প্রেক্ষাগৃহ কমছে- বিনোদনের মাধ্যমটি রক্ষা করুন
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প বহুমুখী সংকটে নিমজ্জিত। ভালো সিনেমা কম হচ্ছে। এ ব্যবসায় লাভ আগের মতো আর নেই। যারা লগি্ন করতেন, তারা ব্যবসা পরিবর্তনকেই ভবিতব্য হিসেবে মেনে নিয়েছেন। সম্ভাবনার আগল প্রায় বন্ধ মনে করে নতুন উদ্যোক্তাও আর এই শিল্পে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন না।
অন্যদিকে হলে মানসম্মত পরিবেশের অভাব ও সুস্থ বিনোদনমূলক সিনেমা কম রিলিজ হওয়ার কারণে হলে যাওয়া মানুষের সংখ্যাও কমছে। এ অবস্থায় অন্য ব্যবসায় ভবনের জমিটুকু কাজে লাগালে বাড়তি লাভের হাতছানি স্পষ্ট। পুরনো সিনেমা হলগুলোর দুই-তৃতীয়াংশই বন্ধ হওয়ার খবর তাই বিস্ময় সৃষ্টি করে না। তবে হাতেগোনা সিনেপ্লেক্স ভালো ব্যবসা করছে। তাহলে কি পুরনো হলগুলো বন্ধ করে দিয়ে নতুন নতুন সিনেপ্লেক্স করলেই হলে গিয়ে সিনেমা দেখার মানুষের সংখ্যা বাড়বে? হয়তো কিছুটা বাড়বে। কারণ সিনেপ্লেক্সগুলোর আসন অপেক্ষাকৃত কম, পরিবেশ বেশ ঝকমকে। তবে শুধু হলের পরিবেশ দিয়ে তো প্রত্যাশা অনুযায়ী আগের হারে দর্শক টানা যাবে না। সিনেপ্লেক্সগুলোতে টিকিটের হার সাধারণ হলগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। নিম্ন আয়ের মানুষরা সাধারণত সেখানে গিয়ে সিনেমা দেখার সামর্থ্য ধরেন না। আসলে সিনেমা হল হওয়া উচিত সবধরনের দর্শকের সামর্থ্যের উপযোগী। সাধারণ সিনেমা হলগুলোকেই মানুষের চাহিদা পূরণের মতো পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। পুরনো হলগুলোতে এ জন্য মালিকদের ভবনের উন্নয়ন ও যন্ত্রপাতি ক্রয়ে প্রণোদনামূলক প্যাকেজের ব্যবস্থা করা উচিত হবে। আর ভালো মানের সিনেমা তৈরির জন্য সরকারি আর্থিক সহায়তার সঙ্গে উন্নত কারিগরি সহায়তার বিষয়টিও ভাবতে হবে। এভাবে আপামর জনগণের বিনোদনের উত্তম মাধ্যম হিসেবে চলচ্চিত্র শিল্প অদূর ভবিষ্যতে তার হারানো গৌরব ফিরে পেতে পারে। মোদ্দাকথা, চলচ্চিত্র শিল্পকে বাঁচাতে এবং মানুষকে হলমুখো করার জন্য ভালো সিনেমা তৈরি করা, কম জায়গায় ভালো হল নির্মাণ, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারসহ বিনোদনের উত্তম আধার নির্মাণের জন্য সমন্বিত উদ্যোগ দরকার। এ ব্যাপারে শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রযোজক, পরিচালকসহ কলাকুশলীবৃন্দ, সিনেমা হল মালিক এবং সরকার_ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
No comments