বিশ্লেষণ- ইরানে ইসরায়েলি হামলা আসন্ন?

ইরানের বিতর্কিত পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের আশঙ্কা দিন দিন বাড়ছে। ইরান যুদ্ধ এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রসহ শক্তিধর দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরুর চেষ্টা করছে—তেহরানের দিক থেকে এমন ইঙ্গিত আসার পর পরই গুজব উঠেছে, দেশটিতে ইসরায়েলি হামলা আসন্ন। যেকোনো সময় এই হামলা হতে পারে।


ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে পাঁচ দেশ ও জাতিসংঘের সঙ্গে তেহরানের আলোচনা শিগগিরই শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা কমার কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।
মার্কিন কূটনৈতিক কর্মকর্তারা ইরানের বিতর্কিত পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধের আলোচনার অগ্রগতি নিয়ে অনেকটা হতাশ। কিন্তু দেশটিতে সামরিক হামলা চালানো হবে ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক। ইরানে হামলা চালানো হলেও তার পারমাণবিক কর্মসূচি কয়েক বছর পিছিয়ে যেতে পারে। কিন্তু এতে করে দেশটির প্রতি অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিশ্বের কট্টরপন্থীদের সমর্থন বাড়বে, যা তেহরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সুযোগ করে দেবে। এই ঝুঁকির কারণেই ইসরায়েলের অতীত ও বর্তমানের অনেক নেতাই ইরানে সরাসরি সামরিক হামলার বিষয়টি বিবেচনা করার বিরোধী। তবে ইসরায়েলের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামলা চালানের পক্ষে। ইসরায়েলের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী রিপাবলিকান পার্টির নেতা মিট রমনি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর এই অবস্থানকে সমর্থন করেন। ইরান-ইসরায়েলের বর্তমান পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ‘নিরপেক্ষ অবস্থানের’ জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামারও সমালোচনা করেন রমনি। গত সোমবার এক নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়ে রমনি বলেন, বন্ধুরাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রতি প্রেসিডেন্ট ওবামার এই অবস্থান আমার দৃষ্টিতে একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।
চলতি মাসের শেষদিকে পাঁচ দেশ (যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন রাশিয়া ও জার্মানি) ও জাতিসংঘের পক্ষে প্রধান আলোচক ক্যাথরিন অ্যাস্টন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির প্রতিনিধি সাইদ জালিলির সঙ্গে কথা বলে আলোচনা শুরুর ব্যপারে পদক্ষেপ নেবেন। নতুন এই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে কৌশলগত বৈঠকের উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে। এই বৈঠক শীর্ষ আলোচকদের মধ্যেও হতে পারে।
পাঁচ দেশ ও জাতিসংঘ এখনো ইরানের সঙ্গে দর-কষাকষির বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করছে। এর অংশ হিসেবেই মার্কিন শীর্ষ আলোচক ওয়েন্ডি শেরম্যান গত সপ্তাহে বেইজিং, লন্ডন ও মস্কো সফর করেন। এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত আমরা একমত হতে পারব।’
মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, ইরানের সঙ্গে আলোচক দেশগুলোর এখন বড় ধরনের মতপার্থক্য রয়েছে। ইরান তার ওপর থেকে সব ধরনের অবরোধ প্রত্যাহারের বিনিময়ে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ২০ শতাংশ স্তরে নামিয়ে আনতে রাজি। তবে আলোচক দেশগুলো এতে সন্তুষ্ট নয়। তারা তেহরানের ইউরেনিয়ামের মজুদ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে চায়। তবে বেশি চাপ দিলে ইরান আলোচনা থেকে বেরিয়ে গিয়ে পারমাণবিক বোমা তৈরির দিকে এগিয়ে যেতে পারে। এমনকি দেশটি আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইআইএ) পরিদর্শকদের বহিষ্কার করতে পারে। সে ব্যাপারেও যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক রয়েছে।
সব মিলিয়ে বাস্তবতা হলো, দুই পক্ষের আলোচনায় এখনো অচলবস্থা রয়েছে। কারণ, দুই পক্ষের মতপার্থক্য প্রকট। তাই ইসরায়েল একতরফাভাবে ইরানে হামলার সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে আশঙ্কা থাকছেই। ওয়াশিংটন পোস্ট।

No comments

Powered by Blogger.