মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার-গ্রেপ্তার হলেন জামায়াত নেতা আজহার-বদরগঞ্জেই ১২০০ জনকে হত্যার অভিযোগ
জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একাত্তরে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় বৃহত্তর রংপুরে গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, দেশান্তরে বাধ্য করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে গতকাল বুধবার দুপুরে তাঁকে
মগবাজারের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আজ সকালে তাঁকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে। বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে ট্রাইব্যুনাল-১ তাঁকে গ্রেপ্তারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে এ টি এম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে রংপুরের বদরগঞ্জেই এক হাজার ২০০ জনকে গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। বদরগঞ্জের ঝাড়ুয়ার বিল ও পদ্মপুকুর এলাকার আশপাশে এ গণহত্যা চালানো হয় বলে রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাঁকে গ্রেপ্তারের আবেদন করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
এ টি এম আজহারকে মানবতাবিরোধী অপরাধে গ্রেপ্তারের জন্য ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সদস্য সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা এস এম ইদ্রিস আলী একটি আবেদন চিফ প্রসিকিউটরের কাছে জমা দেন। এ আবেদন গতকাল সকালে প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম ও প্রসিকিউটর নুরজাহান বেগম মুক্তা ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেন।
প্রসিকিউটর মুক্তা কয়েকটি অভিযোগ সংক্ষিপ্ত আকারে ট্রাইব্যুনালে তুলে ধরে বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আজহার ইসলামী ছাত্রসংঘের রংপুর জেলা সভাপতি ছিলেন। তিনি জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের নির্দেশে বৃহত্তর রংপুরে শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনী গড়ে তোলেন। এসব বাহিনীকে সশস্ত্র করা হয়। তিনি আলবদর বাহিনীর রংপুর শাখার কমান্ডার ছিলেন। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় বৃহত্তর রংপুরে বুদ্ধিজীবীসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, দেশান্তরে বাধ্য করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে এ টি এম আজহার জড়িত ছিলেন। তিনি রংপুর কারমাইকেল কলেজের ছাত্র থাকার সুবাদে তাঁর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্দেশে ওই কলেজের কয়েকজন শিক্ষক ও একজন শিক্ষকপত্নীকে হত্যা করা হয়। তাঁর নিজ এলাকা বদরগঞ্জ থানার ঝাড়ুয়ারবিল ও পদ্মপুকুর এলাকায় এক হাজার ২০০ ব্যক্তিকে হত্যার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে তিনি জড়িত। হত্যার পর তাদের বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় এবং ব্যাপক লুটপাট চালানো হয়। তাঁর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের তদন্ত চলছে। কিন্তু তিনি নানাভাবে তদন্তকাজ বাধাগ্রস্ত করছেন। সাক্ষীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বিচার বাধাগ্রস্ত করতে ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে অপপ্রচার চালানোর সঙ্গে তিনি জড়িত। এ অবস্থায় সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাঁকে গ্রেপ্তার করা প্রয়োজন। দুপুর পৌনে ১২টায় ট্রাইব্যুনাল তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য ডিএমপি কমিশনারকে নির্দেশ দেন।
একই অভিযোগে এ টি এম আজহার ছাড়াও জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম, বর্তমান আমির মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মো. মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লা এবং কেন্দ্রীয় নেতা মীর কাসেম আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া একই অভিযোগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাকরাইলে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সহিংস সংঘর্ষের পর এ টি এম আজহারকে মগবাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রায় এক বছর কারাবন্দি থাকার পর গত ১৬ আগস্ট তিনি জামিনে মুক্তি পান। এর পর থেকে তিনি পুলিশের নজরদারিতে মগবাজারের বাসায় ছিলেন।
গতকাল সকাল সাড়ে ১১টা থেকে মগবাজারে ওল্ড এলিফ্যান্ট রোডে এ টি এম আজহারের বাড়ির সামনে অবস্থান নেয় পুলিশ ও র্যাব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আজহারের বাসার আশপাশের পুরো এলাকা ঘিরে ফেলেন। দুপুর ২টার দিকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় সেখানে জামায়াতে ইসলাম ও ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এরপর তাঁকে মিন্টু রোডে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার নূরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এ টি এম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে দুপুর ১২টার পর তাঁকে গ্রেপ্তারের প্রস্তুতি শুরু হয়। ট্রাইব্যুনালের আদেশের কপি পাওয়ার পর দুপুর সোয়া ১২টার দিকে আজহারুল ইসলামের মগবাজারের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। এরপর দুপুর ২টার দিকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারের পর প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় আজহার সাংবাদিকদের বলেন, 'সরকার আমাকে অবৈধভাবে গ্রেপ্তার করেছে। তবে জনগণ আমাদের সঙ্গে রয়েছে। বিজয় আমাদের হবেই।'
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান কালের কণ্ঠকে জানান, আজহারকে আজ বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে। এর আগে পর্যন্ত তাঁকে ডিবিতে রাখা হবে।
আজহারের বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ : এ টি এম আজহার স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় একটি ৫০ সিসির মোটরসাইকেলে পাকিস্তানি পতাকা উড়িয়ে ক্যান্টনমেন্টে যাতায়াত করতেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাদের এ দেশীয় দোসর আলবদর বাহিনীকে ১৯৭১ সালের ১৭ আগস্ট মিলিশিয়া বাহিনীর স্বীকৃতি দেয়। এ উপলক্ষে ওই দিন আলবদর বাহিনী দেশের বিভিন্ন এলাকায় সভা-সমাবেশ করে। এরই অংশ হিসেবে রংপুর সদরে আলবদর বাহিনীর সভায় সভাপতিত্ব করেন এ টি এম আজহারুল ইসলাম।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে আজহারের নেতৃত্বে কারমাইকেল কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক কালাচাঁদ রায় ও আবদুর রহমান, গণিতের প্রভাষক চিত্তরঞ্জন রায়, দর্শনের প্রভাষক সুনীল বরণ চক্রবর্তী, বাংলার প্রভাষক রামকৃষ্ণ অধিকারী, উর্দু বিভাগের প্রভাষক শাহ সোলায়মান আলী এবং কালাচাঁদ রায়ের স্ত্রীকে অপহরণ করে আলবদর বাহিনী। তাদেরকে কলেজের পার্শ্ববর্তী দমদমা এলাকায় নির্যাতনের পর ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয়।
রংপুরে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও বিশিষ্ট এক আইনজীবীকে ধরে সেনানিবাসে নির্যাতন কেন্দ্রে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। এরপর ওই আইনজীবীসহ ১২ জনকে হাত-পা বেঁধে দখিগঞ্জ মহাশ্মশানে নিয়ে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়।
শুধু রংপুর নয়, ঢাকার মোহাম্মদপুরে অবস্থিত রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে বুদ্ধিজীবীদের হত্যার সঙ্গেও এ টি এম আজহার জড়িত ছিলেন বলে রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ, ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আজহার রংপুর ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন। এরপর তিনি মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের নেতৃত্বে দেশবরেণ্য বুদ্ধিজীবীদের ধরে মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং কলেজে স্থাপিত টর্চার সেলে এনে নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত হন। সেখানে বুদ্ধিজীবীদের নির্যাতনের পর হত্যা করে রায়েরবাজারের বধ্যভূমিতে ফেলা হতো।
জামায়াতের নিন্দা : এ টি এম আজহারুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর জামায়াতের আমির মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান এবং সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম বুলবুল। গতকাল এক যুক্ত বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, সরকারের দলীয় ও বিতর্কিত ট্রাইব্যুনাল কথিত যুদ্ধাপরাধের মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগে এ টি এম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদিকে এ টি এম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে রংপুরের বদরগঞ্জেই এক হাজার ২০০ জনকে গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। বদরগঞ্জের ঝাড়ুয়ার বিল ও পদ্মপুকুর এলাকার আশপাশে এ গণহত্যা চালানো হয় বলে রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাঁকে গ্রেপ্তারের আবেদন করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
এ টি এম আজহারকে মানবতাবিরোধী অপরাধে গ্রেপ্তারের জন্য ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সদস্য সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা এস এম ইদ্রিস আলী একটি আবেদন চিফ প্রসিকিউটরের কাছে জমা দেন। এ আবেদন গতকাল সকালে প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম ও প্রসিকিউটর নুরজাহান বেগম মুক্তা ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেন।
প্রসিকিউটর মুক্তা কয়েকটি অভিযোগ সংক্ষিপ্ত আকারে ট্রাইব্যুনালে তুলে ধরে বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আজহার ইসলামী ছাত্রসংঘের রংপুর জেলা সভাপতি ছিলেন। তিনি জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের নির্দেশে বৃহত্তর রংপুরে শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনী গড়ে তোলেন। এসব বাহিনীকে সশস্ত্র করা হয়। তিনি আলবদর বাহিনীর রংপুর শাখার কমান্ডার ছিলেন। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় বৃহত্তর রংপুরে বুদ্ধিজীবীসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, দেশান্তরে বাধ্য করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে এ টি এম আজহার জড়িত ছিলেন। তিনি রংপুর কারমাইকেল কলেজের ছাত্র থাকার সুবাদে তাঁর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্দেশে ওই কলেজের কয়েকজন শিক্ষক ও একজন শিক্ষকপত্নীকে হত্যা করা হয়। তাঁর নিজ এলাকা বদরগঞ্জ থানার ঝাড়ুয়ারবিল ও পদ্মপুকুর এলাকায় এক হাজার ২০০ ব্যক্তিকে হত্যার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে তিনি জড়িত। হত্যার পর তাদের বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় এবং ব্যাপক লুটপাট চালানো হয়। তাঁর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের তদন্ত চলছে। কিন্তু তিনি নানাভাবে তদন্তকাজ বাধাগ্রস্ত করছেন। সাক্ষীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বিচার বাধাগ্রস্ত করতে ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে অপপ্রচার চালানোর সঙ্গে তিনি জড়িত। এ অবস্থায় সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাঁকে গ্রেপ্তার করা প্রয়োজন। দুপুর পৌনে ১২টায় ট্রাইব্যুনাল তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য ডিএমপি কমিশনারকে নির্দেশ দেন।
একই অভিযোগে এ টি এম আজহার ছাড়াও জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম, বর্তমান আমির মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মো. মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লা এবং কেন্দ্রীয় নেতা মীর কাসেম আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া একই অভিযোগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাকরাইলে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সহিংস সংঘর্ষের পর এ টি এম আজহারকে মগবাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রায় এক বছর কারাবন্দি থাকার পর গত ১৬ আগস্ট তিনি জামিনে মুক্তি পান। এর পর থেকে তিনি পুলিশের নজরদারিতে মগবাজারের বাসায় ছিলেন।
গতকাল সকাল সাড়ে ১১টা থেকে মগবাজারে ওল্ড এলিফ্যান্ট রোডে এ টি এম আজহারের বাড়ির সামনে অবস্থান নেয় পুলিশ ও র্যাব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আজহারের বাসার আশপাশের পুরো এলাকা ঘিরে ফেলেন। দুপুর ২টার দিকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় সেখানে জামায়াতে ইসলাম ও ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এরপর তাঁকে মিন্টু রোডে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার নূরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এ টি এম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে দুপুর ১২টার পর তাঁকে গ্রেপ্তারের প্রস্তুতি শুরু হয়। ট্রাইব্যুনালের আদেশের কপি পাওয়ার পর দুপুর সোয়া ১২টার দিকে আজহারুল ইসলামের মগবাজারের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। এরপর দুপুর ২টার দিকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারের পর প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় আজহার সাংবাদিকদের বলেন, 'সরকার আমাকে অবৈধভাবে গ্রেপ্তার করেছে। তবে জনগণ আমাদের সঙ্গে রয়েছে। বিজয় আমাদের হবেই।'
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান কালের কণ্ঠকে জানান, আজহারকে আজ বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে। এর আগে পর্যন্ত তাঁকে ডিবিতে রাখা হবে।
আজহারের বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ : এ টি এম আজহার স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় একটি ৫০ সিসির মোটরসাইকেলে পাকিস্তানি পতাকা উড়িয়ে ক্যান্টনমেন্টে যাতায়াত করতেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাদের এ দেশীয় দোসর আলবদর বাহিনীকে ১৯৭১ সালের ১৭ আগস্ট মিলিশিয়া বাহিনীর স্বীকৃতি দেয়। এ উপলক্ষে ওই দিন আলবদর বাহিনী দেশের বিভিন্ন এলাকায় সভা-সমাবেশ করে। এরই অংশ হিসেবে রংপুর সদরে আলবদর বাহিনীর সভায় সভাপতিত্ব করেন এ টি এম আজহারুল ইসলাম।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে আজহারের নেতৃত্বে কারমাইকেল কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক কালাচাঁদ রায় ও আবদুর রহমান, গণিতের প্রভাষক চিত্তরঞ্জন রায়, দর্শনের প্রভাষক সুনীল বরণ চক্রবর্তী, বাংলার প্রভাষক রামকৃষ্ণ অধিকারী, উর্দু বিভাগের প্রভাষক শাহ সোলায়মান আলী এবং কালাচাঁদ রায়ের স্ত্রীকে অপহরণ করে আলবদর বাহিনী। তাদেরকে কলেজের পার্শ্ববর্তী দমদমা এলাকায় নির্যাতনের পর ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয়।
রংপুরে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও বিশিষ্ট এক আইনজীবীকে ধরে সেনানিবাসে নির্যাতন কেন্দ্রে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। এরপর ওই আইনজীবীসহ ১২ জনকে হাত-পা বেঁধে দখিগঞ্জ মহাশ্মশানে নিয়ে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়।
শুধু রংপুর নয়, ঢাকার মোহাম্মদপুরে অবস্থিত রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে বুদ্ধিজীবীদের হত্যার সঙ্গেও এ টি এম আজহার জড়িত ছিলেন বলে রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ, ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আজহার রংপুর ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন। এরপর তিনি মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের নেতৃত্বে দেশবরেণ্য বুদ্ধিজীবীদের ধরে মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং কলেজে স্থাপিত টর্চার সেলে এনে নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত হন। সেখানে বুদ্ধিজীবীদের নির্যাতনের পর হত্যা করে রায়েরবাজারের বধ্যভূমিতে ফেলা হতো।
জামায়াতের নিন্দা : এ টি এম আজহারুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর জামায়াতের আমির মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান এবং সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম বুলবুল। গতকাল এক যুক্ত বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, সরকারের দলীয় ও বিতর্কিত ট্রাইব্যুনাল কথিত যুদ্ধাপরাধের মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগে এ টি এম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
No comments