এরশাদের ভারতপ্রেম রাজনীতিতে নতুন ছক!
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বাংলাদেশের রাজনীতির সবচেয়ে অনুমান-অসম্ভব চরিত্র। রাজনীতির মাঠে দীর্ঘ তিন দশকের দাপুটে খেলোয়াড় এই এরশাদ। রাজনীতির শত্রুদের মিত্র করতে কিংবা মিত্রদের শত্রু করে তুলতে এরশাদের মতো পারঙ্গমতা খুব কম জনই দেখিয়েছেন।
সম্প্রতি নিজের রাজনৈতিক প্রোফাইলে তিনি ভারতপ্রীতির যে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন গত তিন দশকে এমনটি আর দেখা যায়নি। ভারতের নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর সঙ্গে এরশাদের দেখা করতে যাওয়ার ঘটনা এর অন্যতম। এরশাদই প্রথম বাংলাদেশি রাজনীতিক যিনি রাষ্ট্রপতি পদে প্রণবের আসীন হওয়ার পর তার সঙ্গে সরাসরি গিয়ে দেখা করে এলেন। এই সাক্ষাতের সময় এরশাদ বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের সমসাময়িক ইস্যুগুলো বারবার তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে তিস্তার পানিবণ্টন, টিপাইমুখে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং স্থলসীমা নির্ধারণ চুক্তির অনুসমর্থনের প্রসঙ্গটি।
এ থেকেই বোঝা যায়, বাংলাদেশের এই সাবেক সামরিক শাসক এ মুহূর্তে ভারতের চোখে হঠাৎই একজন গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হয়ে উঠেছেন। বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ থেকে বেশকিছু আগ্রহোদ্দীপক ও ভেতরকার তথ্যও রয়েছে রাজনৈতিক বিশ্লেষক গবেষকদের কাছে।
ওই সফরে এইচএম এরশাদ সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়াকে একটি সাক্ষাৎকার দেন। এতে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী রুদ্রনীল ঘোষের বেশ কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর বিশ্লেষণ করে বিষয়টি অনেকাংশে খোলাসা হয়ে আসে।
এরশাদের কাছে টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রশ্ন ছিলো- ‘আপনি একসময়ের সামরিক শাসক, পরে রাষ্ট্রপতি এবং আরও পরে একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। উপমহাদেশের গণতন্ত্র সম্পর্কে আপনার দৃষ্টিভঙ্গী কী?’’
জবাবে জেনারেল এরশাদ বলেন, ‘‘ এটা সন্দেহাতীত যে ভারতেই গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি। বাংলাদেশে যার চর্চা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এর প্রধান কারণ দেশটি প্রধান দু’টি শিবিরে বিভক্ত। এখানে নির্বাচন হয় কিন্তু যে দল নির্বাচনে হারে সে দল আর সংসদে যায় না।’’
জেনারেল এরশাদের এই বক্তব্য ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর সাম্প্রতিক এক বক্তব্যেরই প্রতিধ্বনিমাত্র। প্রণব বলেছিলেন, সংসদ জনগণের ক্ষমতায়নের প্রাণকেন্দ্র। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ বাংলাদেশে সবক’টি সংসদই ছিলো একদলের সংসদ ও অকার্যকর সংসদ। বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে কার্যকর রূপ দিতে চাইলে সংসদকেই কার্যকর করে তুলতে হবে।
রাজনীতিতে অনেকেই আজকাল তৃতীয় শক্তির উত্থানের প্রয়োজনীয়তার কথা ভাবছেন। এর কয়েকটি বিকল্পের একটি হচ্ছে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখল। তবে প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তিও তাদের শক্তি বৃদ্ধির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিএনপি তার জোট বাড়াতে জামায়াতের পাশাপাশি এরশাদের দিকেও হাত বাড়িয়েছে। তবে এরশাদের শর্ত ম্যালা। নির্বাচিত হলে তার জন্য রাষ্ট্রপতি পদটি ছেড়ে দিতে হবে। এই শর্ত বিএনপি-জামায়াত জোটের পক্ষে মেনে নেওয়া কঠিন। তবে এরশাদের সঙ্গে তাদের অন্য অনেক বিষয়ে সমঝোতার পাল্লাই ভারী বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এরশাদের এইসব যোগাযোগের ব্যাপারে পুরোপুরি অবহিত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং দ্রুত রাজনৈতিক অভিজাতদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন যারা আবার ভারতীয় লবির ঘনিষ্ট মিত্র।
এরশাদকে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায় নিয়ে আসার চেষ্টা রয়েছে এমন কথাও রাজনীতির মাঠে সচল আলোচনা।
বিএনপিকে কোনঠাসা করতে এমন একটি পরিকল্পনার বিষয়ে বিএনপিও ওয়াকিবহাল বলেই নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক সূত্রগুলো। তবে এরশাদের কোনো কিছুর উপরই ভিত্তি করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না বলে মত তাদের। অনেকেই এরশাদকে বাংলাদেশের রাজনীতির সবচেয়ে অ-অনুমেয় (আনপ্রেডিক্ট্যাবল) চরিত্র বলে মনে করেন।
এর আগে চারদলীয় জোটের ২০০১-০৬ এর শাসনামলে এরশাদ তার নিজ বাসভবনে খালেদাপুত্র তারেক রহমান ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার তৎকালীন মঈনুল রোডের বাসভবনেও বৈঠক হয় এইচএম এরশাদের।
২০০৬ সালের অক্টোবরে একদিন এরশাদ প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন চারদলীয় জোটের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু পরের দিনই আবার অবস্থান পাল্টান। এরপর তিনদিন আত্মগোপনে থাকার পর মহাজোটে যোগ দেন পল্টন ময়দানে শেখ হাসিনার জনসভায় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে। ওই জোট ক্ষমতায় আসে পরবর্তী নির্বাচনে। কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার ছয় মাসের মধ্যেই শেখ হাসিনা তার শর্ত বরখেলাপ করেন। রাষ্ট্রপতি পদে বসার স্বপ্নভঙ্গ হয় এরশাদের।
অপর এক সূত্রে জানা যায়, ওয়ান ইলেভেনের আগে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মঈন উ আহমেদও এরশাদকে রাষ্ট্রপতি পদে বসানোর প্রতিশ্রতি দিয়েছিলেন। এছাড়াও ১৯৯১ সালে এরশাদ যখন জেলে তখন শেখ হাসিনা তাকে সরকারপ্রধান করতে চেয়েছিলেন এবং ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন ২১ বছর পর সরকার গঠন করে তখন খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকেও তাকে দেওয়া হয় একই পদের হাতছানি।
তবে এখন প্রশ্ন, নতুন নীল-নকশায় শেখ হাসিনার সঙ্গে কোন ইস্যুতে সম্মত রয়েছেন এরশাদ? সুত্রগুলো বলছে, শর্তে রাজি না হলে এরশাদকে আবার কারাভোগ করতে হবে এমন হুমকিও রয়েছে। ভারতীয় গোয়েন্দাদের বক্তব্য তাদের হাতে এরশাদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণই রয়েছে যা তাকে বাকি জীবন গরাদে রাখার জন্য যথেষ্ট।
এ থেকেই বোঝা যায়, বাংলাদেশের এই সাবেক সামরিক শাসক এ মুহূর্তে ভারতের চোখে হঠাৎই একজন গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হয়ে উঠেছেন। বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ থেকে বেশকিছু আগ্রহোদ্দীপক ও ভেতরকার তথ্যও রয়েছে রাজনৈতিক বিশ্লেষক গবেষকদের কাছে।
ওই সফরে এইচএম এরশাদ সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়াকে একটি সাক্ষাৎকার দেন। এতে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী রুদ্রনীল ঘোষের বেশ কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর বিশ্লেষণ করে বিষয়টি অনেকাংশে খোলাসা হয়ে আসে।
এরশাদের কাছে টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রশ্ন ছিলো- ‘আপনি একসময়ের সামরিক শাসক, পরে রাষ্ট্রপতি এবং আরও পরে একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। উপমহাদেশের গণতন্ত্র সম্পর্কে আপনার দৃষ্টিভঙ্গী কী?’’
জবাবে জেনারেল এরশাদ বলেন, ‘‘ এটা সন্দেহাতীত যে ভারতেই গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি। বাংলাদেশে যার চর্চা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এর প্রধান কারণ দেশটি প্রধান দু’টি শিবিরে বিভক্ত। এখানে নির্বাচন হয় কিন্তু যে দল নির্বাচনে হারে সে দল আর সংসদে যায় না।’’
জেনারেল এরশাদের এই বক্তব্য ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর সাম্প্রতিক এক বক্তব্যেরই প্রতিধ্বনিমাত্র। প্রণব বলেছিলেন, সংসদ জনগণের ক্ষমতায়নের প্রাণকেন্দ্র। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ বাংলাদেশে সবক’টি সংসদই ছিলো একদলের সংসদ ও অকার্যকর সংসদ। বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে কার্যকর রূপ দিতে চাইলে সংসদকেই কার্যকর করে তুলতে হবে।
রাজনীতিতে অনেকেই আজকাল তৃতীয় শক্তির উত্থানের প্রয়োজনীয়তার কথা ভাবছেন। এর কয়েকটি বিকল্পের একটি হচ্ছে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখল। তবে প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তিও তাদের শক্তি বৃদ্ধির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিএনপি তার জোট বাড়াতে জামায়াতের পাশাপাশি এরশাদের দিকেও হাত বাড়িয়েছে। তবে এরশাদের শর্ত ম্যালা। নির্বাচিত হলে তার জন্য রাষ্ট্রপতি পদটি ছেড়ে দিতে হবে। এই শর্ত বিএনপি-জামায়াত জোটের পক্ষে মেনে নেওয়া কঠিন। তবে এরশাদের সঙ্গে তাদের অন্য অনেক বিষয়ে সমঝোতার পাল্লাই ভারী বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এরশাদের এইসব যোগাযোগের ব্যাপারে পুরোপুরি অবহিত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং দ্রুত রাজনৈতিক অভিজাতদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন যারা আবার ভারতীয় লবির ঘনিষ্ট মিত্র।
এরশাদকে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায় নিয়ে আসার চেষ্টা রয়েছে এমন কথাও রাজনীতির মাঠে সচল আলোচনা।
বিএনপিকে কোনঠাসা করতে এমন একটি পরিকল্পনার বিষয়ে বিএনপিও ওয়াকিবহাল বলেই নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক সূত্রগুলো। তবে এরশাদের কোনো কিছুর উপরই ভিত্তি করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না বলে মত তাদের। অনেকেই এরশাদকে বাংলাদেশের রাজনীতির সবচেয়ে অ-অনুমেয় (আনপ্রেডিক্ট্যাবল) চরিত্র বলে মনে করেন।
এর আগে চারদলীয় জোটের ২০০১-০৬ এর শাসনামলে এরশাদ তার নিজ বাসভবনে খালেদাপুত্র তারেক রহমান ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার তৎকালীন মঈনুল রোডের বাসভবনেও বৈঠক হয় এইচএম এরশাদের।
২০০৬ সালের অক্টোবরে একদিন এরশাদ প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন চারদলীয় জোটের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু পরের দিনই আবার অবস্থান পাল্টান। এরপর তিনদিন আত্মগোপনে থাকার পর মহাজোটে যোগ দেন পল্টন ময়দানে শেখ হাসিনার জনসভায় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে। ওই জোট ক্ষমতায় আসে পরবর্তী নির্বাচনে। কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার ছয় মাসের মধ্যেই শেখ হাসিনা তার শর্ত বরখেলাপ করেন। রাষ্ট্রপতি পদে বসার স্বপ্নভঙ্গ হয় এরশাদের।
অপর এক সূত্রে জানা যায়, ওয়ান ইলেভেনের আগে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মঈন উ আহমেদও এরশাদকে রাষ্ট্রপতি পদে বসানোর প্রতিশ্রতি দিয়েছিলেন। এছাড়াও ১৯৯১ সালে এরশাদ যখন জেলে তখন শেখ হাসিনা তাকে সরকারপ্রধান করতে চেয়েছিলেন এবং ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন ২১ বছর পর সরকার গঠন করে তখন খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকেও তাকে দেওয়া হয় একই পদের হাতছানি।
তবে এখন প্রশ্ন, নতুন নীল-নকশায় শেখ হাসিনার সঙ্গে কোন ইস্যুতে সম্মত রয়েছেন এরশাদ? সুত্রগুলো বলছে, শর্তে রাজি না হলে এরশাদকে আবার কারাভোগ করতে হবে এমন হুমকিও রয়েছে। ভারতীয় গোয়েন্দাদের বক্তব্য তাদের হাতে এরশাদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণই রয়েছে যা তাকে বাকি জীবন গরাদে রাখার জন্য যথেষ্ট।
No comments