সাক্ষাৎকার-ঢাকার বাইরের শহরগুলো আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে by ড. সারওয়ার জাহান

সাক্ষাৎকার গ্রহণ :শেখ রোকন অধ্যাপক ড. সারওয়ার জাহান আড়াই দশক ধরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগে শিক্ষকতা করছেন। পাশাপাশি নগর পরিকল্পনা, নগরাঞ্চলীয় দারিদ্র্য, নগরের পানি ও পরিচ্ছন্নতা প্রভৃতি বিষয়ে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কাজ করেছেন।


তিনি যেসব প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে হাতিরঝিল ও বেগুনবাড়ী খালের সমন্বিত উন্নয়ন, ঢাকার চারপাশে বৃত্তাকার নৌপথের সম্ভাব্যতা যাচাই সংক্রান্ত সমীক্ষা, উত্তরা মডেল টাউনের উন্নয়ন প্রস্তাব, উপজেলা শহর সংক্রান্ত মাস্টার প্লান। জনাব জাহান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর বুয়েট থেকে নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা এবং কানাডার ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আঞ্চলিক পরিকল্পনা ও সম্পদ উন্নয়নে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয়স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আঞ্চলিক উন্নয়ন পরিকল্পনা বিষয়ে পিএইচডি অর্জন করেন। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জার্নালে তার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রবন্ধ প্রকাশ হয়েছে। তার সম্পাদিত বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে 'আরবানাইজেশন ইন বাংলাদেশ :প্যাটার্নস, ইস্যুজ অ্যান্ড এপ্রোচেস টু প্লানিং'



সমকাল : সম্প্রতি লন্ডনের ইকোনমিস্ট পত্রিকার পক্ষ থেকে পরিচালিত এক জরিপে বসবাসযোগ্যতার দিক থকে ঢাকাকে বিশ্বের দ্বিতীয় খারাপতম নগরী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আমাদের রাজধানী শহরের পরিস্থিতি কি এতটাই খারাপ?
সারওয়ার জাহান :তারা জরিপটি চালিয়েছে বিভিন্ন সূচক ধরে। সেসব সূচকের কোনো কোনোটিতে ঢাকা শহরের পরিস্থিতি যে খারাপ, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এই নগরের জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ার ফলেই পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। এত দ্রুত জনসংখ্যা বিশ্বের খুব কম শহরেই বেড়েছে। আপনি দেখবেন, একাত্তরের আগে ঢাকার লোকসংখ্যা বেশি ছিল না, মাত্র ছয় লাখের মতো। স্বাধীনতার পর বাড়ার হারটি দ্রুত হয়ে যায়। সারাদেশ থেকে দলে দলে লোক রাজধানীতে আসতে থাকে। ফলে ১৯৭৪ সালেই লোকসংখ্যা দাঁড়ায় ১৮ লাখে। '৮১ সালের লোকগণনায় আমরা দেখলাম ৩৫ লাখে পেঁৗছেছে। '৯১ সালে এসে ৬৫ লাখে দাঁড়িয়ে যায়। ২০০১ সালে ছিল এক কোটি। এখন বোধহয় ১ কোটি ৩০-৪০ লাখে পেঁৗছেছে। এখন জনসংখ্যা বেড়েছে; কিন্তু বর্ধিত জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পরিকল্পনা করা হয়নি, নীতি প্রণয়ন করা হয়নি, সুযোগ-সুবিধা গড়ে ওঠেনি। ফলে যত দিন যাবে, পরিস্থিতি তো খারাপ হবেই।
সমকাল : সারাদেশের লোক কেন ঢাকামুখী হচ্ছে?
সারওয়ার জাহান : কারণ ক্ষমতা, সম্পদ, সুযোগ, শিক্ষা, বাণিজ্য, শিল্পায়ন সবই ঢাকাকেন্দ্রিক। বর্তমান আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা বহাল রেখে আমরা ঢাকা শহরের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। জনস্রোত ঢাকামুখী হতেই থাকবে। এই স্রোত ঠেকানো কঠিন। অবশ্য আমাদের নীতিনির্ধারকদের চেষ্টাও নেই। অন্যান্য এলাকায় যদি কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকত, শিক্ষার ভালো ব্যবস্থা থাকত, তাহলে এত লোক ঢাকামুখী হতো না।
সমকাল : এই প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে কী ব্যবস্থা নিতে হবে বলে আপনি মনে করেন?
সারওয়ার জাহান : ঢাকার বাইরের শহরগুলোকে আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করে তোলা। স্থানীয় পর্যায়ে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। এখন সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে কেন্দ্রীয় সরকার। রাজস্বের সম্পূর্ণ অংশ কেন্দ্রীয় সরকার তার বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে ব্যবহার করে থাকে। অথচ ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও স্থানীয় সরকারের জন্য বাজেটের নির্দিষ্ট অংশ বরাদ্দ থাকে। ফিলিপাইন ও লাতিন আমেরিকার কয়েকটি দেশেও আমি একই পদ্ধতি দেখেছি। ঢাকামুখী স্রোত নিয়ন্ত্রণ করতে হলে স্থানীয় সরকারের কাছে পর্যাপ্ত সম্পদ ও ক্ষমতা দিতে হবে যাতে করে তারা নিজস্ব পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে পারে।
সমকাল : কেউ কেউ পরামর্শ দিয়ে থাকেন, প্রশাসনিক রাজধানী ঢাকা থেকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে। মালয়েশিয়ায় এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সারওয়ার জাহান : কেউ কেউ এমন বলে থাকেন বটে, সেটা ভুল বলেন। আর মালয়েশিয়ার উদাহরণ আমাদের এখানে প্রযোজ্য হবে না। সে দেশের সম্পদ বেশি, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভিন্ন। এছাড়া নতুন রাজধানী কুয়ালালামপুর থেকে খুব বেশি দূরে নয়, কাছেই। বাংলাদেশে যদি আমরা সচিবালয় সরিয়ে নেই, ঢাকা থেকে কতজন লোক কমে যাবে?
সমকাল :তাহলে ঢাকার কী উপায় হবে? আমরা তো এখনই ভয়াবহ যানজট দেখছি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় চলে যায়।
সারওয়ার জাহান : পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। কারণ ঢাকার জনসংখ্যা ইতিমধ্যেই ধারণক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। ঘনত্বও খুব বেশি। পুরান ঢাকায় এমন অনেক এলাকা আছে, যেখানে একরপ্রতি জায়গায় চার-পাঁচশ' লোক বসবাস করে। আর জনসংখ্যার ঘনত্বের চাপ সবচেয়ে বেশি পড়ে রাস্তার ওপর, পরিবহন ব্যবস্থার ওপর। একটি বিদ্যালয় ভবনে কতজন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করতে পারবে, তার যেমন সীমা আছে; একটি রাস্তায় কতগুলো গাড়ি চলাচল করতে পারবে, তারও সীমারেখা আছে। কোনো এলাকায় জনসংখ্যার ঘনত্ব যত বাড়বে, রাস্তায় যানজট তত বাড়বে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে আমাদের পরিবহন ব্যবস্থা অবকাঠামো ও মাধ্যম_ দু'দিক থেকেই নাজুক অবস্থায় আছে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে আরও অসহনীয় যানজটের জন্য অপেক্ষা করতে হবে আমাদের।
সমকাল : সরকার তো যানজট কমানোর চেষ্টা করছে। নানারকম পদক্ষেপ নিচ্ছে। এই তো কয়েক দিন আগে ঢাকার কয়েকটি রাস্তায় রিকশা চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হলো।
সারওয়ার জাহান : সরকারের এসব নীতি বরং যানজট আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। রিকশা উঠিয়ে দিচ্ছে; কিন্তু পর্যাপ্ত বাসের ব্যবস্থা করছে না। ফলে যারা রিকশায় চলাচল করত, তারা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। এভাবে সরকারের নীতি লোকজনকে প্রাইভেট কার কেনার জন্য উৎসাহিত করছে। এখন প্রাইভেট কার বাড়লে যানজট বাড়বেই। রিকশার সঙ্গে গাড়ির বিরাট পার্থক্য রয়েছে। একটি রিকশা দিনে অনেকবার যাত্রী নিয়ে চলাচল করে। একইভাবে ট্যাক্সি ক্যাব ও অটোরিকশাও বারংবার অনেকগুলো যাত্রী আনা নেওয়া করে। কিন্তু একটি প্রাইভেট কার একজনের জন্যই। ঢাকায় কতগুলো প্রাইভেট কার আছে? ধরা যাক দেড় লাখ। একটি প্রাইভেট কারে কতজন লোক চলাচল করে? গড়ে পাঁচজন। তাহলে সবমিলিয়ে ১০-১২ লাখ লোক। এখন ১০-১২ লাখ লোকের সুবিধা করতে গিয়ে সরকার সোয়া কোটি লোকের অসুবিধা করছে। বেশি প্রাইভেট কার পার্কিংয়ের সমস্যাও তৈরি করে। রিকশা ও প্রাইভেট কার দুটোকেই নিয়ন্ত্রণ করে বিপুল সংখ্যক বড় বাস রাস্তায় নামালে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। কিন্তু কেবল রিকশা বন্ধ করে প্রাইভেট কার বাড়ালে যানজট আরও বাড়বেই। সরকার বলছে, তারা যানজট কমাতে চায়, বাস্তবে যানজট বাড়ানোর কাজ করছে।
সমকাল : সরকার যানজট নিরসনে তো বেশ কিছু দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপও নিচ্ছে। যেমন ফ্লাইওভার তৈরি হচ্ছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
সারওয়ার জাহান : ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে_ এসবও তৈরি করা হচ্ছে প্রাইভেট গাড়ির প্রয়োজন সামনে রেখে। ঢাকায় বিপুল সংখ্যক মানুষ পায়ে হেঁটে যাতায়াত করে, অথচ আপনি দেখবেন ফুটপাত সংরক্ষণ ও সংস্কারের ব্যাপারে নজর নেই। ওদিকে তৈরি করা হচ্ছে এক্সপ্রেস ওয়ে। সেটা প্রাইভেট কারওয়ালারা ছাড়া আর কেউ ব্যবহার করবে? এতে করে কিছুদিন যানজট একটু কমতে পারে; কিন্তু চূড়ান্তভাবে কোনো লাভ হবে না। ঢাকা শহরের ট্রিপ বিহেভিয়ার বা ভ্রমণপ্রবণতা হচ্ছে লোকজন স্বল্প দূরত্বে যাতায়াত করে। এলিভেটেড ওয়েতে যাতায়াত করবে তারাই, যারা দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রম করবে। ফলে সব প্রাইভেট কারও ওই পথে চলবে না। আমরা মহাখালী ফ্লাইওভারের ক্ষেত্রে দেখেছি, পথটা যেন কেবল ওপরে ওঠানো হয়েছে। নিচে আগের যে রাস্তা ছিল, সেটাতে চলাচলের জায়গা সংকুচিত হয়ে এসেছে। এক্ষেত্রেও তাই হবে। দীর্ঘ এই পথের জন্য বিপুল জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। ইউটিলিটি সার্ভিস পুনর্বিন্যাস করার ঝামেলাও রয়েছে।
সমকাল : যানজট নিরসনে মেট্রো রেল চালুর কথা শোনা যাচ্ছে। এ ব্যাপারে আপনার মত কী?
সারওয়ার জাহান : মেট্রো রেল করা গেলে ভালো। ঢাকার মতো জনবহুল নগরের জন্য মেট্রো রেল খুবই উপযোগী। কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ইকোনমিকেলি তা কতটা সাসটেইনেবল হবে, ভাবনার ব্যাপার আছে। প্রথমত, মেট্রো রেল স্থাপনে বিপুল অর্থ খরচ হবে। এরপর সেটাকে সাধারণ মানুষের নাগালের আওতায় আনতে গেলে যে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি প্রতিবছর দিতে হবে, আমাদের পক্ষে তা কতখানি সম্ভব সন্দেহ আছে। কারণ মেট্রো ট্রেনে সাধারণ মানুষকে তুলতে হলে ভাড়া কম হতে হবে। এর অপারেশন কস্ট অনেক বেশি। সে অনুযায়ী ভাড়া নিতে গেলে সাধারণ মানুষ চড়তে পারবে না। ফলে ভর্তুকি অবধারিত। দু'দিন আগে আমি আমেরিকা ঘুরে এলাম। সেখানে মেট্রো রেলে কয়েকটা স্টেশন অতিক্রম করে আমাকে আড়াই ডলার ভাড়া গুনতে হয়েছে। এখন বাংলাদেশে মহাখালী থেকে মতিঝিল যেতে আড়াই ডলার কয়জন দিতে পারবে?
সমকাল :তাহলে ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থার জন্য এই মুহূর্তে কী ধরনের মাধ্যম অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
সারওয়ার জাহান : আমি মনে করি, ঢাকার যানজট কমাতে হলে, সাধারণ নাগরিকের দুর্ভোগ কমাতে হলে এখন র‌্যাপিড ট্রানজিট বাস সিস্টেমের প্রতি জোর দিতে হবে। এটা অনেকটা মেট্রো রেল বা সাবওয়ের বাস সংস্করণ। এসি, নন-এসি বিপুল সংখ্যক বাসের জন্য রাস্তায় একটি লেন ফিক্স করা থাকবে। সেখানে অন্য কোনো যানবাহন প্রবেশ করবে না। এক কিলোমিটার পরপর স্টেশন থাকবে। সেখান থেকে লোকজন বাসে উঠবে। বাসগুলো কোনোভাবে যানজটে পড়বে না। তাড়াতাড়ি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাবে। সুবিধা অনুযায়ী বিভিন্ন বাসের ভিন্ন ভিন্ন ভাড়া হবে। ফলে অনেকে তখন গাড়ি রেখে ওই বাসে যাতায়াত করতে পারবে। রোকেয়া সরণি, মিরপুর রোড, এয়ারপোর্ট রোডের মতো বড় বড় রাস্তায় ওইসব বাস চলবে।
সমকাল : কমিউটার ট্রেন কতটা সুবিধা হতে পারে? তাহলে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ থেকে লোকজন ঢাকার কর্মস্থলে আসতে পারবে।
সারওয়ার জাহান : আমার মতে কমিউটার ট্রেন ঢাকার জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক। এক্ষেত্রে আমরা কলকাতা ও মুম্বাই শহরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারি। বিশেষ করে মুম্বাইয়ে এ ধরনের ব্যবস্থা খুবই কার্যকর প্রমাণ হয়েছে। সেখানে এটাকে বলা হয় সাব আরবান রেলওয়ে। প্রতিদিন শত শত ছোট ছোট ট্রেন যাতায়াত করে। ওই নেটওয়ার্ক এত বিস্তৃত যে প্রতিদিন নাকি ১০-১২ জন মানুষ কেবল ট্রেনে কাটা পড়ে। আমরা চাইলে ঢাকায় কমিউটার ট্রেন চালু করতে পারি। আমাদের জন্য সেটাই উপযোগী। খুব বেশিদিন সময়ও লাগবে না।
সমকাল : ঢাকা যানজট নিরসনে নৌপথ কতটা কাজে আসতে পারে?
সারওয়ার জাহান : এক সময় ঢাকার ভেতর দিয়ে অনেক খাল ছিল। তখন থেকে যদি এই চিন্তা মাথায় থাকত, তাহল এর চেয়ে ভালো ব্যবস্থা আর হতে পারত না। এক সময় হাতিরপুর বাজারে নৌকায় করে মালামাল আসত। খালগুলো থাকলে ঢাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থারও সুবিধা হতো। কিন্তু ওইসব খালের বেশিরভাগ আমরা বক্স কালভার্ট করে মেরে ফেলেছি। আর বাকিগুলো অবৈধ দখল হয়ে গেছে। এখন কিছু কিছু উদ্ধার চেষ্টা চলছে। কিন্তু তাতে করে নৌ চলাচল সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।
সমকাল : ঢাকার চারপাশের নদীতে বৃত্তাকার নৌপথ নিয়ে সরকার অনেকদূর অগ্রসর হয়েছে। আপনি নিজেও এর সম্ভাব্যতা যাচাই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এর ভবিষ্যৎ কী?
সারওয়ার জাহান : সার্কুলার ওয়াটার ওয়ে জনপরিবহনের কাজে আসবে না। ঢাকার যানজটেরও খুব একটা সুবিধা হবে না। ল্যান্ডিং স্টেশনের আধ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের লোকজন হয়তো অন্য কোনো ল্যান্ড স্টেশনে যাওয়ার জন্য ওই নৌপথ ব্যবহার করতে পারে। সীমিতসংখ্যক লোকজন সীমিত যাতায়াতের জন্য বৃত্তাকার নৌপথ ব্যবহার করবে। গুলিস্তানের কেউ বাসে করে সদরঘাটে গিয়ে ওয়াটারবাসে করে আমিনবাজারে নেমে আবার বাসে করে মিরপুর যাবে না। সে সোজা বাসে করে গুলিস্তান থেকে মিরপুর চলে যাবে। যে কারণে ইতিমধ্যে সেটা বোধহয় আর চলছে না। তবে হ্যাঁ, বৃত্তাকার নৌপথ মালামাল পরিবহনের জন্য খুব কাজে আসতে পারে। তাতে করে ঢাকা শহরের ভেতরে ট্রাকের প্রবেশ কমবে। ইতিমধ্যে ল্যান্ড স্টেশনগুলো মালামাল পরিবহনের কাজে ব্যবহার হচ্ছে বলে শুনেছি।
সমকাল : জনসংখ্যার পুনর্বিন্যাস করে কি ঢাকার যানজট পরিস্থিতির উন্নয়ন সম্ভব?
সারওয়ার জাহান : হ্যাঁ, করা যেতে পারে। যেসব এলাকায় জনবসতি কম, সেখানে বসতি করার জন্য ইনটেনসিভ দেয়া যেতে পারে। ইমারত নির্মাণ বিধিমালার মাধ্যমে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় সুপরিসর বাড়িঘর তৈরি করে জনসংখ্যা কমানো যেতে পারে।
সমকাল : আমাদের সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
সারওয়ার জাহান : সমকালের জন্য শুভেচ্ছা।

No comments

Powered by Blogger.