী বিধিমালায় সাি ও ভিকটিম সুরা সংক্রান্ত যে বিধান করা হয়েছে তা হলঃ
৫৮ ক। (১) ট্রাইব্যুনাল স্ব-উদ্যোগে বা কোন পরে আবেদনের প্রেক্ষিতে সাক্ষি, এবং অথবা ভিকটিমের সুরা, গোপনীয়তা এবং কল্যাণ নিশ্চিত করণার্থে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশসহ প্রয়োজনীয় আদেশ দিতে পারিবেন। এই প্রক্রিয়া গোপন থাকিবে এবং অপর পকে অবহিত করা হইবে না।
(২) সরকার
(ক) সাক্ষি, এবং অথবা ভিকটিম প্রার্থনা করিলে তাহার বা তাহাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করিবেন;
(খ) ট্রাইব্যুনালের নির্দেশনা মোতাবেক সাক্ষি, এবং অথবা ভিকটিমের নিরাপত্তা ও তদারকি নিশ্চিত করিবেন; এবং
(গ) আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যগণ দ্বারা প্রহরা প্রদান পূর্বক সাক্ষি, এবং ভিকটিমকে বিচার কক্ষে আনা নেয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করিবেন।
(৩) আইনের ১০(৪) ধারার অধীনে ক্যামেরা কার্যক্রম অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রসিকিউটর এবং ডিফেন্স কাউন্সেল উভয়ই কার্যক্রমের গোপনীয়তা রক্ষা করিবেন মর্মে অঙ্গীকারনামা প্রদান করিবেন এবং অনুরূপ কার্যক্রম হইতে উদ্ভুত কোন তত্থাদিসহ সাক্ষির পরিচয় প্রকাশ করিবেন না। অনুরূপ অঙ্গীকারনামার কোন ব্যত্যয় ঘটিলে আইনের ১১(৪) ধারার বিধান অনুসারে তাহাকে বা তাহাদের প্রসিকিউট করা যাইবে।

স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও উন্মুক্ত বিচারকার্য পরিচালনা

আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩ এর ধারা ১০ এর উপধারা (৪) এ বিচার পদ্ধতি স¤পর্কে যে বিধান রয়েছে তা হলঃ
ঝবপঃরড়হ ১০(৪)-ঞযব ঢ়ৎড়পববফরহমং ড়ভ ঃযব ঞৎরনঁহধষ ংযধষষ নব রহ ঢ়ঁনষরপ;
চৎড়ারফবফ ঃযধঃ ঃযব ঞৎরনঁহধষ সধু, রভ রঃ ঃযরহশং ভরঃ, ঃধশব ঢ়ৎড়পববফরহমং রহ পধসবৎধ.
ট্রাইব্যুনাল ১ ও ২ এর বিচার কক্ষে প্রসিকিউটরগন ও আসামী পক্ষের আইনজীবীগণের সামনে পৃথক ক¤িপউটার মনিটর স্থাপন ছাড়াও আসামীর সামনেও ক¤িপউটার মনিটর স্থাপন করা হয়েছে যাতে তারা সমগ্র বিচার কার্যক্রম সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় পদপেক্ষ গ্রহন করতে পারেন। উভয় ট্রাইব্যুনালের উন্মুক্ত বিচার কক্ষে দেশী এবং বিদেশী পর্যবেক্ষকগনের বিচার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করার সুব্যবস্থা থাকায় তাঁরা নিয়মিতভাবেই বিচার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছেন।
অর্থাৎ উভয় ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা, অবাধ পর্যবেক্ষণের সুবিধা এবং উচ্চমান বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করে আন্তর্জাতিকমান নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর কোন দেশেই বিচার কক্ষে টেলিভিশন ক্যামেরা/ক্যামেরা প্রবেশের নজির ও সুযোগ না থাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার কক্ষেও টেলিভিশন ক্যামেরা/ক্যামেরা প্রবেশের অনুমতি দেয়া সমীচীন নয় বিধায় ট্রাইব্যুনাল সঠিকভাবেই উক্তরূপ অনুমতি প্রদান করেনি।

ট্রাইব্যুনালের কোন সদস্য পদ শূন্য হলেও বিচার কার্যক্রম
অব্যাহত থাকার বিধান

আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩ এর ধারা ৬ এর উপধারা (৬) এর বিধান হলঃ
Section 6 (6)- A Tribunal shall not, merely by reason of any change in its membership or the absence of any member thereof from any sitting, be bound to recall and re-hear any witness who has already given any evidence and may act on the evidence already given or produced
before it.
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান পদত্যাগ করার কারণে যথাসময়ে উক্ত ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করার ফলে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩ এর ধারা ৬(৬) এর বিধান অনুযায়ী উক্ত ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলাসমূহের বিচার কার্যক্রম অব্যাহত রাখার েেত্র আইনগত কোন প্রতিবন্ধকতা নেই।

উপসংহার

উদ্ধৃত আইন, বিধিমালা, তথ্য-উপাত্ত এবং সরকার কর্তৃক গৃহিত পদক্ষেপ সমূহের আলোকে সরকারের সুস্পষ্ট বক্তব্য হল ঃ
Ñ আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩ সম্পূর্ণরূপে একটি দেশীয় আইন এবং এর অধীন গঠিত ট্রাইব্যুনাল আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন দেশীয় ট্রাইব্যুনাল।
Ñ এ আইনের ৩(২) ধারায় সংজ্ঞায়িত মানবতা বিরোধী অপরাধ যেমন- খুন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ, বলপূর্বক ধর্মান্তরিত করা ইত্যাদি, শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধ, গণহত্যা এবং যুদ্ধাপরাধসহ আন্তর্জাতিক আইনের অধীন দন্ডযোগ্য অন্যান্য অপরাধ সংঘটনকারীদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুল গঠন করা হয়েছে।
Ñ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রধান উদ্দেশ্য হল (১) দেশে আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত করা (২) ঘৃণ্য অপরাধীদের মাফ করে দেয়ার সংস্কৃতির অবসান করা (৩) ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সুবিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা এবং (৪) জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করা।
Ñ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই এবং রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে কারও বিচার হচ্ছে না।
Ñ স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যোগ্য ও অভিজ্ঞ বিচারক সমন্বয়ে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে।
Ñ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুলের বিচারকগণ বিচার কার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং তাঁরা স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রেখে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবেই বিচারকার্য পরিচালনা করছেন।
Ñবাংলাদেশ বার কাউন্সিল অর্ডার, ১৯৭২ অনুযায়ী কোন বিদেশী নাগরিক আইনজীবীর বাংলাদেশের কোন আদালত বা ট্রাইব্যুনালে মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে আইনগত প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের নাগরিক কোন আইনজীবীর বিদেশী কোন রাষ্ট্রের আদালত বা ট্রাইব্যুনালে মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রেও আইনগত প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।
Ñ বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে দায়েরকৃত রীট পিটিশন নিষ্পত্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে,আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩ একটি বৈধ আইন এবং আইনটি সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক নয়।
Ñ অভিযুক্ত আসামীকে জামিনের ব্যবস্থা রেখে ট্রাইব্যুনালের কার্যপ্রণালী বিধিমালা প্রণয়ন করে আসামীদের ন্যায় বিচার প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
Ñ প্রসিকিউসন পরে সাক্ষিকে আসামীপক্ষের আইনজীবী কর্তৃক দীর্ঘ ৪৫ দিন পর্যন্ত জেরা করার সুযোগ দিয়ে বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনাল আসামীর আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে নজির সৃষ্টি করেছেন।
Ñ উভয় পক্ষের সাক্ষি এবং মামলার ভিকটিম এর সুরক্ষা মূলক বিধি প্রণয়ন করে উভয় ট্রাইব্যুনাল ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার সকল সুযোগ সৃষ্টি করেছেন।
Ñ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সাথে পরিচালিত হচ্ছে।
Ñ উভয় ট্রাইব্যুনালের বিচার কক্ষে প্রসিকিউসন পক্ষ ও আসামীপক্ষের আইনজীবীগণ ছাড়াও আসামীর আত্মীয়-স্বজন, দেশি-বিদেশী পর্যবেক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের বিচারকার্য পর্যবেক্ষণ করার অবাধ সুযোগ রয়েছে।
Ñ উভয় ট্রাইব্যুনালের বিচার কক্ষে প্রসিকিউসন পক্ষ ও আসামী পক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবীদের সম্মুখে এবং অভিযুক্ত আসামীর সম্মুখে কম্পিউটর মনিটর স্থাপন করা হয়েছে যাতে তারা বিচার কার্যক্রমের সকল বিষয় সরাসরি পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন।
Ñ বাংলাদেশসহ পৃথিবীর কোন দেশের আদালত কিংবা ট্রাইব্যুনালের বিচার কক্ষে টেলিভিশন ক্যামেরা/ক্যামেরা প্রবেশের নজির নেই বিধায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার কক্ষে টেলিভিশন ক্যামেরা/ক্যামেরা প্রবেশের অনুমতি প্রদানের সুযোগ নেই।
Ñ আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩ একটি দেশীয় আইন এবং এর অধীন গঠিত ট্রাইব্যুনাল দেশীয় ট্রাইব্যুনাল হওয়া সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক অপরাপর আইন ও ট্রাইব্যুনালের মতই বাংলাদেশে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সম্পূর্ণভাবে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখেই দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সাথে বিচার কার্য পরিচালনা করছেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলার বিচার চলাকালে কোন পর্যায়ে চেয়ারম্যান/সদস্যপদ কোন কারণে শূন্য হলে মামলার বিচার ঐ পর্যায় হতে অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে আইনগত কোন প্রতিবন্ধকতা নেই।
উল্লেখ্য, ফৌজদারী কার্যবিধিতেও একইরূপ বিধান রয়েছে। জাতি আশা করে চলমান এ বিচার প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্নের মাধ্যমে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা, ঘৃণ্য অপরাধীদের মাফ করে দেয়ার সংস্কৃতির অবসান করা, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সুবিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা এবং জাতিকে দীর্ঘদিনের কলঙ্ক থেকে মুক্ত করা সম্ভব হবে। (সমাপ্ত)

No comments

Powered by Blogger.