চরাচর-শিকড়ের সন্ধানে ডালু নৃ-গোষ্ঠী by হাকিম বাবুল
চাষাবাদই তাদের প্রধান উপজীবিকা। ষাটের দশকে তাদের কৃষিজমি, এমনকি বসতবাড়ি শত্রুসম্পত্তি ঘোষণা করে তাদের ভূমিহীন কৃষিশ্রমিকে পরিণত করা হয়। অনেক পরিবার দেশান্তরিত হয়। এর পরও অনেকে জন্মভূমির টানে রয়ে গেছে। এককালে তাদের নিজস্ব ভাষা ছিল।
বর্তমানে সেই ভাষা পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। দু-একটি শব্দও কারো জানা নেই। তাদের নিজস্ব বর্ণমালা ছিল কি না তা-ও অজ্ঞাত। যুগ যুগ ধরে বাঙালিদের সংস্পর্শে থাকার কারণে তাদের শিক্ষা ও পারিবারিক জীবনযাত্রায় বাংলা ভাষাই প্রচলিত। ব্রিটিশ আমল, জমিদার আমল, সর্বশেষ পাকিস্তান আমলে তারা নানাভাবে নিগৃহীত হয়েছে। বিশেষত পাকিস্তান আমলে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় জমি-জিরাত কেড়ে নিয়ে তাদের নিজ ভূমে পরবাসীতে পরিণত করা হয়েছে। প্রায় বিস্মৃত এ সম্প্রদায়টি হলো 'ডালু সম্প্রদায়'। শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় এলাকা দিয়ে প্রবাহিত স্রোতস্বিনী ভোগবতী নদীর (বর্তমানে ভোগাই নদী) উত্তর অংশে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ডালুকিল্লা বা ডালুগাঁওয়ে একদা আশ্রয়গ্রহণকারীরাই পরবর্তী সময়ে ডালু নামে পরিচিত জনগোষ্ঠী। নৃ-বিজ্ঞানীদের মতে, ডালুরা ইন্দো-মঙ্গোলয়েড গোষ্ঠীর একটি শাখা। লড়াকু এ জনগোষ্ঠী তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি হারিয়ে ফেলেছে। বর্তমানে তারা শিকড়ের সন্ধান করে ফিরছে।
ডালু নৃ-গোষ্ঠী নিজেদের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র গ্রন্থ মহাভারতের তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুনের পুত্র বভ্রুবাহনের বংশধর ও ক্ষত্রিয় জাতিগোষ্ঠী হিসেবে মনে করে। পঞ্চপাণ্ডবের বনবাস চলাকালে তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুন মণিপুর রাজ্যের রাজকন্যা চিত্রাঙ্গদাকে দেখে মুগ্ধ হন এবং তাঁকে বিয়ে করেন। অর্জুনের ঔরসে চিত্রাঙ্গদার গর্ভে বভ্রুবাহনের জন্ম হয়। মাতামহ চিত্রবাহনের মৃত্যুর পর বভ্রুবাহন মণিপুরের রাজা হন। পরবর্তীকালে ১৬৬৫ খ্রিস্টাব্দে রাজা সুবল সিংহের আমলে সেখানে রাজ বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে। যুদ্ধে পরাজিত বিদ্রোহীদের দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়। বর্তমানে নালিতাবাড়ী উপজেলার সোহাগপুর, গোপালপুর, পাইখাতলা, হাতীবান্ধা, পলাশিয়া, শালমারী, আন্ধারিয়া, গেড়াপচা, ছালুয়ারতলা ও সিন্দুরকোচা এবং ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার দুটি গ্রাম জয়রামকুড়া ও মনিকুড়া গ্রামেই শুধু ডালুদের বসবাস। বর্তমানে নামের শেষে তারা 'সরকার' পদবি লেখা বন্ধ করে ডালু লিখে নিজেদের প্রাচীন পরিচিতিতে ফিরে যেতে চাইছে। সোহাগপুর গ্রামের প্রশান্ত ডালু জানান, তাঁরা সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বী। তাঁদের পূজা-পার্বণ, বিয়ে বা অন্যান্য সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাঙালি হিন্দুদের মতোই। তাঁদের সব ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্রাহ্মণরাই পৌরোহিত্য করে থাকেন। অনেক আগে তাঁদের সমাজের আচার-বিচার বা বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য গাঁওপ্রধান নির্বাচন করা হতো। উত্তরাধিকার সূত্রে বা দায়িত্বপ্রাপ্ত গাঁওপ্রধানের পছন্দমাফিক কাউকে গাঁওপ্রধান করা হতো না। কয়েক যুগ আগেই এ প্রথার বিলুপ্তি ঘটেছে। এককালে তাঁদের নিজস্ব ভাষা ছিল বলে তাঁরা শুনেছেন। বর্তমানে সে ভাষা পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
হাকিম বাবুল
ডালু নৃ-গোষ্ঠী নিজেদের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র গ্রন্থ মহাভারতের তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুনের পুত্র বভ্রুবাহনের বংশধর ও ক্ষত্রিয় জাতিগোষ্ঠী হিসেবে মনে করে। পঞ্চপাণ্ডবের বনবাস চলাকালে তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুন মণিপুর রাজ্যের রাজকন্যা চিত্রাঙ্গদাকে দেখে মুগ্ধ হন এবং তাঁকে বিয়ে করেন। অর্জুনের ঔরসে চিত্রাঙ্গদার গর্ভে বভ্রুবাহনের জন্ম হয়। মাতামহ চিত্রবাহনের মৃত্যুর পর বভ্রুবাহন মণিপুরের রাজা হন। পরবর্তীকালে ১৬৬৫ খ্রিস্টাব্দে রাজা সুবল সিংহের আমলে সেখানে রাজ বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে। যুদ্ধে পরাজিত বিদ্রোহীদের দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়। বর্তমানে নালিতাবাড়ী উপজেলার সোহাগপুর, গোপালপুর, পাইখাতলা, হাতীবান্ধা, পলাশিয়া, শালমারী, আন্ধারিয়া, গেড়াপচা, ছালুয়ারতলা ও সিন্দুরকোচা এবং ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার দুটি গ্রাম জয়রামকুড়া ও মনিকুড়া গ্রামেই শুধু ডালুদের বসবাস। বর্তমানে নামের শেষে তারা 'সরকার' পদবি লেখা বন্ধ করে ডালু লিখে নিজেদের প্রাচীন পরিচিতিতে ফিরে যেতে চাইছে। সোহাগপুর গ্রামের প্রশান্ত ডালু জানান, তাঁরা সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বী। তাঁদের পূজা-পার্বণ, বিয়ে বা অন্যান্য সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাঙালি হিন্দুদের মতোই। তাঁদের সব ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্রাহ্মণরাই পৌরোহিত্য করে থাকেন। অনেক আগে তাঁদের সমাজের আচার-বিচার বা বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য গাঁওপ্রধান নির্বাচন করা হতো। উত্তরাধিকার সূত্রে বা দায়িত্বপ্রাপ্ত গাঁওপ্রধানের পছন্দমাফিক কাউকে গাঁওপ্রধান করা হতো না। কয়েক যুগ আগেই এ প্রথার বিলুপ্তি ঘটেছে। এককালে তাঁদের নিজস্ব ভাষা ছিল বলে তাঁরা শুনেছেন। বর্তমানে সে ভাষা পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
হাকিম বাবুল
No comments