হলমার্ক কেলেঙ্কারি নিয়ে বিশেষ নিরীক্ষা- সোনালী ব্যাংকই দায়ী by শওকত হোসেন
সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারির তথ্য সবাই জানতেন। কিন্তু কেউই ব্যবস্থা নেননি। বরং হলমার্ক গ্রুপকে অর্থ আত্মসাতের সুযোগ করে দিয়েছেন সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তারাই। ব্যাংকের যোগসাজশেই তিন হাজার ৬০৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা আত্মসাত্ করেছে হলমার্ক গ্রুপসহ পাঁচটি প্রতিষ্ঠান।
সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা (সাবেক শেরাটন হোটেল) শাখা সব মিলিয়ে ঋণ ও অগ্রিম দিয়েছে তিন হাজার ৬৯৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে তিন হাজার ৬০৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকাই দেওয়া হয়েছে নিয়মবহির্ভূতভাবে। এই অর্থের মধ্যে দুই হাজার ৬৬৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা একাই নিয়েছে হলমার্ক গ্রুপ।
সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখার কার্যক্রম নিরীক্ষা (ফাংশনাল অডিট) করেছে সাইফুল শামসুল আলম অ্যান্ড কোম্পানি নামের একটি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস কোম্পানি। সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তে এই বিশেষ নিরীক্ষা পরিচালনা করা হয়। মূলত রূপসী বাংলা শাখার ওপর নিরীক্ষা করা হয়। হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে ব্যাংকের কার কী দায়িত্ব, ব্যাংক কতখানি দায়ী সেটি চিহ্নিত করতেই এই নিরীক্ষা চালানো হয়।
জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার সোনালী ব্যাংকের পর্ষদের বৈঠকে এই নিরীক্ষা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হবে। কার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা আজকের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে।
মূলত ব্যাংক কর্মকর্তাদের দায়দায়িত্ব জানতেই এই নিরীক্ষা পরিচালনা করা হয়েছে। জানা গেছে, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী একটি মহলের পৃষ্ঠপোষকতার কারণেই সোনালী ব্যাংক হলমার্ক গ্রুপকে অর্থ আত্মসাতের সুযোগ করে দিয়েছে।
নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রূপসী বাংলা শাখার অনিয়মের জন্য ব্যাংকই দায়ী। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন না করায় হলমার্ক গ্রুপসহ অন্যরা অর্থ আত্মসাত্ করার সুযোগ পেয়েছে। ব্যাংক যেভাবে চেয়েছে সেভাবে ঋণ দেওয়া হয়নি, বরং হলমার্ক গ্রুপ যেভাবে চেয়েছে সেভাবেই অর্থ দিয়েছে সোনালী ব্যাংক। হলমার্ক গ্রুপ যখন যে সুবিধা চেয়েছে, অবৈধভাবে তা-ই দেওয়া হয়েছে।
হলমার্ক বা রূপসী বাংলা শাখা কেলেঙ্কারির জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী এ কে এম আজিজুর রহমান, যিনি টানা পাঁচ বছর রূপসী বাংলা শাখার ব্যবস্থাপক পদে রয়েছেন। অথচ ব্যাংকের নিয়ম হচ্ছে, তিন বছরের বেশি সময় এক পদে থাকা যাবে না। কেন তাঁকে পাঁচ বছর একই পদে রাখা হলো, তার কোনো সদুত্তর নিরীক্ষা দল ব্যাংক থেকে পায়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৭ সালে ব্যাংকের প্রধান শাখা (প্রিন্সিপাল ব্রাঞ্চ) পরিদর্শন করে রূপসী বাংলা শাখায় অনিয়ম পেয়েছিল। এ নিয়ে একটি প্রতিবেদনও দেওয়া হয়। শাখার ব্যবস্থাপক এ কে এম আজিজুর রহমান অনিয়ম মেনে নিয়ে ২০০৯ সালে ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট মহাব্যবস্থাপককে একটি চিঠি দিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে এ ধরনের অনিয়ম আর হবে না।
২০১০ সালে আবার রূপসী বাংলা শাখার ওপর তদন্ত করা হয়। এ সময় বড় ধরনের অনিয়ম পায় মহাব্যবস্থাপকের (জিএম অফিস) কার্যালয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অর্থায়ন বিভাগ (আইটিএফডি)। আইটিএফডি থেকে বিস্তারিত তদন্তের জন্য একটি টিম করা হয় ২০১০ সালের আগস্টে। ছয় মাস পর এই টিম বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরে করণীয় নিয়ে একটি প্রতিবেদন দেয়। কিন্তু এর পর কোনো উদ্যোগ নেয়নি আইটিএফডি। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা বিভাগ আবার একটি নিরীক্ষা পরিচালনা করে। সেই নিরীক্ষা প্রতিবেদনে কোনো অনিয়মের কথা উল্লেখ করা হয়নি। অথচ ২০১০ সালে করা সোনালী ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনে অনিয়মের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। এই প্রতিবেদন আমলে নেয়নি নিরীক্ষা বিভাগ। উল্টো নিরীক্ষা বিভাগের প্রতিবেদনে এ কে এম আজিজুর রহমানকে বিরল প্রতিভাবান ব্যাংকার হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রধান শাখা থেকে জিএমের কার্যালয় ও আইটিএফডিকে রূপসী বাংলা শাখার ওপর তদন্ত করতে চিঠি দেওয়া হয়েছিল ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল। কিন্তু চুপ থেকেছে তারা। অবশেষে আইটিএফডির ঘুম ভাঙে। তারা রূপসী বাংলা শাখার ওপর তদন্ত পরিচালনার জন্য ২০১২ সালের ২৬ জানুয়ারি অনুমতি চেয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) কাছে একটি নোট লেখা হয়। এমডি এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন উপস্থাপনার নির্দেশ দেন। আশ্চর্যজনক হলো, অনুমতি দেওয়ার পরও তদন্তের কাজ শুরু করা হয় আরও দুই মাস পর। অথচ যদি ঠিক সময়ে তদন্ত পরিচালিত হতো, তাহলে ব্যাংক এক হাজার ৮৬০ কোটি টাকা আত্মসাত্ হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারত।
এই সময়ে আইটিএফডি ছিল ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মাইনুল হকের অধীনে। তাঁর সময়ে রূপসী বাংলা হোটেল শাখা অনিয়ম করে বিপুল পরিমাণ ঋণ দিলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিএমডি হিসেবে তদন্তকাজ শুরু করার দায়িত্ব ছিল মাইনুল হকের। অথচ তদন্ত শুরু হয় দুই মাস পর। কেন তদন্ত শুরু হলো না—এর কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।
পুরো ঘটনার সময় ব্যাংকের এমডি ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন হুমায়ুন কবির। রূপসী বাংলা শাখার ব্যাপক অনিয়মের পুরো দায় তাঁর ওপরই বর্তায়। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে তাঁকেই এর দায় বহন করতে হবে।
নিরীক্ষা প্রতিবেদনে কোন কোন ব্যাংক কর্মকর্তা দায়ী, তারও একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী রূপসী বাংলা শাখার তিনজন কর্মকর্তা অবৈধভাবে ঋণ দেওয়ার জন্য সরাসরি দায়ী। এর মধ্যে প্রধান হচ্ছেন শাখা ব্যবস্থাপক এ কে এম আজিজুর রহমান। তিনি তাঁর কর্তৃত্বের বাইরে ঋণ দিয়েছেন এবং কাগজপত্রও সংরক্ষণ করেননি। বাকি দুই কর্মকর্তা হলেন সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. সাইফুল হাসান এবং নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল মতিন।
এর বাইরে আরও ছয় কর্মকর্তার নাম প্রতিবেদনে রয়েছে, যাঁরা তাঁদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেননি। যেমন, সিনিয়র অফিসার উজ্জল কিশোর ধর, তুষার কান্তি দাস, জেসমিন নাহার, মিহির চন্দ্র মজুমদার, জুনিয়র অফিসার ওয়াকিলউদ্দিন এবং অফিসার সাইদুর রহমান।
মনিটর বা পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে ছিল প্রধান বা জিএম অফিস। এই কার্যালয়ের যেসব কর্মকর্তা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন, তারও বিবরণ রয়েছে প্রতিবেদনে।
২০১১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত রূপসী বাংলা শাখার নজরদারির দায়িত্ব ছিল প্রধান (প্রিন্সিপল) শাখার। মহাব্যবস্থাপক ননী গোপাল নাথ ছিলেন এর দায়িত্বে। তাঁর সময়ে রূপসী বাংলা হোটেল শাখায় অনিয়ম ধরা পড়লে তিনি শাখা প্রধানকে কেবল একটি চিঠি দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেন। এরপর তিনি নিরীক্ষা বিভাগকে তদন্ত করার জন্য চিঠি লেখেন। কিন্তু তাঁর চিঠি কার্যকর না হওয়ার বিষয়টি যদি এমডিকে জানাতেন, তাহলে আত্মসাত্ রোধ করা যেত বলে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে। এরপর ননী গোপাল নাথ ২০১২ সালের ২৪ জানুয়ারি জিএম কার্যালয়ের দায়িত্ব পান। এ সময় রূপসী বাংলা শাখায় অনিয়ম পাওয়া গেলেও তিনি আর কোনো পদক্ষেপ নেননি।
মহিদুর রহমান ২০০৯ ও ২০১০ সালে প্রধান শাখার দায়িত্বে থাকার সময় রূপসী বাংলা শাখায় বড় ধরনের অনিয়ম উদ্ঘাটন করেন। এরপর তিনি জিএমের কার্যালয়ের দায়িত্ব পান। জিএমের কার্যালয়ের অধীনে রূপসী বাংলা শাখা আসে ২০১১ সালের ১ জুলাই। জিএম অফিসের দায়িত্ব পেয়েও আশ্চর্যজনকভাবে তিনি রূপসী বাংলা শাখার অনিয়ম নিয়ে চুপ থাকেন। কেন তিনি চুপ ছিলেন, তার কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।
সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখার কার্যক্রম নিরীক্ষা (ফাংশনাল অডিট) করেছে সাইফুল শামসুল আলম অ্যান্ড কোম্পানি নামের একটি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস কোম্পানি। সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তে এই বিশেষ নিরীক্ষা পরিচালনা করা হয়। মূলত রূপসী বাংলা শাখার ওপর নিরীক্ষা করা হয়। হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে ব্যাংকের কার কী দায়িত্ব, ব্যাংক কতখানি দায়ী সেটি চিহ্নিত করতেই এই নিরীক্ষা চালানো হয়।
জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার সোনালী ব্যাংকের পর্ষদের বৈঠকে এই নিরীক্ষা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হবে। কার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা আজকের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে।
মূলত ব্যাংক কর্মকর্তাদের দায়দায়িত্ব জানতেই এই নিরীক্ষা পরিচালনা করা হয়েছে। জানা গেছে, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী একটি মহলের পৃষ্ঠপোষকতার কারণেই সোনালী ব্যাংক হলমার্ক গ্রুপকে অর্থ আত্মসাতের সুযোগ করে দিয়েছে।
নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রূপসী বাংলা শাখার অনিয়মের জন্য ব্যাংকই দায়ী। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন না করায় হলমার্ক গ্রুপসহ অন্যরা অর্থ আত্মসাত্ করার সুযোগ পেয়েছে। ব্যাংক যেভাবে চেয়েছে সেভাবে ঋণ দেওয়া হয়নি, বরং হলমার্ক গ্রুপ যেভাবে চেয়েছে সেভাবেই অর্থ দিয়েছে সোনালী ব্যাংক। হলমার্ক গ্রুপ যখন যে সুবিধা চেয়েছে, অবৈধভাবে তা-ই দেওয়া হয়েছে।
হলমার্ক বা রূপসী বাংলা শাখা কেলেঙ্কারির জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী এ কে এম আজিজুর রহমান, যিনি টানা পাঁচ বছর রূপসী বাংলা শাখার ব্যবস্থাপক পদে রয়েছেন। অথচ ব্যাংকের নিয়ম হচ্ছে, তিন বছরের বেশি সময় এক পদে থাকা যাবে না। কেন তাঁকে পাঁচ বছর একই পদে রাখা হলো, তার কোনো সদুত্তর নিরীক্ষা দল ব্যাংক থেকে পায়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৭ সালে ব্যাংকের প্রধান শাখা (প্রিন্সিপাল ব্রাঞ্চ) পরিদর্শন করে রূপসী বাংলা শাখায় অনিয়ম পেয়েছিল। এ নিয়ে একটি প্রতিবেদনও দেওয়া হয়। শাখার ব্যবস্থাপক এ কে এম আজিজুর রহমান অনিয়ম মেনে নিয়ে ২০০৯ সালে ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট মহাব্যবস্থাপককে একটি চিঠি দিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে এ ধরনের অনিয়ম আর হবে না।
২০১০ সালে আবার রূপসী বাংলা শাখার ওপর তদন্ত করা হয়। এ সময় বড় ধরনের অনিয়ম পায় মহাব্যবস্থাপকের (জিএম অফিস) কার্যালয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অর্থায়ন বিভাগ (আইটিএফডি)। আইটিএফডি থেকে বিস্তারিত তদন্তের জন্য একটি টিম করা হয় ২০১০ সালের আগস্টে। ছয় মাস পর এই টিম বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরে করণীয় নিয়ে একটি প্রতিবেদন দেয়। কিন্তু এর পর কোনো উদ্যোগ নেয়নি আইটিএফডি। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা বিভাগ আবার একটি নিরীক্ষা পরিচালনা করে। সেই নিরীক্ষা প্রতিবেদনে কোনো অনিয়মের কথা উল্লেখ করা হয়নি। অথচ ২০১০ সালে করা সোনালী ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনে অনিয়মের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। এই প্রতিবেদন আমলে নেয়নি নিরীক্ষা বিভাগ। উল্টো নিরীক্ষা বিভাগের প্রতিবেদনে এ কে এম আজিজুর রহমানকে বিরল প্রতিভাবান ব্যাংকার হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রধান শাখা থেকে জিএমের কার্যালয় ও আইটিএফডিকে রূপসী বাংলা শাখার ওপর তদন্ত করতে চিঠি দেওয়া হয়েছিল ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল। কিন্তু চুপ থেকেছে তারা। অবশেষে আইটিএফডির ঘুম ভাঙে। তারা রূপসী বাংলা শাখার ওপর তদন্ত পরিচালনার জন্য ২০১২ সালের ২৬ জানুয়ারি অনুমতি চেয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) কাছে একটি নোট লেখা হয়। এমডি এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন উপস্থাপনার নির্দেশ দেন। আশ্চর্যজনক হলো, অনুমতি দেওয়ার পরও তদন্তের কাজ শুরু করা হয় আরও দুই মাস পর। অথচ যদি ঠিক সময়ে তদন্ত পরিচালিত হতো, তাহলে ব্যাংক এক হাজার ৮৬০ কোটি টাকা আত্মসাত্ হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারত।
এই সময়ে আইটিএফডি ছিল ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মাইনুল হকের অধীনে। তাঁর সময়ে রূপসী বাংলা হোটেল শাখা অনিয়ম করে বিপুল পরিমাণ ঋণ দিলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিএমডি হিসেবে তদন্তকাজ শুরু করার দায়িত্ব ছিল মাইনুল হকের। অথচ তদন্ত শুরু হয় দুই মাস পর। কেন তদন্ত শুরু হলো না—এর কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।
পুরো ঘটনার সময় ব্যাংকের এমডি ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন হুমায়ুন কবির। রূপসী বাংলা শাখার ব্যাপক অনিয়মের পুরো দায় তাঁর ওপরই বর্তায়। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে তাঁকেই এর দায় বহন করতে হবে।
নিরীক্ষা প্রতিবেদনে কোন কোন ব্যাংক কর্মকর্তা দায়ী, তারও একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী রূপসী বাংলা শাখার তিনজন কর্মকর্তা অবৈধভাবে ঋণ দেওয়ার জন্য সরাসরি দায়ী। এর মধ্যে প্রধান হচ্ছেন শাখা ব্যবস্থাপক এ কে এম আজিজুর রহমান। তিনি তাঁর কর্তৃত্বের বাইরে ঋণ দিয়েছেন এবং কাগজপত্রও সংরক্ষণ করেননি। বাকি দুই কর্মকর্তা হলেন সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. সাইফুল হাসান এবং নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল মতিন।
এর বাইরে আরও ছয় কর্মকর্তার নাম প্রতিবেদনে রয়েছে, যাঁরা তাঁদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেননি। যেমন, সিনিয়র অফিসার উজ্জল কিশোর ধর, তুষার কান্তি দাস, জেসমিন নাহার, মিহির চন্দ্র মজুমদার, জুনিয়র অফিসার ওয়াকিলউদ্দিন এবং অফিসার সাইদুর রহমান।
মনিটর বা পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে ছিল প্রধান বা জিএম অফিস। এই কার্যালয়ের যেসব কর্মকর্তা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন, তারও বিবরণ রয়েছে প্রতিবেদনে।
২০১১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত রূপসী বাংলা শাখার নজরদারির দায়িত্ব ছিল প্রধান (প্রিন্সিপল) শাখার। মহাব্যবস্থাপক ননী গোপাল নাথ ছিলেন এর দায়িত্বে। তাঁর সময়ে রূপসী বাংলা হোটেল শাখায় অনিয়ম ধরা পড়লে তিনি শাখা প্রধানকে কেবল একটি চিঠি দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেন। এরপর তিনি নিরীক্ষা বিভাগকে তদন্ত করার জন্য চিঠি লেখেন। কিন্তু তাঁর চিঠি কার্যকর না হওয়ার বিষয়টি যদি এমডিকে জানাতেন, তাহলে আত্মসাত্ রোধ করা যেত বলে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে। এরপর ননী গোপাল নাথ ২০১২ সালের ২৪ জানুয়ারি জিএম কার্যালয়ের দায়িত্ব পান। এ সময় রূপসী বাংলা শাখায় অনিয়ম পাওয়া গেলেও তিনি আর কোনো পদক্ষেপ নেননি।
মহিদুর রহমান ২০০৯ ও ২০১০ সালে প্রধান শাখার দায়িত্বে থাকার সময় রূপসী বাংলা শাখায় বড় ধরনের অনিয়ম উদ্ঘাটন করেন। এরপর তিনি জিএমের কার্যালয়ের দায়িত্ব পান। জিএমের কার্যালয়ের অধীনে রূপসী বাংলা শাখা আসে ২০১১ সালের ১ জুলাই। জিএম অফিসের দায়িত্ব পেয়েও আশ্চর্যজনকভাবে তিনি রূপসী বাংলা শাখার অনিয়ম নিয়ে চুপ থাকেন। কেন তিনি চুপ ছিলেন, তার কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।
No comments