গোপালগঞ্জে সংঘর্ষে নিহত ১, গ্রেপ্তার ২৫- অর্ধশতাধিক ঘরে আগুন

খেতের আখ খাওয়াকে কেন্দ্র করে গত মঙ্গলবার গোপালগঞ্জ শহরতলির ঘোষেরচর গ্রামের উত্তরপাড়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে আকফার মোল্লা (৬৫) নামের একজন বৃদ্ধ নিহত ও অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় নিহত আকফার মোল্লার পক্ষের লোকজন প্রতিপক্ষের ৫০টির বেশি ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে বলে জানা গেছে।


এ ঘটনায় পুলিশ ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার এড়াতে উত্তরপাড়ার পুরুষেরা গা ঢাকা দিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী শহীদ মোল্লা জানান, মঙ্গলবার দল বেঁধে তরুণেরা লাঠিসোঁটা, রামদা ও সড়কি নিয়ে বাড়ি বাড়ি লুটপাট ও তাণ্ডব চালায়। ঘোষেরচরের উত্তরপাড়ার প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকার ৩০টি বাড়ির অর্ধশতাধিক ঘর ও খড়ের গাদা পুড়িয়ে দেয় তারা। রাস্তায় পুলিশ টহল দিলেও তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এই বাড়ির আগুন নেভাচ্ছে, তো ওই বাড়িতে জ্বলছে—এমন অবস্থা।
গতকাল বুধবার সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘোষেরচর উত্তরপাড়া পুরুষশূন্য। নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা পোড়া বাড়ির আঙিনায় অবস্থান করছেন। গ্রামের রাস্তায় রাস্তায় পুলিশ টহল দিচ্ছে।
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার সকালে সাইদ মোল্লার জমির আখ খাওয়া নিয়ে গঞ্জর মোল্লার লোকজনের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। এ নিয়ে ঠান্ডা মোল্লা ও গঞ্জর মোল্লার সমর্থকেরা বেলা ১১টার দিকে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে গুরুতর আহত আকফার মোল্লাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে বিকেল তিনটার দিকে তিনি মারা যান। এ খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে আকফারের ভাই ঠান্ডা মোল্লার সমর্থকেরা প্রতিপক্ষের ৩০টি বাড়ির অর্ধশতাধিক ঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। গুরুতর আহত শহীদ মোল্লা (৪০), সোহেল মোল্লা (২৫), উজ্জ্বল মোল্লাকে (৩৩) খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও জুয়েল মোল্লা (৩০), ইনজাহেল মোল্লা (৪৫), সিরাজ মোল্লা (৪৫), বিলায়েত মোল্লা (৫৫), অহিদ মোল্লা (৩৮) ও জাহানারা বেগমকে (৩৮) গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গোপালগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বোরহান উদ্দিন জানান, ঠান্ডা মোল্লা ও গঞ্জর মোল্লার মধ্যে পূর্বশত্রুতা ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে রমজান মাসে দু-তিনবার মারামারির ঘটনা ঘটে। ঈদের দিনেও উভয় পক্ষ সংঘর্ষের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নেয়। এরই রেশ ধরে সামান্য আখ খাওয়া নিয়ে মঙ্গলবার তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। আকফার মোল্লার ভাতিজা আবুল হাসান মোল্লা গতকাল বুধবার বাদী হয়ে তানজু মোল্লাসহ ২৫ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন। ইতিমধ্যে ঠান্ডা মোল্লাসহ উভয় পক্ষের ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার সকালে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক নুরুজ্জামান ও গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শেখ ইউসুফ হারুন, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, গোপালগঞ্জ পৌর মেয়র রেজাউল হক সিকদার গ্রামটি পরিদর্শন করেছেন।

No comments

Powered by Blogger.