গুগলের পর এবার টুইটারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে ভারত- অসমের দাঙ্গায় পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামী ও ইমরান খানের দলের উস্কানির অভিযোগ by ফিরোজ মান্না
দেশে দেশে এখন ইন্টারনেটভিত্তিক সার্চ ইঞ্জিনগুলো শাসক গোষ্ঠীর চক্ষুশূল হয়ে দেখা দিয়েছে। ভারত সরকার গুগলের পর এবার টুইটারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে। ভারত সরকার কারণ দেখিয়েছে, অসম দাঙ্গার ব্যাপারে উস্কানিমূলক লেখা বা ‘প্রোফাইল’ বন্ধ করতে রাজি না হওয়ায় সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট টুইটারের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
এর আগে ভারতের টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সার্চ ইঞ্জিন গুগলের সাইট থেকে কিছু মন্তব্য তুলে নেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিল। পরে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গেলে আদালত গুগলের সাইট থেকে ওই মন্তব্য তুলে না দিলে সাইটটি বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। দেশটির টেলিযোগাযোগ সচিব আর চন্দ্রশেখর এক টেলিভিশন চ্যানেলে জানান, টুইটার তাদের সহযোগিতা করছে না। প্রত্যাশিত সহযোগিতা না পেলে এই ধরনের ওয়েবসাইটের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। টুইটার অসমের দাঙ্গায় নেতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।
সূত্র জানিয়েছে, টুইটারের ৬৫টি পেজ বন্ধ করে দিয়েছে দিল্লী। কিছু পেজ ঠিক কোথা থেকে আপলোড করা হয়েছে, তা জানতে আমেরিকা এবং সৌদি আরবের সাহায্যও চাওয়া হয়েছে। টুইটার, ফেসবুক এবং গুগলসহ বিভিন্ন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে উস্কানিমূলক লেখার জেরে অসমে দাঙ্গা ছড়িয়েছে বলে অভিযোগ করছে ভারত সরকার। এর জেরে কিছুদিন আগে দেশটির দক্ষিণের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আতঙ্কে বাড়ি ছেড়ে গিয়েছিল বহু মানুষ। ভারতের অভিযোগ, দাঙ্গায় উস্কানি দেয়া অধিকাংশ পেজ বা ভিডিও পাকিস্তান থেকে ‘আপলোড’ করা হয়েছে। তাতে পাকিস্তানের দুটি রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী ও ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ এবং একটি টিভি চ্যানেলের নাম করেছে তারা। কিছু পেজ সৌদি থেকেও আপলোড করা হয়েছে বলে ভারত জানিয়েছে। টুইটারে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর দফতরের (পিএমও) একটি এ্যাকাউন্ট আছে। ঠিক একই রকম আরও ছয়টি এ্যাকাউন্ট রয়েছে। তাতেও উস্কানিমূলক লেখা রয়েছে। মনমোহন সিংয়ের অফিসের আশঙ্কা, ওই এ্যাকাউন্টগুলোকে পিএমও-র এ্যাকাউন্ট বলে ভাবতে পারেন ব্যবহারকারীরা। এজন্য বড় ওই ছয়টি এ্যাকাউন্টও বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, ঠিক কোন্্ কম্পিউটার থেকে বিতর্কিত পেজ আপলোড করা হয়েছে, তা বিস্তারিত জানতে পেজের ইন্টারনেট প্রটোকল এ্যাড্রেস (আইপি) প্রয়োাজন। তাই এগুলোর আইপি এ্যাড্রেস জানানোর জন্য আমেরিকা এবং সৌদি আরবে আইনি চিঠি পাঠানো হয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে বলা হচ্ছে, এই পদ্ধতিতে পাওয়া তথ্য আদালতে গ্রাহ্য। তাই এসব তথ্য পাওয়ার পরে পাকিস্তানকে দেয়া হবে। এছাড়া পাক সাইটের উস্কানিমূলক প্রচার বন্ধ করতে ইতোমধ্যেই ইসলামাবাদকে হুঁশিয়ার করেছে দিল্লী। আবার উস্কানিমূলক এসএমএস এবং এমএমএস পাঠানোর অভিযোগে কেরলের ‘পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়া’কে সন্দেহ করছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ করে কোন সুফল পায়নি। দেশেও ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি। জাতিকে বোবা করে রেখে দেশের পরিবর্তন খুব একটা আসবে বলেও মনে হয় না। বাংলাদেশের মতো দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সংখ্যা যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তা আমাদের স্বপ্ন দেখায়। ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। ইন্টারনেট এখন কালো রাজনীতির জন্য অশনিসঙ্কেত। দুর্নীতি করে পার পাওয়া যাবে না। কোটি কোটি মানুষের চোখ কান ইন্টারনেট খুলে দিয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, ২০১২ সাল হচ্ছে ইন্টারনেট জয়ের বছর। তথ্যপ্রযুক্তির এই মাধ্যমে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে গণতন্ত্রকামী বিপ্লবীরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় এতদিন ধরে যে জাগরণের কথা বলা হয়েছিল তার চিত্র দেখেছে বিশ্ববাসী। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই স্বৈরতন্ত্র থেকে মুক্তি পেতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ফেসবুক, টুইটার, ব্লগসহ নানা মাধ্যমে বিপ্লব সংগঠিত করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ২০১১ সালে টাইম ম্যাগাজিনে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন হয়েছিল। আরব বিপ্লব থেকে ওয়ালস্ট্রিট আন্দোলন ইন্টারনেটের মাধ্যমেই ঘটেছে।
সূত্র জানিয়েছে, তিউনিসিয়ার জেসমিন বিপ্লব, মিসর, লিবিয়া কিংবা সিরিয়ার আরব বিপ্লব থেকে শুরু করে দেশে দেশে আন্দোলন স্পষ্ট করেছে তরুণরা। স্বাভাবিকভাবেই সরকার কিংবা শাসকগোষ্ঠীর বিপক্ষে গেছে ইন্টারনেট। তারা ইন্টারনেটের গলা টিপে ধরার চেষ্টা করেছে। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। দেশেও ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় ফেসবুক, টুইটারসহ কয়েকটি সার্চ ইঞ্জিন বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তরুণ প্রযুক্তিবিদরা বিভিন্ন লিঙ্কে ফেসবুক টুইটার ব্যবহার করেছে ঠিকই। পরে সরকার বাধ্য হয়ে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। কিন্তু পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের তথ্যমন্ত্রী ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব, টুইটারসহ অন্যান্য ওয়েবসাইটে আক্রমণাত্মক উপাদান সরিয়ে নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছিল। ইন্টারনেট কোম্পানিগুলো অনলাইনের বিষয়বস্তু নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে এবং সরকারের সঙ্গে এ ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছতেও ব্যর্থ হয়েছে। ভারতের আদালতও ফেসবুক, গুগল, ইয়াহু, টুইটারসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট থেকে ধর্ম সম্পর্কে আক্রমণাত্মক বিষয়বস্তু সরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছিল। এরপরও মানুষের মতামত কোন না কোনভাবে প্রকাশ হচ্ছে। এটা চলতেই থাকবে। কারণ ইন্টারনেট খুলে দিয়েছে স্বাধীন মত প্রকাশের জানালা।
No comments