নিরক্ষরতা দূরীকরণে ছাত্রলীগ-অতীতের গৌরব পুনরুদ্ধার হোক

 বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী ছাত্রলীগের অতীত গৌরব এখন অনেকটাই ম্লান। একদা যে সংগঠনটি ছিল জাতির মুক্তি ও অগ্রগতির প্রতীক, মুক্তিযুদ্ধের অগ্রণী সেনা দল_ সে সংগঠনটির নৈতিক পতন অনেককেই ব্যথিত ও মর্মাহত করে।
ছাত্রলীগের কর্মীরা যখন সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে, অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে যখন রক্ত ঝরে, যখন চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির কালিমা এ সংগঠনটির উজ্জ্বল ইতিহাসকে ম্লান করে দেয়_ তখন ইতিহাস সচেতন প্রত্যেক মানুষই আশাহত হন। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে বহুবার এমন নেতিবাচক ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে ছাত্রলীগ সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। ছাত্ররাজনীতি বিষয়ে ওয়াকিবহাল মানুষ মনে করেন, আদর্শভিত্তিক রাজনীতি, নৈতিকতার পুনরুত্থান এবং সঠিক ও লক্ষ্যভেদী কর্মসূচি ছাড়া পথচ্যুত ছাত্ররাজনীতিকে পথে আনা যাবে না। সমাজের অন্য স্তরগুলোতে যে নীতিহীনতার অবাধ চর্চা চলছে, তা থেকে ছাত্রদের মুক্ত রাখা কঠিন। কিন্তু নীতি ও আদর্শভিত্তিক কর্মসূচি ছাত্রসমাজকে বদলে দিতে পারে। ১৯৭১ সালের আগে ছাত্ররা যেভাবে ক্ষমতাসীনদের দমন-পীড়ন উপেক্ষা করে স্বাধীনতার দিকে যাত্রা করেছিল, এখনও তেমনি নীতিহীনতা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ছাত্রদের পরিচালিত করা সম্ভব। এমন একটি মোড় ফেরানো চিন্তা থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগকে একটি নতুন কর্মসূচির দিকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। ছাত্রলীগ এবার নিরক্ষরতা দূরীকরণের জন্য মাঠে নেমে কাজ করবে। নিরক্ষরদের অক্ষরজ্ঞান দান করবে। ছাত্রলীগ বৃহৎ ছাত্র সংগঠন। রাজধানী থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত এ সংগঠনের শাখা আছে; আছে বিশাল কর্মী বাহিনীও। এ কর্মী বাহিনীকে কাজে লাগিয়ে নিরক্ষরতাবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনার ধারণা অভিনব ও উৎসাহব্যঞ্জক। বাংলাদেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলো কখনও এমন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামেনি। ফলে ছাত্রলীগের নিরক্ষরতা দূরীকরণ কর্মসূচি ইতিমধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি করেছে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নিরক্ষরতা দূর করে জ্ঞানের আলো জ্বালানোর অভিযানে নামলে দেশে ইতিবাচক প্রভাব পড়বেই। সাধারণ মানুষের কাছে তাদের ভাবমূর্তি যেমন উজ্জ্বল হবে, তেমনি সংগঠনের সঙ্গে সাধারণের যোগাযোগ বাড়বে। মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সহজাত পরিচয় গড়ে উঠবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ূয়ারা গ্রাম-গ্রামান্তরে ছড়িয়ে শিক্ষা বিস্তারের কার্যক্রমে অংশ নেন। মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য গ্রামে যান। কিন্তু আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো জনসমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যায়। এ রীতির পরিবর্তন ঘটা উচিত। ছাত্রদের সঙ্গে সাধারণের যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হওয়া দরকার। ছাত্রলীগের এ কর্মসূচি একটি সুযোগ তৈরি করবে। ইতিবাচক এ কর্মসূচিটি তাই শুধু ছাত্রলীগের বলে বিবেচিত হওয়া ঠিক হবে না। দল-মত নির্বিশেষ সবাইকে এতে সমর্থন ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। এ কথা সত্য, দেশের মূলধারার ছাত্র সংগঠনগুলোর পক্ষে সাম্প্রতিক প্রবণতা থেকে বেরিয়ে এমন একটি কল্যাণমূলক চর্চায় প্রত্যাবর্তন অনেক কঠিন। কিন্তু কল্যাণের আদর্শ অনুসরণ করে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির ওপর একটি ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে সংগঠনগুলো। আমরা মনে করি, নিরক্ষরতা দূরীকরণের এই উদ্যোগটি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হোক। ক্ষুদ্র স্বার্থ উপেক্ষা করে অতীতের মতো আবারও ছাত্রলীগ একটি উজ্জ্বল ইতিহাস নির্মাণের জন্য কাজ শুরু করুক।
 

No comments

Powered by Blogger.