মিসিং গার্লস by আনোয়ার হোসেন
ভারতে লোকগণনার প্রাথমিক ফল প্রকাশিত হয়েছে। লোকসংখ্যা ১২১ কোটি ছুঁয়ে ফেলেছে। এটি কি সুসংবাদ? একালে অনেকেই বলবেন, এত লোক ভালো নয়। তাদের জন্য কতই আয়োজন প্রয়োজন! তবে একটি সুসংবাদ রয়েছে লোকগণনার প্রতিবেদনে। ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমেছে।
উত্তর প্রদেশ ও বিহারের মতো জনবিস্ফোরণ যেসব রাজ্যে সেখানে লক্ষণীয়ভাবে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। অর্থাৎ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারে লাগাম টানা সম্ভব হয়েছে। তারপরও সার্বিক চিত্র হতাশার। বিশ্বের ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষের বাস চীনে, তার পরের অবস্থান ভারতের_ ১৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এক দশকে ভারতে মানুষ বেড়েছে ১৮ কোটি। অর্থাৎ বাংলাদেশের মোট লোকসংখ্যার চেয়েও বেশি বেড়েছে।
ভারতে সাক্ষরতার হার বৃদ্ধিও উৎসাহব্যঞ্জক। এখন মোট জনসংখ্যার ৭৪ শতাংশ সাক্ষর। পুরুষদের তুলনায় নারীদের সাক্ষরতার হার বেশি বেড়েছে; কিন্তু উদ্বেগের একটি চিত্র রয়েছে কন্যাশিশু সংক্রান্ত প্রাপ্ত পরিসংখ্যানে এবং তা শিক্ষা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে যাবতীয় অর্জন ম্লান করে দিতে উদ্যত হয়েছে।
সামগ্রিকভাবে ভারতে এখন প্রতি এক হাজার পুরুষপিছু নারীর সংখ্যা ৯৪০। এক দশক আগে ছিল ৯৩৩ জন। অর্থাৎ নারী-পুরুষের মধ্যে আগের তুলনায় ভারসাম্য অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু ছয় বছরের কম বয়সী কন্যাশিশুর ক্ষেত্রে দেখা যায় পুরুষপিছু নারীর সংখ্যা প্রতি এক হাজারে ৯২৭ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৯১৪-এ। আনন্দবাজার মঙ্গলবার প্রশ্ন তুলেছে, এক হাজারে ৯২৭ সংখ্যাটি অত্যন্ত কম ছিল। একুশ শতকে অনুপাত আরও কম হয়েছে। এর কারণ কী?
একটি কারণ স্পষ্ট, ভারতীয় সমাজ এখনও কন্যাসন্তানের তুলনায় পুত্রসন্তান প্রার্থনা করে। চায় না বলেই কন্যার যত্ন পুত্রের তুলনায় কম হয় এবং তাদের মৃত্যুর হার বেশি এ কারণে। দ্বিতীয়ত, আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ বেশ সহজ। এ জন্য কেবল কিছু অর্থ গচ্চা দিতে হয়। কেননা কাজটি বেআইনি। তবে বেআইনি কাজেও অনেক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসক উৎসাহী। তাদের অর্থলোভকে এ জন্য দায়ী করা হয়। কিন্তু একই সঙ্গে এটিও সত্য, অনেক পরিবারেই কন্যাসন্তানের চেয়ে পুত্রসন্তান প্রার্থিত। নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বিভিন্ন সময় বলেছেন, ভারতে মিসিং গার্লস বা হারিয়ে যাওয়া কন্যাসন্তানের সংখ্যা বাড়ছে। এখন লোকগণনার তথ্যে তা সমর্থিত হলো। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কত দ্রুত এ চিত্র পাল্টানো যাবে?
বাংলাদেশে লোকগণনার কাজ সম্প্রতি সম্পন্ন হয়েছে। কন্যাশিশুকে আমাদের সমাজেও পুত্রের চেয়ে কম মূল্য দেওয়ার প্রবণতা অনেক পরিবারে রয়েছে। লোকগণনার চিত্রে যদি এমন প্রমাণ মেলে, মিসিং গার্লের সংখ্যা বাড়ছে! এ শঙ্কা অমূলক প্রমাণিত হবে_ এটিই কাম্য। কিন্তু আমাদেরও সতর্ক থাকার সময় এসেছে। বাংলাদেশে অনেক আগেই স্লোগান দেওয়া হয়েছে, 'ছেলে হোক, মেয়ে হোক_ দুটি সন্তানই যথেষ্ট'। এখন অনেক পরিবারে এক সন্তান গ্রহণের প্রবণতাও দেখা যায়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে উদ্বিগ্ন সরকারও এটিই চায়। সে সন্তানটিও ছেলে বা মেয়ে হতে পারে এবং এটি সবাইকে বুঝতে হবে, তাতেই পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণ।
No comments