পড়বে না তাঁর পায়ের চিহ্ন by রঞ্জু চৌধুরী
শুভ্র চোখের মোটা কাচের চশমা সরিয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। কারও সঙ্গে কোনো কথা বলছে না। স্তব্ধ শূন্য চারদিক। দিকশূন্য সে। মাজেদা খালা একটু পরপর এসে দেখে যাচ্ছে একই ভঙ্গিমায় বসে থাকা শুভ্রকে। এদিকে মিসির আলীর খোঁজে বেরিয়েছে শুভ্রর খালু সাহেব। তার কাছে বাড়ির ঠিকানা নেই।
ঝিগাতলায় ঘুরছেন আর ঘামছেন তিনি। গাড়ির এসি তার ঘাম বন্ধ করতে পারছে না। এক বাড়ির সামনে হলুদ পাঞ্জাবি পরা এক যুবক দাঁড়িয়ে আছে।... ভাই মিসির আলীর বাড়িটা কোন দিকে? হলুদ পাঞ্জাবি পরা ছেলেটা বলল, আমার নাম হিমু। আমিও তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। অপেক্ষা করেন। কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি নিচে আসবেন। মিসির আলী নিচে নেমে হাঁটা শুরু করলেন। খালু সাহেব বললেন, স্যার আমার সঙ্গে গাড়ি আছে। কই যাবেন বলেন। আর কাজ শেষ করে আমার সঙ্গে আজ রাতে খাবেন। কী রান্না করতে বলব? মিসির আলী বললেন, আপনার গাড়ি কই?
তিতলী আর কঙ্কা শুভ্র ভাইয়াদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। বাড়ির কুকুর টুং ও টাংকে চুপচাপ দেখে ওরা ভড়কে গেল। এমন সময় কালো গাড়ির হর্নে গেট খুলল দারোয়ান। খালু সাহেব গাড়ি থেকে নেমে তাদের বললেন, উপরে যাও। এখানে দাঁড়িয়ে বাঁদরের নাচ দেখছ নাকি! টুং টাং সারাদিন কিছু খায়নি। ওদের জ্বালিয়ো না। এই বলে খালু সাহেব হাঁটা ধরলেন। সঙ্গে মিসির আলী, হিমু, তিতলী এবং কঙ্কা। শুভ্রর মা এসে বললেন, হিমু কে? রূপা নামে একটি মেয়ে ফোন করে আপনাকে খুঁজেছে। ওকে বাসার ঠিকানা দিয়ে, আসতে বলেছি। নানা যুক্তিতর্কে শুভ্রর বিষয়গুলোকে বোঝার চেষ্টা করছেন তিনি। কিন্তু শুভ্রকে মীরা, রূপা, হিমু, তিতলী কিংবা কঙ্কা কী বলবে? আজ সবারই মুখ বন্ধ হয়ে আসছে। শুভ্রর এ থেমে যাওয়া সবাইকে হারিয়ে ফেলার যে দুঃখবোধের জন্ম দিয়েছে তা মেনে নেওয়া ছাড়া আর কিছুই করার নেই। বইমেলার ধুলা আর উড়াবে না হুমায়ূন আহমেদের কোনো চরিত্র। বইমেলায় এখন এই চরিত্রগুলোকে কেউ খুঁজবে না। খুঁজলেও তাদের আর পাওয়া যাবে না কোনোখানে। পড়বে না স্বয়ং হুমায়ূন আহমেদের পায়ের চিহ্ন...
No comments