পাটের দুর্দিন

বাংলাদেশ সোনালি আঁশের দেশ। এ দেশের পাটের বিশ্বময় সুখ্যাতি। এছাড়া বৈদেশিক আয়ের সিংহভাগ আসত পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি থেকে। কিন্তু কালের চক্রে পাটের সেই সোনালি দিন আর নেই। মাঝখানে হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো পাটের সুদিন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হয়েছিল।


বিশেষ করে বর্তমান মহাজোট সরকার বন্ধ পাটকল চালুসহ নানাবিধ উদ্যোগ নেয় পাট খাতের উন্নয়নে। আবারও শুরু হয়েছে পাট খাতের দুর্দিন । ফলে পাট চাষীরা হতাশ হয়ে পড়ছেন। এর সঙ্গে যেসব মানুষজন জড়িত তারাও উদ্বিগ্ন। এ অবস্থায় পাটের সোনালি দিন ফিরিয়ে আনতে আবারও উদ্যোগী হতে হবে।ুফিরিয়ে দিতে হবে পাটের ঐতিহ্যময় গৌরব।
একটি সহযোগী দৈনিকের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, গত বছর দেশে সাত লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে ৮০ লাখ বেল পাটের উৎপাদন হয়েছিল। এ বছর চাষের জমি ৬০ হাজার হেক্টর কমে গেছে। এ অবস্থায় উৎপাদনও ৭০ লাখ বেলের বেশি হবে না। তিন বছর ধরে টানা পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানির পরিমাণ ও আয় বাড়লেও চলতি বছর রফতানি বাজারও মন্দা, আয় কমেছে ১৩ শতাংশ। ২০১০-১১ অর্থবছরে পাট রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করেছিল ১১৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। ২০১১-১২ অর্থবছরে তা ৯৬ কোটি ৭০ লাখ ডলারে নেমে এসেছে; যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
বিশেষজ্ঞের মতে, দেশের পাটের দাম নির্ভর করে কাঁচা পাট রফতানির ওপর। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এক বছর ধরে কাঁচা পাটের রফতানিতে যেন ধস নেমেছে। এই সময়ে কাঁচা পাট রফতানি কমেছে ৩১ শতাংশ।
এছাড়াও অভ্যন্তরীণ পাটের বাজারের অবস্থাও আগের অবস্থানে নেই। তবে আশাব্যঞ্জক একটি দিক হলোÑবর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক আইন, ২০১০’ অনুমোদন করে। আইনে সরকারী-বেসরকারী সব প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্যে ৭৫ শতাংশ পাট আছে, এমন উপাদান দিয়ে তৈরি মোড়ক ব্যবহারের বিধান রয়েছে। কিন্তু এ সিদ্ধান্তের পরও দেশে পাটের ব্যাগের ব্যবহার বাড়েনি। গত অর্থবছর সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পণ্যের মোড়ক হিসেবে ২৬ হাজার ৫৬০ টন পাট ব্যবহার করেছিল। চলতি বছর তা কমে ১৩ হাজার ৬৫০ টনে নেমে এসেছে। পরিবেশ সচেতনতার এ যুগে পাটজাত পণ্যের প্রতি এ অবহেলা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না।
এছাড়া পাটকলগুলোর ক্রমাগত লোকসানের পরিমাণ কমে আসাটাও ছিল আশাব্যঞ্জক। ২০১০-১১ অর্থবছর ১৮টির মধ্যে নয়টি পাটকল লাভ করে। ২০১১-১২ অর্থবছরে এর মধ্যে তিনটি পাটকলে লোকসান হয়। ফলে লোকসানে থাকা পাটকলের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২।
দুই বছর ধরে ক্রমাগত লোকসানের পর এবারও পাট নিয়ে বিপদে পড়েছেন কৃষকরা। পাট ব্যবসায়ী ও পাটকলের মালিকদের অবস্থাও সঙ্গীন।
এ অবস্থায় পাটের সোনালি দিন ফিরিয়ে আনতে হলে বহুমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। বড় পাটকলের চেয়ে পাটজাত পণ্য তৈরি করতে পারে এমন ছোট ছোট শিল্পের সম্ভাবনা বেশি। কাজেই এ বিষয়টিও খতিয়ে দেখতে হবে। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশকে শক্ত অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে হলে কৃষির ওপর ভর করেই তা করতে হবে। আর সেজন্য অন্যতম কৃষিপণ্য পাটের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। পাটের সুদিন ফিরে আসলে বহু মানুষ তাতে উপকৃত হবে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনও বৃদ্ধি পাবে। এ ব্যাপারে যুগোপযোগী এবং বাস্তবানুগ সিদ্ধান্ত নিতে সংশ্লিষ্টরা এগিয়ে আসবেনÑ এমনটাই প্রত্যাশা ।

No comments

Powered by Blogger.