গ্রামীণ ব্যাংক ও ড. ইউনূস ইস্যু-অনড় বাংলাদেশ উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র
গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগ ইস্যুতে অনড় অবস্থানে আছে বাংলাদেশ সরকার। আর একই ইস্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত মঙ্গলবারও দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড ওয়াশিংটনে বলেছেন, গ্রামীণ ব্যাংকের অখণ্ডতা ব্যাহত হয় এবং কার্যকারিতা কমে যায় এমন কোনো ব্যবস্থা না নিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আবারও আহ্বান জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
গ্রামীণ ব্যাংক ও ড. ইউনূস নিয়ে আবারও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উদ্বেগের কথাও জানান তিনি। কিন্তু পরদিন গতকাল বুধবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ড. ইউনূস সম্পর্কে ঢাকায় সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন, 'গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি নিয়োগের জন্য আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই সার্চ কমিটি গঠন করা হবে। আর ওই কমিটিতে থাকবেন না ড. মুহাম্মদ ইউনূস। যিনি ইতোপূর্বে ব্যাংকের এমডি ছিলেন, তিনি কিছুতেই সার্চ কমিটির চেয়ারম্যান হতে পারেন না। দুনিয়ার কোথাও তা নেই।'
ড. ইউনূসকে অব্যাহতি দেওয়ার পর গ্রামীণ ব্যাংকের নতুন এমডি নিয়োগ দিতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। সর্বশেষ এ ব্যাপারে একটি সার্চ কমিটি গঠনের কথা জানায় সরকার। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র চায়, নতুন এমডি বাছাইয়ের কাজটি ড. ইউনূসই করুক; এমডি বাছাইয়ের জন্য যে সার্চ (অনুসন্ধান) কমিটি গঠন করা হবে, সেখানে চেয়ারম্যান হিসেবে থেকে মূল দায়িত্ব ইউনূসই পালন করুক। বাংলাদেশ সরকার সেটা মানতে নারাজ। সম্প্রতি মন্ত্রিসভায় গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশে সংশোধনও এনেছে সরকার। এতে ব্যাংকটির ভবিষ্যৎ নিয়ে ড. ইউনূসের পাশাপাশি উদ্বেগ ও আশঙ্কা বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্রেরও। এভাবে গ্রামীণ ব্যাংক ইস্যুতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানগত ভিন্নতা ক্রমেই জোরালো হয়ে উঠছে।
গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি নিয়োগের ক্ষেত্রে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সার্চ (অনুসন্ধান) কমিটির প্রধান করতে মাস ছয়েক আগে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সাফ 'না' বলে দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ঈদের পর প্রথম কর্মদিবসে গতকাল ড. ইউনূস প্রসঙ্গে সরকারের অনড় অবস্থানের কথা জানিয়ে তিনি আরো বলেন, 'ড. ইউনূস দ্বিতীয়টি হবেন না, তবে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি যিনি হবেন, তিনিও ভালো চালাবেন।'
সম্প্রতি মন্ত্রিসভায় গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশে যে পরিবর্তন ও সংশোধন আনা হয়েছে, গত দুই সপ্তাহের ছুটির কারণে তা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি ও গেজেট আকারে প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। এক সপ্তাহের মধ্যে গেজেট প্রকাশ ও এর পরপরই সার্চ কমিটি গঠন করা হবে বলে অর্থমন্ত্রী জানান। গতকাল নিজের দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়কালে ড. ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক সম্পর্কে খোলামেলা আলোচনা করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'গ্রামীণ ব্যাংক বাঁচাও' বলে ড. ইউনূস যে প্রচারণা চালাচ্ছেন, তা ভুয়া। তাঁর এই ভুয়া প্রচারণার জন্য অনেকে চিঠি লিখে সরকারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তাঁদের মধ্যে একজন বিদেশি লেখকও রয়েছেন, যিনি একসময় বাংলাদেশে কিছুদিন রাষ্ট্রদূত ছিলেন। তিনি তাঁর লেখায় সরকারের প্রতি চরম আক্রোশ প্রকাশ করেছেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে সরকারের উদ্দেশ্য ভালো ও সৎ। সুতরাং এটা নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই। তিনি বলেন, 'গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সময় ড. ইউনূসের কাছে এটা একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। চ্যালেঞ্জটি আমিই তাঁকে দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, আপনি এটা প্রমাণ করেন যে ক্ষুদ্রঋণ ব্যক্তির ওপর নির্ভরশীল নয়। ড. ইউনূস তা প্রমাণ করেছেনও। কিন্তু তিনি নিজেই তা বিশ্বাস করেন না। এ জন্য সবচেয়ে বড় কষ্ট হচ্ছে আমার।'
সরকার ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বিচ্ছিন্ন করেনি উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, 'তিনি নিজেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ থেকে আমি তাঁকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে পরামর্শ দিয়েছিলাম। পাশাপাশি ব্যাংকটির সঙ্গে তাঁর যাতে একটি সম্পর্ক থাকে, সে জন্য তাঁকে ব্যাংকের আজীবন একটি সম্মানজনক পদ দেওয়ার প্রস্তাবও করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি সেটা গ্রহণ না করে আদালতে গেলেন।'
ড. ইউনূসের ভূমিকা প্রসঙ্গে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, 'তিনি বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণের প্রবক্তা। তিনি একজন নোবেল বিজয়ী। তাঁকে নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি ছিলেন। ওই ব্যাংকের বিধিমালা তাঁর হাতেই প্রণীত হয়েছে। তাঁর নিজের তৈরি বিধান অনুযায়ীই তিনি ব্যাংকটির এমডি পদে থাকতে পারেন না। কিন্তু এটাকে পাশ কাটিয়ে তিনি এমন একটা বিধান চালুর চেষ্টা চালিয়েছেন, যাতে তিনি আজীবন গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদে থাকতে পারেন। বাংলাদেশ ব্যাংক এটা মেনে নেয়নি।'
এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী আরো বলেন, পদত্যাগ করার পর ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে নানা ধরনের প্রচারণা চালাতে থাকেন। ফলে প্রথমদিকে তাঁদের মধ্যে একধরনের অনিশ্চয়তা কাজ করছিল, কিন্তু পরে তাঁরা দেখেছেন, সব কিছুই আগের মতো চলছে। সরকার কোনো পরিবর্তন বা হস্তক্ষেপ করছে না। এখন তাঁরা স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। গত বছর গ্রামীণ ব্যাংক সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ ও আদায় করেছে।
গত ১৩ আগস্ট গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত। তখন রাষ্ট্রদূত বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি হতে হবে যোগ্য ও আন্তর্জাতিকমানের। এ ছাড়া ব্যাংকের একটি স্বতন্ত্র পরিচালনা পর্ষদ থাকবে। ঋণগ্রহীতারাই এমডি নিয়োগ দেবে-যুক্তরাষ্ট্র এমনটিই চায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ওই প্রস্তাব উড়িয়ে দিয়ে পরদিন অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, 'রাষ্ট্রদূতকে আমি বলেছি, গ্রামীণ ব্যাংক সরকার দখল করেছে বলে ড. ইউনূস যা বলে বেড়াচ্ছেন, সেটা সম্পূর্ণ ভুয়া। এটা ঠিক যে গত দেড় বছরে গ্রামীণ ব্যাংকের নতুন এমডি নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। ঋণগ্রহীতারা ড. ইউনূসের নাম প্রস্তাব করায় সিলেকশন প্রক্রিয়ায় কেবল তাঁর নামই চলে আসে। কিন্তু তিনি তো আর এমডি হতে পারেন না।'
এমডি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার মতো দেশে-বিদেশে উপযুক্ত লোক রয়েছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের একজন উপযুক্ত এমডি নিয়োগের জন্য আন্তর্জাতিক আগ্রহপত্র আহ্বান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অনেক বিদেশি বিশেষজ্ঞ গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি হওয়ার জন্য এরই মধ্যে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
ফের উদ্বেগ যুক্তরাষ্ট্রের : গত মঙ্গলবার ওয়াশিংটন ডিসিতে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে তাঁর সরকারের উদ্বেগের কথা বলেন। একই সঙ্গে তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার তাগিদ দেন। এর আগে গত ৩ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্র গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ সংশোধনের উদ্যোগে উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছিল।
গত মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড আরো বলেন, 'বাংলাদেশ সরকারের নিয়োগ করা চেয়ারম্যানের পরামর্শ নিয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের সিদ্ধান্তে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ব্যাংকটির অখণ্ডতা ও কার্যকারিতা যাতে হ্রাস না পায়, এ জন্য আমরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতেও বলা হচ্ছে।' নুল্যান্ড বলেন, 'এটি বাংলাদেশের সমাজের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য মডেল। আমরা বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।'
এর আগে গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে সরকারি সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর বারবারা বক্সার। তিনিও গ্রামীণ ব্যাংকের ওপর সরকারি হস্তক্ষেপ বন্ধের আহবান জানিয়েছিলেন।
গত ২৭ জুন বারবারা বক্সারের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র সিনেটের ১৭ জন নারী সদস্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা এক চিঠিতে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের ক্ষমতা ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের কাছে দেওয়ার আহ্বান জানান। এ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উদ্বেগ ও প্রত্যাশার কথা জানাতে গত বছরের শুরুর দিকে ঢাকা সফর করেন দেশটির দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবার্ট ও ব্লেক। ইস্যুটির সম্মানজনক সমাধান না হলে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কে কালো ছায়া পড়বে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান ব্লেক।
ড. ইউনূসকে অব্যাহতি দেওয়ার পর গ্রামীণ ব্যাংকের নতুন এমডি নিয়োগ দিতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। সর্বশেষ এ ব্যাপারে একটি সার্চ কমিটি গঠনের কথা জানায় সরকার। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র চায়, নতুন এমডি বাছাইয়ের কাজটি ড. ইউনূসই করুক; এমডি বাছাইয়ের জন্য যে সার্চ (অনুসন্ধান) কমিটি গঠন করা হবে, সেখানে চেয়ারম্যান হিসেবে থেকে মূল দায়িত্ব ইউনূসই পালন করুক। বাংলাদেশ সরকার সেটা মানতে নারাজ। সম্প্রতি মন্ত্রিসভায় গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশে সংশোধনও এনেছে সরকার। এতে ব্যাংকটির ভবিষ্যৎ নিয়ে ড. ইউনূসের পাশাপাশি উদ্বেগ ও আশঙ্কা বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্রেরও। এভাবে গ্রামীণ ব্যাংক ইস্যুতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানগত ভিন্নতা ক্রমেই জোরালো হয়ে উঠছে।
গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি নিয়োগের ক্ষেত্রে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সার্চ (অনুসন্ধান) কমিটির প্রধান করতে মাস ছয়েক আগে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সাফ 'না' বলে দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ঈদের পর প্রথম কর্মদিবসে গতকাল ড. ইউনূস প্রসঙ্গে সরকারের অনড় অবস্থানের কথা জানিয়ে তিনি আরো বলেন, 'ড. ইউনূস দ্বিতীয়টি হবেন না, তবে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি যিনি হবেন, তিনিও ভালো চালাবেন।'
সম্প্রতি মন্ত্রিসভায় গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশে যে পরিবর্তন ও সংশোধন আনা হয়েছে, গত দুই সপ্তাহের ছুটির কারণে তা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি ও গেজেট আকারে প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। এক সপ্তাহের মধ্যে গেজেট প্রকাশ ও এর পরপরই সার্চ কমিটি গঠন করা হবে বলে অর্থমন্ত্রী জানান। গতকাল নিজের দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়কালে ড. ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক সম্পর্কে খোলামেলা আলোচনা করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'গ্রামীণ ব্যাংক বাঁচাও' বলে ড. ইউনূস যে প্রচারণা চালাচ্ছেন, তা ভুয়া। তাঁর এই ভুয়া প্রচারণার জন্য অনেকে চিঠি লিখে সরকারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তাঁদের মধ্যে একজন বিদেশি লেখকও রয়েছেন, যিনি একসময় বাংলাদেশে কিছুদিন রাষ্ট্রদূত ছিলেন। তিনি তাঁর লেখায় সরকারের প্রতি চরম আক্রোশ প্রকাশ করেছেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে সরকারের উদ্দেশ্য ভালো ও সৎ। সুতরাং এটা নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই। তিনি বলেন, 'গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সময় ড. ইউনূসের কাছে এটা একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। চ্যালেঞ্জটি আমিই তাঁকে দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, আপনি এটা প্রমাণ করেন যে ক্ষুদ্রঋণ ব্যক্তির ওপর নির্ভরশীল নয়। ড. ইউনূস তা প্রমাণ করেছেনও। কিন্তু তিনি নিজেই তা বিশ্বাস করেন না। এ জন্য সবচেয়ে বড় কষ্ট হচ্ছে আমার।'
সরকার ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বিচ্ছিন্ন করেনি উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, 'তিনি নিজেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ থেকে আমি তাঁকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে পরামর্শ দিয়েছিলাম। পাশাপাশি ব্যাংকটির সঙ্গে তাঁর যাতে একটি সম্পর্ক থাকে, সে জন্য তাঁকে ব্যাংকের আজীবন একটি সম্মানজনক পদ দেওয়ার প্রস্তাবও করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি সেটা গ্রহণ না করে আদালতে গেলেন।'
ড. ইউনূসের ভূমিকা প্রসঙ্গে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, 'তিনি বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণের প্রবক্তা। তিনি একজন নোবেল বিজয়ী। তাঁকে নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি ছিলেন। ওই ব্যাংকের বিধিমালা তাঁর হাতেই প্রণীত হয়েছে। তাঁর নিজের তৈরি বিধান অনুযায়ীই তিনি ব্যাংকটির এমডি পদে থাকতে পারেন না। কিন্তু এটাকে পাশ কাটিয়ে তিনি এমন একটা বিধান চালুর চেষ্টা চালিয়েছেন, যাতে তিনি আজীবন গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদে থাকতে পারেন। বাংলাদেশ ব্যাংক এটা মেনে নেয়নি।'
এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী আরো বলেন, পদত্যাগ করার পর ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে নানা ধরনের প্রচারণা চালাতে থাকেন। ফলে প্রথমদিকে তাঁদের মধ্যে একধরনের অনিশ্চয়তা কাজ করছিল, কিন্তু পরে তাঁরা দেখেছেন, সব কিছুই আগের মতো চলছে। সরকার কোনো পরিবর্তন বা হস্তক্ষেপ করছে না। এখন তাঁরা স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। গত বছর গ্রামীণ ব্যাংক সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ ও আদায় করেছে।
গত ১৩ আগস্ট গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত। তখন রাষ্ট্রদূত বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি হতে হবে যোগ্য ও আন্তর্জাতিকমানের। এ ছাড়া ব্যাংকের একটি স্বতন্ত্র পরিচালনা পর্ষদ থাকবে। ঋণগ্রহীতারাই এমডি নিয়োগ দেবে-যুক্তরাষ্ট্র এমনটিই চায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ওই প্রস্তাব উড়িয়ে দিয়ে পরদিন অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, 'রাষ্ট্রদূতকে আমি বলেছি, গ্রামীণ ব্যাংক সরকার দখল করেছে বলে ড. ইউনূস যা বলে বেড়াচ্ছেন, সেটা সম্পূর্ণ ভুয়া। এটা ঠিক যে গত দেড় বছরে গ্রামীণ ব্যাংকের নতুন এমডি নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। ঋণগ্রহীতারা ড. ইউনূসের নাম প্রস্তাব করায় সিলেকশন প্রক্রিয়ায় কেবল তাঁর নামই চলে আসে। কিন্তু তিনি তো আর এমডি হতে পারেন না।'
এমডি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার মতো দেশে-বিদেশে উপযুক্ত লোক রয়েছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের একজন উপযুক্ত এমডি নিয়োগের জন্য আন্তর্জাতিক আগ্রহপত্র আহ্বান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অনেক বিদেশি বিশেষজ্ঞ গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি হওয়ার জন্য এরই মধ্যে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
ফের উদ্বেগ যুক্তরাষ্ট্রের : গত মঙ্গলবার ওয়াশিংটন ডিসিতে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে তাঁর সরকারের উদ্বেগের কথা বলেন। একই সঙ্গে তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার তাগিদ দেন। এর আগে গত ৩ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্র গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ সংশোধনের উদ্যোগে উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছিল।
গত মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড আরো বলেন, 'বাংলাদেশ সরকারের নিয়োগ করা চেয়ারম্যানের পরামর্শ নিয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের সিদ্ধান্তে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ব্যাংকটির অখণ্ডতা ও কার্যকারিতা যাতে হ্রাস না পায়, এ জন্য আমরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতেও বলা হচ্ছে।' নুল্যান্ড বলেন, 'এটি বাংলাদেশের সমাজের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য মডেল। আমরা বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।'
এর আগে গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে সরকারি সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর বারবারা বক্সার। তিনিও গ্রামীণ ব্যাংকের ওপর সরকারি হস্তক্ষেপ বন্ধের আহবান জানিয়েছিলেন।
গত ২৭ জুন বারবারা বক্সারের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র সিনেটের ১৭ জন নারী সদস্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা এক চিঠিতে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের ক্ষমতা ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের কাছে দেওয়ার আহ্বান জানান। এ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উদ্বেগ ও প্রত্যাশার কথা জানাতে গত বছরের শুরুর দিকে ঢাকা সফর করেন দেশটির দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবার্ট ও ব্লেক। ইস্যুটির সম্মানজনক সমাধান না হলে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কে কালো ছায়া পড়বে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান ব্লেক।
No comments