বলিউডে দুই ধর্মের এক বন্ধন
অনেক জল ঘোলা হওয়ার পর অবশেষে এ বছরই বিয়ে করার ঘোষণা দিয়েছেন সাইফ আলী খান-কারিনা কাপুর। এটা অনেক পুরনো খবর। তবে বিয়ের দিনক্ষণ নিয়ে একেকজনের একেকভাবে কথা বলা আর লুকোচুরির ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে জল না জানি আরও কত ঘোলা হয়! এমনিতে গিট্টু এই পর্যন্ত কম লাগেনি এ বিয়েতে।
দুই জন চুটিয়ে প্রেম করছেন বহুদিন যাবত। ‘কবে হবে বিয়ে’ নিয়ে জল্পনা চলতে চলতে যে অবশেষে বিয়ের জন্য মনস্থির করেছেন, বলিউড বাস্তবতায় তাও অবশ্য কম কিছু নয়। এমনিতে বলিউডের যা হাল! আঠা দিয়ে জোড়া লাগানো সম্পর্ক ৯০ ডিগ্রী এঙ্গেলে বাঁক নিতে সময় লাগে না; আবার উত্তর-পশ্চিম আর দক্ষিণ-পূর্ব এক হয়ে যাবার ঘটনাও কম ঘটেনি এ পর্যন্ত। সম্পর্ক হওয়ার পর সাইফিনা (সাইফ আর কারিনা জুটি বলিউডে একসাথে এই নামেই পরিচিত) যে এখনও ওই পথে পা বাড়াননি তাও এক ‘ঘটনা’ ই বটে! অবশ্য আগেই সাইফ-কারিনাও ‘অদল-বদল খেলা’ শেষ করে ফেলেছেন। এক সময় লাভার বয় শহিদ কাপুরের সাথে কারিনার মন দেয়া নেয়ার ঘটনা ছিল বলিউডের মুখরোচক গল্প। কিন্তু তরী আর শহিদের ঘাট পর্যন্ত ভিড়াননি কাপুর কন্যা; এসে আশ্রয় নিয়েছেন সাইফের বন্দরে। আর এদিকে ছোট নবাব তো রীতিমতো সংসার জীবনও পার করে এসেছেন। ১৩ বছরের সংসার করা বৌ অমৃতা সিংকে ডিভোর্স দিয়ে কুমারি কারিনার হাত ধরেছেন সেও বহুদিন। এখন এ ‘হাত-ধরা’ চূড়ান্ত পরিণতির দিকে ভালোয় ভালোয় গেলেই হয়!
প্রায়ই হলিউড আর তামিল থেকে কাহিনী ধার করে ছবি তৈরি করেন বলিউড পরিচালকরা অথচ হাত বাড়ালেই তাদের সামনে আছে হরেক রকমের চমকপ্রদ সব গল্প । যেগুলো দিয়ে অনায়াসে নির্মিত হতে পারে বেশ কয়েককটি হিট আর ব্লকব্লাস্টার সিনেমা। কেন যে তা হয় না, সে এক আফসোসের বিষয়! বাস্তব অথচ সিনেমেটিক কাহিনী রূপালী পর্দার দর্শকদের দেখানোর চিন্তা করতে পারেন নির্মাতারা। কথায় আছে ‘প্রেম মানে না জাত প্রেম মানে না রাত’। প্রেম আসলে আরও অনেক কিছুই মানে না। আর বলিউডের মতো জায়গায়তো ‘মানামানি’ ব্যাপার টাই অন্যরকম। সাইফ কারিনা দিয়েই শুরু করা যাক। দুই জনের ধর্ম ভিন্ন ; এক জন মুসলিম অন্যজন হিন্দু। ভারতের বর্তমান সমাজেও যে এমন বিয়ে একদম সাদা চোখে দেখা হবে তাও না। কিন্তু বলিউড বলে কথা! সাইফ আলী খান স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছেন কারিনা কে ধর্ম পাল্টাতে হবে না, বিয়ের পর ও ধর্মের ব্যাপারে স্বাধীন থাকবেন ‘বেবো’। এর আগে অমৃতা সিংকে বিয়ের সময়ও ধর্ম বদলের কোন কথা তোলেননি ছোট নবাব। আর তুলবেনই বা কেন? নবাব মনসুর আলী খান পতৌদির সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আগে তার মাও যে ছিলেন শর্মিলা ঠাকুর এক ভিন্ন ধর্মের মানুষ।
তারই ধারাবাহিকতায় গত তিন দশক ধরে দুই ধর্মের মধ্যে বিয়ে অহরহ ঘটছে বলিউডে। মিস্টার পারফেক্ট আমির খানের প্রথম স্ত্রী রিনা যেমন ভিন্ন ধর্মের, বর্তমান স্ত্রী কিরষ রাওও তেমনি। বলিউডের আরেক খান শাহরুখ ও বিয়ে করেছেন হিন্দু মেয়ে গৌরিকে। এসব ক্ষেত্রে বিশেষত দুইজনই নিজেদের ধর্ম পালন করেন ব্যক্তি জীবনে। ব্যাপারটা এখন স্বাভাবিকের পর্যায়ে চলে গেছে। বিশেষ করে যখন শুধু বলিউড নয়, আপামর জনতা ও দেশ, ধর্ম এসবের গ-ি পেরিয়ে আরও বড় করে মানব সম্পর্ক কে দেখে। আর তারই সফল মঞ্চায়ন হচ্ছে আজকের বলিউডে। কিন্তু সেই ৫০-৬০ দশকে এতটা সহজ ছিল না।
প্রেম রোমান্স তখনো ছিল, বিয়েও করেছেন অনেকে। তবে নিজ ধর্মের মধ্যে; ভিন্ন ধর্ম ছিল ‘স্পর্শকাতর’ এক ব্যাপার। যে কারণে অনেক প্রেম বিয়েতে পূর্ণতা পায়নি। ৫০ দশকের নায়িকা সুরাইয়া প্রচ- ভালবাসতেন এভারগ্রিন হিরো দেবানন্দকে। দেবানন্দও ভালবাসার চূড়ান্ত স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত। কিন্তু ‘মিয়া বিবি রাজি’ হলেও নারাজ ছিলেন সুরাইয়ার কট্টরপন্থী দাদি। মুসলমান মেয়ে হিন্দু ছেলেকে কিছুতেই বিয়ে করতে পারে নাÑ নীতিতে গোঁ ধরে থাকা দাদিই জিতলেন শেষ পর্যন্ত। বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়নি সুরাইয়া-দেবানন্দের সম্পর্ক। তবে সফল না হওয়া সে সম্পর্ককে ‘সুমহান মর্যাদা’ই দিয়েছেন নায়িকা কাম গায়িকা সুরাইয়া। না পাওয়ার বেদনা নিয়ে কাটিয়েছেন বাকি জীবন। ইচ্ছাকৃতভাবে রয়ে গেলেন আজীবন কুমারি। অনেকটা একই অবস্থা হয়েছিল সায়রা বানুরও। বেশ কিছুদিন প্রেম করেও স্রেফ ধর্মের কারণে বিয়ে করা হয়নি রাজেন্দ্র কুমারকে। এ নিয়ে অবশ্য কোন কষ্ট থাকার কথা না। কারণ পরবর্তীতে ইউসুফ খান মানে দিলীপ কুমারকে বিয়ে করে বলিউডের পর্দার বাইরের সফল দম্পতি আর সেরা জুটি এখন দিলীপ সায়রাই। সে যাক, ধর্মের প্রেম তো বলি হলো! যে কারণে ভিন্ন ধর্মের মধ্যে বিয়ে খুব বেশি হয়নি।
আর যাওবা হয়েছে, নদী সাগরের জল অনেক উথাল পাথাল করার পরই সম্ভাব হয়েছে। দুর্দান্ত চিত্রনাট্য ও যেখানে নমস্য। যেমন মধুবালা নামের মমতাজের ঘটনা। বলিউডের সিল্ক স্মিতার কাহিনী নিয়ে ‘ডার্টি পিকচার’ হয়েছে। অনায়াসে মধুবালাও হতে পারে আরেকটি সংযোজন। শুধু আফগানিস্তান থেকে এসে বলিউডে প্রতিষ্ঠা পাবার কাহিনী নিয়েই রচিত হতে পারে কয়েকক খ- উপন্যাস। আর বিয়ের ঘটনাতে ও আছে ব্যাপক ‘ঝাল-মিষ্টি’র নাটকীয় উপস্থিতি। বলিউডের থিতু হওয়ার পর জড়িয়ে পড়েছিলেন দিলীপ কুমারের সাথে। কিন্তু জন্ম থেকে কষ্ট নিয়ে বেড়ে উঠা মেয়েটির ভাগ্যের শিকে ছাড়েনি বিয়ে বেলায়ও। ভেঙ্গে যায় দিলীপের সাথে সম্পর্ক। এ সময়েই ‘চলতি কা নাম গাড়ি’ ছবিতে অভিনয়ের সময় পরিচয় ঘটে কিশোর কুমারের সাথে। পরিচয় থেকে প্রেম, তারপর পরিণয়ের পালা। কিশোরেরও অমত নেই। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। কিশোরের ঘরে তখন প্রথম স্ত্রী রুমা গুহঠাকুরতা, তার ওপর মধুবালা মুসলমান। প্রেম কী অতসব মানে! মুসলিম রীতেতে বিয়ে করে ফেললেন দুইজন। কিন্তু এতই কী সহজ দুই ধর্মের বিয়ে? বেঁকে বসলো কিশোরের বাবা-মাÑ দ্বিতীয় বিয়ে করার স্বাদ যখন, করলি কর, হিন্দু ছেলে হয়ে মুসলমান মেয়েকে মুুসলিম আইনে বিয়ে করলি কেন? বিয়ের বেলায় সাহসী কিশোর এবার নরম হলেন। বাবা মাকে মানানোর জন্য আরও একবার বিয়ে করলেন, এবার হিন্দু আইনে। আর মধুবালা ও সাত পাক ঘুরে তবেই ‘জায়েজ’ হলেন শ্বশুর পক্ষে!
ভিন্ন ধর্মেই বিয়ে করার বেলায় পরিবারের আপত্তি কিশোর কুমার না শুনলে ও রাজকাপুর শুনেছেন। না হলে মধুবালা যেমন কিশোরের ঘরনি হয়েছেন, নার্গিসও হতে পারতের রাজের। তবে সেটি না হওয়ায় যে নার্গিসের বিশাল ক্ষতি হয়েছে তেমনও না। একদম সিনেমার চিত্রনাট্যের মতই ঘটেছে সব কিছু। রাজ কাপুরের কাছে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর যখন অথই সাগরে ভাস ছিলেন তখন কূলে আনার কাজটি করলেন সুনীল দত্ত। মাদার ইন্ডিয়া ছবির শূটিং চলা কালে বাস্তবিকই জ্বলন্ত খড়ের গাধায় আটকে পড়েন নার্গিস। সত্যিকারের নায়কের মতই তাকে বাঁচিয়ে আনেন সুনীল। প্রাণ বাঁচানো মানুষটাকে মনটাও দিয়ে দিলেন সিনেমার মতো করেই। সে এক তুমুল প্রেম। জনম জনমের সাথীর মত এক সাথে চলাফেরা, ভাগাভাগিÑ সব। চূড়ান্ত আবেগে মাখা সে সম্পর্ক থোড়াই কেয়ার করে ধর্মকে। সব আলোচনা সমালোচনা পাশ কাঠিয়ে দুইজন আবদ্ধ হন পরিণয়ে। ভালবাসার বহির্প্রকাশ এত বেশি ছিল যে, ফাতেমা রশিদ ওরফে নার্গিস নামের মেয়েটি বাকি জীবন নার্গিস দত্ত নামে নিয়ে কাটালেন। এ দম্পতিরই সন্তান আজকের বলিউড অভিনেতা সঞ্জয় দত্ত। ধর্ম কোন বিভেদ আনতে পারেনি তাদের ভালবাসায়। ‘সবার উপরে ভালবাসা’র এক অপূর্ব দৃষ্টান্ত হয়েই টিকে আছে, টিকে থাকবে ভিন্ন ধর্মের মধ্যকার এসব বন্ধন।
আনোয়ার রহমান
প্রায়ই হলিউড আর তামিল থেকে কাহিনী ধার করে ছবি তৈরি করেন বলিউড পরিচালকরা অথচ হাত বাড়ালেই তাদের সামনে আছে হরেক রকমের চমকপ্রদ সব গল্প । যেগুলো দিয়ে অনায়াসে নির্মিত হতে পারে বেশ কয়েককটি হিট আর ব্লকব্লাস্টার সিনেমা। কেন যে তা হয় না, সে এক আফসোসের বিষয়! বাস্তব অথচ সিনেমেটিক কাহিনী রূপালী পর্দার দর্শকদের দেখানোর চিন্তা করতে পারেন নির্মাতারা। কথায় আছে ‘প্রেম মানে না জাত প্রেম মানে না রাত’। প্রেম আসলে আরও অনেক কিছুই মানে না। আর বলিউডের মতো জায়গায়তো ‘মানামানি’ ব্যাপার টাই অন্যরকম। সাইফ কারিনা দিয়েই শুরু করা যাক। দুই জনের ধর্ম ভিন্ন ; এক জন মুসলিম অন্যজন হিন্দু। ভারতের বর্তমান সমাজেও যে এমন বিয়ে একদম সাদা চোখে দেখা হবে তাও না। কিন্তু বলিউড বলে কথা! সাইফ আলী খান স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছেন কারিনা কে ধর্ম পাল্টাতে হবে না, বিয়ের পর ও ধর্মের ব্যাপারে স্বাধীন থাকবেন ‘বেবো’। এর আগে অমৃতা সিংকে বিয়ের সময়ও ধর্ম বদলের কোন কথা তোলেননি ছোট নবাব। আর তুলবেনই বা কেন? নবাব মনসুর আলী খান পতৌদির সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আগে তার মাও যে ছিলেন শর্মিলা ঠাকুর এক ভিন্ন ধর্মের মানুষ।
তারই ধারাবাহিকতায় গত তিন দশক ধরে দুই ধর্মের মধ্যে বিয়ে অহরহ ঘটছে বলিউডে। মিস্টার পারফেক্ট আমির খানের প্রথম স্ত্রী রিনা যেমন ভিন্ন ধর্মের, বর্তমান স্ত্রী কিরষ রাওও তেমনি। বলিউডের আরেক খান শাহরুখ ও বিয়ে করেছেন হিন্দু মেয়ে গৌরিকে। এসব ক্ষেত্রে বিশেষত দুইজনই নিজেদের ধর্ম পালন করেন ব্যক্তি জীবনে। ব্যাপারটা এখন স্বাভাবিকের পর্যায়ে চলে গেছে। বিশেষ করে যখন শুধু বলিউড নয়, আপামর জনতা ও দেশ, ধর্ম এসবের গ-ি পেরিয়ে আরও বড় করে মানব সম্পর্ক কে দেখে। আর তারই সফল মঞ্চায়ন হচ্ছে আজকের বলিউডে। কিন্তু সেই ৫০-৬০ দশকে এতটা সহজ ছিল না।
প্রেম রোমান্স তখনো ছিল, বিয়েও করেছেন অনেকে। তবে নিজ ধর্মের মধ্যে; ভিন্ন ধর্ম ছিল ‘স্পর্শকাতর’ এক ব্যাপার। যে কারণে অনেক প্রেম বিয়েতে পূর্ণতা পায়নি। ৫০ দশকের নায়িকা সুরাইয়া প্রচ- ভালবাসতেন এভারগ্রিন হিরো দেবানন্দকে। দেবানন্দও ভালবাসার চূড়ান্ত স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত। কিন্তু ‘মিয়া বিবি রাজি’ হলেও নারাজ ছিলেন সুরাইয়ার কট্টরপন্থী দাদি। মুসলমান মেয়ে হিন্দু ছেলেকে কিছুতেই বিয়ে করতে পারে নাÑ নীতিতে গোঁ ধরে থাকা দাদিই জিতলেন শেষ পর্যন্ত। বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়নি সুরাইয়া-দেবানন্দের সম্পর্ক। তবে সফল না হওয়া সে সম্পর্ককে ‘সুমহান মর্যাদা’ই দিয়েছেন নায়িকা কাম গায়িকা সুরাইয়া। না পাওয়ার বেদনা নিয়ে কাটিয়েছেন বাকি জীবন। ইচ্ছাকৃতভাবে রয়ে গেলেন আজীবন কুমারি। অনেকটা একই অবস্থা হয়েছিল সায়রা বানুরও। বেশ কিছুদিন প্রেম করেও স্রেফ ধর্মের কারণে বিয়ে করা হয়নি রাজেন্দ্র কুমারকে। এ নিয়ে অবশ্য কোন কষ্ট থাকার কথা না। কারণ পরবর্তীতে ইউসুফ খান মানে দিলীপ কুমারকে বিয়ে করে বলিউডের পর্দার বাইরের সফল দম্পতি আর সেরা জুটি এখন দিলীপ সায়রাই। সে যাক, ধর্মের প্রেম তো বলি হলো! যে কারণে ভিন্ন ধর্মের মধ্যে বিয়ে খুব বেশি হয়নি।
আর যাওবা হয়েছে, নদী সাগরের জল অনেক উথাল পাথাল করার পরই সম্ভাব হয়েছে। দুর্দান্ত চিত্রনাট্য ও যেখানে নমস্য। যেমন মধুবালা নামের মমতাজের ঘটনা। বলিউডের সিল্ক স্মিতার কাহিনী নিয়ে ‘ডার্টি পিকচার’ হয়েছে। অনায়াসে মধুবালাও হতে পারে আরেকটি সংযোজন। শুধু আফগানিস্তান থেকে এসে বলিউডে প্রতিষ্ঠা পাবার কাহিনী নিয়েই রচিত হতে পারে কয়েকক খ- উপন্যাস। আর বিয়ের ঘটনাতে ও আছে ব্যাপক ‘ঝাল-মিষ্টি’র নাটকীয় উপস্থিতি। বলিউডের থিতু হওয়ার পর জড়িয়ে পড়েছিলেন দিলীপ কুমারের সাথে। কিন্তু জন্ম থেকে কষ্ট নিয়ে বেড়ে উঠা মেয়েটির ভাগ্যের শিকে ছাড়েনি বিয়ে বেলায়ও। ভেঙ্গে যায় দিলীপের সাথে সম্পর্ক। এ সময়েই ‘চলতি কা নাম গাড়ি’ ছবিতে অভিনয়ের সময় পরিচয় ঘটে কিশোর কুমারের সাথে। পরিচয় থেকে প্রেম, তারপর পরিণয়ের পালা। কিশোরেরও অমত নেই। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। কিশোরের ঘরে তখন প্রথম স্ত্রী রুমা গুহঠাকুরতা, তার ওপর মধুবালা মুসলমান। প্রেম কী অতসব মানে! মুসলিম রীতেতে বিয়ে করে ফেললেন দুইজন। কিন্তু এতই কী সহজ দুই ধর্মের বিয়ে? বেঁকে বসলো কিশোরের বাবা-মাÑ দ্বিতীয় বিয়ে করার স্বাদ যখন, করলি কর, হিন্দু ছেলে হয়ে মুসলমান মেয়েকে মুুসলিম আইনে বিয়ে করলি কেন? বিয়ের বেলায় সাহসী কিশোর এবার নরম হলেন। বাবা মাকে মানানোর জন্য আরও একবার বিয়ে করলেন, এবার হিন্দু আইনে। আর মধুবালা ও সাত পাক ঘুরে তবেই ‘জায়েজ’ হলেন শ্বশুর পক্ষে!
ভিন্ন ধর্মেই বিয়ে করার বেলায় পরিবারের আপত্তি কিশোর কুমার না শুনলে ও রাজকাপুর শুনেছেন। না হলে মধুবালা যেমন কিশোরের ঘরনি হয়েছেন, নার্গিসও হতে পারতের রাজের। তবে সেটি না হওয়ায় যে নার্গিসের বিশাল ক্ষতি হয়েছে তেমনও না। একদম সিনেমার চিত্রনাট্যের মতই ঘটেছে সব কিছু। রাজ কাপুরের কাছে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর যখন অথই সাগরে ভাস ছিলেন তখন কূলে আনার কাজটি করলেন সুনীল দত্ত। মাদার ইন্ডিয়া ছবির শূটিং চলা কালে বাস্তবিকই জ্বলন্ত খড়ের গাধায় আটকে পড়েন নার্গিস। সত্যিকারের নায়কের মতই তাকে বাঁচিয়ে আনেন সুনীল। প্রাণ বাঁচানো মানুষটাকে মনটাও দিয়ে দিলেন সিনেমার মতো করেই। সে এক তুমুল প্রেম। জনম জনমের সাথীর মত এক সাথে চলাফেরা, ভাগাভাগিÑ সব। চূড়ান্ত আবেগে মাখা সে সম্পর্ক থোড়াই কেয়ার করে ধর্মকে। সব আলোচনা সমালোচনা পাশ কাঠিয়ে দুইজন আবদ্ধ হন পরিণয়ে। ভালবাসার বহির্প্রকাশ এত বেশি ছিল যে, ফাতেমা রশিদ ওরফে নার্গিস নামের মেয়েটি বাকি জীবন নার্গিস দত্ত নামে নিয়ে কাটালেন। এ দম্পতিরই সন্তান আজকের বলিউড অভিনেতা সঞ্জয় দত্ত। ধর্ম কোন বিভেদ আনতে পারেনি তাদের ভালবাসায়। ‘সবার উপরে ভালবাসা’র এক অপূর্ব দৃষ্টান্ত হয়েই টিকে আছে, টিকে থাকবে ভিন্ন ধর্মের মধ্যকার এসব বন্ধন।
আনোয়ার রহমান
No comments