ঐতিহ্য- শান্তিনিকেতনে পদ্মার বোট by অমর সাহা
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্র মিউজিয়াম বা রবীন্দ্র জাদুঘরে এবার ঠাঁই পেতে চলেছে বাংলাদেশে কবিগুরুর ব্যবহূত পদ্মার বোটের দুটি রেপ্লিকা। আর এ দুটি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
এই রেপ্লিকা পাওয়ার লক্ষ্যে শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতীর পক্ষ থেকে ২০১০ সালের গোড়ার দিকে বাংলাদেশের
প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি চিঠি লিখে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছিল। একই সঙ্গে কবিগুরুর বাংলাদেশে ব্যবহূত নৌকা বা বোটের রেপ্লিকাসহ প্রয়োজনীয় স্মারক, ছবি এবং তথ্য চাওয়া হয়েছিল। ওই চিঠি পাঠানোর পর প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এবার সেই চিঠির অনুরোধে সাড়া দিয়ে কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত শান্তিনিকেতনে দুটি বোটের রেপ্লিকা পাঠিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। আপাতত রাখা হয়েছে রবীন্দ্র জাদুঘরে। তবে এখনো এই বোটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়নি। বিশ্বভারতীর জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বরে এই বোট দুটি রবীন্দ্রভক্তদের প্রদর্শনের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে রবীন্দ্র জাদুঘরে। তবে নতুনভাবে সাজানো রবীন্দ্র জাদুঘর এবার খুলে দেওয়া হয়েছে ২২ শ্রাবণ থেকে। এই জাদুঘরকে নতুন করে সাজানোর জন্য প্রায় দুই বছর বন্ধ রাখা হয়েছিল।
রবীন্দ্র জাদুঘরের সাবেক বিশেষ কর্মকর্তা এবং বিশ্বভারতীর হেরিটেজ কমিটির সাবেক আহ্বায়ক নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, রবীন্দ্র জাদুঘরের একাংশে কবিগুরুর বাংলাদেশে অবস্থানকালীন নানা স্মৃতি, ছবি আর স্মারক নিয়ে একটি বাংলাদেশ গ্যালারি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কারণ, কবিগুরুর জীবনের একটা বিশেষ সময় কেটেছে বাংলাদেশে। সেই সব স্মৃতিকে নিয়ে গড়া হবে বাংলাদেশ গ্যালারি। এখানেই ঠাঁই দেওয়া হবে কবিগুরুর বাংলাদেশে কাটানোর নানা স্মৃতিবাহী স্মারক, ছবি।
নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনের একটা বড় সময় কেটেছে বাংলাদেশে। সেই ১৮৯০ থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত। ছিল কবিগুরুদের বাংলাদেশের শিলাইদহ, পতিসর আর শাহজাদপুরে বাড়ি। এখানে অবস্থানকালে কবিগুরু দেখভাল করতেন তাঁদের জমিদারি। সঙ্গে তাঁর সহধর্মিণী মৃণালিনী দেবীসহ সন্তানেরাও ছিলেন এখানে। একসময় এখানেই কবিগুরু তাঁর সন্তানদের পড়াশোনা করার জন্য নিজ গৃহেই চালু করেছিলেন পাঠশালা। আর এই বাংলাদেশে অবস্থানকালেই কবিগুরু দুপুরের সৌন্দর্য নতুনভাবে আবিষ্কার করেছিলেন। বাংলাদেশে অবস্থানকালে রবীন্দ্রনাথ ঘুরতেন নৌকা বা বোটে করে। পদ্মায় বহুবার ঘুরেছেন তিনি এই বোটে। বহু কবিতা লিখেছেন, গান লিখেছেন এই বোটে চড়ে। সেসব স্মৃতি সংগ্রহ করে গড়ে তোলা হবে বাংলাদেশ গ্যালারি। বলেছেন প্রথম আলোকে নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনি আরও বলেছেন, ‘বরীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনে বিরাট একটা প্রভাব ফেলেছিল বাংলাদেশ। তাই তো তার লেখায় বারবার উঠে এসেছে বাংলাদেশের কথা। তাই আমরা উদ্যোগ নিয়েছিলাম কবিগুরুর এসব স্মৃতি নিয়ে বাংলাদেশ গ্যালারি তৈরি করতে ।
তাঁর মতে, এই বাংলাদেশ গ্যালারিকে ব্যাপক সমৃদ্ধিশালী করার জন্য বিশ্বভারতী বাংলাদেশের সহায়তা চেয়েছিল। সহায়তা চেয়েছিল শিলাইদহের কুঠিবাড়ি বা যে বোটে করে কবিগুরু পদ্মায় গেছেন সেই বোটের রেপ্লিকা। এ নিয়ে বিশ্বভারতী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠিও লিখেছেন। সেই চিঠিতে বাংলাদেশ সাড়াও দিয়েছে। বলা হয়েছে, কবিগুরু বাংলাদেশে গিয়ে যে বোট ব্যবহার করেছেন, সেই বোটের রেপ্লিকা উপহার হিসেবে দেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে বিশ্বভারতীকে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে চিঠি লেখা হয় ২০১০ সালের ১৫ জানুয়ারি। আর সেই চিঠির প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে জবাব আসে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ২০১০ সালের ১ মার্চ।
এদিকে রবীন্দ্র জাদুঘরের বর্তমান প্রাধ্যক্ষ ভারতী মুখোপাধ্যায় প্রথম আলোকে জানান, এই মুহূর্তে বাংলাদেশ গ্যালারি নির্মাণের কথা তাঁর জানা নেই। তবে রবীন্দ্র জাদুঘরে বিশেষ মর্যাদায় বাংলাদেশের কবিগুরুর ব্যবহূত পদ্মা ও চপলা বোটের রেপিকা রাখা হবে। অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ গ্যালারি হতেও পারে।
প্রসঙ্গত, কবিগুরু বাংলাদেশে গিয়ে পদ্মায় যে দুটি বোটে করে ঘুরে বেড়াতেন এবং লেখার কাজ করতেন সেই ‘পদ্মা’ আর ‘চপলা’ নামের বোট দুটির রেপ্লিকা বাংলাদেশ সরকার উপহার হিসেবে বিশ্বভারতীকে দিয়েছে। এখন এই রেপ্লিকা দুটি রাখা হবে রবীন্দ্র জাদুঘরে। ঠিক একইভাবে বাংলাদেশ সরকার পদ্মা বোটের আরও একটি রেপ্লিকা পাঠিয়েছে কলকাতার জোড়াসাঁকোর কবিগুরুর স্মৃতিবাহী বরীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রহশালার জন্য। সেটি এখনো রাখা রয়েছে এখানে। রবীন্দ্রভারতীতেও একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কবিগুরুর স্মৃতিবাহী পদ্মা বোটের রেপ্লিকা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে। তবে দিন-তারিখ ঠিক হয়নি এখনো।
অমর সাহা
প্রথম আলোর কলকাতা প্রতিনিধি
No comments