মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নয়নে সেকায়েপ by মো. শরিফুল ইসলাম খান

বিশ্বব্যাংকের সফল প্রকল্পগুলোর মধ্যে সেকায়েপ অন্যতম। এটি মাধ্যমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প। সংক্ষেপে ঝঊছঅঊচ যার পূর্ণ রূপ হলো ঝবপধহফধৎু ঊঁপধঃরড়হ ছঁধষরঃু ঊহযধহপবসবহঃ চৎড়লবপঃ. ২০০৮ সালে প্রকল্পটির যাত্রা শুরু।
মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে এর ক্ষেত্র ও পরিধি বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর সর্বশেষ সংযোজন হলো অতিরিক্ত ক্লাস। মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর ২০১২ সালের জুন মাস থেকে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশব্যাপী ১০টি জেলার ২০টি উপজেলায় নিম্নমানের প্রায় ৪০০টি স্কুল ও মাদ্রাসায় পরীক্ষামূলকভাবে ইংরেজি ও গণিতের অতিরিক্ত ক্লাসের কর্মসূচি গ্রহণ করে। এই প্রকল্পে বাংলা ও ইংরেজিতে মোট ৫৩৭ জন রিসোর্স টিচার কর্মরত।
সেকায়েপের মাধ্যমে বিদ্যালয়গুলোতে প্রধানত শিক্ষণ-শিখনের মান উন্নয়ন ও তত্ত্বাবধান, শিক্ষার্থীদের সমতা অর্জন, প্রাতিষ্ঠানিক ধারণ ক্ষমতা বাড়ানো এবং মূল্যায়ন ইত্যাদি বিষয়ে কাজ করে।
আমাদের দেশে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে মাধ্যমিক স্তরে প্রায় ৯৫ ভাগের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। কিন্তু ঝরে পড়ার ফলে অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে না। ঝরে পড়ার অন্যতম কারণ ইংরেজি ও গণিতে অকৃতকার্যতা। গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, শুধু ইংরেজি ও গণিতে পাসের হার বাড়াতে পারলে পাসের হার ৯৫ ভাগ বা শতভাগে উন্নীত করা সম্ভব। ফলে দেশব্যাপী শিক্ষার মান উন্নয়ন, পাসের হার বাড়ানো প্রভৃতি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই প্রকল্পটি গ্রহণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সেকায়েপের ইংরেজি ও গণিত বিষয়ের অতিরিক্ত ক্লাসের জন্য নবীন ও তরুণ রিসোর্স টিচার নিয়োগ করা হয়। যারা সদ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট। এর নেতৃত্বেও রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষকরা। মূলত এ বলিষ্ঠ ও দক্ষ নেতৃত্ব এবং তরুণ রিসোর্স টিচারদের মাধ্যমে চলমান এ সেকায়েপ প্রকল্প বলা চলে আজ পুরোমাত্রায় সফল। প্রতিটি স্কুলের ছেলেমেয়েরা এই অতিরিক্ত ক্লাসে ব্যাপক সাড়া দিয়ে থাকে। অভিভাবকরা তাদের ছেলেমেয়েদের আগ্রহ ও উন্নতি দেখে সন্তুষ্ট। জরিপে দেখা গেছে, কোনো স্কুলে অনেক ছেলেমেয়েই স্কুলে ক্লাস করতে আসে না। কিন্তু সেকায়েপ প্রকল্পের ক্লাস করতে ঠিকই আসে। এ প্রকল্পের অতিরিক্ত ক্লাসে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার ৭০-৯৮ ভাগ।
সেকায়েপ প্রকল্পের অতিরিক্ত ক্লাসের যাত্রা প্রায় ছয় মাস। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই তার ফল দেখতে পেয়েছে। অধিকাংশ স্কুলেই ইংরেজি ও গণিতে পাসের হার এখন ৯০-এর ওপর । সদ্য স্নাতক বা স্নাতকোত্তরদের নিয়ে সেকায়েপ প্রকল্পের অতিরিক্ত ক্লাসের রিসোর্স টিচার করা হয়। এটিই ছিল নীতিনির্ধারকদের সবচেয়ে বড় কৌশল। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমেই সেকায়েপের অতিরিক্ত ক্লাসের প্রকল্পটি সফল। এর ধারাবাহিকতায় প্রকল্প প্রণেতারা দেশব্যাপী ১২০টি উপজেলায় অতিরিক্ত ক্লাসের এ কর্মসূচি গ্রহণে বলিষ্ঠ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এরই মধ্যে দরখাস্ত গ্রহণের প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী দিনেও তরুণদের দ্বারা প্রকল্পটি পরিচালিত হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
য়সেকায়েপ রিসোর্স টিচার, ঢাকা

No comments

Powered by Blogger.