স্বস্তির ঈদ উৎসব- শুভ উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক
উৎসবের সঙ্গে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার যোগ আমাদের স্বাভাবিক নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। উৎসবের আগমনী সঙ্গীত বাজার আগেই উৎকণ্ঠা হাজির হয়। ঈদের আগেই বাজার চড়ে যায়, নিত্যপণ্যের মূল্যের সঙ্গে বাড়ে পোশাক-আশাকের দাম। উৎসবের জন্য গ্রামে বা পর্যটনকেন্দ্রে যাওয়ার আয়োজনেও ঝামেলার শেষ নেই। টিকিট হয়ে ওঠে সোনার হরিণ।
কোনোক্রমে কিছু টিকিট সাধারণের নাগালে এলেও পথের ঝক্কি কম নয়। ঢাকা থেকে বেরোবার পথ অপর্যাপ্ত। পথগুলোতে লেগে থাকে জট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অতিক্রম করে গাড়ি যখন গতি পেতে শুরু করে তখন ভাঙাচোরা রাস্তার আপদ এসে উপস্থিত হয়। আশঙ্কা শুধু পথেই নয়, শহুরে মানুষজন যে ঘর তালাবদ্ধ করে চললেন উৎসব পালন করতে, সে ঘরের নিরাপত্তার উদ্বেগ তো রয়েছেই। দোকানপাট-অফিসঘরের নিরাপত্তাও বিবেচনায় থাকে। ছুটি শেষে পত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়ে নানা খুন-খারাবির খবর। প্রতিবছর কিছু না কিছু চুরি-ডাকাতি হয়ই। তবে এবার খানিকটা হলেও ব্যতিক্রম ছিল ঈদ আয়োজনে। এখন পর্যন্ত রাজধানীতে ছুটির লম্বা সময়ে বড় ধরনের চুরি-ডাকাতির খবর মেলেনি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা সন্তোষজনক ছিল তা বলতেই হবে। তবে মফস্বল-গ্রামে কোন্দল, সংঘাত, সংঘর্ষের খবর চোখে পড়েছে টেলিভিশনের খবরে। প্রতিদিনই ছোট-বড় কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে সন্তোষজনক ছিল রাস্তার পরিস্থিতি। রাস্তায় উৎসবজনিত জ্যাম ছিল তুলনামূলকভাবে কম। বাড়ি ফেরার পথে তেমন ঝামেলা পোহাতে হয়নি যাত্রীদের। অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ ছিল ট্রেন-লঞ্চে। কিছু ট্রেন দুর্ঘটনা উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বড় কোনো দুর্ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়নি বাড়ি-ফেরতা যাত্রীদের। লঞ্চ-ট্রেন-বাসের ব্যবস্থাপনাও ছিল সন্তোষজনক। ঈদের আগে রাস্তাও মোটামুটি চলনসই হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, রাস্তা তো শুধু ঈদে বাড়ি ফেরার জন্যই নয়। ঈদের আগে তড়িঘড়ি করে সাময়িকভাবে রাস্তা ঠিক করার যে রীতি কয়েক বছর হলো শুরু হয়েছে তা হয়তো উৎসবে খানিক স্বস্তি দেয় কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে কোনো ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে না। নাজুক রাস্তাগুলো স্থায়ীভাবে মেরামত করা দরকার। যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের যেভাবে ঈদের আগে তৎপর থেকেছেন, যাত্রীদের খোঁজ নিয়েছেন, রাস্তার মেরামতি তদারক করেছেন সে তৎপরতা ঈদের পরেও অব্যাহত থাকা উচিত। তার আন্তরিক চেষ্টায় রাস্তাগুলোর অবস্থা উন্নত হোক সেটাই কাম্য। অন্যদিকে ঈদের আগে বাস-ট্রেনের টিকিট বিক্রির ক্ষেত্রে যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে ভবিষ্যতে তার পুনরাবৃত্তি হওয়া উচিত নয়। এ কথা সত্য, লোকসংখ্যার তুলনায় যানবাহন কম। কিন্তু যানবাহনে যে আসন আছে তার টিকিট কালোবাজারিদের হাতে চলে গেলে সংকট অত্যন্ত গভীর হয়ে ওঠে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নজর দেওয়া উচিত। দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে প্রতিবছর লোকসমাগম বাড়ছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর করণীয় আছে। ঈদের আগে বিশেষ প্যাকেজ ও বিশেষ পরিবহন ব্যবস্থা চালু করলে পর্যটন আরও জনপ্রিয় হতে পারে এবং নিয়মিত যানবাহনের ওপর চাপ কমতে পারে। পাশাপাশি রাজধানী শহরে থেকে যাওয়া মানুষের উৎসবের কথাও ভাবতে হবে। আমাদের করার আছে অনেক কিছুই, সরকারের তরফে শুভ উদ্যোগও আছে। তবে সেগুলো অব্যাহত থাকতে হবে। সব মিলিয়ে এবারের ঈদের স্বস্তি ও আনন্দের রেশ আগামী দিনগুলোতে অব্যাহত থাকুক। যারা শহরে ফিরছেন বা ফিরেছেন কাজের টানে তাদের প্রত্যাবর্তন নিরাপদ ও সুন্দর হোক। ঈদ মোবারক।
No comments