সংলাপেই সমাধান খুঁজুন- এবং বিরোধীদলীয় নেতা কী করতে চান

বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি যেসব কথা বলেছেন, তাতে দেশবাসীর জন্য আশাব্যঞ্জক কিছু নেই। বরং জনগণ ভালো নেই, তারা এই সরকারের কাছ থেকে নিস্তার চায়—এ ধরনের কথা বলে তিনি সামনের দিনগুলোতে জনগণের অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগ বৃদ্ধির কারণ ঘটিয়েছেন।


নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া বিরোধী দল নির্বাচনে অংশ নেবে না—এই অনড় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে খালেদা জিয়া যে ঘনায়মান রাজনৈতিক অচলাবস্থার ইঙ্গিত স্পষ্ট করলেন, তা বাস্তব হয়ে উঠতে পারে; কেননা দলটির অন্যান্য নেতাকে বলতে শোনা গেছে, ঈদের পরে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম বেগবান করা হবে। সরকারের মতো বিরোধী দলও নিজের অবস্থানে অটল রয়েছে বলে আশঙ্কা হচ্ছে দুই পক্ষের এই বিপরীতমুখী অবস্থান দেশকে আবার কোন দিকে নিয়ে যায়।
সরকার ও সংসদের মেয়াদ যখন ফুরিয়ে আসছে, যখন দুই পক্ষের মধ্যে বস্তুত কোনো রাজনৈতিক যোগাযোগ নেই, তখন আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জনমনে উদ্বেগ দেখা দেওয়াই স্বাভাবিক। বিরোধী দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেবে না, হয়তো বা নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধা দেওয়ারও চেষ্টা করবে—এই অবস্থান থেকে মূলত ব্যক্ত হচ্ছে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জনের আকাঙ্ক্ষা। এমন ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিরোধ রূপ নিতে পারে রক্তক্ষয়ী সংঘাত ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির। জাতির জন্য এমন ক্ষতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির কোনোই অর্থ হয় না; বরং এ রকম পরিস্থিতি এড়ানোর লক্ষ্যে উদ্ভূত সমস্যার সৃজনশীল সমাধান খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করা উচিত। সে ক্ষেত্রে বিরোধী দল যদি প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবের বিরোধিতা করে, তাদের কর্তব্য হবে তাদের ভাষায় নির্দলীয় সরকারের একটি রূপরেখা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরা। কেননা, বিরোধী দলের দাবি অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল হলেও তাতে বিচার বিভাগকে সম্পৃক্ত করা যাবে না।
রাজনীতিতে জনস্বার্থের বিষয়টিকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ ও কম ক্ষতিকর অবস্থান। বিরোধী দল যদি তাদের অতি-অনড় অবস্থানটি ঘন ঘন উচ্চারণ করার পরিবর্তে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আরও সম্ভাব্য দিক তুলে ধরে এবং সরকারের সঙ্গে একটা রাজনৈতিক সংলাপ শুরু করার আগ্রহ প্রকাশ করে, তাহলে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

No comments

Powered by Blogger.