রঙ্গব্যঙ্গ-চিনি ও ছোলার কথোপকথন by মোস্তফা কামাল
রোজায় অতি গুরুত্বপূর্ণ দুটি পণ্য চিনি ও ছোলা। এই দুটি পণ্যের কাল্পনিক কথোপকথন আমরা পাঠকদের উদ্দেশে তুলে ধরছি। রাজধানীর অন্যতম পাইকারি ও খুচরা বিক্রয়কেন্দ্র কারওয়ান বাজারে পাজেরো হাঁকিয়ে এসেছে ছোলা। অন্য রকম ভাব নিয়ে সে বাজারে প্রবেশ করে।
তার চারপাশে অনেক পণ্য তাকে দেখে সালাম করে। সে ইশারায় সালাম নেয় ঠিকই; কিন্তু ভাবখানা এমন, যেন কাউকেই সে চেনে না। ব্যাপারটা লক্ষ করে চিনি। সে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেই ছোলাকে ডাকে, এই ছোলা, এই!
ছোলা চিনির দিকে তাকায় না। সে অন্যদিকে ঘাড় ঘুরিয়ে বসে থাকে। চিনি মনে মনে ভাবে, হঠাৎ ছোলার এত ভাব বাড়ল কেন? সে আবারও তাকে ডাকে, এই ছোলা! কথা কানে যায় না?
ছোলা বিরক্তির দৃষ্টিতে চিনির দিকে তাকায়। কিন্তু কোনো কথা বলে না। চিনি তার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়, বলে, কী হলো, এত ভাব নিচ্ছিস কেন?
ভাব নিচ্ছি মানে! আমাকে কি রাস্তার টোকাই পেয়েছ? আগে ব্যবহারটা ভালো কর। তারপর কথা বল।
আরে! আমি ব্যবহার খারাপ করলাম কোথায়?
তুই-তুকারি করছ। আবার বলছ, ব্যবহার খারাপ করলাম কোথায়?
তোকে তো আমি বরাবরই তুই সম্বোধন করেছি। এ আবার নতুন কি?
তুই-তুকারি আর চলবে না। দিন বদলেছে। এখন আমি তোমার চেয়ে বেশি মর্যাদাবান! গুণে-মানে_সব কিছুতেই। বুঝতে পারছ? কথাটা মনে রেখো।
চিনি উচ্চ স্বরে হাসে। হা হা হা! ছোলা বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করে, অমন ভঙ্গি করে হাসছ কেন? আমি কি মিথ্যা বলেছি? যা বলেছি, সত্য বলেছি।
তুই সারা জীবন ছিলি ঘোড়ার খাবার! তোর আবার মূল্য কিসের রে! তোর সঙ্গে তো আমার কথা বলাই উচিত না।
ওহ! তুমি আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত, তাই না?
আমার চেয়ে তুই জনপ্রিয়? হা হা হা! তবে রোজা এলে তোর একটু আদর-কদর বাড়ে, এই তো! তারপর তো তোকে হারিকেন দিয়েও খুঁজে পাওয়া যায় না।
দরকার নেই। সারা বছর বাজারে থাকলে কদর থাকে নাকি? বছরে এক মাস ঘোড়া দাবড়ে থাকব। প্রয়োজনে বাঘের পিঠে সওয়ার হব।
এবারও চিনি হাসে। তারপর বলে, আমার কদর সারা বছর সবার কাছে, বুঝতে পারছিস?
হঠাৎ ছোলা খেপে গিয়ে বলে, এই! আবার তুই-তুকারি করলে কিন্তু খবর আছে? এক লাথি মেরে তোমাকে বস্তা থেকে ফেলে দেব। তারপর বলব, ভেজাল চিনি। তাই ফেলে দিলাম।
এই! তুই এত বড় বড় কথা বলছিস কেন রে? তোর সঙ্গে কি ছাত্রলীগের যোগাযোগ আছে নাকি?
তুমি আগে আপনি বল। তা না হলে কিন্তু ইজ্জত ডুবিয়ে ছাড়ব। তুমি যে বাজার থেকে উধাও হয়ে গোডাউনে গিয়ে আত্মগোপন করেছিলে, সে কথাও ফাঁস করে দেব!
আচ্ছা আপনি বলছি। তবুও আমার ইজ্জত ডুবাবেন না। ছোলা ভাই, একটা কথা বলব?
কী কথা?
হঠাৎ আপনার এত ভাব বাড়ল কেন?
ভাব বাড়বে না? ভাব হলেই তো ভাব বাড়ে, তাই না? তা ছাড়া আমি এখন অনেক দামি পণ্য। আর ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। বুঝতে পারছ?
ওহ! বুঝতে পারছি। কিন্তু আমার দাম নেই, এ কথাটা আপনাকে কে বলল?
তোমার দাম কত?
আমার দাম ৭০ টাকা।
আর আমার দাম তো ৯৬ টাকা। এবার বল, কার দাম বেশি?
আরে রাখেন! বললেই হলো, ৯৬ টাকা! ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কারসাজি করে নিজের দামটা বাড়িয়ে নিয়েছেন। আপনার গোপন কথাও কিন্তু আমি ফাঁস করে দেব!
তুমি কী গোপন কথা ফাঁস করবে? আমার মধ্যে কোনো ভেজাল নেই। তোমার মধ্যেই যত ভেজাল আছে। তোমাকে কখনো লবণ দিয়ে আবার কখনো বালু দিয়ে কলঙ্কিত করে।
দেখ ছোলা, তুই আমার মুখ ছুটাবি না। তোর আমদানি মূল্য কত? ৪৫ টাকা। তোর দাম আমার চেয়ে বেশি হয় কী করে রে! তা ছাড়া পোকায় খেয়ে তোর ভেতরটা সাফ করে দিয়েছে। তোদের ভেতরে আর কিছু আছে? তোদের তো এখন ঘোড়ায়ও খায় না। সেই খাবার বাধ্য হয়ে মানুষে খাচ্ছে। আসলেই তোদের কপাল ভালো। রোজা তোদের জন্য ঈদের আনন্দ এনে দিয়েছে।
বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছোলা। হঠাৎ চিনির খেপে যাওয়া দেখে সে চিন্তায় পড়ে যায়। মনে মনে ভাবে, আচ্ছা ঘটনা কী! চিনির এত দাপট বাড়ল কী করে? ওর সঙ্গে ক্ষমতাসীন কারো যোগাযোগ আছে নাকি! তা না হলে সে আবার তুই-তুকারি শুরু করল যে! ছোলা এবার কিছুটা শান্ত হয়ে বলল, চিনি, হঠাৎ খেপে গেলে যে? তোমার সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের কারো যোগাযোগ আছে নাকি?
এবার চিনি অন্য রকম ভাব নিয়ে বলে, তুই ভাবছিস চিনি বন্ধুহীন, তাই না? বাণিজ্যমন্ত্রী আমার খালাত ভাই! বুঝতে পারছিস? বেয়াদবি করবি তো ডাল বানিয়ে দেব।
ছোলা এবার শুকনো গলায় বলে, সেটাই করো। তাহলে হয়তো ইজ্জতটা একটু বাড়বে।
চিনি বিস্ময়ের সঙ্গে জানতে চায়, কেন?
ঘোড়ার খাবার বলে নিন্দা করতে পারবে না। তখন মানুষের খাবার হিসেবে পরিচিতি পাব। ইজ্জত আর দরদামটাও একটু বাড়বে।
হুম!
তারপর চিনি বলল, তোর ইজ্জত কিছুতেই বাড়ানো যাবে না। বরং তোর গোমর ফাঁক করে দেব।
মানে!
মানে, পিটিয়ে তোর শরীরের চামড়া তুলে দেব। তখন মানুষ পোকায় খাওয়া তোর চেহারাটা দেখতে পাবে। তারপর যদি মানুষের হুঁশ হয়।
প্লিজ, তুমি এ কাজটি করো না। তুমি আমার বড় ভাই!
এখন বড়ভাই-বড়ভাই কেন করছ? আগে খেয়াল ছিল না!
কিছুক্ষণ পর চিনি শান্ত হয়ে বলল, তাহলে ওই কথাই রইল। এখন থেকে আমরা বড়ভাই-ছোটভাই।
ছোলাও তার কথায় সায় দিল।
লেখক : কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক
ছোলা চিনির দিকে তাকায় না। সে অন্যদিকে ঘাড় ঘুরিয়ে বসে থাকে। চিনি মনে মনে ভাবে, হঠাৎ ছোলার এত ভাব বাড়ল কেন? সে আবারও তাকে ডাকে, এই ছোলা! কথা কানে যায় না?
ছোলা বিরক্তির দৃষ্টিতে চিনির দিকে তাকায়। কিন্তু কোনো কথা বলে না। চিনি তার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়, বলে, কী হলো, এত ভাব নিচ্ছিস কেন?
ভাব নিচ্ছি মানে! আমাকে কি রাস্তার টোকাই পেয়েছ? আগে ব্যবহারটা ভালো কর। তারপর কথা বল।
আরে! আমি ব্যবহার খারাপ করলাম কোথায়?
তুই-তুকারি করছ। আবার বলছ, ব্যবহার খারাপ করলাম কোথায়?
তোকে তো আমি বরাবরই তুই সম্বোধন করেছি। এ আবার নতুন কি?
তুই-তুকারি আর চলবে না। দিন বদলেছে। এখন আমি তোমার চেয়ে বেশি মর্যাদাবান! গুণে-মানে_সব কিছুতেই। বুঝতে পারছ? কথাটা মনে রেখো।
চিনি উচ্চ স্বরে হাসে। হা হা হা! ছোলা বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করে, অমন ভঙ্গি করে হাসছ কেন? আমি কি মিথ্যা বলেছি? যা বলেছি, সত্য বলেছি।
তুই সারা জীবন ছিলি ঘোড়ার খাবার! তোর আবার মূল্য কিসের রে! তোর সঙ্গে তো আমার কথা বলাই উচিত না।
ওহ! তুমি আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত, তাই না?
আমার চেয়ে তুই জনপ্রিয়? হা হা হা! তবে রোজা এলে তোর একটু আদর-কদর বাড়ে, এই তো! তারপর তো তোকে হারিকেন দিয়েও খুঁজে পাওয়া যায় না।
দরকার নেই। সারা বছর বাজারে থাকলে কদর থাকে নাকি? বছরে এক মাস ঘোড়া দাবড়ে থাকব। প্রয়োজনে বাঘের পিঠে সওয়ার হব।
এবারও চিনি হাসে। তারপর বলে, আমার কদর সারা বছর সবার কাছে, বুঝতে পারছিস?
হঠাৎ ছোলা খেপে গিয়ে বলে, এই! আবার তুই-তুকারি করলে কিন্তু খবর আছে? এক লাথি মেরে তোমাকে বস্তা থেকে ফেলে দেব। তারপর বলব, ভেজাল চিনি। তাই ফেলে দিলাম।
এই! তুই এত বড় বড় কথা বলছিস কেন রে? তোর সঙ্গে কি ছাত্রলীগের যোগাযোগ আছে নাকি?
তুমি আগে আপনি বল। তা না হলে কিন্তু ইজ্জত ডুবিয়ে ছাড়ব। তুমি যে বাজার থেকে উধাও হয়ে গোডাউনে গিয়ে আত্মগোপন করেছিলে, সে কথাও ফাঁস করে দেব!
আচ্ছা আপনি বলছি। তবুও আমার ইজ্জত ডুবাবেন না। ছোলা ভাই, একটা কথা বলব?
কী কথা?
হঠাৎ আপনার এত ভাব বাড়ল কেন?
ভাব বাড়বে না? ভাব হলেই তো ভাব বাড়ে, তাই না? তা ছাড়া আমি এখন অনেক দামি পণ্য। আর ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। বুঝতে পারছ?
ওহ! বুঝতে পারছি। কিন্তু আমার দাম নেই, এ কথাটা আপনাকে কে বলল?
তোমার দাম কত?
আমার দাম ৭০ টাকা।
আর আমার দাম তো ৯৬ টাকা। এবার বল, কার দাম বেশি?
আরে রাখেন! বললেই হলো, ৯৬ টাকা! ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কারসাজি করে নিজের দামটা বাড়িয়ে নিয়েছেন। আপনার গোপন কথাও কিন্তু আমি ফাঁস করে দেব!
তুমি কী গোপন কথা ফাঁস করবে? আমার মধ্যে কোনো ভেজাল নেই। তোমার মধ্যেই যত ভেজাল আছে। তোমাকে কখনো লবণ দিয়ে আবার কখনো বালু দিয়ে কলঙ্কিত করে।
দেখ ছোলা, তুই আমার মুখ ছুটাবি না। তোর আমদানি মূল্য কত? ৪৫ টাকা। তোর দাম আমার চেয়ে বেশি হয় কী করে রে! তা ছাড়া পোকায় খেয়ে তোর ভেতরটা সাফ করে দিয়েছে। তোদের ভেতরে আর কিছু আছে? তোদের তো এখন ঘোড়ায়ও খায় না। সেই খাবার বাধ্য হয়ে মানুষে খাচ্ছে। আসলেই তোদের কপাল ভালো। রোজা তোদের জন্য ঈদের আনন্দ এনে দিয়েছে।
বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছোলা। হঠাৎ চিনির খেপে যাওয়া দেখে সে চিন্তায় পড়ে যায়। মনে মনে ভাবে, আচ্ছা ঘটনা কী! চিনির এত দাপট বাড়ল কী করে? ওর সঙ্গে ক্ষমতাসীন কারো যোগাযোগ আছে নাকি! তা না হলে সে আবার তুই-তুকারি শুরু করল যে! ছোলা এবার কিছুটা শান্ত হয়ে বলল, চিনি, হঠাৎ খেপে গেলে যে? তোমার সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের কারো যোগাযোগ আছে নাকি?
এবার চিনি অন্য রকম ভাব নিয়ে বলে, তুই ভাবছিস চিনি বন্ধুহীন, তাই না? বাণিজ্যমন্ত্রী আমার খালাত ভাই! বুঝতে পারছিস? বেয়াদবি করবি তো ডাল বানিয়ে দেব।
ছোলা এবার শুকনো গলায় বলে, সেটাই করো। তাহলে হয়তো ইজ্জতটা একটু বাড়বে।
চিনি বিস্ময়ের সঙ্গে জানতে চায়, কেন?
ঘোড়ার খাবার বলে নিন্দা করতে পারবে না। তখন মানুষের খাবার হিসেবে পরিচিতি পাব। ইজ্জত আর দরদামটাও একটু বাড়বে।
হুম!
তারপর চিনি বলল, তোর ইজ্জত কিছুতেই বাড়ানো যাবে না। বরং তোর গোমর ফাঁক করে দেব।
মানে!
মানে, পিটিয়ে তোর শরীরের চামড়া তুলে দেব। তখন মানুষ পোকায় খাওয়া তোর চেহারাটা দেখতে পাবে। তারপর যদি মানুষের হুঁশ হয়।
প্লিজ, তুমি এ কাজটি করো না। তুমি আমার বড় ভাই!
এখন বড়ভাই-বড়ভাই কেন করছ? আগে খেয়াল ছিল না!
কিছুক্ষণ পর চিনি শান্ত হয়ে বলল, তাহলে ওই কথাই রইল। এখন থেকে আমরা বড়ভাই-ছোটভাই।
ছোলাও তার কথায় সায় দিল।
লেখক : কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক
No comments