রমজান ও ঈদ-ছুটিতে এবার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ম্যাজিক- ০ খুন ডাকাতি ছিনতাইয়ের উপদ্রব ছিল না- ০ রাজধানীতে নির্বিঘেœ কেনাকাটা, নিশ্চিন্তে ঘরে ফেরা by শংকর কুমার দেdefe
রীতিমতো ম্যাজিক দেখানোর মতোই আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ পরিস্থিতি করা হয়েছে এবারের রমজান মাসে ও ঈদের ছুটিতে। রমজান মাসে ও ঈদের ছুটিতে অতীতে যেভাবে খুন, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি, অজ্ঞান পার্টি, পকেটমার, প্রতারক চক্রের উপদ্রব ছিল এবার যেন তার বিপরীত চিত্র। গভীর রাত পর্যন্ত রাজধানীর মানুষজন
কেনাকাটা করেছে নির্বিঘেœ। বাড়ি ফিরেছে নিশ্চিন্তে। স্বস্তির নিঃশ্বাস বয়ে এনেছে রাজধানীর জনজীবনে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সহনশীল দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি, বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের অনুপস্থিতি, রোজাদারদের জন্য পর্যাপ্ত পানির সরবরাহ, গ্যাসের স্বাভাবিক সরবরাহে সরকারের সর্বোচ্চ মহল, রাজধানীবাসীসহ সকল মহলই খুশি। এ খবর পুলিশের উচ্চপর্যায় সূত্রের।
শুধু রাজধানীই নয়, এবার গোটা দেশেই উল্লেখ করার মতো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার মতো বড় ধরনের কোন অপরাধের ঘটনা ঘটেনি। বিচ্ছিন্ন ছোটখাটো দু’একটি ঘটনা ঘটলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ত্বরিত তৎপরতায় তেমন কোন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়নি। র্যাব, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সার্বক্ষণিক তৎপরতায় রাজধানীবাসী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পেরেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে তারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের এই কৃতিত্বের দাবিদার হওয়ার কথা জানিয়েছেন। রাজধানী ঢাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরাসরি মাঠপর্যায়ের
তদারকি করছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ।
রমজান মাসে ও ঈদের তিন দিনের ছুটিতে রাজনৈতিক হত্যাকা- বা গুপ্ত হত্যার ঘটনা ঘটেনি। এমনকি বহুল সমালোচিত ক্রসফায়ারের ঘটনাও ছিল না। মাদকদ্রব্য, বৈদেশিক মুদ্রাসহ বড় ধরনের চোরাচালান ছিল অনুপস্থিত। বড় ধরনের ছিনতাই বা ডাকাতির খবর পাওয়া যায়নি। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি নিয়ে সহিংসতা হয়নি। যুদ্ধাপরাধীদের তৎপরতা, জঙ্গী হামলার উল্লেখযোগ্য কোন রেকর্ড নেই পুলিশের খাতায়। ডিএমপির ইউনিফর্ম পুলিশ, র্যাব, ডিবির সোয়াট বাহিনী, সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্য, মহিলা পুলিশ দলসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দশ সহস্রাধিক সদস্যের নিরাপত্তার জাল তৈরি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে।
ঈদ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাসহ বিশেষ বিশেষ জায়গায় ব্যবস্থা করা হয় কঠোর নিরাপত্তার। যে কোন ধরনের আপৎকালীন মুহূর্ত মোকাবেলার জন্য রিজার্ভ ফোর্স প্রস্তুত রাখা হয়। জামায়াত-শিবির ও জঙ্গীদের তৎপরতা রয়েছে এমন এলাকার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে বেশি। বিশেষ নজরদারির মধ্যে রাখা হয় যুদ্ধাপরাধীদের দোসর ও বিশেষ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। নিরাপত্তার অংশ হিসেবে জাতীয় ঈদগাহ ময়দান এলাকায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও গেটগুলোতে বসানো হয় আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টর, সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও যানবাহনে তল্লাশি চালানো হয়েছে। ঈদগাহ ময়দান, উচ্চ আদালতসহ আশপাশে বসানো হয়েছে বিপুল পরিমাণ গোপন মুভি ক্যামেরা। পাশাপাশি রাখা হয় বিপুলসংখ্যক পুলিশ, র্যাব ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। ঈদগাহ ময়দানে আসা সর্বস্তরের মুসল্লিদের নিরাপত্তার স্বার্থে জাতীয় ঈদগাহ ময়দান ও তার আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। যানবাহন চলাচলেও নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। পুলিশের বম্ব ডিজপোজাল ইউনিট দফায় দফায় তল্লাশি চালায়। র্যাবের ডগ স্কোয়াডও ছিল তৎপর।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেল এ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্সের ডিসি মোঃ মাসুদুর রহমান জানিয়েছেন, এক কোটিরও বেশি মানুষের মেগাসিটি রাজধানী ঢাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ম্যাজিক দেখিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এতই স্বাভাবিক ছিল যে, গোটা রমজান মাস ও ঈদের ছুটিতে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন, অর্থ লেনদেনে কোন ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি। মার্কেটকেন্দ্রিক নিরাপত্তা ছিল জোরদার। ঈদে বাড়ি ফেরা বাসটার্মিনাল, লঞ্চঘাট, রেলওয়ে স্টেশনসহ কোথাও অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, পকেটমার, প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে কেউ সর্বস¦ান্ত হওয়ার কোন খবর পাওয়া যায়নি। ঈদের জামাত ছিল নির্বিঘœ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সার্বক্ষণিক সতর্ক দৃষ্টি ও তৎপরতায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছে।
গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এবারের রমজান মাসে ও ঈদের সময়ে রাজধানীসহ সারাদেশেই দ্রব্যমূল্যের কোন উর্ধগতি ছিল না। তরিতরকারি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসহ দ্রব্যমূল্য ছিল স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল। এবার বিদ্যুত পরিস্থিতি ছিল খুবই সন্তোষজনক। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশেই ঘন ঘন বিদ্যুত যায়নি। বরং বিদ্যুত সরবরাহ ছিল স্বাভাবিক। রমজানে রোজাদারদের কাছে এবার ছিল না সেই অতীতের মতো পানির জন্য দীর্ঘ লাইন আর হাহাকার। গ্যাসের জন্য কোথাও রান্নাবান্নার বিঘœ ঘটার কোন খবর পাওয়া যায়নি। সরকারের নীতিনির্ধারক মহলে এবারের রমজান মাস ও ঈদের সময়ের সার্বিক চিত্রের ওপর প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।
No comments