হুমায়ূনের জন্য ভালোবাসা- তিনি আমাদের by সেলিনা হোসেন
হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে আমার প্রথম আলাপ-পরিচয় ১৯৭২ সালে। তখন আমি কর্মরত ছিলাম বাংলা একাডেমীতে। সেই সময়েই সদ্য প্রকাশিত হয়েছে 'নন্দিত নরকে'। উপন্যাসটি নিয়ে তুমুল শোরগোল চারিদিকে। আমরা অবাক বিস্ময়ে দেখলাম যে, আমাদের সাহিত্যের একটি পরিবর্তন সূচিত হলো এই উপন্যাসটির মধ্য দিয়ে।
ছোট্ট একটি লেখা_ কিন্তু কী জোরালো! কী শক্তিশালী সে লেখা। আমাদের লেখালেখির জগতে এ যেন সুস্পষ্ট এক নতুন জগৎ, নতুন ভাষা। হুমায়ূন স্মিতহাস্যে আমাদের সামনে আসতেন, ঘুরতেন, কথা বলতেন। দেখতাম, মানুষ হিসেবেও তিনি তার লেখার মতোই সাবলীল।
পরে গত ৪০ বছরে দেখলাম আমাদেরই চোখের সামনে হুমায়ূন তার নিজস্ব জগৎটাকে কী নিপুণভাবে শুধু তৈরি নয়, বিস্তারিত করলেন। তার সাহিত্য, তার চলচ্চিত্র, তার নাটক, তার বহুমুখী প্রতিভার বিকাশ ঘটতে লাগল বিভিন্নভাবে। এবং একই সঙ্গে তিনি ধরলেন পাঠক। এই পাঠক ধরার কৃতিত্ব এবং গৌরবটি হুমায়ূন এককভাবেই এই দেশে সম্পন্ন করেছেন। কারণ এত বড় পরিসরে এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে এই যে বেঁচে থাকা, টিকে থাকা, মনের ভেতরে স্থান করে নেওয়া এবং একই সঙ্গে সাহিত্যের রস গ্রহণ করা_ এটি ছিল হুমায়ূন আহমেদের এক অসাধারণ নৈপুণ্য।
হুমায়ূন আহমেদের এখনকার যে পাঠক বা কিশোর পাঠক, বয়েসি পাঠক কিংবা মধ্যবয়েসি পাঠক; এসব বিবেচনা থেকে নয়_ তখনকার আমাদের নেতৃস্থানীয় সাহিত্যিক, শিল্পী, বুদ্ধিজীবী মহলে শোরগোলটি উঠেছিল তার গুণগত মান এবং সৃজনশীলতার শক্তির কারণেই।
জনপ্রিয় ধারাকে লক্ষ্য করে তিনি যে গল্প বা উপন্যাসগুলো লিখেছেন_ সেগুলো হয়তো কালের নিয়মে বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু তারপরও তাকে একজন বাংলাদেশি সাহিত্যিক হিসেবে চিরকাল স্বীকৃতি দিয়েই রাখতে হবে তার বেশ কিছু উপন্যাসের জন্য। 'নন্দিত নরকে', 'শঙ্খনীল কারাগার', 'জননী ও জোসনার গল্প'। মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে লেখা তার অনেক উপন্যাসের জন্যও আমাদের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্যে তিনি একটা উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে থাকবেন। জনপ্রিয়তার মাত্রায় হয়তো তার একটু সমালোচনা আছে যে, জনপ্রিয় ধারার যা লিখেছেন তা সাহিত্যিক মান সম্পন্ন করেনি। কিন্তু যা-ই হোক, হুমায়ূন হুমায়ূন-ই। তিনি যা করে গেছেন তা নিয়েই আমাদের সাহিত্যের মাঝে থেকে যাবেন কাল থেকে কালে। হুমায়ূনের ক্ষমতার নানামুখী মাত্রা আমরা দেখেছি। তার 'কোথাও কেউ নেই' নাটকের বাকের ভাই নামের যে চরিত্র_ সে চরিত্রের অবিস্মরণীয় শক্তি আমরা অনুভব করেছি। দেখেছি নাটকের একটি চরিত্রের ফাঁসি হবে_ এর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ মিছিল নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন। একটি চরিত্র গণমানুষের মনে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, এটা হুমায়ূনের কাছ থেকেই শিখতে হয়। একজন সাহিত্যিক হয়ে, সাহিত্যের বিকল্পধারা হিসেবে নানারকম ক্ষেত্র তৈরি করেছিলেন।
তার গল্পের মুগ্ধতা, কাহিনী বিন্যাস, নির্মাণশৈলীর মাধ্যমে একই সঙ্গে সব বয়েসি পাঠকের কাছে একটা আশ্চর্যরকমের গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিলেন। সব বয়েসি পাঠককেই তিনি ছুঁতে পেরেছিলেন। সেই সাথে তার লেখার সি্নগ্ধতা, ভাষার গতিশীলতা, সারল্য পাঠকের কাছে ছিল দারুণভাবে আকর্ষণীয়। দ্বিতীয়ত, তার এই সবকিছুর ভেতরে মানুষকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার বিষয় ছিল, মনস্তাত্তি্বক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার বিষয় ছিল, সমাজকাঠামো নির্মাণের পটভূমিতে যে মানুষরা আমাদের জীবনে অহরহ আনাগোনা করে_ তাদেরকে তুলে আনার একটা বিষয় ছিল। আর সেই বিষয়গুলোর মধ্যে তিনি বিচিত্র সব উপাদান সংযোজন করেছেন_ সেখানে কৌতুক আছে, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ আছে, প্রেম-ভালোবাসা এবং মানবিক বোধ আছে। এই উপকরণগুলো মানুষকে টানে; যার মাধ্যমে মানুষের জীবনের নানা অভাববোধের বিপরীতে একটা আশার সঞ্চার করতে পেরেছিলেন তিনি। মানুষ তার জীবনের নানা প্রাপ্তি, যা তার নিজের জীবনে ঘটেনি, হুমায়ূনের গল্প-উপন্যাসে তা পাওয়ার চেষ্টা করেছে এবং পেয়েছেও। তিনি ছিলেন মেধাবী, বিজ্ঞানমনস্ক, সাহিত্যমনস্ক, দেশ এবং মানুষের পক্ষের লোক। আমাদের লোক। তার এ চিরবিদায় আমাদের সাহিত্য জগতে নতুন এক চিরশূন্যতার সূচনা।
পরে গত ৪০ বছরে দেখলাম আমাদেরই চোখের সামনে হুমায়ূন তার নিজস্ব জগৎটাকে কী নিপুণভাবে শুধু তৈরি নয়, বিস্তারিত করলেন। তার সাহিত্য, তার চলচ্চিত্র, তার নাটক, তার বহুমুখী প্রতিভার বিকাশ ঘটতে লাগল বিভিন্নভাবে। এবং একই সঙ্গে তিনি ধরলেন পাঠক। এই পাঠক ধরার কৃতিত্ব এবং গৌরবটি হুমায়ূন এককভাবেই এই দেশে সম্পন্ন করেছেন। কারণ এত বড় পরিসরে এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে এই যে বেঁচে থাকা, টিকে থাকা, মনের ভেতরে স্থান করে নেওয়া এবং একই সঙ্গে সাহিত্যের রস গ্রহণ করা_ এটি ছিল হুমায়ূন আহমেদের এক অসাধারণ নৈপুণ্য।
হুমায়ূন আহমেদের এখনকার যে পাঠক বা কিশোর পাঠক, বয়েসি পাঠক কিংবা মধ্যবয়েসি পাঠক; এসব বিবেচনা থেকে নয়_ তখনকার আমাদের নেতৃস্থানীয় সাহিত্যিক, শিল্পী, বুদ্ধিজীবী মহলে শোরগোলটি উঠেছিল তার গুণগত মান এবং সৃজনশীলতার শক্তির কারণেই।
জনপ্রিয় ধারাকে লক্ষ্য করে তিনি যে গল্প বা উপন্যাসগুলো লিখেছেন_ সেগুলো হয়তো কালের নিয়মে বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু তারপরও তাকে একজন বাংলাদেশি সাহিত্যিক হিসেবে চিরকাল স্বীকৃতি দিয়েই রাখতে হবে তার বেশ কিছু উপন্যাসের জন্য। 'নন্দিত নরকে', 'শঙ্খনীল কারাগার', 'জননী ও জোসনার গল্প'। মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে লেখা তার অনেক উপন্যাসের জন্যও আমাদের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্যে তিনি একটা উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে থাকবেন। জনপ্রিয়তার মাত্রায় হয়তো তার একটু সমালোচনা আছে যে, জনপ্রিয় ধারার যা লিখেছেন তা সাহিত্যিক মান সম্পন্ন করেনি। কিন্তু যা-ই হোক, হুমায়ূন হুমায়ূন-ই। তিনি যা করে গেছেন তা নিয়েই আমাদের সাহিত্যের মাঝে থেকে যাবেন কাল থেকে কালে। হুমায়ূনের ক্ষমতার নানামুখী মাত্রা আমরা দেখেছি। তার 'কোথাও কেউ নেই' নাটকের বাকের ভাই নামের যে চরিত্র_ সে চরিত্রের অবিস্মরণীয় শক্তি আমরা অনুভব করেছি। দেখেছি নাটকের একটি চরিত্রের ফাঁসি হবে_ এর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ মিছিল নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন। একটি চরিত্র গণমানুষের মনে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, এটা হুমায়ূনের কাছ থেকেই শিখতে হয়। একজন সাহিত্যিক হয়ে, সাহিত্যের বিকল্পধারা হিসেবে নানারকম ক্ষেত্র তৈরি করেছিলেন।
তার গল্পের মুগ্ধতা, কাহিনী বিন্যাস, নির্মাণশৈলীর মাধ্যমে একই সঙ্গে সব বয়েসি পাঠকের কাছে একটা আশ্চর্যরকমের গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিলেন। সব বয়েসি পাঠককেই তিনি ছুঁতে পেরেছিলেন। সেই সাথে তার লেখার সি্নগ্ধতা, ভাষার গতিশীলতা, সারল্য পাঠকের কাছে ছিল দারুণভাবে আকর্ষণীয়। দ্বিতীয়ত, তার এই সবকিছুর ভেতরে মানুষকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার বিষয় ছিল, মনস্তাত্তি্বক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার বিষয় ছিল, সমাজকাঠামো নির্মাণের পটভূমিতে যে মানুষরা আমাদের জীবনে অহরহ আনাগোনা করে_ তাদেরকে তুলে আনার একটা বিষয় ছিল। আর সেই বিষয়গুলোর মধ্যে তিনি বিচিত্র সব উপাদান সংযোজন করেছেন_ সেখানে কৌতুক আছে, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ আছে, প্রেম-ভালোবাসা এবং মানবিক বোধ আছে। এই উপকরণগুলো মানুষকে টানে; যার মাধ্যমে মানুষের জীবনের নানা অভাববোধের বিপরীতে একটা আশার সঞ্চার করতে পেরেছিলেন তিনি। মানুষ তার জীবনের নানা প্রাপ্তি, যা তার নিজের জীবনে ঘটেনি, হুমায়ূনের গল্প-উপন্যাসে তা পাওয়ার চেষ্টা করেছে এবং পেয়েছেও। তিনি ছিলেন মেধাবী, বিজ্ঞানমনস্ক, সাহিত্যমনস্ক, দেশ এবং মানুষের পক্ষের লোক। আমাদের লোক। তার এ চিরবিদায় আমাদের সাহিত্য জগতে নতুন এক চিরশূন্যতার সূচনা।
No comments